সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটে ব্যবসার প্রসার হচ্ছে খুব দ্রুত, যা এখান থেকে ১০ বছর আগেও মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। আর সেজন্য ওয়েব ডিজাইন থেকে ইনকাম করার সুযোগও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আশার কথা হলো ওয়েব ডিজাইনিং শেখার জন্য ইন্টারনেটে পর্যাপ্ত রিসোর্সও আছে যা একজন ব্যক্তিকে ঘরে বসে দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হতে সহায়তা করবে।
তথাপি, এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ওয়েব ডিজাইন কি, ভবিষ্যৎ কেমন? ওয়েব ডিজাইনার হতে কি কি শিখতে হয়, ওয়েব ডিজাইনিং শিখে কোথায় কাজ করবো, ওয়েব ডিজাইন শিখতে কতো দিন সময় লাগতে পারে, বাংলাদেশ থেকে ওয়েব ডিজাইন শেখার সর্বোত্তম উপায় কি কি? যারা ওয়েব ডিজাইন শিখতে ইচ্ছুক কিংবা ইন্টারনেট থেকে ইনকাম করার কথা ভাবছেন কিন্তু কীভাবে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তাদের জীবন বদলে দিবে এই আর্টিকেলটি।
ওয়েব ডিজাইন কি?
বেশিরভাগ নতুন ডিজাইনার ওয়েব ডিজাইন কনসেপ্ট বুঝতে ভুল করেন। ইন্টারনেটে প্রদর্শিত সকল প্রকার ওয়েবসাইট ডিজাইনই ওয়েব ডিজাইন। কোন কোডিং নলেজ ছাড়াও ওয়েব ডিজাইন করা যায়। তবে পেশাদার ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে আরও ইন্টারেকটিভ ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হয় যা হবে সর্বোত্তম ইউজার এক্সপেরিয়েন্স সম্পন্ন। আর এজন্য আপনার কোডিং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন যেমন HTML, CSS, JavaScript. আর এভাবেই ফ্রন্ট-ইন্ড ডেভলপার হিসাবে আপনি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
যদিও সেই ভালো ওয়েব ডিজাইনার যে ইউজার এবং ওয়েব পেজের মধ্যে যোগাযোগ সমস্যা সমাধান করতে পারে। ওয়েব ডিজাইনের কাজ সাধারণত দুই ধরণের। যেমন, ফ্রন্ট-ইন্ড ডেভলপিং এবং ব্যাক-ইন্ড ডেভলপিং।
১. ফ্রন্ট-ইন্ড ডেভলপার
ফ্রন্ট-ইন্ডকে ক্লায়েন্ট সাইড হিসাবে ধরা হয় এবং ব্যাক-ইন্ডকে সার্ভার সাইড। একটি ওয়েবসাইটকে প্রদর্শনের জন্য ফ্রন্ট-ইন্ডে HTML, CSS, JavaScript এবং অন্যান্য কোড একত্রে কাজ করে। এটি ওয়েবসাইটের সেই অংশের কাজ যেখানে ইউজার সরাসরি ইন্টারেক্ট করে। তবে আপনি HTML, CSS, JavaScript শিখে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও স্পেশালাইজড ফিল্ডে আপনি এগিয়ে যাবেন। আপনি খুব সহজে বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক যেমন React or Bootstrap দিয়ে কাজ সেরে ফেলতে পারেন অথবা JavaScript or jQuery দিয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করে ক্যারিয়ারকে আরও শক্ত পজিশনে নিয়ে যেতে পারবেন। যদিও এসব ব্যাপার আরও এ্যাডভান্সড আলোচনার অংশ। সুতরাং প্রথম দিকে এসব নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
২. ব্যাক-ইন্ড ডেভলপার
আগেই বলেছি ব্যাক-ইন্ড হলো সার্ভার সাইড এবং একটি ওয়েবসাইট প্রদর্শনের জন্য পেছনে যতো কাজ হয় সেটা ব্যাক-ইন্ড। একটি ওয়েবসাইট সার্ভারে হোস্ট করা থাকে। যখনই কোন ইউজার নেভিগেটিং এর মাধ্যমে স্পেসিফিক সেকশনে কুয়েরী বা রিকুয়েস্ট করে, তখন সেই ইনকামিং কমান্ড অনুসারে সার্ভার থেকে সঠিক তথ্য প্রদর্শন করে। যেসব ওয়েব ডেভলপার ব্যাক-ইন্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে তারা বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা ফ্রেমওয়ার্ক যেমন PHP, Python (Django), Java, SQL ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাতে সার্ভার, এ্যাপলিকেশন এবং ডাটাবেজ একত্রে সঠিকভাবে কাজ করে।
আপনি যদি একজন ওয়েব ডিজাইনার হতে চান তাহলে আপনাকে এসব ব্যাক-ইন্ডের ব্যাপার জানতে হবে তা নয় তবে এগুলার উদ্দেশ্য কি বা কীভাবে কাজ করে তার বেসিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকা ভালো।
কীভাবে ওয়েব ডিজাইন শিখবেন
একজন ওয়েব ডিজাইনারের কোন কোন স্কিল থাকা প্রয়োজন বা কীভাবে শিখবেন? একজন নতুন ডিজাইনার যখন ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তখন তার কি স্কিল থাকা দরকার বা আর নতুন কি শেখা জরুরী তা বুঝে উঠতে পারেন না। এই অংশে আমরা একজন নতুন ডিজাইনারের কি কি দক্ষতা নিশ্চিত করা উচিত তা নিয়ে কথা বলবো।
১. ডিজাইনের বেসিক নিয়মগুলি আয়ত্ত্ব করুন
সহজভাবে বলতে গেলে, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন হল রঙ, চিত্র, ফটোগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি, লেআউট, সাদা স্থান এবং এর মতো ভিজ্যুয়াল উপাদান এবং প্রভাবগুলির মাধ্যমে একটি ওয়েব/অ্যাপের UI এবং UX উন্নত করার প্রক্রিয়া। UI ডিজাইনের বিপরীতে, এটি ওয়েব/অ্যাপ ডিজাইনের ভিজ্যুয়াল এফেক্টের উপর আরো বেশি ফোকাস করে এবং ব্যবহারকারীদের ইন্টারেক্ট করে। নতুনদের হিসাবে, আপনি যদি একটি দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল ডিজাইন পেতে চান, তবে আপনাকে scale, visual hierarchy, balance, এবং contrast এর প্রাথমিক নীতিগুলি মাথায় রাখতে হবে, যা আপনাকে এনগেজমেন্ট এবং ইউজাবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
২. লেআউট ডিজাইন শিখুন
লেআউট ডিজাইন হল একটি পেজের ভিজ্যুয়াল উপাদান - যেমন text, images, এবং shapes সাজানোর প্রক্রিয়া। লেআউট ডিজাইন ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি overall appearance এবং পেজের গ্রাফিক উপাদানগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে যাতে পার্ফমেন্স বৃদ্ধি পায় এবং মেসেজ উপস্থাপন করতে পারে।
৩. কালার প্রিন্সিপাল শিখুন
একটি ওয়েব পেজে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ দর্শকদের ভিন্ন ভিন্ন কালার বা ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এজন্য এটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সুতরাং কালার প্রিন্সিপাল শিখুন, যা আপনার ওয়েবসাইটের ইফেক্টিভ কালার স্কিম তৈরি করতে পারে।
৪. ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইনে বেসিক দক্ষতা অর্জন করুন
ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইন অর্থ হল আকর্ষণীয় ইন্টারফেস তৈরি করা। ওয়েব ডিজাইনারদের অবশ্যই ইন্টারঅ্যাক্টিভ ডিজাইন সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকা উচিত, যেমন ডিজাইন স্ট্রাটেজি এবং প্রোটোটাইপ ইন্টারঅ্যাকশন তৈরি করা, যা আপনাকে আপনার ভিজিটরদের ইউজার-ফ্রেন্ডলি অভিজ্ঞতা দিবে।
৫. প্রোটোটাইপিং এবং ডিজাইন টুলের ব্যবহার শিখুন
একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনেক প্রোটোটাইপিং এবং ডিজাইন টুলের প্রয়োজন হয়। নতুন হিসেবে, আপনাকে Figma/InVisionStudio এর মতো একটি বেছে নিতে হবে যা ব্যবহার করা সহজ এবং আপনাকে দ্রুত আপনার ভবিষ্যত ওয়েবসাইটের প্রথম ভিজ্যুয়াল ইম্প্রেশন পেতে সাহায্য করবে। ফিগমার মাধ্যমে মিনিটের মধ্যে আপনার আইডিয়াগুলি ভেলিডেট করতে পারবেন।
৬. বেসিক কোডিং শিখুন
একজন ডিজাইনার হিসাবে, বেসিক প্রোগ্রামিং জ্ঞান যেমন HTML, CSS, JavaScript আপনাকে এগিয়ে রাখবে। নতুনদের কোডিং শেখার জন্য সময় দিতে হবে। তাহলে ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে তারা ভালো করবে।
৭. নেটওয়ার্কিং শিখুন
আপনি একজন শিক্ষানবিস ডিজাইনার হিসাবে, ক্যারিয়ার উন্নত করতে বা আপনার দক্ষতা বা ওয়েব প্রোডাক্ট বিক্রি করতে তা গ্রাহকদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা শিখতে হবে। এজন্য একজন ডিজাইনারের জন্য শেষ কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতা হল নেটওয়ার্কিং দক্ষতা এবং এমনভাবে ডিজাইন উপস্থাপন করতে পারা যা আপনার গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করে।
ওয়েব ডিজাইনের পাঁচটি বেসিক এলিমেন্ট শিখুন
আপনি উপরের দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করার পরে, আপনার ওয়েব ডিজাইন শুরু করার সময় এসেছে৷ এখানে পাঁচটি বেসিক এলিমেন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনাকে সঠিকভাবে শিখতে হবে।
১. অভারঅল লেআউট
আপনার ওয়েবসাইটের অভারঅল লুক ওয়েব ডিজাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্যবহারকারীরা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসার মতামত তৈরি করতে মাত্র ৫০ মিলিসেকেন্ড সময় নেয় এবং তারপরেই তারা নির্ধারণ করে তারা থাকবে নাকি চলে যাবে। অতএব, আপনার ডিজাইনকে simple, clean এবং accessible রাখতে হবে এবং একই সময়ে ডিজাইন সংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল রাখতে গ্রিড-ভিত্তিক ডিজাইন ব্যবহার করতে হবে, এইভাবে একটি আকর্ষনীয় overall layout তৈরি করতে হবে৷
২. কালার স্কিম
আপনার সাইটের কালার প্যালেট এবং ফন্ট সরাসরি আপনার সাইট সম্পর্কে ইউজারের মতামত জানাবে এবং বেশিরভাগ নতুন ডিজাইনাররা যা দিয়ে শুরু করেন। ভাবছেন কি কালার স্কিম বেছে নেবেন? শুধু আপনার ব্র্যান্ড বা ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকান — আপনার ইউজার সম্পর্কে জানুন — তাহলেই আপনার কাজের চাপ বেঁচে যাবে এবং কালার স্কিম বাছাই করতে সহায়তা করবে।
৩. টাইপোগ্রাফি
টাইপোগ্রাফি বা ফন্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার লেখাকে সহজে পঠনযোগ্য করতে হবে, যা সাধারণত কমপক্ষে ১৬ পিক্সেল হওয়া উচিত। হেডিং এর জন্য একটি পরিপূরক ফন্ট ব্যবহার করা ভালো, তবে তিনটি টাইপফেস বা অপ্রয়োজনীয় সাইজ ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে আপনার মতো করে ক্রিয়েটিভিটির সাথে শিখতে থাকুন।
৪. নেভিগেশন
ব্যবহারকারীরা কীভাবে আপনার সাইট বা পণ্যগুলির সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং ব্যবহার করে তাতে নেভিগেশন একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। নেভিগেশন ডিজাইন হল ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ব্যবহারকারীদের নেভিগেট করার উপায় তৈরি, বিশ্লেষণ এবং প্রয়োগ করার শৃঙ্খলা। আপনার সাইটে সঠিক জায়গায় আপনার নেভিগেশনাল উপাদান ব্যবহার করতে কিছু সময় নিন। আর এজন্য আপনাকে এ অংশে বেশ টাইম দিতে হবে।
৫. কন্টেন্ট
আপনি লেআউট, কালার স্কিম, টাইপফেস এবং নেভিগেশন ডিজাইন শেখার পরে, এখন আপনাকে আপনার সাইটে বিষয়বস্তু যোগ করা শিখতে হবে। কন্টেন্ট একটি ব্রান্ডকে বিশ্বস্ত এবং শীর্ষস্থানীয় স্থান ধরে রাখতে সহায়তা করে৷ তবে অপ্রয়োজনীয় শব্দ আপনার ব্র্যান্ডের প্রাথমিক পয়েন্টগুলি নিস্তেজ করে দিতে পারে। তাই আপনার বিষয়বস্তু সংগঠিত এবং তথ্যপূর্ণ করতে শুধু ছোট এবং ছোট লেআউটে আকর্ষণীয় লিড জেনারেটিং শব্দ ব্যবহার করুন।
১. প্রাকটিস, প্রাকটিস, এবং প্রাকটিস
ওয়েব ডিজাইনে ভালো করার জন্য প্রাকটিসের কোন বিকল্প নেই। আপনাকে প্রতিটি ধাপ অনেকভাবে প্রাকটিস করতে হবে। অনেকগুলো রিয়েল টাইম প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে। অন্যথায় আপনার নতুন জবে প্রবেশ করা বা ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া কঠিন হবে। আপনাকে ভালো ভালো ওয়েবসাইট দেখে তাদের মতো ফাংশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। আপনি ইন্টারনেটে সার্চ করেও অনেক ধরণের স্যাম্পল ওয়েবসাইট পাবেন। সেগুলোর মতো আপনার ডিজাইন রেডি রাখুন যাতে আপনি ক্লায়েন্টকে দেখাতে পারেন। আর সেজন্য প্রয়োজন বার বার প্রাকটিস করা। বার বার প্রাকটিস না করলে আপনি নিজেকে দক্ষ হিসাবে উপস্থাপন করতে পারবেন না। আমার কনফিডেন্সও কমে যাবে।
২. সেল ইউর স্কিল
এখন আপনি ওয়েব ডিজাইনে বেশ এগিয়ে গেছেন। যদিও দক্ষ হতে আপনাকে এবার ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট করতে হবে অথবা ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে নিউবি হিসাবে জয়েন করতে হবে। আর এজন্য আপনার দক্ষতাকে বিক্রি করা শিখতে হবে। আপনি যদি নিজেকে উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে আপনি আপনার সেবা বিক্রি করতে পারবেন না। মনে রাখবেন, যে স্কিল বিক্রি করা যায় না তা আপনার জীবনে তেমন কোন ভেলু অ্যাড করবে না। সুতরাং নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করুন।
i) আপনার গল্প বলুন
মনে করুন. আপনার ক্লায়েন্টদের বেছে নেওয়ার মতো লক্ষ লক্ষ ওয়েব ডিজাইনার রয়েছে৷ কেন তারা আপনাকে বেছে নিবে? কেন তারা আপনার সাথে কাজ করবে? আপনি এক্সট্রা কি নিয়ে আসবেন ক্লায়েন্টদের জন্য?
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি বিরক্তিকর। আপনার কাছে বলার মতো আকর্ষণীয় গল্প নেই। কিন্তু না আপনাকে বলতে হবে। একটি আকর্ষনীয় গল্প বলা এবং এটিকে আপনার ব্র্যান্ডে একীভূত করা আপনার প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে আলাদা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলির মধ্যে একটি।
ii) পোর্টফোলিও তৈরি করুন
একটি ওয়েব ডিজাইন ব্যবসা শুরু করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হল প্রথম কয়েকটি ক্লায়েন্ট পাওয়া। দেখা যায়, ক্লায়েন্ট এমন ওয়েব ডিজাইনার নিয়োগের ভয় পান যারা তাদের দক্ষতা এবং ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে না।
আর সেজন্য আপনার কোন পোর্টফোলিও না থাকলে ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পাওয়া আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। সেজন্য আপনাকে সম্ভবত বিনামূল্যে কিছু কাজ করতে হবে, এবং সেটাকে পোর্টফোলিও হিসাবে দেখাতে হবে।
বিনামূল্যে ওয়েব ডিজাইন অফার করে, আপনি কিছু সুবিধা পান। যেমন।
- আপনি ভিড় থেকে আলাদা হয়ে যান (কারণ বেশিরভাগই বিনামূল্যে ওয়েব ডিজাইন করে না)।
- আপনি একজন অভিজ্ঞ ওয়েব ডিজাইনার হয়ে উঠেন এবং নিয়োগের বিষয়ে আপনার ক্লায়েন্টের সমস্ত উদ্বেগ দূর হয়।
- আপনি দুর্দান্ত ওয়েবসাইট তৈরি করে তা আপনার পোর্টফোলিওতে যোগ করতে পারেন৷
- ভবিষ্যতে রেফারেলের জন্য কাজ করে।
তাই যেভাবেই হোক পোর্টফোলিও তৈরি করুন তাহলে আপনার প্রথম কাজ পেতে সহায়ক হবে এবং আপনি দ্রুত এই সেক্টরে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করে নিতে পারবেন।
iii) এ্যাকশন নিন
অভিনন্দন! আপনি আর্টিকেলটির শেষ পর্যন্ত এসেছেন যা আজকাল কম মানুষই পারে। সুতরাং আপনার ধৈর্য আছে বলা যায়। আর তার মানে আপনি পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর বেশিরভাগ সেক্টরই ধৈর্য ধরে শিখতে হয় এবং প্রাকটিস করতে হয়। সুতরাং দেরি না করে একটি প্লান করে শেখার কাজ শুরু করে দিন।
এনিওয়ে, সংক্ষেপে যদি ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার গড়বেন তার সারমর্ম করি তাহলে দাঁড়ায়, ওয়েব ডিজাইন দ্রুত শিখতে নিচের ৭ টি ধাপ পার হতে হবে।
- ডিজাইনের বেসিক নিয়মগুলি আয়ত্ত করুন
- লেআউট ডিজাইন এবং কালার প্রিন্সিপল শিখুন
- ইন্টারেকশন ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপ শিখুন
- কোডিং আয়ত্ত করুন
- বেসিক এলিমেন্ট নিয়ে কাজ করুন
- তারপর অনুশীলন, অনুশীলন, এবং অনুশীলন
- সবশেষে নেটওয়ার্কিং এবং নিজের স্কিল বিক্রি করা শিখুন
এটি অতি সহজ পরিকল্পনা। বাকি শুধু কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে লেগে থাকা। আপনি যদি প্রতি সন্ধ্যায় ২ ঘন্টা নেটফ্লিক্স বা ইউটিউব দেখেন কিংবা আপনার ফেসবুক বা টিকটক ফিড রিফ্রেশ করেন তবে কিছুই ঘটবে না।
আর কোন অজুহাত কখনও সাফল্য এনে দিতে পারে না। বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্টে ভালো করার বেশ সুযোগ, সেটা কাজে লাগাতে বসে যান।
আমার কথা শেষ। চলুন কাজে নেমে পড়ি!
৩. কিছু দরকারী প্রশ্নের উত্তর
অনেকেই কিছু অসাধারণ বেসিক প্রশ্ন করেন যার উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি। তারপরও যদি আরও কিছু জানার থাকে কমেন্ট করবেন, ইনশাআল্লাহ আপনাকে সহায়তা করতে আমাদের অভিজ্ঞ টিম চলে আসবে।
i) ওয়েব ডিজাইন শিখতে কত সময় লাগে?
এটি সম্পূর্ণ আপনার প্রাকটিস করার সময়ের উপর নির্ভর করে এবং আপনি শেখার জন্য কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনকে সাইড স্কিল হিসাবে শিখেন, আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট পেতে প্রায় দুই বছর সময় নেবে। তবে আপনি যদি অবিচল থাকেন, বেশি সময় দেন, তখন আপনার সম্পূর্ণ শেখার প্রসেসটি দ্রুত হয়ে যাবে। আর আপনি যদি অলস হন তবে হয়তো কখনও শেখা সম্ভব না!
ii) একজন ওয়েব ডিজাইনারের গড় বেতন কত?
সাম্প্রতিক সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে একজন ওয়েব ডিজাইনারের গড় বেতন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে এটি আপনার স্কিল অনুসারে পরিবর্তিন হয়। কেউ কেউ ১০ বছর ধরে এ সেক্টরে আছে এবং তারা প্রায় ২-৩ লাখ টাকা স্যালারি পাচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং করে, আবার কেউ কেউ ৫ বছর পরেই লাখের কাছাকাছি ইনকাম করছে (আমার ব্যক্তিগত পরিচিত সার্কেল হিসাবে করে বললাম)। সুতরাং সম্ভাবনা এখানে অবশ্যই আছে, আপনাকে শুধু ১-২ বছর ধরে দক্ষ হতে হবে।
Iii) ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর পার্থক্য কি?
ওয়েব ডিজাইন হল এমন জিনিস যা আপনি দেখতে পারেন, একটি ওয়েবসাইটের ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট। আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হল এমন জিনিস যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, যে কাজটি পর্দার আড়ালে চলে। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মধ্যে রয়েছে কোডিং, প্রোগ্রামিং, এপিআই, ইন্টিগ্রেশন ইত্যাদি। তবে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্ট দুটারই প্রচুর চাহিদা এই বিশ্বে।
শেষ কথা
ওয়েব ডিজাইন কি ডিজিটাল যাযাবর লাইফস্টাইলের জন্য একটি ভাল পছন্দ? একেবারে। বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে বাড়ি বসে সহজে ইনকাম করার এর থেকে ভালো সুযোগ মনে হয় আর নাই। সুতরাং শুরু করে দিন আজ থেকেই। আপনার সাফল্যের গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন