জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার সঠিক নিয়ম | How to write properly in the exam book

আপনারা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন। তারা অনেকেই পরীক্ষা দেয়ার সময় চিন্তায় থাকেন কিভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখলে অনেক ভালো নাম্বার পাওয়া যায়। তাদের জন্য আমার আজকের আর্টিকেল। আপনারা এই নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে ইনশাল্লাহ ভালো নাম্বার নিয়ে আসতে পারবেন।

চলুন প্রথমে মানবণ্টন ও সময় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার মানবন্টন:

মোট পরীক্ষার মার্ক ১০০, ১০০ মার্কের মধ্যে ৪০ পেলে পাশ।

তবে আপনাদের পরীক্ষা হবে ৮০ মার্কের। সেখান থেকে ৩২ পেলে পাশ হয়ে যাবেন।

ইনকোর্স পরিক্ষার ২০ মার্ক কলেজ থেকে দেয়া হয়, বেশিরভাগ কলেজে ২০ এর মধ্যে ১৫+ নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়। তো এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করা লাগবেনা। 

৮০ মার্ক পরীক্ষার মানবন্টন 

প্রতিটা প্রশ্নের মধ্যে ৩টা ক্যাটাগরি থাকবে।

  • ক-বিভাগ (অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)
  • খ-বিভাগ (সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)
  • -বিভাগ (বর্ণনামুলক বা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার সময়:

পরীক্ষার সময় হবে মোট ৪ ঘন্টা।
ক-বিভাগে ১২টা প্রশ্ন থাকবে সেখান থেকে ১০টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। 
প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ১
১০ টা প্রশ্ন দিতে পারলে ১×১০=১০ পাবেন।
খ-বিভাগে ৮টা প্রশ্ন থাকবে সেখান থেকে ৫টা দিতে হবে।
প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ৪।
৫ টা প্রশ্ন দিলে পাবেন ৫ × ৪=২০

গ-বিভাগে ৮টা প্রশ্ন থাকবে সেখান থেকে ৫টা দিতে হবে।

প্রতি প্রশ্নের মান ১০ করে,
১০ টা প্রশ্ন দিলে মান পাবেন, ৫ ×১০=৫০
মোট মার্ক হবে, ১০+২০+৫০=৮০
আশা করি মানবন্টন গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এবার সময় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পরীক্ষা দেয়ার সময় যেভাবে সময় নির্ধারণ করবেন:

নিচের ছবিটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার সঠিক নিয়ম

আশা করি সময় সম্পর্কে ভালোভাবেই ধারণা নিতে পেরেছেন।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার খাতায় লেখার কৌশল

১। কালোনীল কলম এবং পেনসিল ব্যবহার করা

খাতায় কালোনীল এবং পেনসিল ছাড়া আর কোনো কালির দাগ থাকবে না। অনেকে সবুজবেগুনিগোলাপি রং ব্যবহার করেনযা ঠিক নয়।এতে খাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার সঠিক নিয়ম

২। মার্জিন করা

খাতাটি পেয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তথ্যাদি পূরণ করে মার্জিন করে ফেলবেন। অবশ্যই বক্স স্কেলিং নয়। কারণএতে লেখার জায়গাটা অনেক ছোট হয়ে আসে। ওপরে ও বাঁ পাশে এক ইঞ্চি রেখে দাগ দিবেন। এই স্কেলিং করবেন নীল কালি দিয়ে অথবা পেন্সিল দিয়ে।


 
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার সঠিক নিয়ম
  মার্জিন করার সঠিক নিয়ম



৩। সময় না থাকলে লুজ শিটে মার্জিন না করা

লুজ শিটে সময় না থাকলে মার্জিন করার প্রয়োজন নেই। শুধু ওপরে ও বাঁয়ে ভাঁজ করে নিন। এতে নাম্বার কম পাবেন এমন ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

৪। লুজ শিট নাম্বার পূরণ করা

লুজ শিট নিলে তার নম্বরটি প্রথমেই মূল খাতার যথাস্থানে পূরণ করে নিন। পরে মনে থাকবে না। আর লুজ শিটে লেখার সময় নাম্বার দিয়ে রাখবেন। 

যেমন: লুজ শিট নিলে উপরে বা পাশে ১,২,৩,৪,৫ এই ভাবে নাম্বার দিয়ে রাখবেন। যাতে খাতা গোছানোর সময় খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়।

৫। সর্বোচ্চ গতিতে লেখা

আপনার জীবনের সর্বোচ্চ গতিতে লিখবেন। অনেকেই আছে খাতায় প্রথম ১টা ২টা প্রশ্ন খুব ধীরে ধীরে লিখে। যা অনেক বড় ভুল, যারা এমন করবে তারা কখনো ভালো করে পুরো মার্কের পরীক্ষা লিখে শেষ করতে পারবেনা। লেখা যেদিকে যায় যাক। শুধু বোঝা গেলেই হবে। 

দ্রুত লিখলে লেখা খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। চিন্তার কিছু নেই। তবে সুন্দর রাখতে পারলে ভালো। না পারলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

৬। পয়েন্ট গুলো নীল কালি ‍দিয়ে হাইলাইট করা

পয়েন্টকোটেশন ও রেফারেন্স নীল কালি দিয়ে লিখবেন এবং নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করে দেবেন। এতে পরীক্ষকের কাছে তা সহজে চোখে পড়বে। আর তাঁকে দেখানোই আপনার কাজ।

৭। সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়া

সব প্রশ্নের উত্তর করে আসবেন। অনেকেই সব প্রশ্ন লিখেন না। মনে করেন, ১০/২০ এর উত্তর না লিখলে কি বা হবে। এটা অনেক বড় ভূল ধারণা। সময় না থাকলে কম লিখবেন। না পারলে আন্দাজে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করবেন। প্রায় সময় এই টেকনিক অবলম্বণ করে অনেকেই ভালো নম্বর পেতে দেখা গেছে।

৮। প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা

চেষ্টা করবেন প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উত্তর দিতে। এতে খাতা দেখা সহজ হয়। তাই পরীক্ষক খুশিও হয়। আর তিনি খুশি হলে নম্বর ভালো আসবে নিশ্চই।

৯। অসম্পূর্ণ উত্তরে ক্ষেত্রে করণীয়

অসম্পূর্ণ উত্তরের ক্ষেত্রে বাংলার বেলায় অ.পৃ.দ্র. এবং ইংরেজির বেলায় To be continued লেখা উত্তম। এতে পরীক্ষক বুঝতে পারে আপনার টেকনিক্যাল জ্ঞান অনেক ভালো।

১০। নতুন প্রশ্ন লেখার নিয়ম

নতুন প্রশ্ন নতুন পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা ভালো। তবে গুচ্ছ প্রশ্নের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তবে এটা অনেক বেশি জরুরিও নয়।

১১। মার্জিনের বাইরে না লেখা

মার্জিনের বাইরে কোনো লেখা হবে না। প্রশ্নের নম্বর ও কত নম্বর প্রশ্নের উত্তর লিখছেন তাও লেখা যাবে না। এমনকি একটা ফুলস্টপও হবে না। এটা ভালো করে মাথায় রাখবেন।

১২। অতিরিক্ত পৃষ্ঠা ভরাট না করা

অনাবশ্যকভাবে পৃষ্ঠা ভরবেন না। পৃষ্ঠা গুনে নম্বর হয় না। যা চেয়েছে ও যা জানেনতা সময়ের সঙ্গে মিল রেখে লিখুন। তবে যারা দূর্বল স্টুডেন্ট তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন।

১৪। খাতায় কাটাকাটি না করা

খাতায় কাটাকাটি করবেন না। এতে খাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। সুন্দর জিনিসের দাম সর্বত্রই আছে। তার মানে এই নয়লেখা বাদ দিয়ে নকশা করবেন। চেষ্টা করবেন যেন খাতায় কাটাকাটি কম হয়। আর কাটলেও মুশ করে কাটবেন না। একটা দাগ দিয়ে কাটবেন শুধু।

১৫। নম্বর অনুযায়ী পৃষ্ঠা লেখা

৫ নম্বরের একটা প্রশ্নের উত্তর সর্বোচ্চ ৩ পৃষ্ঠা হতে পারে। এর বেশি অনেক ক্ষেত্রেই সময় পাবেন না। তবে যাদের লেখা অনেক চালু তারা ৪ পৃষ্ঠা দিতে পারেন। তবে আমি সবসময় ৫ নাম্বারের জন্য ৩ পৃষ্ঠাই দিয়েছি।😎

১৬। প্রশ্ন সংক্ষেপ করা

এক কথায় যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবেতা যত সংক্ষেপে লেখা যায়। এখানে প্যাঁচালেই বিপদ। আপনার ভুল হয়ে যেতে পারে। আর ভুল হলে কি হবে তা আর নিশ্চই বলা লাগবেনা।

১৭। বানানের ভুল গুলো মাঝে মাঝে এড়িয়ে যাওয়া

লেখার সময় বানান ভুল হচ্ছে কি না মাথায় রাখবেন। যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাবেন। সিনিয়র স্যাররা এতে খুব বিরক্ত হন। তাই বলে অনেক বেশি ভূল রাখবেন না। তবে পরে সময় পেলে অবশ্যই ঠিক করে রাখবেন।

 ১৮। চিত্র গুলো পেন্সিল দিয়ে আঁকা

যেকোনো চিত্র পেনসিল দিয়ে আঁকবেন। ফ্রিহ্যান্ডে আঁকাই উত্তম। এটা পরীক্ষার খাতার সৌন্দর্য বাড়ায়।

১৯। বর্ণনামূলক প্রশ্নে ছক গুলা যেভাবে আঁকবেন

বর্ণনামূলক প্রশ্নে ছকের প্রয়োজন পড়লে ছক দিয়ে তথ্য উপস্থাপন করবেন। ছকটা তৈরি করবেন নীল কালিতে আর লিখবেন কালো কালিতে। এতে পরীক্ষক সহজে বুঝতে পারবেন।

২০। জেলজাতীয় কালির কলম ব্যবহার না করা

জেলজাতীয় কালির কলম কখনো ব্যবহার করবেন না। এতে অন্য পৃষ্ঠাও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব এড়িয়ে চলবেন।

২১। পৃষ্ঠা বাদ রেখে গেলে যা করবেন

ভুলক্রমে যদি কোনো পৃষ্ঠা রেখে পরবর্তী পৃষ্ঠায় লিখে ফেলেনতবে ফাঁকা পৃষ্ঠায় একটা দাগ টেনে দেবেন। এতে পরীক্ষকের বুঝতে সহজ হয়ে যায়।

 ২২। প্রশ্ন অনুুযায়ী সময় ঠিক করা

প্রতিটি নম্বরের জন্য কত সময় পানতা আগেই হিসাব করে রাখবেন উপরের তথ্য মতে এবং সেই পরিমাণ সময় তাতে ব্যয় করবেন। যদি বরাদ্দকৃত সময় কিছু বেঁচে যায়তবে তা পরবর্তী কোনো প্রশ্নে ব্যবহার করতে পারেন।

২৩। রচনামূলক প্রশ্ন গুলো লেখার নিয়ম

সাধারণত বড় প্রশ্ন গুলোর পয়েন্ট গাইডে বা বইয়ে অনেক বড় করে লেখা থাকে। কিন্তু আমাদেরতো সব কিছু মনে থাকবেনা। তাই আপনারা প্রতিটা পয়েন্ট ২/৩ লাইনের বেশি লিখবেন না। চেষ্টা  করবেন এই ২/৩ লাইনের মধ্যে মূল কথা গুলো লিখে দিতে।

২৪। রচনামূলক প্রশ্নে রেফারেন্স উল্লেখ করা

বিভিন্ন সংজ্ঞা  লেখার সময় চেষ্টা করবেন কিছু রেফারেন্স কারীর নাম উল্লেখ মুখস্ত করে রাখতে। সংজ্ঞা লেখার সময় সংজ্ঞাদাতার সঠিক নাম মনে না পড়লে অন্য নাম দিয়ে দিবেন। কারণ পরীক্ষক এসব নাম তেমন একটা খেয়াল করেন না। তাই চেষ্টা করবেন নাম গুলো লিখতে।

২৩। রিভিশন দেওয়া

সাধারণ গণিতে উত্তর শেষ হলে একটু রিভিশন দেবেন। অনেকেরই প্লাসমাইনাস বা ছোটখাটো ভুল করার অভ্যাস আছে।

শেষ কথা, NU প্রশ্নের ধরনে কোনো উত্তরে কয়েক মিনিট বেশি-কম সময় লাগতে পারে তবে সেগুলো নিজের বুদ্ধিদীপ্ততায় ম্যানেজ করে ফেলবেন। একটিতে দুই মিনিট বেশি লাগলে অন্যটিতে দুই মিনিট কম সময় নিবেন।

২৪০ মিনিট সময়টি অনেক মনে হলেও লেখা শুরু করলে দেখবেন দ্রুতই সময়গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে,তাই সর্বদা সময়ের দিকে নজর দিয়ে পরীক্ষা দিবেন।আর অবশ্যই হাতের লেখা দ্রুত হতে হবে।যারা স্লো ভাবে লেখেন তারা লেখার গতি বাড়িয়ে নিবেন।




কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.