একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য প্রথমত দরকার হয় একটি ডোমেইন। ডোমেইন হলো একটি ওয়েবসাইটের নাম এটি.com,.org,.info ইত্যাদি হতে পারে।
একটি ডোমেইনের মূল্য ৯৯ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ডোমেইনের পর দরকার হোস্টিং। হোস্টিংয়ের জন্য কমপক্ষে ১০০ টাকা মাসিক খরচ হবে এবং যদি বাৎসরিক নিতে চান তাহলে ১০০০ টাকা খরচ হবে। এগুলো একটি ওয়েবসাইট তৈরির প্রাথমিক খরচ।
আমরা যারা ব্লগিং করতে আগ্রহী কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগ থাকে স্টুডেন্ট যাদের ইনভেস্ট করার মতো যথেষ্ট টাকা থাকে না। অথবা অনেকেই ইনভেস্ট করতে পারে না তারা চাইলে ফ্রি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারে।
ফ্রি ওয়েবসাইটে ব্লগিং করেও ইনকাম করা সম্ভব। অনেকেরই এমন ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে ফ্রি ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করা যায় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যারা ফ্রি ওয়েবসাইট দিয়েই গুগোলে টপ রেংকে রয়েছে। এবং ভালো অংকের টাকা আয় করছে।এবং শুরুতেই যদি ফ্রি ওয়েবসাইট দিয়ে শুরু করেন এবং সফল হন তাহলে ইনভেস্ট করে নতুন ওয়েবসাইট বানাতে আপনি অনুপ্রেরিত হবেন।
এছাড়া আমি মনে করি প্রত্যেকেরই শুরুটা ফ্রি ওয়েবসাইট দিয়ে করা উচিত তার কারণ হলো আমরা অনেকেই শুরুতে অনেক ভুল করি, এসব ভুল থেকে নতুন অনেক কিছু শিখতে পারি এবং অভিজ্ঞতা হয়।
যদি প্রথমেই টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট বনিয়ে ফেলি তাহলে আমাদের অনেক ভুলের জন্য আমাদের টাকা নষ্ট হয় কিন্তু যদি শুরুটা ফ্রী ওয়েবসাইট দিয়ে করি তাহলে আমাদের কোন ক্ষতির সম্মূখ হতে হচ্ছে না।
বিনামূল্যে ওয়েবসাইট তৈরির সুবিধা এবং অসুবিধা
আমরা ফ্রীতে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য জনপ্রিয় প্ল্যটফর্ম blogger কে ব্যবহার করব।তাই এখন আমরা Blogger এর সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করব।
সুবিধা :-
১) এইখানে আপনি একটি বেসিক লেভেলের মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
২)এই প্ল্যাটফর্মটি এসইও ফ্রেন্ডলি কারন এটি গুগলেরই আওতাধীন।
৩) অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে ফ্রি হোস্টিং দিলেও আপনাকে ডোমেইন কিনতে হবে।কিন্তু ব্লগারে ফ্রি ডোমেন+হোস্টিং দুটিই পাবেন।
৪) ব্লগারে আপনাকে যে ডোমেইনটি দিবে সরটি হলো blogger.com এর সাবডোমেইন।কিন্তু এই সাবডোমেইনের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দিয়ে আপনি খুব সহজে গুগোল এডসেন্সের এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন যদি আপনার ওয়েবসাইট এডসেন্সের সকল শর্ত মানে।যেটি অন্য কোন সাবডোমেইনে পাবেন না।
৫)এটিতে খুব সহজে গুগোল এনালাইটিকস যুক্ত করতে পারবেন।
৬) পেইড ওয়েবসাইটে যেসব এসইও সেটিংস রয়েছে তার প্রায় অর্ধেক সেটিংস ফ্রিতে দিবে এই প্ল্যাটফর্ম আপনাকে।
৭) চাইলে খুব সহজে নিজের কাস্টম ডোমেইন দিয়েও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।
৮) এটির মধ্যমে সহজেই মোবাইল দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
অসুবিধা :-
১) এই প্ল্যাটফর্মটি বেসিক লেভেলের এবং সম্পূর্ণ Html এবং Css based। তাই খুব এডভান্স লেভেলের ফিচার গুলো এখানে পাবেন না।
২) ব্লগিংয়ের জন্যই এটি নির্মিত। ই-কমার্স বা এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চাইলে এই প্ল্যালফর্ম আপনার জন্য নয়।
৩) এডভান্স কিছু করতে হলে Html এবং css সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
৪) এই প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসাইট তৈরি করলে তার প্রকৃত মালিক আপনি হবেন না। কারন এটি গুগোলের হোস্টিংয়ে রয়েছে। তাই আপনি যদি তাদের কোন কনডিশন ভঙ্গ করে ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে তারা সেটি বন্ধ করে দিবেন।
৫) আপনি যদি ব্লগারে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করে তা এডসেন্সের মাধ্যমে মনিটাইজ করেন তাহলে আপনার রেভিনিউ কম আসবে কারন ব্লগার এবং এডসেন্স দুটিই গুগোলের আওতায় । এবং আপনাকে ফ্রি হোস্টিং দেওয়ার কারনে গুগোল আপনার আয় থেকে ছোট একটি অংশ কেটে রাখবে।(যদি আপনি আয় করেন তবেই এই টাকা কাটবে এবং এটির পরিমান খুব কম)
৬) অন্য প্ল্যাটফর্ম গুলোই কোন প্রকার সমস্যা হলে তা প্লগইন দিয়ে সলভ করা যায়।কিন্তু এখানে কোন প্লাগইন ব্যবহার করা যায় না তাই সমস্যা গুলো কোডিং করেই ফিক্স করতে হয়।
কেন Blogger.com?
Blooger হলো গুগলেরই একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে কোন খরচ ছাড়াই আপনি একটি ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারেন। বর্তমানে এটিই জনপ্রিয় কারন এটি সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ।
গুগলের প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এর নিরাপত্তা নিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। অনেকেই ওয়েবসাইট মনিটাইজ করেন গুগোল এডসেন্সের মাধ্যমে।
এখান থেকে আপনি সরাসরি পেয়ে যাবেন গুগোল এডসেন্স কানেক্ট করার অপশন। একটির ওয়েবসাইট গুলো হয় মোবাইল ফ্রেন্ডলি। এছাড়াও গুগোলের প্ল্যটফর্ম হওয়ায় এটির SEO সহজ।
Blogger এ ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে?
Blogger খুব সহজ এবং জনপ্রিয় CMS. এটিতে বিনাখরচে ব্লগ সাইট খুলতে আপনার দরকার শুধু একটি জিমেইল একাউন্ট। আপনি চাইলে কাস্টম ডোমেইন ব্যবহার করতে পারেন না চাইলে সাব ডোমেইন দিয়েই আপনার ওয়েব তৈরি করতে পারেন।
কিভাবে ব্লগারে এ ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন
Step 1:– প্রথমে blogger.com ওয়েবসাইটে যাবেন।তারপর এমন ইন্টারফেস দেখবেন।
Step 2: তারপরে “Create Blog” লিখায় ক্লিক করবেন।আপনার জিমেইল দিয়ে সাইন ইন করবেন।
Step 3:- তারপর আপনার জিমেইল দিয়ে সাইন ইন করার পর আপনার ওয়েবসাইটের টাইটেল দিবেন।
Step 4:- তারপর আপনার সাইটের url দিবেন।
{যদি বলে address not available তাহলে url এর সাথে সংখ্যা যুক্ত করবেন}
step 5:- তারপর আসবে ডিসপ্লে নেইম দেওয়ার অপশন এখানেও আপনার ওয়েবসাইটের নাম দিবেন। তারপর ফিনিস এ ক্লিক করবেন
এখন আপনি ফ্রীতে ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেললেন।
কিন্তু এখন আপনার ওয়েবসাইটে কিছুই নেই। তাই আপনার ওয়েব সাইটকে ডিজাইন অর্থাৎ সেটিংস করতে হবে।
ব্লগার ওয়েবসাইট সেটিংস ও কাস্টমজেশন
ব্লগারে ওয়েবসাইট তৈরির পর এমন একটি ইন্টারফেস দেখবেন।
এখানে বাম পাশে অনেক সেটিংস দেখতে পারছেন চলুন যেনে নিই এসব সেটিংস কিভাবে ব্যবহার করবেন।
Post —
উপর দিক থেকেই প্রথম সেটিংসটি হলো Posts। এখানে ক্লিক করে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পোস্ট করতে পারব৷ পোস্ট করার জন্য নিচের ছবির মতো “New post ” লিখায় ক্লিক করতে হবে।
তারপর এমন একটি ইন্টারফেস আসবে। এখানের প্রত্যেকটি অপশনকে A,B,C,D দিয়ে চিহ্নিত করে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
A:- A হলো টাইটেল বার এখানে আপনার পোস্টের টাইটেল দিবেন।
B:- B অপশনটি দিয়ে আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন কিভাবে আপনি পোস্টটি লিখবেন। যদি Compose view দেন তাহলে নরমাল টেক্সট এর মাধ্যমে পোস্টটি করবেন। যদি Html দেন তাহলে কোডিং করে লিখতে হবে পোস্টটি। যদি Compose view দিয়ে লিখেন তাহলে কোডিং অটোমেটিক হয়ে যাবে তাই এটা দিয়ে লিখাই উত্তম।
C:- C অপশনটি দিয়ে আপনি আপনার টেক্সট এডিট করতে পারবেন। টেক্সট বোল্ড করা ফন্ট সাইজ ঠিক করা ইত্যাদি বিষয় এই অপশন দিয়ে করতে হবে
D:- এই জায়গায় আপনি আপনার টেক্সট লিখবেন।
E:- E এর মধ্যে দুটি অপশন রয়েছে “Preview ” এবং “Publish” Preview তে ক্লিক করলে আপনার পোস্টটি পাবলিস এর পর কেমন হবে তা দেখাবে। আর Publish এ ক্লিক করলে আপনার পোস্টটি হবে
F:- F এর মধ্যে ৫ টি সেটিংস রয়েছে। চলুন এগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানি।
- Labels :- আপনার পোস্টটি কোন ক্যাটাগরিতে রাখবেন ঐ ক্যাটাগরি সিলেক্ট করবেন এখানে।
- Published time:- আপনি যদি আপনার পোস্ট কোন নির্দিষ্ট সময়ে পাবলিস করতে চান তাহলে এখান থেকে ঐ টাইম সিলেক্ট করে দিলে তা অটোমেটিক হয়ে যাবে।
- Permalink :- আপনার ওয়েবসাইটের লিংক কেমন হবে এটা এখান থেকে সেটিং করতে পারবেন।
- Location :- কোন লোকেশন থেকে পোস্টটি করছেন চাইলে তা সিলেক্ট করে দিতে পারেন। এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়
- Options :- আপনার পোস্টে কেউ কমেন্ট করতে পারবে নাকি পারবে না তা এইখানে সেটিং করতে পারবেন।
Post এর যাবতীয় সেটিংস আসা করে বুঝেছেন।
তার পরবর্তী অপশন হলো Stats
Stats:– এখানে আপনি দেখতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটরস সংখ্যা এবং কোথা থেকে মানুষ ভিজিট করছে তা। এখানে তেমন কোন সেটিংস নেই।
Comments:- কেউ যদি আপনার পোস্টে কমেন্ট করে তাহলে তা এই অপশনে গিয়ে দেখতে পারেন।
Earnings :- আপনি যদি গুগোল এডসেন্সের সাথে আপনার ওয়েবসাইটকে মনিটাইজ করতে চান তাহলে এই অপশন থেকে সরাসরি কানেক্ট করতে পারেন এডসেন্সের সাথে।
Pages:–
Pages অপশনটিতে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় পেইজ ক্রিয়েট করতে পারবেন যেমন:- Privacy policy, about us ইত্যাদি।পোস্টের মতোই আপনি একই সিস্টেমে পেইজ ক্রিয়েট করতে পারবেন।
Layout :–
আপনার ওয়েবসাইটের কোনদিকে কি থাকবে হেডারে কি থাকবে, সাইড বারে কি থাকবে তা Layout অপশনে গিয়ে কনট্রোল করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটের লগোও এই অপশনে গিয়ে এড করতে পারবেন।
Themes :-
এখানে গিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য থিম সিলেক্ট করতে পারবেন অথবা নতুন কোন থিম আপলোড দিতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটের কালার, height, weight ইত্যাদি সকল বিষয় এখান থেকে কনট্রোল করতে পারেন। ওয়েবসাইটকে মোবাইল অপটিমাইজড ও করতে পারবেন এখান থেকে।
সেটিংস:–
আপনার ওয়েবসাইটের সার্চ ডেসক্রিপশন, টেগ লাইন, গুগোল এনালাইটিকস কানেক্ট ইত্যাদি যাবতীয় সেটিংস এখান থেকে করবেন।
এসব অপশন গুলো সম্পর্কে জানা খুবই দরকার ফ্রীতে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য।
কোন মন্তব্য নেই