আত্মহত্যা : সমাধান কোন পথে | Suicide: What is the solution | Muhammed Juwel Ahmed

আত্মহত্যা : সমাধান কোন পথে!!

আত্মহত্যা বা আত্মহনন (ইংরেজি: Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহত্যা করেন, তখন জনগণ এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। যেসকল কারণে আত্নহত্যা হতে পারে-
ক. পারিবারিক কলহ খ. জীবন সংগ্রামে বিভিন্ন কাজে ব্যর্থতা ও হতাশা গ. স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য ঘ. মানসিক অবসাদ ও যন্ত্রণা উল্লেখযোগ্য।

প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ। সুইসাইডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিখ্যাত লোকদের মধ্যেও আছে। কিংবদন্তীর মধ্যে আছে, আছে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীদের মাঝে। সুইসাইড বুড়োদের মধ্যে যেমন আছে তেমন আছে তরুণদের মধ্যে।

বিবাহিত-অবিবাহিত, প্রেমিক-প্রেমিকা, চোর-সাধুরাই নন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও এ অভিশপ্ত পথ বেছে নিয়েছেন। অর্থাৎ, নায়ক-খলনায়ক, বিজ্ঞানীসহ নানা অভিজাত শ্রেণিও সুইসাইড করেছেন। তাদের মধ্যে ক্লিওপেট্রা, নিরো, এডলফ হিটলার, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ক্রিস বেনওয়েট, ভিনসেন্ট ভ্যন গফ এবং ষাট দশকের গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়া সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো'র নাম উল্লেখযোগ্য।

আত্মহত্যা নারীদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে বেশি। ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। নারীরা পুরুষদের তুলনায় আত্মহত্যার প্রচেষ্টা একাধিকবার চালায় এবং তারা সাধারণত পয়জনিং জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার করে। পুরুষরা অধিকতর বিপজ্জনক পদ্ধতি বেছে নেন আত্মহত্যার জন্যে, যেমন পিস্তল শুটিং বা উপর থেকে ঝাঁপ দেয়া।

আমাদের দেশে তরুণীদের মধ্যে কীটনাশক খেয়ে এবং গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে বেশি দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে কীটনাশক পান করে ও শহরের মেয়েদের ওষুধ জাতীয় দ্রব্য ও নানা কেমিক্যাল দ্বারা আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি। ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯)

একাকিত্ব, আর্থিক সমস্যা এবং সমাজের নানাবিধ চাপে অবসাদে ভোগেন এরকম মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মেধাবী ছেলে ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি, ব্যবসা ডুবেছে, প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে, ভাল পড়়াশোনা করা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তি তাঁর উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না, বা কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা বা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ব্যক্তিগত জীবনে অপ্রাপ্তি, পারিবারিক অশান্তি চলছে—ইত্যাদি নানা কারণ থেকে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ইদানিং বয়স্কদের মধ্যেও একাকিত্ব থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনও বহু মানুষ আছেন যাঁদের পরিবারে মানসিক সমস্যার থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। সেখান থেকেও কারণে অকারণে লোকজন আত্মহননের দিকে এগোয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই নয়, সম্প্রতি করোনার কারণেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে দেশে দেশে। ভাইরাসটিকে নিয়ে ভীতি মানুষকে অসহায় করে তুলছে, কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে। নিজে আক্রান্ত হওয়া বা নিজের দেহ থেকে পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়়ার আতঙ্ক, একাকিত্ব এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, লকডাউনের জন্য কাজ হারানো, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—প্রভৃতি কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)

তবে কারণ যাই হোক না কেন-এটি কোন সমাধান নয়। অপরদিকে মনে রাখতে হবে আপনি যাকে বা যাদেরকে দোষারুপ করে এই পথ বেঁচে নিচ্ছেন প্রকৃতপক্ষে তা কতটুকুন যাচাই করেছেন এবং নিজে কতটা দোষমুক্ত? এইসব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন গুলোর সমাধান না খুঁজে আমরা বিরক্ত হয়ে যে কাজটি করে বসি তা আসলে কোন সমাধান কিনা? সমাজ বাস্তবতা অতি নিষ্টুর হয়ে উঠেছে নি.সন্দেহে। তার অর্থ এই নয় যে, আপনি নিজেই এর সমাধানে যাবেন, তাও জীবন দিয়ে। আজকের যে, নির্মম বাস্তবতা তা উপলব্দি করতে হবে। আগামীর যে পথ তাও তৈরী করতে হবে। সমস্যা চিরকাল থাকবে না-তবে চিরকাল যে এই কাজটির কারণে আপনি কঠিন অবস্থার মধ্যে না পড়েন সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। নিজে কতটা এর জন্য দায়ী তাও ভাবতে হবে। সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এতেই মঙ্গল।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ (বুখারি)

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার সাহায্য ও আশ্রয় চাই। আপনার করুণা দ্বারা আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে সুন্দর ও স্বার্থক করেদিন। আমাদের সাহায্যকারী হিসাবে পাশে থাকুন।। আমিন-




মোহাম্মদ জুয়েল আহমেদ, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্লগার। লিখতে খুব ভালােবাসি, তাই লিখালিখি করি ।অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে আমি ২০১৪ সালের থেকেই লিখালিখি করছি । আমি বিয়ানিবাজার সরকারি কলেজে লেখা পড়া করতেছি । সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন , যাতে আমি বড় হয়ে একজন আদর্শ বান মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে পারি ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.