জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম |

জন্ম নিবন্ধন বয়স (Age) সংশোধন করতে চান? জানুন কি কি লাগবে, কিভাবে অনলাইনে বয়স সংশোধন ফরম পূরণ করবেন, কোথায় জমা দিবেন বিস্তারিত তথ্য।

আগে যারা জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন, দেখা যায় তাদের জন্ম নিবন্ধনে থাকা জন্ম তারিখ ও অন্যান্য আইডি ডকুমেন্টের জন্ম তারিখের সাথে মিল থাকে না। এর কারণ মূলত অসতর্কতা।

আমরা অসতর্কতাবশত জন্ম নিবন্ধন করার সময়, আমাদের বিভিন্ন ডকুমেন্টের সাথে জন্ম তারিখ ও তথ্য মিল রেখে না করার কারণেই এমন বয়স (Age) গরমিল অসুবিধায় পড়তে হয়।

এখন অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সিস্টেমের কারণে জন্ম তথ্য যাচাই মাধ্যমেই বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন, পাসপোর্ট বা ব্যাংক একাউন্ট করতে হয়। তাই জন্ম নিবন্ধনের বয়স অবশ্যই অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে মিল থাকতে হবে।


Update: শিক্ষা সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট দিয়ে জন্ম নিবন্ধনে জন্ম সাল ও বয়স সংশোধন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে। তবে উপযুক্ত প্রমাণ প্রমাণ সাপেক্ষে শুধুমাত্র তারিখ ও মাসের সংশোধন করা যাবে। 

নিশ্চই আপনার জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন করতে চান, তাই এই পেইজে এসেছেন। তাহলে জেনে নিন জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম, কি কি লাগে, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম কিভাবে পূরণ করবেন সব বিস্তারিত।

জন্ম নিবন্ধন বয়স বাড়ানো বা কমানোর উপায়

ভুলবশত জন্ম নিবন্ধনে বয়স বেশি বা কম দেয়া হলে আপনি অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ আপলোড করে অনলাইনে আবেদন করে তা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।

যদি আপনার শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সময় টিকা কার্ড ব্যবহার করে থাকেন এবং দেখা গেল যে, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করার পরই ভুল ধরা পড়ল তবে আপনি অনলাইনে বা ফরম পূরণকরে টিকা কার্ড পুনরায় জমা দিয়েই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারেন।

আবার হতে পারে, আপনার জন্ম তারিখ ১৯৮৭ কিন্তু জন্ম নিবন্ধন করার সময় কম্পিউটার অপারেটর বা আপনাদের ভুলবশত এটি ১৯৭৮ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সঠিক যে কোন একটি প্রমাণ যেমন, সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা প্রযোজ্য অন্যান্য ডকুমেন্ট দিয়ে সংশোধন করাতে পারেন।

যদি আপনার নিজের এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা জে.এস.সি., এস.এসসি, এইচ.এসসি বা যে কোন বোর্ড পরীক্ষার সনদের সঠিক জন্ম তারিখ থাকে তা দিয়ে আপনি জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করতে পারেন।


আপনার যদি কোন প্রমানই না থাকে এবং জন্ম তারিখ অস্বাভাবিক ভুল হয় যেমন, আপনার বয়স ৩০ বছর কিন্তু জন্ম সনদ অনুসারে ২০/৪০ বছর হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি সাবমিট করতে পারেন।

আবার হতে পারে, আপনার ২/৩ ভাই বোন। দেখা যাচ্ছে বড় ভাইয়ের চেয়ে আপনার বয়স বেশি লেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার পিতার ও ভাইবোনে জন্ম সনদ সাবমিট করে আবেদন করতে পারবেন।

অর্থাৎ জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে সঠিক বয়স প্রমাণের স্বপক্ষে কোন ও না কোন প্রমানক আপনাকে উপস্থাপন করতে হবে।

এখন জেনে নিই জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে।




জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করতে কি কি লাগে

  • ই পি আই কার্ড (শিশুর টিকা কার্ড)।
  • পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি বা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন সনদ যেখানে সঠিক বয়স আছে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পুরাতন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন (ইস্যু সম্পর্কিত ফাইল- যদি হাতে লেখা পুরাতন জন্ম নিবন্ধনে সঠিক জন্ম নিবন্ধন থাকে)
  • হাসপাতাল/ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র (জন্ম গ্রহণের সময় যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হয়েছিল)
  • হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত জন্ম সনদের সত্যায়িত কপি বা পুরণকৃত আবেদনপত্রে বার্থ এটেডেন্সের এর প্রত্যয়ন বা ইপিআই (টিকা কাড) কার্ডের সত্যায়িত আনুলিপি।
  • পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি অস্বাভাবিক জন্ম তারিখ দেওয়া থাকে এবং অন্য কোন প্রমান না থাকে)

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার জন্য প্রথমে সঠিক বয়স প্রমাণের ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করুন। এরপর অনলাইন আবেদনটি ২ কপি প্রিন্ট করুন। প্রমাণপত্র সহ আবেদনটির ১ কপি ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/ কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন এবং অন্যটি উপজেলা বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অফিসে জমা দিন। আবেদনটি যাচাই করার পর অনুমোদন করা হলে, বয়স সংশোধন হবে।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১ঃ জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম পূরণ করুন

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম পূরণ করতে ভিজিট করুন https://bdris.gov.bd/।এখানে নিচের মত একটি পেইজ আসবে। মেন্যু থেকে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন মেন্যুতে ক্লিক করুন।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন

এবার আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার নিবন্ধন এন্ট্রি বের করুন।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন

এখান থেকে নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করুন।

এরপর নিচের মত একটি পেইজ পাবেন। এখানে সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে এবং প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম

উপরের তথ্যগুলো পূরণ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি জমা দিন।

সতর্কতাঃ আবেদন জমা দেয়ার পর অবশ্যই অ্যাপ্লিকেশন আইডি- কোথাও লিখে নিন।

তারপর আবেদন প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিন বা পিডিএফ হিসেবে সেভ করে নিন। আপনার প্রিন্টার না থাকলে, এলাকার কোন কম্পিউটার সেবার প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও জন্ম তারিখ দিয়ে ২ কপি জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিন।

ধাপ ২ঃ আবেদনটি ইউনিয়ন/পৌরসভা/ কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন

বয়স সংশোধনের আবেদনটি এবং সঠিক বয়স প্রমাণের আপলোড করা ডকুমেন্টের একটি ফটোকপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা বা কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন।

তারা আপনার থেকে প্রয়োজনীয় ফি নিবে এবং আপনার আবেদনটি রিসিভ করে Higher Authority (উচ্চতর কর্তৃপক্ষের) বিবেচনার জন্য পাঠাবে।

ধাপ ৩ঃ উপজেলা/উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন ও প্রমাণপত্র জমা দিন

এই ধাপে, আপনার আবেদনের কপি ও বয়স প্রমাণের ডকুমেন্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা আপনার এলাকা অনুযায়ী উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অফিসে জমা দিন।

উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অফিস কোনটি বা কোথায় পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য যেতে হবে তা আপনার ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন।

ধাপ ৪ঃ জন্ম নিবন্ধন সংশোধন তথ্য যাচাই ও সনদ সংগ্রহ করুন

৩/৪ দিন পর অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন তথ্য যাচাই করে দেখুন যে আপনার আবেদনটি অনুমোদন হয়েছে কিনা। যদি অনুমোদন হয়, আবার ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা অফিস থেকে সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করুন।

ব্যাস কাজ শেষ।

জন্ম নিবন্ধন বয়স পরিবর্তন

ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল না হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে বা জালিয়াতির জন্য কেউ জন্ম নিবন্ধন বয়স কমানো/ বাড়ানো বা পরিবর্তন করতে যাবেন না।এটি করা দন্ডনীয় অপরাধ।

জন্ম তারিখ কমানো বা বয়স ইচ্ছাকৃত ভাবে কমানোর জন্য অনেকে একাধিক জন্ম নিবন্ধন করতে যায়। যদিও এখন তা করা অনেকটাই কঠিন। এধরণের কাজ অবশ্যই আইনগত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং কেউ এ ধরণের কাজে জড়াবেন না।

শেষকথা

আগের করা জন্ম নিবন্ধনগুলোতে বয়স ভুল হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। কারণ প্রথমবার এসব জন্ম নিবন্ধনগুলো হাতে লেখা হয়েছিল তারপর ম্যানুয়েলি এগুলো ডাটা এন্ট্রি দিয়ে অনলাইনে আপলোড করা হয়। তাই তাদের ভুলে এসব ভুল হতে পারে।

এক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন। নতুনভাবে জন্ম নিবন্ধন করা যাবে না।

আশা করি জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। তারপরও কোন প্রশ্ন থাকলে নিচের প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন, কমেন্টে জানাতে পারেন বা সরাসরি ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করুন।

জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে কোন প্রশ্ন? কমেন্ট করুন, দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন নিয়ে সাধারণ প্রশ্নের উত্তর

জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমানো যায় কিভাবে?

সঠিক বয়স প্রমাণের জন্য উপযুক্ত ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমানো যাবে।

অনলাইনে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করব?

https://bdris.gov.bd/ ওয়েবসাইটে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন মেন্যুতে যান। তারপর সঠিক জন্ম তারিখ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন। সবশেষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন। তারপর পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আবেদনটি প্রমাণপত্র সহ ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা অফিসে জমা দিন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.