ভালোবাসা প্রকাশ করার সেরা 10 টি উপায় এবং লক্ষণ | Muhammed Juwel Ahmed |

বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা, “ভালোবাসা প্রকাশ করার উপায়” গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। আজকে আমরা জানবো, কি কি উপায়ে আমরা আমাদের মনের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি বা করে থাকি। 

ধরো ক্লান্ত তুমি,

অফিস থেকে সবে ফিরেছ,

ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,

খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে

ঘর্মাক্ত আমি তোমার

হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো ?

তুমি কি বিরক্ত হবে ?

নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত এই কবিতাটি পাঠকসমাজে বেশ পরিচিত।

ভালোবাসা যতটা সহজ, তার থেকেও অনেক কঠিন তাকে একটা রূপ দিয়ে প্রকাশ করা।

তাই সবাই যে ভালোবাসলেই মনের মানুষের কাছে ঠিক ঠিক ভাবে তা প্রকাশ করতে পারে, এমনটা নয়।

অনেকেই ভালোবাসাকে বোঝানোর মতো ভাষা খুঁজে পায় না। এমন অনেক ভালোবাসা আছে, যা অপ্রকাশিত হয়েই থেকে যায়।

এখন এই সব লেখা পড়ে পাঠকের মনে যদি প্রশ্ন জাগে, যে তার মনে যে প্রেমের ফুল ফুটে উঠেছে তার সৌরভে সে কিভাবে মনের মানুষের হৃদয় চঞ্চল করবে, তাহলে এই লেখাটা আপনাদের মতো নীরব প্রেমিকদের জন্য।

লেখাটা সম্পূর্ণ পড়লে আপনিও খুব সহজেই ভালোবাসার বহিপ্রকাশ করতে সক্ষম হবেন।

ভালোবাসা প্রকাশ করার উপায় ? সেরা ১০টি উপায় 

যদি আপনিও ভাবছেন যে, মনের ভালোবাসা কিভাবে প্রকাশ করা যায় তাহলে নিচে দেওয়া এই প্রত্যেকটি উপায় গুলো একে একে জেনেনিন। 

১| চোখের চাহনি পরিবর্তন

চোখ হল মনের আয়না। মানুষের মনের ভাব তার চোখে ফুটে ওঠে।

মনের ভালো লাগা, ভালো না লাগা, পছন্দ, অপছন্দ, রাগ, অভিমান, সব কিছুই প্রকাশ পায় তার চোখে।

ভালোবাসা প্রকাশেরও এক অনন্য মাধ্যম হল ওই চোখ। 

যদি মনে হয়ে থাকে, কোনো মেয়ে কোনো ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, বা ছেলেটি মেয়েটিকে পছন্দ করছে, তাহলে তার চোখ দুটোকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, সে  বারে বারে তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে চেয়ে আছে এবং কারনে অকারণে তাকে লক্ষ্য করে , চোখে হারাচ্ছে।

সুযোগ পেলেই অপলক দৃষ্টিতে দেখে নিচ্ছে তার অধিকারকে। অন্যান্য অনেক ব্যক্তির উপস্থিতি সত্ত্বেও তার চোখ সরতে চায় না।

মনে ভালোবাসা জাগলে, চোখের চাহনির অনেক পরিবর্তন হয়।

সেই চাহনিতে অধিকার জন্মায়, বশ্যতা জন্মায় আবার প্রকাশিত হয়, ভালোবাসার মানুষটার কাছে মনের দুর্বলতা।

ভালোবাসায় চোখের ভাষা বুঝতে পারলেই মনের ভাষা বুঝে নেওয়া যায়।

তাই ভালোবাসা বহিপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম হল চোখের চাহনি। 

২| আচরণের পরিবর্তন

 কোনো একটি মেয়ে বা ছেলে যদি তার মনের মানুষের  দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, সময় পেলেই দেখে নেয় তার মন মাধুরীকে।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে  ভালোবাসা বহিপ্রকাশের আর একটি উপায় হল বিশেষ মানুষটির সাথে আচরণের পরিবর্তন।

সে বারবার নিজের মনের মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে চাইবে, বারবার তার সামনে উপস্থিত হবে বা হওয়ার চেষ্টা করবে। 

যদি তারা পরস্পরের  সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকে তাহলে দেখা যাবে, সে আপনাকে নিজে থেকে বার্তা পাঠাচ্ছে।

তার ছবি, স্ট্যাটাসে মনগ্রাহী, সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করছে ছবিতে রিয়াক্ট করছে আবার আলাদা করে নোটস দিচ্ছে, বা নিজে থেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে।

অনেকেই বলতে পারেন ভালো বন্ধুত্বে তো এগুলো হতেই পারে, মনে রাখতে হবে ভালো বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা কখনো এক নয়।

বন্ধুত্বে কাছে পেতে চাওয়া, নিজের করে রাখার অনুভূতি থাকে না, তবে ভালোবাসায় ভালোবাসার মানুষটার ওপর একটা অলিখিত অধিকার থাকে।

মনে রাখতে হবে, ভালোবাসায় বেঁধে রাখার ক্ষমতা থাকে যা বন্ধুত্বে থাকে না।

তাই কোনটা বন্ধুত্ব আর কোনটা ভালোবাসা তা আচরনে বোঝাই যায়।

ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে যে আচরণ সেই আচরণ কখনই আর কারো সঙ্গে হবে না।

ভালোবাসায় অধিকার বোধ থাকবে, নিজের করে নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, রাগ থাকবে অভিমান থাকবে, যখনই কারো আচরণে এই লক্ষন গুলো ফুটে উঠবে তখন বুঝতে হবে তা ভালোবাসা প্রকাশের এক পথ।

৩| ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে নিজে থেকে কথা বলা

কোনো শক্তিই ভালোবাসাকে আটকে রাখতে পারে না। ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে নিজে থেকে কথা বলা (তা সে মুখোমুখি হোক বা সোস্যাল মিডিয়াতে) সারা দিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়।

কথা বলার সময় কথা বলার ধরন, প্রশ্নের ধরন এগুলোর দিকেও নজর রাখলে বোঝা যায় সাধারন মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার মানুষের যে তফাৎ তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

কথা বলার মাধ্যমেও মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।

ধরা যাক দুজন প্রেমিক প্রেমিকা সামনাসামনি একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে, তখন তারা নরম ভাবে, কোমল স্বভাবে কথা বলে, সোস্যাল মিডিয়াতেও তারা নিজেদের দৈনন্দিন খবরাখবর, বাড়ির লোকের কথা, নিজেদের শৈশবের কথা, নিজেদের  ভালো লাগা, খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করে, তারা একে অপরকে নিজের দৈনন্দিন ঘটনা, নিজের স্মৃতি, কথা প্রসঙ্গে বলে থাকে।   

আসলে সব মানুষের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায় না। বিশেষ বিশেষ মানুষদের সঙ্গেই তা ভাগ করে নেওয়া যায়। আর সেই বিশেষ মানুষটা হল মনের মানুষ।

তাই ভালোবাসা বহিপ্রকাশের আর একটি প্রধান মাধ্যম হল কথা বলা।

আপনার কথা বলার ধরন, গলার স্বর বুঝিয়ে দেবে আপনি প্রেমে পড়েছেন কিনা। 

৪| আপনার কাছাকাছি থাকতে চাওয়া

ভালোবাসা বহিপ্রকাশের আর একটি লক্ষন হল একে অপরের কাছাকাছি থাকতে চাওয়া বা একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে চাওয়া।

যদি দেখা যায় কোনও ছেলে বা মেয়ে কখনো লাজুক ভঙ্গিতে কথা বলার উদ্দেশ্য নিয়ে মনের মানুষের কাছে আসে, এবং তারা একে অপরের চোখে চোখ না রেখে নরম স্বভাবে মাথা নীচু করে কথা বলে  তাহলে ধরেই নিতে হবে তারা একে অপরের প্রেমে পড়েছে।

কারন তারা একে  অপরকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে।

প্রেমের প্রথম দিকে এই লক্ষণ থাকা স্বাভাবিক। তাদের চোখের চাহনি এবং আচরণ সব সময় চাইবে যেন তারা বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে সব সময় একে অপরের হয়ে থাকে। 

৫) ভালোবাসার মানুষের সামনে চুল নিয়ে খেলা করা

এই লক্ষন টি কেবল মাত্র মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 

মেয়েরা নিজেদের চুল নিয়ে ভীষন রকম অবসেসড হয়।

যদি দেখা যায় কখনো কোনো মেয়ে কোনো ছেলের সামনে কথায় কথায় নিজের চুলে হাত বোলাচ্ছে বা তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের চুল ঠিক করছে তাহলে বুঝতে হবে মেয়েটির মনে কিছু ভালোবাসা অবশই আছে এবং সে সেটাকে প্রকাশ করতে চাইছে।

ধরা যাক ছেলেটি নিজের কলেজের বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছে, যে মেয়েটি ওই ছেলেটিকে পছন্দ করে, দেখা গেল সে কখনো নিজের চুলে হাত দিয়ে চুল দোলাচ্ছে, কখনো বা চুলটিকে কানের পিছনে সরিয়ে দিচ্ছে, কখনো বা চুলের বাঁধন খুলে তা ঠিক করছে।

তাহলে বুঝতে হবে সেই মেয়েটি ওই ছেলেটিকে দেখিয়ে দেখিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করছে। 

৬| অকারণে ছুঁতে চাওয়া

ভালোবাসার মানুষ হোক বা ভালোলাগার মানুষ, তাকে কাছে পেতে সবাই চায়, ছুঁতে চায়, স্পর্শ দিয়ে অনুভব করতে চায়।

যদি কোনো ছেলে বা মেয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে তাহলে লক্ষ্য করে দেখবেন তারা একে অপরকে ছুঁতে চাইছে। 

কারণে অকারণে গায়ে হাত দিচ্ছে, সাধারন ভাবে মনে হবে যেন ভুল বসত হাত লেগে গেছে বা অসাবধানতা বসত হয়েছে। তারপর মিষ্টি হেসে সরিও বলছে।

কিন্তু সে চেষ্টা করছে স্পর্শ পেতে, নিজের প্রিয়জনকে ছুঁয়ে অনুভব করতে।

ধরা যাক একটি ছেলে এবং মেয়ে কলেজ থেকে বা অফিস থেকে দুজনে একসঙ্গে ফিরছে।

পথে হয়তো কোনো একটা কুকুর তেড়ে এল, মেয়েটি এইরকম পরিস্থিতিতে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরবে।

বা দুজনে হয়তো ভীড় বাসে উঠেছে, ছেলেটি অনুভব করল মেয়েটি তার হাত ধরেছে, ভালোবাসা প্রকাশের আর একটি পন্থা হল ভালোবাসার মানুষটিকে ছুঁয়ে দেখা

৭) মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা

ভালোবাসা প্রকাশের আর একটি ধাপ হল তার পছন্দের মানুষটির মনোযোগ আকর্ষণ। 

যখন কোনো ছেলে বা মেয়ে কাউকে পছন্দ করে তখন সে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে ধীরে ধীরে বেশি আগ্রহ দেখাতে আরম্ভ করে।

তার সাথে কথা বলার সময়  কথার প্রত্যেকটি শব্দের দিকে বিশেষ নজর দেয়।

কথা বলার সময় সে তার কণ্ঠস্বরেও কিছুটা পরিবর্তন করে।

স্বরটি অনেক বেশি আন্তরিক হয়। আর এটি শুধু তার পছন্দের মানুষটির জন্যই করে থাকে।

যখন সে তার সামনে আসবে তখন সে নিজেকে পরিপাটি ভাবে পরিবেশন করবে।

কোনো ছেলে বা মেয়ের শারীরিক ভাষার যেসব লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে সে তার সামনের মানুষটিকে  ভালোবাসে তা হল ভালোবাসার মানুষটির সামনে তার পরিপাটি ভাব।

সে বারবার  নিজের পোশাক ঠিক করবে, চুল এলোমেলো হয়ে গেল কি না তা দেখবে।

এসব দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় যে সে ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।

৮) মুখোমুখি হওয়ার প্রবণতা

যখন কোনো ছেলে বা মেয়ে তার পছন্দের মানুষটির সাথে বসে কথা বলে তখন সে পুরোপুরি তার মুখোমুখি বসার চেষ্টা করে।

অন্যভাবে বলা যায়, ছেলেটি বা মেয়েটি এটি বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার অন্য কারো দিকে তাকানোর সময়ই নেই।

চোখের চাহনিতে আনুগত্য প্রকাশ করবে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে।

আসলে ছেলেটি বা মেয়েটি যত বেশিক্ষন মনের মানুষটির সামনে উপস্থিত থাকবে, তত  মনের ভাব বুঝতে সুবিধা হবে। 

৯) বিশেষ উপহার দেওয়া

 অনেক সময় দেখা গেছে যে, কোনো মেয়ে বা ছেলে তার মনের ভালোবাসা কিছু বিশেষ উপহার দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করে থাকে। 

উপহার আমরা অনেক ব্যক্তিদের দিয়ে থাকি, তবে একটি ভালো উপহার কিন্তু আমরা সবাইকে দিয়ে থাকিনা।

যদি কোনো মেয়ে বা ছেলে তার প্রিয়জনকে অনেক ভালো / দামি / আকর্ষণীয় উপহার দিচ্ছেন, তাহলে এটাও কিন্তু তার ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম বা উপায় হতে পারে।

১০) বিশেষ ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত হওয়া

ভালোবাসায় হিংসা বা ঈর্ষা থাকা ভালো। এই আচরনটি মেয়েদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।

যদি এমন কখনো হয়, কোনো ছেলে যখন অপর কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে তখন একটি মেয়ে কিছুটা ঈর্ষান্বিত হয় তবে এটি নিঃসন্দেহে বুঝতে হবে যে ঈর্ষান্বিত মেয়েটি ওই ছেলেটির ওপর প্রেমে পড়েছে।

যদি কোনো পাঠক পাঠিকা লেখাটি পড়তে পড়তে ভাবেন যে উপরের লক্ষন গুলি তিনি কোনো ছেলের বা মেয়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন তাহলে তার আর বুঝতে অসুবিধা থাকবে না, ছেলেটি বা মেয়েটি তাকে মন থেকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা এমন কিছু সাধারণ ভালোবাসা প্রকাশ করার উপায় গুলোর বিষয়ে জানতে পারলেন যেগুলো বিশেষ করে প্রেমে পড়া ছেলে বা মেয়ের মধ্যে দেখা যেতে পারে। 

কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করব, এই বিষয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগে থাকলে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন। 

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটা নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.