আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও ন্যায় বিচার প্রসঙ্গ
মো.জুয়েল আহমেদ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪ ইংরেজি -----------------------------------------------------------------------
বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ভাষা যে ভাষা রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে বাঙালিকে। বিশ্বের অন্য কোথাও ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এমন নজীর পাওয়া যাবে না বললেই চলে।
আমরাও মহাসমারোহে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি এই ভাষার গৌরব ধরে রাখতে। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই ভুলে যাই সব।মুখের ভাষা হিসেবে আমরা বাংলাভাষা ব্যবহার করে থাকলেও আমাদের দেশে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে আইন-আদালতে বাংলাভাষার এখনো পুরপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে না।
এই ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দাপটে বাংলা ভাষা যেন অসহায়।ভাবলে অবাক হয়, যে ভাষার জন্য আমাদের জীবন দিতে হয়েছে সে ভাষার ব্যবহার আজও আমরা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পারিনি। আর কিছু অফিস ও নিম্ম আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহার হলেও প্রমিত বাংলা ভাষা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না।
আমাদের দেশে ১৯৮৭ সালে “বাংলা ভাষা প্রচলন আইন” নামে একটি আইন পাস হয়। এই আইনে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশের সবখানে অর্থাৎ সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিদেশের সাথে যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইন বিষয়ক কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। এই আইনে আরও বলা আছে কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় আবেদন বা আপীল করেন তা হলে এটা বেআইনী ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে।
যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন তা হলে ও ঐ কাজের জন্য তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধির অধীনে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অথচ না এই আইনের কোন বাস্তবায়ন হয়েছে, না এই আইনে কারো শাস্তি হয়েছে বলে জানা গেছে! সংবিধান হল আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আইন। স্বয়ং এই সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩-এ উল্লেখ আছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এখানে প্রজাতন্ত্র বলতে মুলত বাংলাদেশের সমগ্র আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগকে একসাথে বোঝায়।
আবার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা বলা হয়েছে কিন্তু ইংরেজি কিংবা আরবি, হিন্দি, ফার্সি বলা হয়নি। তাই উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে সমস্যা কোথায়? নাকি আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা আজো সেই পাকিস্তানি আমলের মত অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে । উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন অচল। কারণ এর পক্ষে যুক্তি হল উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহার করলে বিদেশে এই দেশের আইনের কোন রেফারেন্স দেওয়া যাবে না, আন্তর্জাতিক মানের হবে না ইত্যাদি।
অথচ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ তাদের উচ্চ আদালতে ইংরেজি ছাড়াও স্ব স্ব ভাষায় বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমনকি রুল জারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেফারেঞ্চও দেওয়া হচ্ছে। যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও বাংলাদেশেই বাংলা ভাষার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে না সেখানে বিদেশে কীভাবে বাংলাভাষায় গুরুত্ব আশা করা যায়! ন্যায় বিচারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হল বিচার বিভাগ। কিন্তু উচ্চ আদালতে ভাষার কাঠিন্যতার কারণে যদি সাধারণ মানুষের বুঝতে কষ্ট হয়ে যায় তাহলে আর কিছুর বলার থাকে না। এতে সাধারণ ও নিম্মবিত্ত বিচার প্রার্থীর কিছু আইনজীবী ও কোর্টের বিভিন্ন অনুবাদক অথবা দালাল কর্তৃক হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আর বিচারপ্রার্থীর মামালার খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
পরিশেষে বলা যায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে দেশের সধারণ মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিকে আরও সহজ করার জন্যও বাংলা ভাষার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য নিকট ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতসহ দেশের সকল আদালতে বাংলা ভাষায় বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি ।
আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনে আইন কমিশনের সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশের প্রতি সরকার কোনো নজরই দেয়নি। সুপারিশে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আইন করে বাংলা চালু করা উচিত। ইংরেজিতে লেখা বিদ্যমান আইনগুলো বাংলায় অনুবাদ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি উচ্চতর আদালতেও বাংলায় বিচারকার্য পরিচালনা ও রায় লেখা দরকার। সুপারিশে বলা হয়, যদিও ১৯৮৭ সনে আদালতে বিচারিক কাজসহ অন্যান্য আইনি কাজকর্মে বাধ্যতামূলক বাংলা ব্যবহারের জন্য "বাংলা ভাষা প্রচলন আইন" করা হয়, তারপরও বিশেষত উচ্চ আদালতে ইংরেজির ব্যবহার নির্বিবাদে চলছে। আরও বলা হয়, রায় ইংরেজিতে লেখা হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বৈষ্যমের শিকার হন। তারা ইংরেজি না বোঝার কারণে খুব বিপদের মধ্যে পড়েন। আদালতের ভাষা তাই গণমানুষের ভাষাকে অনুসরণ করা উচিত।
আইন কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং এবং বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ ইনট্রোডকশন অ্যাক্ট ১৯৮৭ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের সব কাজ বাংলায় করতে হবে। কিন্তু "হাসমতউল্লাহ বনাম আজমেরী বিবি ও অন্যান্য" মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দেওয়ানী কার্যবিধির ১৩৭ (২) ধারা অনুযায়ী সরকার আদালতে বাংলা ব্যহারের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেবেন না। সুপারিশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির দুটি এবং দেওয়ানী কার্যবিধির একটি ধারার কারণে আদালতের কাজে বাংলা ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা থেকে যায়। বাধা না থাকলেও উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলন নেই।
মোহাম্মদ জুয়েল আহমেদ, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্লগার। লিখতে খুব ভালােবাসি, তাই লিখালিখি করি ।অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে আমি ২০১৪ সালের থেকেই লিখালিখি করছি । আমি বিয়ানিবাজার সরকারি কলেজে লেখা পড়া করতেছি । সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন , যাতে আমি বড় হয়ে একজন আদর্শ বান মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে পারি ।
@https://www.banglanews24.com/law-court/news/bd/270955.details
কোন মন্তব্য নেই