ইংরেজি বিভাগে কেন পড়ব? দ্বিতীয় পর্ব Muhammed Juwel Ahmed

ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ ইংরেজি সম্পর্কে বলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির।

ইংরেজি বিভাগের গুরুত্ব সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে তোলা।
ইংরেজি বিভাগের গুরুত্ব সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে তোলা।

ইংরেজরা আজ থেকে এক হাজার বছর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি পড়া বা পড়ানো শুরু করে মাত্র দেড় শ বছর আগে। কয়েক শতাব্দী ধরে ইংরেজিকে এক ধরনের ‘পড়ানোর অযোগ্য’ বিষয় বলে গণ্য করা হতো। ইউরোপ থেকে আমাদের এই ভূখণ্ডে ইংরেজি বিভাগ আসতে অবশ্য খুব একটা সময় নেয়নি। মাত্র বছর পঞ্চাশেক পরেই, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয় হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগ নিয়ে। সেগুলোর মধ্যে ইংরেজি অন্যতম। 

খুব দ্রুত বিখ্যাত ও জনপ্রিয় হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এই বিভাগ। বর্তমানে দেশের প্রায় সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শহর ও গ্রামে স্নাতক পর্যায়ের নতুন-পুরোনো প্রায় সব কলেজেই ইংরেজি বিভাগ আছে। প্রতি বছর এই বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। একটু খুঁজলেই দেশের বড়, মাঝারি, ছোট সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই ইংরেজি পড়া কাউকে না কাউকে কর্মরত পাওয়া যাবে।

কী পড়ানো হয়

শিক্ষাজীবনের একদম শুরু থেকেই এই দেশে সবাইকে ইংরেজি পড়তে হয়। ভিনদেশি ভাষা হলেও, ইংরেজি না জেনে কোনো ডিগ্রি বা ভালো চাকরি পাওয়া এখন একেবারেই অসম্ভব। তাই মানুষ ইংরেজি বিভাগগুলোকে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, বেশ সমীহ করে। বিভাগ হিসেবে এক শ বছর ধরে ইংরেজি তার গুরুত্ব, জনপ্রিয়তা ও সামাজিক অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু সারা দেশে এই বিভাগগুলোতে ঠিক কী পড়ানো হয়, কেমন করে পড়ানো হয়—এই সব নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা বা ধোঁয়াশা রয়েছে। কেউ কেউ ইংরেজি ভাষা শেখানোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা কোচিং সেন্টারের সঙ্গে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগকে গুলিয়ে ফেলেন। মনে করেন এখানে ব্যাকরণ ও ইংরেজি পড়া, বলা বা লেখা শেখানো হয়। আদতে এসব শেখানো ইংরেজি বিভাগের কাজ নয়, কখনোই ছিল না। 

ইংরেজি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে মূলত ইংরেজি ভাষায় রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও ভাষাবিদ্যা পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এসবের পাশাপাশি সাহিত্যতত্ত্ব ও ইংরেজি ভাষা শেখানোর তত্ত্ব, নীতি ও পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়। হাল আমলে অবশ্য ইংরেজির নিজস্ব জগতের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের পরিচিতি, ইতিহাস, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, সংস্কৃতি অধ্যয়ন, লৈঙ্গিক রাজনীতি, মিডিয়া ও চলচ্চিত্রসহ নানান বিচিত্র বিষয় এই বিভাগের সিলেবাসের অংশ।

ক্যারিয়ার পেশার ক্ষেত্র

সেই শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘ইংরেজিতে অনার্স’ বা ‘ইংরেজিতে এমএ’—এই কথাগুলো বেশ সমীহের সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে তাই চাকরির বাজারেও বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এই বিভাগে পড়ে ঠিক কত ধরনের ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তার হিসাব কষা মুশকিল। 

ইংরেজি পড়ে প্রতি বছর একটা বড় সংখ্যার শিক্ষার্থী স্নাতক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিবার বিসিএস পরীক্ষার কঠিন ধাপগুলো সফলভাবে পার হয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি পাওয়াদের একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিভাগগুলো থেকে। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগও থাকে প্রচণ্ড। পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা বিপণন প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে ইংরেজি পড়া স্নাতকদের আলাদা কদর। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স কাজ বা অনুবাদেও আজকাল এই বিষয়ে শিক্ষিতরা সফল পেশাজীবন গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

ভবিষ্যৎ কী

দেড় শ বছর বয়সী এই বিভাগের অতীতের মতো ভবিষ্যৎও বেশ উজ্জ্বল। কালের পরিক্রমায় অনেক বিষয় তাদের কদর ও জৌলুশ হারালেও ইংরেজি রয়ে গেছে স্বমহিমায়। একসময় ‘পড়ার অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হলেও নিকট ভবিষ্যতে এই বিষয়ে পড়ার আগ্রহ ও গুরুত্ব কমার তেমন কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কালের পরিক্রমায় এর ধরন ও স্বভাব অনেক বদলে গেছে। হয়তো টিকে থাকার জন্যই, যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইংরেজি বিভাগ তার পড়ার বিষয়বস্তু ও পড়ানোর ঢঙে অনেক পরিবর্তন এনেছে। নতুন, বিচিত্র অনেক কিছু ঢুকে যাচ্ছে এর সিলেবাসে। তাই শেক্​সপিয়ার, জন মিল্টন, জেন অস্টিন, বায়রনদের দাপট ক্রমেই কমছে; আর গুরুত্ব বাড়ছে নোয়াম চমস্কি, মিশেল ফুকো, এডওয়ার্ড সাইদ আর গায়ত্রী স্পিভাকদের।

কারা পড়বে

এখন পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে যত বিষয় প্রচলিত আছে, তার মধ্যে ইংরেজি সবচেয়ে বেশি সব্যসাচী। ব্যবসায় প্রশাসন, কারিগরি বা প্রকৌশল পড়ার ফলে মানুষ ক্রমেই মানবিক গুণাবলি হারাচ্ছে বলে অনেক সময় অভিযোগ করা হয়। আবার শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাসের মতো মানববিদ্যার অধ্যয়ন করলে চাকরি মেলে না বলে অনেকেই অনুতাপ করেন। ইংরেজিই হয়তো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র বিষয় যা পড়ে একূল–ওকূল দুই কূল রক্ষাই সম্ভব। 

তবে যাঁরা কেবল ইংরেজি ব্যাকরণ বা ইংরেজি লিখতে, পড়তে, বলতে শেখার আশায় এই বিভাগে ভর্তি হতে চান—তাঁরা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন, আজ এই মুহূর্তে। এই বিভাগে পড়লে দারুণ প্রয়োজনীয় এই বিদেশি ভাষা নিয়ে আপনার জ্ঞান আরও তুখোড় হবে এটা যেমন সত্য, তেমনি ইংরেজি ভাষা কম জেনে এই বিষয়ে পড়তে এলে পদে পদে আপনি হতাশ হবেন। 

বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক যেকোনো বিভাগ থেকে এসেই আপনি পড়তে পারবেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। তবে যাঁদের শিল্প-সাহিত্যে ভীষণ আগ্রহ, নতুনকে সহজভাবে যাঁরা গ্রহণ করতে পারেন, যাঁরা চেনাজানা পরিচিত জগতের চেয়ে বৈচিত্র্যকে বেশি প্রাধান্য দেন, তাদের জন্য ইংরেজি বিভাগের আমন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। নানান দেশ থেকে ইংরেজি ভাষায় লেখা বা অনুবাদ করা সাহিত্য এখন পর্যন্ত এই বিভাগের প্রাণ। এই বিভাগে পড়তে হলে কবিতা, গল্প, নাটক লিখতে জানতে হয় এমন নয়, কিন্তু সাহিত্যের এই ধারাগুলোকে ভালোমতো ভালো না বাসলে এই বিভাগে পড়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখের হয় না।



                  Muhammed juwel Ahmed 

            Simplicity is the essence of her happiness. Loves to read books and watch movies. Enjoy being a English Department student during the day and a writer by night. She is currently studying at the Department of English , University Of Beanibazer Government College . 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.