রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

IELTS প্রস্তুতি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানুন | ঘরে বসে IELTS এর প্রস্তুতি | Muhammed Juwel Ahmed

 
 
 
দৃষ্টি আকর্ষণ: জানতে হলে পড়তে হবে। সুতরাং এই নিবন্ধে আলোচিত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।

সূচিপত্র

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন যখন আপনাকে হাতছানি দেয়, তখন আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাবে IELTS (আইইএলটিএস) নামক শব্দটি। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য যারা দেশের বাহিরে যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য একটি সুপরিচিত শব্দ IELTS (আইইএলটিএস)। কিন্তু অনেকেই শব্দটি শুনে থাকলেও IELTS এর বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ও স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। ফলে IELTS কি, কিভাবে IELTS করতে হয়, করে কি লাভ, কিভাবে শুরু করবেন, সফলতা পাবেন প্রভৃতি প্রশ্নগুলোয় আপনি দ্বিধান্বিত হতে পারেন। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক IELTS এর আদ্যোপান্ত।

IELTS (আইইএলটিএস) কি এবং কেন?

IELTS এর পূর্ণরূপ হলো International English Language Testing System। ১৯৮৯ সালে IELTS যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে।

IELTS হলো আন্তর্জাতিক মানের একটি পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ইংরেজিতে কতটুকু দখল ও দক্ষতা রয়েছে সেটি যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ ইংরেজিতে আপনার কি ধরণের দক্ষতা রয়েছে তার মূল্যায়ন পরীক্ষা এটি।

ইংরেজি ভাষাভাষী রাষ্ট্রে একজন নন-ইংলিশ ব্যক্তি কিভাবে তার মনের ভাব প্রকাশ করবেন, নিজেকে উপস্থাপন করবেন, অন্যের মনের ভাব বুঝবেন, ইংরেজি বলতে, লিখতে, পড়তে, শুনে বুঝতে পারবেন এর মানদণ্ড স্বরূপ IELTS পরীক্ষা নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ইংরেজি ভাষায় আপনার কতটুকু দক্ষতা রয়েছে তা যাচাইয়ের জন্য আরও অনেক পরীক্ষা রয়েছে তবে IELTS হলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরীক্ষা।

সাধারণত যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে (বিদেশ বলতে সব দেশ নয়, ইংরেজি ভাষাভাষীর দেশগুলো) গমনকারী শিক্ষার্থীরা এবং ইমিগ্রেশন, জব, ট্রেনিং, ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চাইলে IELTS সার্টিফিকেট প্রয়োজন। 

সমগ্র বিশ্বব্যাপী British Council, IDP: IELTS Australia এবং Cambridge English Language Assessment এর অধীনে IELTS পরীক্ষা হয়। প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। ১৬ বছর বয়স থেকে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় এবং কতবার অংশগ্রহণ করতে পারবেন তা নির্ধারিত নয়। অর্থাৎ আপনি যত বার চাইবেন অংশগ্রহণ করতে পারেন।

IELTS করার উপকারিতা বা সুবিধা কী?

আইইএলটিএস করার অনেক সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো হলো-

১. উচ্চশিক্ষা (অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি)  গ্রহণের উদ্দেশ্যে। 
২. আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে। 
৩. স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। 
৪. বিদেশে কোনো চাকরি পেলে, সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে। 
৫. বিদেশে নিকট আত্মীয়ের সাথে বসবাসের উদ্দেশ্যে। 
৬. বিদেশে উচ্চশিক্ষা, জব গ্রহণের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশ্যে।
৭. অনেক দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকারি এজেন্সিগুলো IELTS এর স্কোরের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করে থাকে। 
৮. আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন IELTS গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
৯. ইংরেজি ভাষায় নিজেকে দক্ষ করার উদ্দেশ্য। 
১০. ইংরেজির দুর্বলতা কাটিয়ে দেশে ভালো চাকরির আশায়।
১১. ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের সাথে চাকরি ও ব্যবসাসূত্রে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে।

IELTS এর প্রশ্ন কাঠামো

আইইএলটিএস (IELTS) টেস্টকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১. একাডেমিক আইইএলটিএস।
২. জেনারেল ট্রেনিং আইইএলটিএস।

আবার এই টেস্ট দুটির ৪টি ভাগ রয়েছে। যথা:

১. লিসেনিং: লিসেনিং এর জন্য আপনাকে ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হবে। আপনাকে ৩০ মিনিটের অডিও ভিত্তিক এই পরীক্ষায় ৪টি ভাগে ১০টি করে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটির নির্ণারিত মান ১ এই ভিত্তিতে সঠিক উত্তরের উপর নির্ভর করে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। লিসেনিং আপনার কথোপকথন বোঝার দক্ষতা যাচাই মূলক পরীক্ষা। ৩০ মিনিটের এই ৪টি রেকর্ডটি আপনার মাত্র একবার শোনার সুযোগ থাকবে। এটি শোনার পর কিছু প্রশ্ন করা হবে ও কিছু প্রশ্ন উত্তরপত্রে লিখতে হবে। তাই আপনাকে এই পরীক্ষার সময় খুব মনোযোগী হতে হবে।

২. রিডিং: রিডিং টেস্টের জন্য আপনাকে ১ ঘন্টা সময় দেওয়া হবে ও ৩টি অনুচ্ছেদ থেকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। রিডিং টেস্টের মাধ্যমে আপনার পড়ার দক্ষতা যাচাই করা হয়। টেস্টের অনুচ্ছেদ থেকে বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে হয়। একাডেমিক টেস্টের অনুচ্ছেদগুলো বেশ বড় এবং এগুলো সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া হতে পারে যা থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা হয়। এগুলো সাধারণত গবেষণা ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা।

একাডেমিক টেস্টের চেয়ে জেনারেল টেস্ট তুলনামূলক সহজ। দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হতে হয় এমন বিষয় নিয়ে এই টেস্ট হয়। সংবাদপত্র, বই, বিজ্ঞাপন, হ্যান্ডআউট, ম্যাগাজিন থেকে অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া হয়।

৩. রাইটিং: রাইটিং অংশ হচ্ছে সম্পূর্ণ পরীক্ষার সবচেয়ে কঠিন অংশ। তবে এটি সহজ না কঠিন তা নির্ভর করে আপনার প্রস্তুতি ও দক্ষতার উপর। টেস্টে আপনার ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট সৃজনশীল হতে হবে। এই টেস্টে ১ঘন্টা সময়ের মধ্যে আপনাকে দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রথম অংশে একটি গ্রাফ, ডায়াগ্রাম, চার্ট, বা ম্যাপ দেওয়া থাকে যেটি নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করতে হয়। পরের অংশে একটি মতামত থাকবে সেটির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। তবে প্রথম অংশের চেয়ে দ্বিতীয় অংশে বেশি নাম্বার থাকে এবং সময়ও বেশি দিতে হয়।

একাডেমিক টেস্ট ও জেনারেল টেস্টে কিছুটা পার্থক্য আছে। জেনারেল টেস্টে প্রথম প্রশ্নে গ্রাফ, ডায়াগ্রাম, চার্ট বা ম্যাপের পরিবর্তে ফরমাল বা পারসোনাল লেটার লিখতে দেওয়া হয়।

৪. স্পিকিং: ইংরেজিতে আপনি কতটা গুছিয়ে, সুন্দর করে ও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন সেই দক্ষতা যাচাই করা হয় স্পিকিং টেস্টের মাধ্যমে। পরীক্ষার্থীদের ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয় যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, শখ ইত্যাদি নিয়ে। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ২ মিনিট কথা বলতে হয়। তৃতীয় অংশে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে ৪-৫ মিনিট কথোপকথন করতে হয় বা প্রশ্ন-উত্তর চলে।


IELTS এর প্রস্তুতি

IELTS student এর পড়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত

IELTS পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মনস্থির করতে হবে যে আপনি খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিবেন। তবে IELTS এর প্রস্তুতি আসলে কেমন হবে সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে আগে থেকে আপনার ইংরেজির উপর দখল কেমন অনেকটা তার উপর। তবুও আপনাকে যথেষ্ট প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হবে আর ভালো প্রস্তুতি নিলে আগের বেসিক ঠিক করাও সম্ভব। IELTS পড়ার রুটিনটি কেমন হবে সেটি সম্পূর্ণভাবে আপনার উপর নির্ভর করে ও কিছু বিষয় রয়েছে-

  • পরিশ্রম করার মন-মানসিকতা থাকতে হবে।  
  • নিজে একটি রুটিন তৈরী করে পড়ার টেবিলের সামনে রাখুন।
  • নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে এবং বুঝে বুঝে পড়ুন।
  • ছাত্র হলে আপনার একাডেমিক  পড়াশোনার বাহিরে অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। 
  • চাকরিজীবী হলে অফিস শেষ করে কমপক্ষে ২ঘন্টা সময় বের করতে হবে। 
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বিরতিহীনভাবে পড়তে হবে। 
  • মোটামুটি স্কোর করার জন্য হলেও কমপক্ষে ৬/৭মাস একটানা লেগে থাকতে হবে ও সাথে কোচিং বা একজন মেন্টরের সাহায্য নিতে পারেন। 
  • বেসিক ভালো থাকলে ও স্কোর ভালো করতে চাইলে ৩/৪ ঘন্টা পড়ুন। 
  • পড়ার সময় মোবাইল ফোন দূরে রাখুন।
  • যখন প্রিপারেশন নিবেন ওই সময়টাতে সবসময় ইংরেজিতে ডুবে থাকার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ ইংরেজি মুভি দেখুন, গান শুনুন, ভিডিও দেখুন। এসময় নিয়মিত ইংরেজি মার্ক করে করে পত্রিকা পড়ুন ও বোঝার চেষ্টা করুন।
  • আপনি ইংরেজিতে দুর্বল হলে আপনাকে নিয়মিত আরও বেশি সময় পড়াশোনা করতে হবে। 
  • যারা শুধুমাত্র IELTS এর প্রিপারেশনই নিচ্ছেন তারা একটি কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিতে পারেন ও পড়াশোনায় ৫/৬ ঘন্টা সময় দিন।
  • স্পিকিং এর জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে কথা বলুন এতে জড়তা কেটে যাবে।
  • রাইটিং এর জন্য প্র্যাকটিস করুন ও খাতায় লিখুন এবং আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়ান। 
  • চারটি মডিউল প্রিপারেশনের ক্ষেত্রে আপনি যে অংশে বেশি দুর্বল সেই অংশে বেশি সময় দিন। আপনি রাইটিং এ দুর্বল হলে ১/২ ঘন্টা এখানে সময় দিন বাকিগুলো ভাগ করে নিন সুবিধা মতো।
  • আর বেসিক দুর্বল হলে আপনি প্রথমে আপনার বেসিকের উপর জোর দিন। গ্রামার, উচ্চারণ, লিসেনিং, শব্দভান্ডার এগুলোতে জোর দিন। 
  • IELTS এর বইগুলো নিয়মিত ভাগ করে করে পড়ুন এছাড়া অন্যান্য সোর্স থেকেও পড়াশোনা করুন।
  • প্রতিদিন একটু একটু করে হলেও নিজেকে ইমপ্রুভ করুন, ভুল সংশোধন করুন, কোথায় সমস্যা হচ্ছে খুঁজে বের করুন।
  • যারা শুধুমাত্র IELTS করছেন তারা পরীক্ষার ২০-২৫ দিন আগ থেকে ১০-১২ ঘন্টা পড়াশোনায় সময় দিন। বাকিরা তাদের সুবিধামতো সময় ব্যবহার করুন ও ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগান।
  • যেহেতু পরীক্ষার হলে সময় কম পাবেন সেহেতু আগে থেকেই পরীক্ষার হলের বিষয় চিন্তা করে প্রস্তুতি নিন। 
  • পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসবে প্রশ্নপত্র ও বিভিন্ন মডেল টেস্টের সমাধান করার চেষ্টা করুন। 

IELTS এর রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ও খরচ

IELTS এর জন্য আপনাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি এর অধীনে থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা জেলার অধীনে পরীক্ষার সেন্টার রয়েছে।

আপনি অনলাইন বা টেস্ট সেন্টারে গিয়ে দুইভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা অনলাইনেই পাবেন। রেজিস্ট্রেশনের জন্য যা যা করবেন-

  • রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনার অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে। 
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ২কপি ছবি। এক্ষেত্রে ৬মাস আগের ছবি ব্যবহার করবেন না। ছবি তোলার সময় চশমা ব্যবহার করবেন না।
  • আপনার আইইএলটিএস স্কোরটি যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পাঠাতে চান তাহলে এপ্লিকেশন ফর্মে সেই বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।
  • অফলাইনে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সেন্টারে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম নির্ধারিত ফি সহ জমা দিতে হবে। 
  • অনলাইনে আবেদন করলে সকল কাজ অনলাইনে করতে পারবেন। আর ফি জমা দানের ক্ষেত্রে আপনার নির্ধারিত সেন্টারে গিয়ে বা কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করতে পারেন। 

IELTS রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকা অনুসারে ১৭০০০-১৮০০০ টাকার মত। ডলারের মানের উপর ভিত্তি করে এটি কম বেশি হতে পারে।


IELTS কোর্স যেখানে করবেন

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার রয়েছে যেখানে IELTS কোর্স চালু রয়েছে। আপনি অনলাইন বা অফলাইনে কোর্সগুলো করতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠানে আপনাকে  IELTS সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে গাইডলাইন দেওয়া হবে। তবে আপনি চাইলে প্রাইভেটও পড়তে পারেন। 

বাংলাদেশে অনেক কোচিং সেন্টার থাকলেও বেশ কিছু জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার রয়েছে যেখান থেকে আপনি বেশ ভালো গাইডলাইন পাবেন। সেগুলো হলো-

  • ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ
  • সেন্ট জন’স টিউটোরিয়াল  
  • সল্ট ল্যাব
  • উইংস লার্নিং সেন্টার 
  • ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টার 
  • মেন্টরস
  • সাইফুর’স আইইএলটিএস কোচিং সেন্টার 
  • ব্রিটিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব এবং আইইএলটিএস সেন্টার
  • অ্যাকসেন্ট ব্রিটিশ লার্নিং সেন্টার 
  • ফিউচার এড ইংরেজি বাংলাদেশ 
  • জিআরইসি বাংলাদেশ

এছাড়া আরও অনেক কোচিং সেন্টার ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ অনুসারে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন।

IELTS প্রস্তুতির বই

IELTS পরীক্ষার জন্য বাজারে অনেক বই রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বই সংগ্রহ করতে হবে এবং কিছু বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করে নিতে পারেন। IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো-

  • The Official Cambridge Guide (7-16)
  • Cambridge Vocabulary for IELTS with answers
  • TOEFL by Cliffs
  • Common Mistakes in English (English version)
  • Common Mistakes At IELTS Intermediate + Advanced Book
  • Practical English Usage by Michael Swan
  • IELTS Practice Tests Plus
  • Reading Skills 
  • How To Get 7+ In IELTS Reading 
  • Saifur’s IELTS Writing
  • Saifur’s listening and Speaking Practice Book

ঘরে বসে যেভাবে IELTS এর প্রস্তুতি নিবেন

ঘরে বসে IELTS প্রস্তুতির জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি:

মনস্থির করুন

আপনি কি সত্যিই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বা বিদেশে পাড়ি জমাতে চান কিনা সে বিষয়টি নিজে থেকেই নিজেই সর্বপ্রথম নিশ্চিত করুন। যদি আপনি মনস্থির করেন তবে IELTS প্রস্তুতির কথা ভাববেন। আর ঘরে বসে প্রস্তুতি নিতে গেলে আপনাকে আরও দৃঢ় মানসিকতার হতে হবে।

ইন্টারনেট সংযোগ

প্রযুক্তির কল্যাণে আপনি চাইলে ঘরে বসেই IELTS এর প্রস্তুতি নিতে পারেন। এর জন্য আপনার ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন। IELTS কি, কেন, প্রশ্ন কাঠামোসহ প্রাথমিক ধারণা আপনি ঘরে বসেই নিতে পারেন। মনে রাখবেন যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে কখনওই ভালো স্কোর করা সম্ভব নয়। 

বই কিনুন

IELTS এর জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই বর্তমানে ইন্টারনেট নির্ভর, আপনাকে শুধু খুঁজে বের করতে হবে। আপনি চাইলে বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারেন তবে কিছু বই কেনা জরুরি। আপনি ক্যামব্রিজ সিরিজের (৭-১৬) কিনে ফেলুন। এছাড়া বাজারে আরও অনেক বই রয়েছে সেগুলো কিনুন।

প্রশ্ন কাঠামো দেখুন

বই কিনলেই হবে না পুরো প্রশ্ন কাঠামো ও মানবন্টন সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিন। এগুলো বইয়ের প্রথমেই পাবেন। ভালোভাবে দেখুন, ধারণা রাখুন। প্রশ্ন পদ্ধতি, সময়, মানবন্টন, মডিউল ফরম্যাট, ব্যান্ড স্কোর এগুলো জেনে রাখুন।

দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করুন

আপনি কোন বিষয়ে দুর্বল সেটি খুঁজে বের করা জরুরি। আপনার বেসিক দুর্বল হলে আপনি IELTS প্রস্তুতির ৬ মাস আগে থেকে বেসিক ঠিক করুন। গ্রামার ভালোভাবে রপ্ত করুন, সবকিছু বুঝে পড়ুন। মুখস্থ করতে যাবেন না। আবার অন্যগুলোতে দুর্বল থাকলে তার প্রস্তুতি নিন। 

সময় বন্টন করুন

IELTS এর জন্য সময় বন্টন বেশ জরুরি। রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং, লিসেনিং মডিউল অনুসারে সময় ভাগ করে নিন। আলাদাভাবে সময় বরাদ্দ করে প্রস্তুতি নিন প্রথম থেকেই। তাছাড়া পড়াশোনার জন্য ভোরের সময় ও রাতের সময় কাজে লাগাতে পারেন। যতবেশি পারবেন সময় দিন।

অনলাইন কোর্স

বর্তমানে সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় ঘরে বসে আপনি IELTS কোর্সও করতে পারেন। কি পড়বো, কোথা থেকে শুরু করবো, কিভাবে পড়লে ভালো স্কোর করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে আপনি যখন দ্বিধান্বিত তখন অনলাইনে স্বল্প মূল্যে একটি কোর্স করুন। এতে আপনি একটি ভালো গাইডলাইন পাবেন। বাহিরে গিয়ে কোর্স করলে সময়, শ্রম উভয়ই নষ্ট হবে৷ তাই ঘরে বসে প্রস্তুতি নিতে চাইলে এটি উপযোগী। 

নিয়মিত চর্চা করুন

নিয়মিত ও নিয়মমাফিক চর্চা না করে IELTS এ কখনও ভালো স্কোর করা সম্ভব নয়। ইংরেজি ভাষার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। 

ভোকাবুলারি বৃদ্ধি

ভোকাবুলারি বৃদ্ধি করুন নিয়মিত। আপনাকে নিয়মিত এটি চর্চা করতেই হবে। ইউনিক শব্দ শিখুন। IELTS Vocabulary Prep AppIELTS Vocabulary অ্যাপস ব্যবহার করুন যাতে আপনার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। ভোকাবুলারি নম্বর বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী।

মক টেস্ট

মক টেস্টের মাধ্যমে আপনার যোগ্যতা যাচাই করুন। ঘরে বসে অনলাইনে মক টেস্ট দিন। যতবেশি মক টেস্ট দিবেন ততবেশি আপনার ধারণা বাড়বে। ভুল হলে সেগুলোও সাথে সাথে সংশোধন করুন পরবর্তীতে এগুলো খেয়াল রাখুন।

ওয়েবসাইট

IELTS এর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখুন। নিয়মিত ব্লগ পড়ুন। এতে নতুন নতুন ধারণা পাবেন। IELTS MentorIELTS Blog এসব ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। 

ইউটিউব চ্যানেল

ইউটিউব চ্যানেল দেখে আপনি IELTS এর বিষয়ে বেশ ভালো ধারণা পাবেন সেই সাথে আপনার দক্ষতা বাড়াতেও কাজে দেবে। IELTS LizIELTS UPE2 IELTSCrack-IELTS with RobEnglish Speaking Success Emma IELTSE2 IELTSPapa EnglishETJ EnglishAnna EnglishEllen Show ইত্যাদি ইউটিউব চ্যানেলগুলো দেখতে পারেন।

IELTS Reading এ ভালো করার উপায়

অনেকেই রিডিং অংশটিকে অনেক সহজ মনে করেন তবে আদৌও তা খুব সহজ নয়। রিডিং স্কিল ডেভোলপ করা খুবই জরুরি। এজন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটানা পড়ুন। ভোকাবুলারির নিচে মার্ক করুন ও পরে দেখে নিন। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা, জার্নাল, আর্টিকেল পড়ুন। প্রথমে কষ্ট হলেও পরে অভ্যাসে পরিণত হবে৷ তবে কিছু পড়লে সেটার সারমর্ম বোঝার চেষ্টা করুন। যেটুকু পড়বেন সেটাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

IELTS Writing এ ভালো করার উপায়

রাইটিং এ ভালো করার জন্য আপনাকে বেশি বেশি প্র্যাকটিস করতে হবে, লিখতে হবে। প্রতিদিন ১-২ পাতা লেখার চেষ্টা করুন। যা পড়ছেন তা লিখুন। লেখার সময় বানান, গ্রামার, ভোকাবুলারি এসব বিষয়ে খেয়াল রাখুন। ঘড়ি ধরে লেখার অভ্যাস করুন যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব লিখতে পারেন। IELTS UP ইউটিউব চ্যালেনটি এ বিষয়ে আপনাকে সহায়তা করবে। 

IELTS Listening এ ভালো করার উপায়

লিসেনিং এর জন্য ভালো শ্রোতা হওয়া জরুরি। আপনি লিসেনিং এর জন্য বিসিবি সংবাদ, ইংরেজি বিভিন্ন ভিডিও, মুভি, টিভি সিরিজ দেখতে পারেন, গান শুনতে পারেন। মনোযোগ দিয়ে শুনলে আপনি লিসেনিং এ ইমপ্রুভ করতে পারবেন।

IELTS Speaking এ ভালো করার উপায়

স্পিকিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে দ্রুত ইংরেজি বলতে হবে না বরং স্বাভাবিকভাবেই বলুন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনি কতটা স্পষ্টভাবে ইংরেজি বলতে পারছেন। নিজে নিজে প্র্যাকটিস করুন। ভালো হয় আপনার মত একজনকে খুঁজে বের করুন যার সাথে চর্চা করতে পারেন। Speak English অ্যাপটা ব্যবহার করতে পারেন।

IELTS মক টেস্ট

IELTS পরীক্ষা দেবার আগে কোশ্চেন প্যাটার্নে নিজেকে যাচাই করার জন্য যে পরীক্ষা দেওয়া হয় তাকেই IELTS Mock Test বলে। মক টেস্টে IELTS পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন কাঠামো অনুসরণ করা হয়। মক টেস্ট দেবার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রস্তুতির বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন ও আরও ভালো করতে পারবেন। এটি মূল পরীক্ষার আগে মডেল টেস্টের অনুরূপ। আপনি নিজেকে যাচাই, নিজের ব্যান্ড স্কোর এসব বিষয়ে বুঝতে পারবেন। কোচিং বা অনলাইনে মক টেস্ট দিতে পারেন। যতবেশি মক টেস্ট দিবেন ততবেশি ভালো করবেন। IELTS Online Tests ওয়েবসাইটে গিয়ে ফ্রিতে মক টেস্ট দিতে পারেন।

আইইএলটিএস (IELTS) ব্যান্ড স্কোর হিসাব করা হয় যেভাবে

IELTS স্কোর হলো ৯ অর্থাৎ এই পরীক্ষায় ব্যান্ড স্কোর ৯। চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এগুলোর গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোর দেওয়া হয়। আপনার ইংরেজির লেভেল অনুসারে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে আপনাকে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হবে। নিচে এই লেভেলটি দেওয়া হলো:

ব্যান্ড স্কোরলেভেল
দক্ষ
খুব ভালো
ভালো
উপযুক্ত
পরিমিতি
সীমিত
অত্যন্ত সীমিত
অনিয়মিত
ব্যবহারকারী নয়
অনুপস্থিত

IELTS পরীক্ষা কেন্দ্রে যেসকল জিনিস নিতে পারবেন

  • আপনার পাসপোর্ট। অবশ্যই মেয়াদ থাকতে হবে।
  • কলম, রাবার, শার্পনার নিতে পারবেন।
  • পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস সাথে রাখা যাবে না।

IELTS পরীক্ষার ফলাফল ও মেয়াদ

ব্রিটিশ কাউন্সিল বা আইডিপি যেখানেই পরীক্ষা দিন পরীক্ষার ফলাফল তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটেই পাবেন। সাধারণত পেপার বেইসড পরীক্ষার ফলাফল ১৩ দিনে ও কম্পিউটার বেইসড পরীক্ষার ফলাফল ৫ দিনে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিল বা আইডিপির মূল শাখা থেকে টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম আনতে পারেন।

আপনি যে ফলাফল করবেন বা স্কোর পাবেন তার মেয়াদ ২বছর। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আপনাকে আবার পরীক্ষা দিতে হবে।

আইইএলটিএস পরীক্ষা কখন হয়

সারা বছরে অন্তত ৪৮টি পরীক্ষার দিন নির্ধারিত  করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে প্রতি মাসে অন্তত ৩ থেকে ৪টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ পরীক্ষা দিতে আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। 

স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা

প্রথমে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন দেশে ও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে চান। কারণ এক এক দেশে পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি খরচ এক এক রকম৷ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি আলাদা। এজন্য স্করালশিপ পেলে আপনার চাপ অনেকটাই কমবে।

স্কলারশিপ নিয়ে কোন দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া উচিত এটি সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে। আপনার স্কোর যত ভালো আপনি তত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। আপনি যে  দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান বা নির্ধারিত না থাকলে সেগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখতে হবে। ওখানে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন। এগুলো দেখে আবেদন করুন। স্কলারশিপ পেতে আপনার ভালো স্কোর, সকল একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট, এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স, পাবলিকেশন থাকতে হবে ও আর্থিক সহায়তার আবেদন করতে হবে। সব যাচাই-বাছাই করে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে সিলেক্ট করবে।

পরিশেষে

IELTS এমন একটি পরীক্ষা যেখানে পাশ-ফেলের কোনো বিষয় নেই। আপনার ইংরেজিতে দক্ষতা ও পাশাপাশি আপনার পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তাই আপনার লক্ষ্য স্থির রেখে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মনস্থির করার পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা উচিত। এই একটি পরীক্ষার স্কোর দিয়েই বদলে যেতে পারে আপনার জীবন। তাই গুছিয়ে পড়াশোনা করুন। জীবন বদলে দেওয়া একমাত্র এই পরীক্ষায় আপনার স্বপ্ন সত্যি করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

প্রিয় পাঠক, কেমন লাগলো IELTS নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা? আশাকরি আমরা আপনাদের IELTS এর বিষয়ে একটা প্রথমিক ধারণা দিতে পেরেছি। আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানান।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন