রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি | গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার





গ্রাফিক্স ডিজাইন কি : ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনের শিল্প বা পেশা যা শ্রোতাদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছবি, শব্দ এবং ধারণাকে একত্রিত করে বাস্তবিক রূপ প্রদান করার প্রক্রিয়াই হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে কেননা, ভিজ্যুয়াল যেকোনো কিছু যত সহজে আমাদের তাৎক্ষনিক আকর্ষন করে, লেখা বা শোনার মাধ্যমে এত দ্রুত উপলব্ধি করা অনেকটাই অসম্ভব।

এজন্য Graphic Designers কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে বা হাতে কোন ধারণাকে ভিজ্যুয়াল রূপ দেয়। বিভিন্ন প্রকল্প, ইভেন্ট, প্রচারাভিযান বা পণ্যের বার্তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহৃত হয়।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করা এখন যুবক-যুবতীর-ই প্যাশন। তবে, গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার আগে Graphic Design কি সেসম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। গ্রাফিক্স ডিজাইন করে সফল হতে হলে আপনার দরকার হবে সামান্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান, শৈল্পিক মন এবং পর্যাপ্ত অনুশীলন।

আপনি যদি মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে Graphic Design হতে পারে আপনার জন্য একটি উপযুক্ত পেশা।

তাই আপনার ক্যারিয়ার বাছাই করতে, আপনার পথ চলা শুরুর সঙ্গী হতেই গ্রাফিক্স ডিজাইন কিগ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার, গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের টিউটোরিয়ালটি সাজানো হয়েছে।


গ্রাফিক্স ডিজাইন কি | What is Graphic Design in Bangla

গ্রাফিক্স ডিজাইন বলতে এমন এক প্রক্রিয়াকে বুঝায় যার মাধ্যমে কোন সুনির্দিষ্ট মতামত, অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনাকে ছবি, শব্দ, কালার ও সৃষ্টিশীলতার সমন্বয়ে কোন দৃশ্যমান বা পাঠ্যগত বিষয়বস্তুর রূপ দেওয়া যায়।

Graphic শব্দটির অর্থ মূলত এমন একটি বাস্তব চিত্রায়ন, যা আমাদের কল্পনাশক্তি এবং অভিব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত। যেমন, আমরা যদি কোন কাল্পনিক চিত্রকর্মকে কোন ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন বর্ণ বা আকৃতির রেখা কিংবা সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করি, সেটিই গ্রাফিক্স। তাছাড়া, গ্রাফিক্স ডিজাইনে টাইপোগ্রাফিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম।

সুতরাং, গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন একটি প্রযুক্তিগত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি আপনার মেধা, কল্পনাশক্তি ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে নতুন কোন দৃশ্যমান ছবি বা অবয়ব তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে আপনার আপনার চিন্তাধারা ও মতামত প্রকাশের ধরণ এবং বাস্তবজ্ঞান।

প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং উদ্দেশ্য অনুযায়ী গ্রাফিক্স ডিজাইন সহজ কিংবা জটিল উভয়ই হতে পারে। Graphic Design এর মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের নিজস্ব লোগো বানানো আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও কোন ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠাবিন্যাস তুলনামূলকভাবে বেশ জটিলই। গ্রাফিক্স ডিজাইন এ দৃশ্যমান ও বস্তুগত বিষয়াবলি, অক্ষরবিন্যাস সবকিছুই থাকতে পারে।

কাজের ধরণ অনুযায়ী গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উদ্দেশ্য দুই রকম হতে পারে;

  • বাণিজ্যিক
  • ব্যক্তিগত

আপনি যদি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন বা লোগো ডিজাইন করেন, সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক এবং আর্থিক।

তবে অনেকে তাদের অবসর সময় কাটানো এবং শৈল্পিক সত্ত্বা প্রকাশের পন্থা হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইন বেছে নেন। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত।

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বেশ কয়েকটি মূলনীতি রয়েছে, সেগুলো হলো-

  • ব্যালেন্স (balance) বা সমতা
  • কনট্রাস্ট (contrast) বা বৈপরীত্য
  • এম্ফেসাইজ (emphasize) বা গুরুত্ব
  • মুভমেন্ট (movement) বা গতিবিধি
  • প্রোপোর্শন (proportion) বা অনুপাত
  • রিদম (rhythm)

প্রযুক্তির জগতে নিজেকে একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এই নীতিগুলো মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। কেননা, এই মূলনীতিগুলো একটি ডিজাইনকে শুধু স্থিতিশীলতাই নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও কাঠামোর মাঝে রাখতে সাহায্য করে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার | Types of Graphic Design

গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রধানত ৭ প্রকার :

  1. লোগো ডিজাইন
  2. প্রোডাক্ট বা পণ্যের ডিজাইন
  3. ব্র্যান্ডিং ডিজাইন
  4. ওয়েবসাইট ডিজাইন
  5. প্রিন্ট ডিজাইন
  6. অ্যানিমেশন বা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন
  7. পাবলিশিং ডিজাইন।

1. লোগো ডিজাইন | Logo Design

যেকোন বিজনেস এর ব্রান্ডশীপ তৈরি করার জন্য লোগোর বিকল্প নেই। কোন স্টার্টারটাপ নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চাইলে প্রথমেই একটি লোগো ডিজাইন করতে হয়, যা গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক বড় সেক্টর।

আমরা যেমন ফেসবুক, পিন্টারেস্ট, গুগলঅ্যামাজন প্রভৃতি সাইটের লোগো দেখেই চিনতে পারি, তেমনি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ভ্যালু এড করতে লোগো ডিজাইন করতে হয়।

2. প্রোডাক্ট গ্রাফিক্স ডিজাইন | Product Graphic Design



আপনি যদি কোন সংস্থা বা প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাদের পণ্যের বিপণন সম্পর্কিত গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশকিছু প্রাথমিক ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেমন:

ক) একজন প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবে প্রথমেই আপনার দরকার সেই নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান। শুধু তাই নয়, সেই পণ্যটি কীভাবে একজন গ্রাহকের চাহিদার কারণ হয়ে উঠতে পারে সে সম্পর্কে একটি বাণিজ্যিক ধারণাও থাকা উচিৎ।

খ) পণ্যের চূড়ান্ত বাজারজাতকরণের আগে আপনাকে প্রাথমিকভাবে সেই পণ্যের ডিজাইন সম্পর্কিত ইলাস্ট্রেশন কিংবা স্যাম্পল বানাতে হবে, যার মধ্যে পণ্য বাজারজাতকরণ, বিপণন ছাড়াও পণ্যটিকে একজন গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্য নিহিত।

প্রোডাক্ট গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ক্ষেত্রে কিছু স্কিল (skill) বা দক্ষতা দরকার। সেগুলো নিম্নরূপ;

  • প্রোটোটাইপিং (prototyping)
  • মার্কেট রিসার্চিং (market researching)
  • থ্রিডি মডেলিং (3D modeling)

3. ব্র্যান্ডিং ডিজাইন | Branding Design

কোন প্রোডাক্টের ব্র্যান্ডিং ডিজাইন এর মাধ্যমে সেই প্রোডাক্টের প্রোমোটিং ট্যাগলাইন বা বিপণন বার্তা গ্রাহকদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। এর ফলে প্রোডাক্টটির সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রকল্পের একটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

ব্র্যান্ডিং ডিজাইনের ক্ষেত্রে মার্কেট রিসার্চিং ছাড়াও ব্র্যান্ডিং ডিজাইনারদের মধ্যে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক এবং কম্যুনিকেশন স্কিলের সমন্বয় দরকার।

4. ওয়েবসাইট গ্রাফিক্স ডিজাইন | Website Graphic Design

আমাদের দৈনন্দিন প্রযুক্তিগত জীবনে আমরা ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় প্রতিনিয়তই নানান ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারছি, কিংবা ডাউনলোড করছি বিভিন্ন অ্যাপ। এই ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলোর নান্দনিকতার পেছনেও কিন্তু রয়েছে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারেরই অবদান।

ওয়েবসাইট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে ডিজাইনারকে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন (user experience design) বা (UX) সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকতে হবে, যাতে করে ডেক্সটপ কিংবা যেকোন মোবাইল ডিভাইসেই ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ/সফটওয়্যার ব্যবহারে সুবিধা হয়।

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন সম্পর্কিত গাইডলাইনের মাধ্যমে একজন ডিজাইনার একটি সহজবোধ্য, আকর্ষণীয় এবং এসইও ফ্রেন্ডলি (SEO friendly) ডিজাইন তার গ্রাহককে উপস্থাপন করতে পারেন, সেটা হতে পারে ডিজিটাল ডিজাইন (অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের ডিজাইন) কিংবা কোন প্রিন্ট ডিজাইন (বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন বা প্রচারপত্র)।

ওয়েবসাইট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে যেসকল স্কিলের প্রয়োজন হয়:

  • ব্র্যান্ডিং স্কিল (branding skill)
  • ইউএক্স ডিজাইন স্কিল (UX designing skill)
  • ওয়্যারফ্রেমিং (wireframing)
  • বেসিক কোডিং স্কিল (basic coding)

5. প্রিন্ট গ্রাফিক্স ডিজাইন | Print Graphic Design

বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির আধিপত্যের কারণে ডিজিটাল ডিজাইন শীর্ষস্থানে থাকলেও প্রিন্ট ডিজাইনও তেমন পিছিয়ে নেই।

কোন সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের বিজনেস কার্ড, বিলবোর্ড, প্রচারপত্র ছাড়াও তাদের নিজস্ব প্রতীক বা লোগো সম্বলিত মগ, টিশার্ট, স্টেশনারি আইটেম ইত্যাদি স্যুভেনির ডিজাইনেও নিজেদের মুন্সীয়ানা দেখাচ্ছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা।

প্রিন্ট ডিজাইন এ সাফল্য গড়তে হলে লেআউট ডিজাইন (layout designing) এবং ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি।

6. পাবলিশিং ডিজাইন | Publishing Design

কোন বই বা ম্যাগাজিন পাবলিশিং এর ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি অপরিহার্য নাম। বই বা ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ এবং পাতায় পাতায় থাকা বিভিন্ন নজরকাড়া নকশা বা অলঙ্করণ যত নান্দনিক হয়, ততোই সেই বই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

আধুনিক ও উন্নতমানের পাবলিশিং ডিজাইন এর ফলে কোন ম্যাগাজিন বা বইয়ের ক্ষেত্রে “বেস্টসেলার” তকমা জুটে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।

বই/ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের পাশাপাশি যেকোন ই-বুকের লেআউট ডিজাইন, নন-ফিকশন বইয়ের অলঙ্করণও পাবলিশিং ডিজাইনের আওতায় পড়ে।

7. অ্যানিমেশন বা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন | Motion Graphic Design

অ্যানিমেশন ডিজাইন এর ক্ষেত্রে একজন ডিজাইনার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, ইউটিউব), গণমাধ্যম (টেলিভিশন, চলচ্চিত্র) এর জন্য বিভিন্ন কার্টুন, অ্যানিমেশন/মোশন ভিডিও এবং ভিডিও গেমস এর গ্রাফিক্স ডিজাইন করে থাকেন।

একজন অ্যানিমেশন ডিজাইনার তার প্রাথমিক পর্যায়ে আঁকা বেশকিছু রাফ স্কেচিং থেকেই একটি চূড়ান্ত অ্যানিমেশন বা মোশন ভিডিও তৈরিতে সক্ষম হন।

সেক্ষেত্রে দরকার দলবদ্ধতার পাশাপাশি মানসিক দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়। এছাড়া স্টোরিবোর্ডিং ও (Storyboarding) অ্যানিমেশন ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল।

এ পর্যায়ে এসে আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে যে “একজন ডিজাইনার হিসেবে কোন ধরণের গ্রাফিক্স ডিজাইন ক্যারিয়ারের জন্য মানানসই?” সেক্ষেত্রে আপনার নিজের দক্ষতা, শখ এবং নিজস্ব পছন্দের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া বাঞ্ছনীয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন করার সফটওয়্যার | Graphic Design Software List

একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে যদি আপনি ক্যারিয়ার শুরু করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রথমে আপনার দরকার হবে ফুলস্পিড ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত একটি পার্সোনাল কম্পিউটার এবং আনুষঙ্গিক কিছু সফটওয়্যার।

এদের মধ্যে বর্তমান সময়ে অন্যতম পাঁচটি গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার এর নাম তুলে ধরছি;

1. Adobe Creative Suite

এই সফটওয়্যার বান্ডলটির মাঝে আপনি পেয়ে যাচ্ছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বেশ কয়েকটি উপকারী সফটওয়্যার। এগুলোর মাঝে Adobe photoshop, Adobe InDesign, Adobe illustrator ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

2. Affinity Designer

Adobe illustrator এর তুলনায় বেশ সহজলভ্য এই গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যারটিতে রয়েছে ভার্সেটাইল গ্রিড সিস্টেম (versatile grid system), Accurate zoom Feature এর সুবিধা।

3. Inkscape

যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনয়ে একেবারেই নতুন, কিংবা শখের বশে Graphic Design শুরু করতে চান, তাদের জন্য এই সফটওয়্যারটি বেশ কাজের।

আরেকটি সুবিধা হলো, আপনি যদি Adobe photoshop বা Adobe illustrator এ দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে Inkscape এক্সেস করা আপনার জন্য ব্যাপারই না।

4. GNU Image Manipulation Program (GIMP)

এই দারুণ Graphic design সফটওয়্যারটিকে নিয়ে বলে শেষ করা যাবেনা। এতে রয়েছে বিনামূল্যেই অনেক ফটোশপ ফিচার এক্সেস করার সুযোগ। এছাড়াও যারা কোডিং এ পারদর্শী, তারা এই সফটওয়্যারটিকে তাদের মনমত কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।

এর আরেকটি সুবিধা হল, এটি windows ছাড়াও Linux, macOS, BDS ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমে ইন্সটল করা যায়।

5. Xara Designer Pro X

তুখোড় কর্মদক্ষতার অধিকারী এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সফটওয়্যারটিতে আপনি পাচ্ছেন ওয়েবসাইট এবং প্রিন্ট ডিজাইন এর জন্য বেশকিছু নান্দনিক ইলাস্ট্রেশন টুলস।

এছাড়াও এই সফটওয়্যার থেকে আপনি ড্রপবক্স (Dropbox) এবং গুগল ড্রাইভে যেকোন ফাইল sync ও করতে পারবেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের বর্তমান চাহিদা

পূর্বে গ্রাফিক ডিজাইনাররা শুধু অফলাইনে কাজ করতো অর্থাৎ, ফিজিক্যাল জিনিসই ছিল তাদের বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু! বর্তমানে একটি ব্লগ থেকে শুরু করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কেউই গ্রাফিক ডিজাইন ছাড়া ভাবতে পারেনা।

ইন্টারনেট গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য এমন এক দড়জা খুলে দিয়েছে, যার কোনো টার্মিনাল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিদিন আপনি যতগুলো ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন দেখছেন, সবকিছুতেই কোনো না কোনো গ্রাফিক ডিজাইনারের তুলির ছোয়া রয়েছে।

মানুষ এখন প্রচুর ব্যস্ত, তাকে আকৃষ্ট করার জন্য একমাত্র হাতিয়ার উন্নত গ্রাফিক ডিজাইন।

ঠিক একারণেই এখন ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোতে ওয়েব ডেভেলপারদের সাথে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং পেশা।

একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়লে নিজের সৃজনশীলতার প্রকাশ করার সুযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে ইনকাম করতে পারবেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়?

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়, আপনার কি মনে হয়, কত টাকা হতে পারে?

আমেরিকায় একজন মিড লেভেল গ্রাফিক্স ডিজাইনার বছরে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার ডলার ইনকাম করেন। তবে স্কিল, অভিজ্ঞতা এবং রেপুটেশন বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

এজন্য বিভিন্ন বিশ্বস্ত সোর্স যেমন Playscale, Glassdoor, SimplyHired এর মতে একজন এভারেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাসে ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম করেন।

 ইতিমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিভিন্নভাবে আয় করতে পারেন যেমন: ফ্রিল্যান্সিং, টিশার্ট ডিজাইন, কোর্স বিক্রি, জব ইত্যাদি।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কি কি লাগে?

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর সাতটি নির্দিষ্ট উপাদান আছে। সেগুলো হলো;

  1. কালার (color) বা বর্ণ
  2. লাইন (line) বা রেখা
  3. শেইপ (shape) বা আকৃতি
  4. ফরম (form) বা গঠন
  5. সাইজ (size) বা আকার
  6. স্পেইস (space) বা স্থান
  7. টেক্সচার (texture) বা গঠনবিন্যাস

একটি আকর্ষণীয় Graphic Design এর ক্ষেত্রে এই সাতটি উপাদানের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয় অত্যন্ত অপরিহার্য।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কতদিন সময় লাগে?

গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর অনেক ইউনিভার্সিটি ৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী এবং ২ বছরের মাস্টার্স ডিগ্রী প্রদান করে। তার মানে হলো টোটাল ৬ বছর! নাহ, আমি আপনাকে এত লং কোর্সে ভর্তি হতে বলবো না। গ্রাফিক্স ডিজাইন আসলে এতবেশি কঠিন না, তবে এটি সবার জন্য সঠিক পেশা বলে আমি মনে করিনা।

গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো মনের কথা, চিন্তাকে ভিজ্যুয়ালি প্রকাশ করা। এখন আপনি যদি ক্রিয়েটিভ মাইন্ডের লোক হয়ে থাকেন, তবে ইতিমধ্যে আপনি অনেকখানি এগিয়ে আছেন।

বাংলাদেশের যেসকল এজেন্সি গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখায়, তারা মূলত প্রফেশনাল মার্কেটের জন্য ৬ মাস সময় নেয়। এই সময়ের মাঝে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবকিছু শিখে ফেলবেন এমন কিছু বলিনি, ক্লায়েন্ট ডিল করার মতো প্রস্তুতি হয়ে যাওয়ার কথা, যদি আপনি অধ্যবসয়ী হন।

তবে আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট টুলস যেমন ফটোশপ, Illustrator এর কাজ শিখতে চান, সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ মাস-ই যথেষ্ট। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কত সময় লাগবে তা বেশ কিছু ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করে। যেমন:

১। কীভাবে শিখবেন: গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার একটি দুর্দান্ত বিষয় হচ্ছে শেখার কেবল একটি উপায় নেই। এবং অবশ্যই সব উপায়ে সমান সময় লাগবেনা।

২। আপনার বর্তমান স্কিল লেভেল।

৩। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার পেছনে প্রতিদিন কতটুকু সময় দিচ্ছেন।

ঘরে বসে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায়

এতকিছু জানার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে, ঘরে বসে গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখবো, কিংবা শিখতে কত টাকা লাগে! চলুন সেসব প্রশ্নের উত্তরও জেনে নেওয়া যাক!


আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান, তাহলে এখনো সময় শেষ হয়নি। ঘরে বসেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারবেন। এজন্য অনলাইনে অনেক কোর্স রয়েছে, যেখানে Graphic Design শেখার পাশাপাশি সার্টিফিকেটও পেয়ে যাবেন। আপনার স্কিল ভালো হলে পরবর্তীতে এই সার্টিফিকেটও ফুল টাইম জব পেতে সহায়ক হতে পারে।

সুতরাং, চলুন গ্রাফিক্স ডিজাইন ঘরে বসে শেখার জন্য কিছু জনপ্রিয় অনলাইন কোর্সের সাথে পরিচিত হয়ে নেই।

অনলাইন গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স | Graphic Design Course

1. Coursera Graphic Design Course

ফ্রি গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সটিতে যা শিখবেন,

  • গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক দক্ষতা অর্জন
  • চিত্র তৈরি এবং টাইপোগ্রাফির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন দক্ষতা
  • আপনার পেশাদার পোর্টফোলিওতে যুক্ত করতে একটি ক্যাপস্টোন প্রজেক্ট সম্পূর্ণ করা
  • ইন্টারফেস ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স এবং সম্পাদকীয় ডিজাইনে কাজ করার জন্য আপনার যা জানা দরকার তা শিখতে পারবেন।

2. Udemy Graphic Design Course

এখানে Udemy ’র সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সগুলো রয়েছে, যেগুলো ফ্রি এবং পেইড কোর্স রয়েছে। পেইড কোর্স গুলোর জন্য সাধারণত ১৩ ডলার থেকে ২০ ডলার পে করতে হবে।

  • ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এবং InDesign দিয়ে প্রিন্ট এবং ডিজিটাল প্রজেক্ট এ কীভাবে কাজ করবেন তার একটি স্পষ্ট দক্ষতা অর্জন করবেন।
  • সাধারণ গ্রাফিক ডিজাইন প্রকল্পগুলি তৈরি করতে দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বিকাশ করুন
  • লোগো ডিজাইন এবং ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কভার ডিজাইন তৈরি করতে সক্ষম হবেন
  • ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম সহ ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় আকর্ষনীয় চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হবেন

3. Skillshare Graphic Design

স্কিল শেয়ারের কোর্সগুলো আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। এগুলো একজন বেগিনার থেকে মিড লেভেল সবার জন্য কোর্স পছন্দ করা বেশ সহজ।

প্রতিটি কোর্স টুলস ও টপিক ভিত্তিক সাজানো। সবচেয়ে ভালো খবর হলো, এই কোর্সগুলো আপনি কোনো খরচ ছাড়াই অর্থাৎ ফ্রিতে করতে পারবেন।

আরো ১২ টি ফ্রি এবং পেইড অনলাইন গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স নিয়ে ইতিমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া, আমরা এর আগে সেরা ৫টি ফ্রি অনলাইন কোর্স করার সাইট সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। যেখানে অবশ্যই ফ্রি গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সও রয়েছে।

তাছাড়া, ভাষাজনিত সমস্যা মনে হলে বাংলাদেশী কোর্স করার সাইট থেকেও গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে শেষ কথা

গ্রাফিক্স ডিজাইন শুধু একজন ডিজাইনারের নিজস্ব দক্ষতা ও সৃজনশীল আইডিয়া উপস্থাপনের মাধ্যমই নয়, বরং হাজারো বেকার মেধাবী যুবকের কর্মসংস্থানের একটি সুদৃঢ় পথও বটে। এক্ষেত্রে শুধু নিজের কর্মনিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রয়োজন।

আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন