স্পোকেন ইংলিশ কেন শিখবেন ? Muhammed Juwel Ahmed

আমরা কেন ইংরেজি জানি না ? 

মহান ভাষার মাসে ইংরেজির গুরুত্ব ও প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনাকে অনেকে ধৃষ্টতা বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু এই মাসেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার। কেন দরকার সেই ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে একটা বোকার মতো প্রশ্ন করি: পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাষা কোনটি? এর কোনো জবাব হয়? ধরা যাক বাংলাদেশের মানুষ মনে করে যে, হিব্রু হচ্ছে কঠিনতম ভাষা। কারণ প্রায়শই আমরা হিব্রুর উদাহরণ দিই। কিন্তু হিব্রু ভাষাভাষী বাবা মায়ের সন্তান তো জন্মের পর থেকেই এই ভাষায় অভ্যস্ত হয়। স্কুলে যাওয়ার আগে তাকে আলাদা করে ভাষার সাথে পরিচিত করাতে হয় না, বরং সে নিজেই নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে।

আবার আফ্রিকার বিচ্ছিন্ন কোনো জঙ্গলের আদিবাসীদের যে ভাষা, সেই ভাষায়ও আমাদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। কিন্তু সেই ভাষার লোকেদের কাছে সেটিই সবচেয়ে সহজ ভাষা। আপনার কাছে হিন্দি হয়তো পরিস্কার নয়। কিন্তু টেলিভিশনে হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখে আপনার স্কুলপড়ুয়া সন্তানও বেশ ভালো হিন্দি বোঝে। হিন্দিতে অনর্গল কথা বলতে পারে। এ জন্য তাকে স্কুলে হিন্দি শিখতে হয়নি। কোনো কোর্স করতে হয়নি।

তার মানে ‘কঠিন ভাষা’ বলে কিছু নেই। আবার ‘সহজ ভাষা’ বলেও কিছু নেই। কারণ আপনার ছোট সন্তানের মুখে অনর্গল হিন্দি শুনে আপনি যতই ভাবছেন যে, হিন্দি খুবই সহজ, বিষয়টা এমনও নয়। কারণ হিন্দিতে ভাবের আদান-প্রদান করতে গেলেই আপনি টের পাবেন এটা কত কঠিন। কারণ যতক্ষণ না আপনি এই ভাষার আবহে থাকছেন, যতক্ষণ না এটি বোঝার চেষ্টা করছেন, ততক্ষণ এটা কঠিনই। তাতে বাংলার সাথে এর যতই মিল থাকুক।


শিশুশ্রেণি থেকেই ইংরেজির সাথে আমাদের সম্পর্ক। বাংলা বর্ণমালার সাথে সাথেই আমাদের এবিসিডির হাতেখড়ি। এরপর প্রত্যেক ক্লাসেই কমবেশি ইংরেজি থাকে। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থী ১৭-১৮ বছর ইংরেজি পড়েন। গ্রামার পড়েন। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ পড়েন। প্রত্যেক ক্লাসে এক দুইশো নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু তারপরও একজন স্নাতকোত্তর মানুষ সম্পূর্ণ নির্ভুল ও ঝরঝরে একটি গদ্য লিখতে হিমশিমি খায়।


তাহলে এই ১৭-১৮ বছরে তিনি কী ইংরেজি শিখলেন? ইংরেজি পত্রিকার সামাদাটা সংবাদের অর্থ বুঝতেই ঘাম বেরিয়ে যায়। তখন আমরা বলি, ইংরেজি খুবই কঠিন। এটা শেখা এত সহজ নয়। পক্ষান্তরে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া একজন শিশু-কিশোরও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন স্নাতকোত্তরের চেয়ে ভালো ইংরেজি জানেন। তার মানে সমস্যাটা সহজ ও কঠিনে নয়; বরং জানা ও জানানোর পদ্ধতিতে এবং আরও স্পষ্ট করে বললে ইনটেনশনে।

ইনটেনশনটা কী? আমরা যারা সাধারণ মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি, তাদের কাছে ইংরেজি কোনো ভাষা ছিল না। এটা ছিল পরীক্ষায় পাস করার একটি বিষয়মাত্র। অর্থাৎ কোনো একটি বিদেশি ভাষা যখন ল্যাঙ্গুয়েজ না হয়ে সাবজেক্টে পরিণত হয়, তখন সেখানে কোনোক্রমে পাস করাটাই মুখ্য। ১৭-১৮ বছর ইংরেজি পড়েও ৫০০ শব্দের একটি গদ্য লিখতে পারা না পারার বিষয়টি নিয়ে কারো মধ্যে খেদ তৈরি হয় না যতক্ষণ না বিদেশে স্কলারশিপ অথবা কাজ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে আইইএলটিএস করতে হয়।


এই প্রথম একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ ইংরেজিকে সাবজেক্ট নয়, বরং ভাষা হিসেবে শিখতে যান। ফলে দেখা যায়, তিনি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭-১৮ বছরে যে ইংরেজি শিখেছেন, মাত্র ৬ মাসে তার চেয়ে ভালো ইংরেজি শিখেছেন। কারণ এখানে ইনটেনশনটা আলাদা।

বাংলা ভাষাভাষী সব শিক্ষিত মানুষও কি প্রমিত বা শুদ্ধ বাংলা জানেন? লিখতে পারেন? বহু শিক্ষিত মানুষ এমনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বাংলায়ও ভুলের ছড়াছড়ি। হয় বানান ভুল, নয়তো বাক্য গঠন। যতিচিহ্ন নিয়ে কথা না-ই বা হলো। সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরসম্বলিত চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টেও বাংলা বানানের যে বেহাল দশা, তাতে অনেক সময়ই চোখ চড়কগাছে ওঠে।


তার মানে ১৭-১৮ বছর ধরে ইংরেজি পড়েও আমরা এই বিদেশি ভাষাটা যেমন শিখতে পারছি না, তেমনি নিজের ভাষাটাও নয়। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলে এ নিয়ে কিছু আহা উহু আর খেদোক্তি চোখে পড়লেও মার্চ মাস থেকে এই আলোচনা আর হালে পানি পায় না। তার মানে আমাদের শেখানোর পদ্ধতিই ত্রুটিপূর্ণ।

আমাদের শিক্ষকরাই ছোটবেলায় বাংলা বর্ণমালা শিখেছেন ‘পেটকাটা মূর্ধণ্য ষ’ বা ‘কান্ধে বাড়ি ধ’; শিখেয়েছেন ‘ছোট ব’ আ ‘বড় ভ’। উচ্চারণ বিষয়ে যিনি পড়িয়েছেন তার উচ্চারণেই হাজারো সমস্যা। প্রমিত বাংলা লেখার নিয়ম-কানুন যিনি শিখিয়েছেন, তিনি নিজেই ঠিকমতো লিখতে পারেন না। তার মানে শুধু পড়ানোর পদ্ধতিই নয়, কারা শেখাচ্ছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কারণেই ১৭-১৮ বছর ধরে ইংরেজি শেখার পরও আমরা এই ভাষায় একটি পূর্ণাঙ্গ অনুচ্ছেদ লিখতে গিয়ে হিমশিম ভাই।

তবে মূল সমস্যাটা ইংরেজিকে আমরা কখনোই ভাষা হিসেবে শেখার চেষ্টা করিনি। এটি ছিল নিতান্তই পরীক্ষায় পাসের বিষয়। যে কারণে মূল বা টেক্সট বই দূরে রেখে নোট ও গাইড বইয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এই করুণ বাস্তবতা ২০১৯ সালের নয়; বরং পঞ্চাশের দশকে ইংরেজির অধ্যাপক কবি জীবনানন্দ দাশও ইংরেজি পড়ানো ও শেখার এই পদ্ধতি নিয়ে নিজের খেদ ঝেরে গেছেন।

শিক্ষাবিষয়ক তাঁর যে চারটি প্রবন্ধের সন্ধান পাওয়া যায়, তার মধ্যে তিনটিই ইংরেজিসম্পর্কিত। যেসব প্রবন্ধে তিনি ইংরেজি শেখানোর পদ্ধতিকে গলদপূর্ণ উল্লেখ করে তা শুধরে ফেলার প্রয়োজনীয়তার কথা লিখেছেন। এক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘ইংরেজি লেখা কঠিন। কিন্তু শেখবার ও পরীক্ষা পদ্ধতি বদলে ফেলে এমন নতুন করে গড়া দরকার যাতে বাংলা এসে ইংরেজিতে স্থান না নেওয়া পর্যন্ত ও ভাষার জন্য উৎসাহ ছাত্রদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পারা যায়।’


তাঁর সময়কালেও নোট বই পড়ে কোনোরকম পাস করার প্রবণতা ছিল এবং বাড়ছিল। এরকম বাস্তবতায় ১৯৫২ সালে লেখা তাঁর ‘শিক্ষার কথা’ প্রবন্ধটি এত বছর পরেও প্রাসঙ্গিক। তিনি লিখেছেন, ‘পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে ক্লাস নাইন টেনে যেসব ইংরেজি বই পড়ানো হত সেগুলোর কোনোরকম নোটই বাজারে কিনতে পাওয়া যেত না। কোনো অভিজ্ঞ শিক্ষক বা অধ্যাপক কেউই স্কুলের ছেলেদের জন্য নোট লিখতেন না।

আজকের এত বড়ো ব্যবসা হওয়া দূরে থাকুক স্কুলের ছাত্রদের ইংরেজি পাঠ্যের নোট লেখার এই মর্মচ্ছেদী ব্যবসার কথা তখন কারো মাথায়ও ছিল কি না বলতে পারছি না।’তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও লিখেছেন, ‘আজকালকার ছেলেদের এত বেশি নোট পড়তে হয় যে টেক্সট বই পড়বার কোনো সময়ই থাকে না।’


জীবনানন্দ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ইংরেজিতে। ছিলেন ইংরেজিরই অধ্যাপক। কিন্তু সারা জীবন সাহিত্যকর্ম করেছেন মাতৃভাষায়। অর্থাৎ একইসঙ্গে তাকে বাংলা ও ইংরেজি শিখতে হয়েছে। নিতান্তই পরীক্ষা পাসের জন্য এই ভাষা দুটি শিখলে তিনি হয়তো বড়জোর শিক্ষক হতে পারতেন, কিন্তু যে কালজয়ী সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন, সেই ভাষায় তিনি লিখতে পারতেন না। যে কারণে মাতৃভাষার প্রতিও তিনি বরাবরই জোর দিয়েছেন। শুদ্ধ ও স্পষ্ট বাংলা লিখতে না পারার প্রবণতাও জীবনানন্দকে ভাবিয়েছে।


সুতরাং এই মহান ভাষার মাসে শুধু মাতৃভাষা রক্ষার জন্য লোকদেখানো বক্তৃতার বাইরে গিয়েও আমাদের উপলব্ধি করা দরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষা ইংরেজি তো বটেই, এমনকি মাতৃভাষা বাংলাটাই বা কী শেখানো হচ্ছে এবং কোন পদ্ধতিতে? সেই পদ্ধতির গলদ চিহ্নিত করা এবং ভাষাকে নিতান্তই পরীক্ষা পাসের সাবজেক্ট বা বিষয় হিসেব না দেখে ভাষা হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।



      Muhammed Juwel Ahmed 

Alhamdulillah, IELTS overall score 6. Hexa's Zindabazar Sylhet, six month long journey has come to an end. I have learnt so many things, met different people, faced so many ups and downs through this journey. I'm grateful to my family, my respected . 

Hey Everyone My name is Muhammed Juwel Ahmed, I am 22 years old, I am a student, I reads in class BA Honours Department of English , everyone will pray for me.  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.