মেয়েরা কিভাবে স্মার্ট হবেন | মেয়েদের স্মার্ট হওয়ার উপায় | Muhammed Juwel Ahmed
বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো মেয়েদের স্মার্ট হওয়ার উপায় বা মেয়েরা কিভাবে স্মার্ট হবেন সেই বিষয়ে।
স্মার্ট শব্দটি আজকের দিনে বহুল প্রচলিত। এই সময়ে স্মার্টনেস একটা বড়ো বিষয়। স্মার্টনেস দিয়েই মানুষের প্রাথমিক বিচার করা হয়ে থাকে।
কীভাবে আরও স্মার্ট হওয়া যায়, কিভাবে নিজেকে আরো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় এই নিয়েই যুবসমাজের একাংশ চিন্তিত।
এখন জানা দরকার এই স্মার্ট শব্দটির বাংলা অর্থ কি ? ইংরেজি এই শব্দটির আক্ষরিক বাংলা অর্থ হল ফিটফাট, সুবেশ বা ঝকঝকে।
স্মার্ট বা স্মার্টনেস কী ?
স্মার্ট কি ? বা স্মার্টনেস কাকে বলে ? যদি কেউ প্রশ্ন করে তাহলে বলে রাখা দরকার, এটি আসলে কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা ব্যাবহার নয় বরং কয়েকটি কাজ, অভ্যাস এবং ব্যবহারের একত্রে পরিবেশন।
যেমন ধরা যাক –
১) সুন্দর করে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, পরিস্থিতিটি বুঝতে পারা এবং সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বলা, কাজ করাই হল স্মার্টনেস
২) নিজেকে পরিপাটি করে রাখা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে পরিবেশন করাই হল স্মার্টনেস।
৩) নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারা এবং নিজের জ্ঞান, মর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করাই হল স্মার্টনেস।
৪) নিজের ওপর আস্থা রাখা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং নিজের চিন্তাধারা এবং আদর্শের প্রতি দৃঢ়তাই হল স্মার্টনেস।
৫) নিজের ভুল স্বীকার করতে পারা এবং পরবর্তীতে ওই ভুলের পুনরাবৃত্ত না ঘটানো হল স্মার্টনেস।
মেয়েরা কিভাবে স্মার্ট হবেন ? সেরা ১০ টি উপায়
প্রত্যেকের জীবনেই স্মার্টনেস দরকার।
তবে মহিলারা খুব সহজেই নিজেরা স্মার্ট হয়ে উঠতে পারবেন কয়েকটি সাধারন বিষয় ফলো করে,
তাই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন।
১. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন
সব পরিস্থিতি কখনোই সবার জন্য অনুকূল হয়না। কখনো কখনো প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে কম বেশি সবাই কে কাটিয়ে উঠতে হয়।
তবে ভয় পেলে চলবে না। নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে মেয়েরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহজে হতাশাগ্রস্থ, বিহ্বল হয়ে পড়েন।
কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠাতে তারা অনেকটাই পিছিয়ে, একবার খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে সহজে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তারা পারেন না।
তাই প্রতিকূল অবস্থাতে প্রতিটি কাজ ভেবে ভেবে করতে হবে এবং নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
নিজের প্রতি ভরসা বা আস্থা না থাকলে স্মার্টনেস আসবে না।
আত্মবিশ্বাস যত বেশি হবে তত সহজে স্মার্ট হয়ে ওঠা যাবে।
তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিজের ওপর বিশ্বাস হারানো যাবে না।
২) বেশি কথা না বলা
অনেকেই আছেন যারা সাধারনত একটু বেশিই কথা বলে থাকেন।
তবে স্মার্ট হতে গেলে প্রসঙ্গের থেকে বেশি কথা বলা কমাতে হবে।
পরিস্থিতি অনুযায়ী যতটা কথা বলা যায় ততটাই বলতে হবে। না খুব বেশি, না খুব কম।
এতে নিজেদের স্মার্টনেস বজায় থাকবে।
অনেক সময় বেশি কথা বলতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা হয়ে যেতে পারে বা ভুল কথা বলা হয়ে যেতে পারে।
বেশি কথা বললে অনেক সময় কথার গুরুত্ব কমে যায়।
এতে শ্রোতাদের কাজে নিজেদের স্মার্টনেস নষ্ট হয়।
যেটুকু কথা বলা উপযুক্ত সেইটুকু কথা খুব সুন্দর ভাবে, দৃঢ়তার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই বিষয়টি খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
৩) ভালো শ্রোতা হতে হবে
একজন ভালো বক্তা হতে গেলে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে।
স্মার্ট হতে গেলে ভালো শ্রোতা হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
মনে রাখতে হবে একজন মনযোগী, ভালো শ্রোতা বক্তার সব কথা, উদ্দেশ্য যেমন ভালো ভাবে বুঝতে পারে তেমনই তিনি বক্তার মনে আলাদা করে জায়গা করে নিতে পারেন।
এই বৈশিষ্ট্যটি তাকে বাকি মানুষের কাছে স্মার্ট প্রমাণ করে।
তাই স্মার্ট হতে গেলে যেমন গুছিয়ে কথা বলতে জানাটাও জরুরি তেমনি একজন ভালো শ্রোতা হওয়াও অত্যন্ত জরুরি।
নিজেকে সবসময় স্মার্ট প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না।
কিছু কিছু আচরণ কোনো একজন কে সকলের সামনে স্মার্ট করে তোলে।
তাই মহিলাদের একজন ভালো শ্রোতা হয়ে উঠতে হবে।
বক্তার বক্তব্যটি ভালো ভাবে, মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
৪) কিছু কিছু সময় চুপ থাকতে শিখুন
সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অর্থ এই নয় যে উত্তরটি জানা আছে বলেই উত্তরটা দেওয়া।
কিছু কিছু সময় চুপ থেকেও উত্তর দেওয়া যায়।
নিজেকে স্মার্ট করে তুলতে গেলে ভাবতে হবে কোন প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া প্রয়োজন কোনটি নয়।
কিছু কিছু সময় উত্তর দিয়েও অপমানিত হতে হয়, তাই এইসব ক্ষেত্রে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়াটাই স্মার্টনেসের লক্ষন।
৫) শরীরের ফিটনেস বজায় রাখা
স্মার্টনেস বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিজেদের শারীরিক ফিটনেসের দিকেও নজর দিতে হবে।
আজকের দিনে সবাই ফিটনেসের দিকে নজর রাখে।
নিয়মিত পর্যাপ্ত পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করতে সবে।
সাথেই নিয়ম করে সকালে ব্যায়াম, যোগা, প্রাণায়াম, মেডিটেশন সময় মত করতে হবে।
এছাড়া এর সাথে সাথেই চুল, ত্বক, নখের যত্ন নিতে হবে।
বেশি করে পানীয় জল খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমাতে হবে, কিছুটা সময় মোবাইল ফোনের থেকে দূরে থাকতে হবে তবেই শরীর ফিট থাকবে।
অসুস্থ মানুষ মোটেই স্মার্ট হয় না। তাই দৈহিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকা চাই
৬) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতে হবে
পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, ভালো পোশাকের ওপর মানুষের ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, স্মার্টনেস নির্ভর করে।
তাই মহিলাদের নিজেদের পোশাকের ওপর নজর দিতে হবে।
স্মার্ট হতে গেলে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন,আধুনিক পোশাক পরতে হবে।
মানুষ প্রথমে অপর কাউকে বিচার করে, তার পোশাক, কথা বলার ভঙ্গিমা, শারীরিক ফিটনেস, এগুলির ওপর।
তাই পোশাক আধুনিক না হলে স্মার্টনেস আসে না।
কোনো একটি অনুষ্ঠানে কেউ যদি আধুনিক, আকর্ষনীয় পোশাক পরে উপস্থিত হয়, তাহলে অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি ওই মহিলার দিকে আকর্ষিত হয়।
তাই বাহ্যিক ভাবে স্মার্টনেস অনেকটাই পোশাকের ওপর নির্ভরশীল।
৭) মেজাজ ঠান্ডা রাখা এবং ধীরে সুস্থে কাজ করা
কাজ করার প্রকৃতি ও ধরন দেখে স্মার্টনেস বোঝা যায়। কেউ একজন কাজে ভীষন রকম অমনোযোগী, বারবার ভুল করছে, এক্ষেত্রে সে যতই স্মার্ট আচরণ করুক না কেন, তার কাজেই বোঝা যায় সে আদতে স্মার্ট নয়।
ঠান্ডা মাথায়, শান্ত ভাবে, কাজ করা হল স্মার্ট ব্যক্তির লক্ষণ।
ধীরে সুস্থে কাজ করলে যেকোনো কাজে সফলতা দ্রুত আসে।
তাই বলা যেতেই পারে যে স্মার্টনেসের ওপর সফলতা নির্ভর করে।
যে কোনো কাজ অধৈর্য ভাবে বা রেগে গিয়ে বিরক্তির সঙ্গে করলে তাতে ভুলের সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়।
তাই কাজ করার সময় মেজাজ ঠান্ডা রাখতে হবে।
৮) প্রতিদিন একটি রুটিন ফলো করতে হবে
নিজের পরিকল্পনা মতো একটি রুটিন তৈরি করে রোজ সেই রুটিন টি ফলো করতে হবে।
এতে নিয়মানুবর্তিতা বাড়ে।
একটি নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ করলে তাতে স্মার্টনেস বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিদিন নিয়ম করে রুটিন ফলো করে চললে মানুষের মধ্যে সদগুন বৃদ্ধি পাবে যা আর বাকি ১০ জনের থেকে তাকে আলাদা করে রাখবে।
এই আচরণ তার স্মার্টনেস বাকিদের থেকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।
মনে রাখতে হবে যেকোনো কাজের জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা।
দৈনিক রুটিন হল সেই পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা না করে কাজ করতে গেলে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, কাজে ভুল হয় এবং তা মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করলে স্মার্টনেস বৃদ্ধি পায়।
৯) নতুন কিছু শেখার এবং নতুন কাজ করার মানসিকতা
একজন মহিলার মধ্যে উপরের কয়েকটি লক্ষণ থাকলেই তাকে স্মার্ট বলা যাবে না।
আরো কিছু বিষয় আছে যেমন ধরা যাক নতুন কিছু শেখার বা জানার মানসিকতা।
নতুন কিছু শেখার বা জানার মানসিকতা না থাকলে চিন্তা, বোধ, বুদ্ধি এবং মনের ওপর তা একটি প্রভাব বিস্তার করে।
নিজেকে সব সময় স্মার্ট রাখতে গেলে সবসময় সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
এই চিন্তা ভাবনা না থাকলে সামনে এগিয়ে যাবার রাস্তা অনেক কমে যাবে।
সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের প্রতি মুহুর্তেরই ভাবতে হয়, এই ভাবনা তাদের কাজে ফুটে ওঠে।
ভাবনা যত আধুনিক হবে, কাজ তত স্মার্ট হবে।
আজকের দিনে হার্ড ওয়ার্কের থেকে স্মার্ট ওয়ার্কের দাম বেশি।
প্রতিটা কাজে স্কিলফুল লোকের প্রয়োজন। তাই নিজের স্কিল বাড়াতে গেলে চাই শেখার মানসিকতা।
তাই নিজেকে স্মার্ট করে তুলতে গেলে নতুন কিছু শেখার মানসিকতা রাখতে হবে।
১০) বই পড়তে হবে
নিজেকে শুধু শারীরিক দিক থেকে ফিট রাখলে চলবে না। মানসিক ভাবেও ফিট রাখতে হবে।
তার জন্য সময় মতো পড়তে হবে। নিজেকে আপ টু ডেট রাখতে হবে।
কি বলা হচ্ছে তার থেকেও বড়ো কথা হল কিভাবে বলা হচ্ছে।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, মহারাজ বিক্রমাদিত্য একদিন নবরত্নের নয় পন্ডিতকে নিয়ে গিয়ে একটি গাছের শুকনো ডাল দেখালেন, সবাই বলল “শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠতি অগ্রে“, কিন্তু কালিদাস বললেন “নীরস তরুবর পূরতি ভাগে“।
এই কথা শুনে সকলে অবাক। এই কথাটি তাঁর জ্ঞান এবং স্মার্টনেসের পরিচয় দিয়েছিল।
তাই স্মার্টনেসের জন্য চাই জ্ঞান। জ্ঞান পাওয়া যাবে পড়াশোনার মাধ্যমে।
এই কারনে জ্ঞানী ব্যক্তির স্মার্টনেস অনেক বেশি হয়।
তাই রেগুলার খবরের কাজ, ম্যাগাজিন, জ্ঞানী ব্যক্তিদের জীবনী ইত্যাদি বই পড়তে হবে।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম মেয়েরা কিভাবে স্মার্ট হবেন তার কিছু সেরা উপায় গুলো।
মহিলারা কিভাবে স্মার্ট হতে পারবেন বা মেয়েদের স্মার্ট হওয়ার উপায় গুলো নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।
কোন মন্তব্য নেই