যে দশটি উপায়ে নতুন করে শুরু করবেন নিজের জীবন | Muhammed Juwel Ahmed |
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো, নতুন করে জীবন শুরু করার উপায় এবং টিপস গুলোর বিষয়ে। এই ১০ টি উপায় এর মাধ্যমে জেকেও আবার নতুন করে নিজের জীবনের আরম্ভ করতে পারবেন।
অনেক সময় আমরা নিজেদের মধ্যে থেকে নিজত্বতা বা আমিত্বকে হারিয়ে ফেলি। যেটা ভয়ংকর রকমের ক্ষতি করতে পারে আমাদের নিজেদের ভবিষতকেই।
এই অক্ষমতা কখনো ঠেলে দেবে আমাদের আত্মহননের পথে কখনো বা সামান্য দুশ্চিন্তা অন্য কারোর জীবনকে বিপন্ন করে তুলতেও আমাদের হাত কাঁপাবে না।
আমাদের নিজেদের জীবন নিজেদের হাতেই। আর তাকে কিভাবে নতুন করে শুরু করতে পারি, সাজাতে পারি তা একমাত্র আমাদের হাতেই।
নতুন করে জীবন শুরু করার উপায় গুলোর তালিকা – (সেরা ১০ টি)
নতুন করে জীবনের শুরু করার ক্ষেত্রে আমাদের বেশ অনেক কিছু বিষয়েই ধ্যান দিতে হবে। আসুন জেনে নিই নিজেদের জীবন কিভাবে নতুন ভাবে শুরু করতে পারি।
১) অর্থকে সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে শিখুন :
আপনারা সকলেই অর্থ সঞ্চয় করতে জানেন, কারণ এই শতাব্দীতে কেউ অর্থ সঞ্চয় করতে জানে না এটা অমূলক কথা।
কিন্তু অর্থ সঞ্চয় করা মানে শুধু টাকাকে জমিয়ে রাখা নয়, প্রয়োজনে তা স্থান কাল পাত্র ভেদে দান করাও।
আপনার বিয়েতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান না করে সেই টাকায় কোনো অনাথ আশ্রম বা কোনো বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের পেট ভরে খাওয়ান, তাদের আশীর্বাদ এর হাত আপনার মাথায় রাখুন।
শুধু আশীর্বাদই নয়, ওঁদের হাসিমুখের প্রাঞ্জলতা আপনার নতুন জীবনের সূচনা করবেই।
মন খারাপ থাকলে ওরাই আপনার মন ভুলিয়ে রাখবে। হৃদ্যতা, ভালোবাসা আসবে আপনার জীবনে।
কিংবা যাদের আপনি সাহায্য করেন, তারা প্রতিনিয়ত আপনার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আপনাকে সারাদিন আশান্তির মধ্যে রাখে, আপনি তাদের সাহায্য করা বন্ধ করে দিন।
এখানে সেই সব অর্থ সঞ্চয়ের প্রাধান্যতা রয়েছে। যেখানে কেউ আপনার মূল্য দেয় না আপনি সরে আসুন সেখান থেকে।
২) সবার প্রথমে নিজেকে ভালোবাসুন :
নিজেকে ভালোবাসে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।
কিন্তু আমাদের মনে নেই যে আগে আমি, পরে অন্য কেউ। নিজেকে প্রাধান্য দিতে শিখুন। আগে নিজেকে ভালোবাসুন।
নিজের জন্য সময় বার করুন, মনোমত আনন্দ করুন।
পরে নিজের চারিপাশের আপন জনের কথা ভাববেন।
একটাই মনুষ্য জন্ম, তাই নিজের মতো নিজেকে ভালোবাসুন।
ডিপ্রেশন এখনকার এক মারাত্মক ব্যাধি। আর নিজেকে সময় না দেওয়া, নিজেকে ভালো না বাসার জন্যই এই ডিপ্রেশন আমাদের ঘিরে ধরে।
মুড স্যুইং, মন খারাপ, ধুর ভাল্লাগছেনা এই সব এসে যায়। সর্বোপরি নিজেকে সময় দিয়ে নিজের জন্য কিছুক্ষণ ভাবুন।
নতুন ভাবে নিজেকে নিজের জীবনে খুঁজে পাবেনই।
৩) দূরদর্শী হন, ভাবনা চিন্তা করে কাজ করুন :
ভাবনা চিন্তা করে কাজ করার কোনো বিকল্প উপায় নেই। নতুন ভাবে জীবন শুরু করার জন্য দূরদর্শী হওয়া আবশ্যক।
যা হয়ে গেছে, যা পাস্ট, যা অতীত তা নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করা একেবারেই উচিত নয়।
বরং জীবনকে নতুন ভাবে গুছিয়ে তুলতে ভবিষ্যত চিন্তা করুন, কিভাবে ভবিষ্যতে ভালো থাকতে পারেন সেটা ভাবতে শুরু করুন। অর্থাৎ জীবনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অবশ্যই প্রয়োজন। যদি নিজের জীবনকে নতুন ভাবে শুরু করতে চান!
আপনাকে যে মানুষটি ঠকিয়েছিল, তার কথা মনে মনে চিন্তা করে সময় তো নষ্ট করেনই, উলটে অন্য কোনো মানুষকে বিশ্বাস করতে ভয় পান।
এটা ঠিক নয়। বিশ্বাস করে ঠকা ভালো, ঠকে বিশ্বাস করা ভালো নয়, বরং বিশ্বাস করার আগে ভাবনা চিন্তা করে বিশ্বাসী হন, পুরনো চিন্তা করে সমস্ত ভালো জিনিসকেও অবহেলা করবেন না, নিশ্চয়ই!
৪) নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন :
এই একটা জায়গায় আমরা সকলে পিছিয়ে আসি। অন্যকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি, কিন্তু যে আমি নিজে, তাকেই বিশ্বাস করা হয়ে ওঠে না।
কিন্তু কেন? আচ্ছা, ভাবুন তো আপনি ভুল করুন বা ঠিক, তা আপনার অবচেতন মনে সর্বদাই থাকে, আপনি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারালে সর্বদাই মনে হবে আপনি ভুল করছেন।
জীবনে হাজারো ভুল করবেন, হাজার বার হোঁচট খাবেন। তাই বলে কি নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন ?
না, নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াবেন না! নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করুন, কনফিডেন্স রাখুন নিজের মধ্যে।
কখনো নিজের উপরেই নিজের সন্দেহ রাখবেন না।
সফল হবেনই এই মনে করে এগিয়ে যান লক্ষ্যে। জীবনে সফল হতে চাইলে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার খুবই প্রয়োজন।
৫) পরিশ্রম করতে পিছপা হবেন না :
জীবনে যদি পরিশ্রম না করেন, তাহলে জীবনের নতুনত্ব থাকবে না। জীবনে নতুন ইনিংস আনতে গেলে পরিশ্রম অবশ্যম্ভাবী। কখনোই হাল ছাড়বেন না, পরিশ্রম আর সফলতার জন্য হাল ছাড়া উচিত নয়।
তবে হ্যাঁ, হার্ড ওয়ার্কের চেয়ে বর্তমানে স্মার্ট ওয়ার্কের প্রাধান্যতা বেশি।
আপনি শুধু হার্ড ওয়ার্ক করলেই হবে না। সে চাকরির প্রিপারেশানের জন্যই হোক বা, নতুন জীবন শুরু করতে, স্মার্ট অ্যান্ড হার্ড ওয়ার্ক দুইই প্রয়োজন।
৬) নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন :
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা খুবই মূর্খতার পরিচয়। সবাই সমান নয়।
কেউ দেখতে সুন্দর, কেউ চেহারায় সুন্দর, কেউ বক্তৃতা দিতে পারেন ভালো, কেউ মোটিভেশানাল স্পিকার, কেউ আমলা, কেউ শিক্ষক, কেউ বড় বিজনেস ম্যান, কেউবা কেউ দোকানের চা বিক্রেতা।
কেউ যদি কাউকে নিয়ে তুলনা করত তাহলে কেউই নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না।
লতা মঙ্গেশকর কে যদি ক্রিকেট খেলতে বলা হত! কিংবা ইন্দিরা গাঁধি কে যদি সাঁতারু হতে বলা হত! হত কি ? না।
কারণ যে যার নিজের জায়গায় স্বচ্ছন্দ্যে।
অতএব আপনি সুন্দরী নন, শ্যামলা তাই আপনাকে অনেকে রিজেক্ট করছে, মনে নিজেকে কখনোই দুষবেন না এই বলে যে আপনার গায়ের রঙ চাপা।
ঈশ্বর সকলকেই কিছু না কিছু দিয়েছেন। হয়তো আপনি অন্য কোনো গুণের অধিকারী, যা সকলে হতে পারে না।
নতুন ভাবে বাঁচতে চাইলে নিজেকে ছোটো করা বন্ধ করুন। হৃদয়ে তো দেবতার বাস, নিজেকে ছোটো করলে দেবতাকে অসম্মান করা হয় না!
৭) সহযোগিতা, কৃতজ্ঞতা মনোভাব রাখুন :
অন্যকে সহযোগিতা করুন, কেউ আপনাকে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকুন।
কেউ আপনাকে সাহায্য করল, আপনি তাতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে, কৃতজ্ঞ রইলেন। জানেন কি? ওই মানুষটি সারাজীবন আপনাকে শ্রদ্ধা করবেই। এক অপূর্ব ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাবে সে আপনাকে।
কারণ কৃতজ্ঞতা সচরাচর পাওয়া যায় না, আর কেউ পেলে যার থেকে পাচ্ছে তাকে মনে রাখে, খুশিও হয়।
সেই মানুষটি চেষ্টা করবে আবারো আপনার বিপদে নিজেকে উৎসর্গ করতে।
কিন্তু কাউকে সহযোগিতা করলেও প্রত্যাশা করবেন না।
আপনি কৃতজ্ঞতার প্রত্যাশা করলেন, এবং তা না পেলে আপনি তো দুঃখ পাবেনই।
উলটে কাউকে হেল্প করতে আর চাইবেনও না। তাই প্রত্যাশা না করে হেল্প করার চেষ্টা করুন।
৮) জীবনে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন, লক্ষ্য স্থির রাখুন :
জীবনে অনেক জিনিস আছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর ও কোনো কারণ আছে বলে মনে হয়না।
জীবনকে নতুন করে আবিস্কার করতে কখনো কখনো কিছু জিনিসকে মুছে ফেলতে হয়। এটাই জীবনের ধর্ম।
নিজের জীবন কে নতুন ভাবে গুছিয়ে তুলতে সমস্ত কিছু ভুলে যান।
যেটা লক্ষ্য তার দিকে অবিচল থাকুন, তবে হ্যাঁ লক্ষ্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে এমন না হয়, আপনি কোনো কারণে সফলতা পেলেন না বলে কি জীবন শেষ? না।
হয়তো আপনার জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে অন্য কোনো জিনিস।
লক্ষ্য স্থির রেখে, অতীত ভুলে এগিয়ে চলুন স্থির সিদ্ধান্তে। বাঁকের মোড় ঘুরে নতুন জীবন শুরু হবেই।
৯) নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন, অন্যকেও :
মানুষ মাত্রই ভুল করে। নিজেও যে ভুল করেছেন তার জন্য অনুতপ্ত হলে কিছু সময় পরে নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন।
অন্য কেউ ভুল করলে তাকেও ক্ষমা করুন।
ক্ষমাই একমাত্র ধর্ম যার জন্য আমরা নিজের ভুলে, অন্যের ভুলে অনুতপ্ত হয়ে ভুলগুলিকে শোধরানোর চেষ্টা করতে পারি।
অনেকের মধ্যে অনেক খামতি আছে, আপনার নিজের মধ্যেও।
তবে তার জন্য নিজেকে কখনোই দোষারোপ করবেন না, নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন।
অন্যের ভুল ধরিয়ে দিন। অন্যকেও ক্ষমা করুন। আর হ্যাঁ, নতুন করে নিজের জীবন শুরু করতে চাইলে এই পয়েন্ট টি অবশ্যই মেনে চলুন!
১০) পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া ও ঘুমানো :
অনেকে জিরো ফিগার, সিক্স প্যাক, বডি, সৌন্দর্য্যের চক্করে না খেয়ে কিংবা ডায়েট করে থাকেন। তা ভালো। তবে অপুষ্টির স্বীকার হচ্ছেন না তো!
সুষম, পুষ্টিকর, প্রোটিন যুক্ত খাদ্য আমাদের শরীরে প্রতিদিন পরিমাণ মতো খুবই দরকার।
সামান্য লোভনীয় শরীর পাবার আশায় নিজেকে কখনই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়।
জীবনে নিজেকে প্রাধান্যতা দেওয়ার জন্য যেমন শরীরচর্চার আবশ্যকতা রয়েছে, তেমনি প্রয়োজন রয়েছে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা, তার দিকে নজরে যেন ফিকে না পড়ে।
মনে রাখবেন শরীর সুস্থ থাকলেই মন সুস্থ, আর মন সুস্থ থাকলেই জীবনে নতুন করে বাঁচার তাগিদ জন্মাবে বারেবার।
আমাদের শেষ কথা,,
এই দশটি উপায় জীবনে মেনে চললে নিশ্চিত নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে পারবেনই পারবেন।
জীবনের কঠিন সময়ে মনোবল বাড়িয়ে এগুলি মেনে চললে, জীবনের মোড় ঘুরে সফলতা, অনুপ্রেরণা, বিশ্বাস, ভরসা আসবেই। নতুন করে জীবন শুরু হবে নিশ্চিত।
তাহলে বন্ধুরা, নতুন করে জীবন শুরু করার উপায় নিয়ে লিখা আমাদের আজকের এই আর্টিকেল যদি আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশই আমাদের এই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আমাদের আজকের আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই