জেনেনিন ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য গুলোর বিষয়ে – (সেরা ৮টি)


ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য (Features of e-commerce in Bengali) অনলাইন মাধ্যমে শপিং করা এখন আমাদের অনেকের কাছেই একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। 


আর, অনলাইন শপিং বলতেই প্রথমে আমাদের মাথায় আসে ফ্লিপকার্ট, আমাজন ও আরও নানান অনলাইন শপিং সাইটের কথা। 

আসলে, এই আমাজন, ফ্লিপকার্ট হল এক ধরণের ই-কমার্স সংস্থা।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এই ই-কমার্স বিষয়টা কি ?

আসুন, তাহলে আমরা প্রথমে জেনে নিই যে, ই-কমার্স কি ?

ই-কমার্স কি ?

মূলত, ইলেক্ট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স হল ইন্টারনেট পরিষেবা ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বারা পরিচালিত সমস্ত ধরনের অনলাইন ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ ও লেনদেন।

এখানে, ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও তার ক্রেতাদেরকে একটা ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল ব্যবসায়িক পরিবেশ দেওয়া হয়।


যেখানে ক্রেতার ইলেকট্রনিক, অনলাইন মাধ্যম বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য বা পরিষেবার সম্পর্কে তথ্য নেয়, কিংবা সেইসব জিনিসপত্র ক্রয়, বিক্রয় ও স্থানান্তর করে।

আর, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের আলোচনার মুখ্য বিষয়ই হল ই-কমার্স-এর বৈশিষ্ট্য

প্রথমত মনে রাখবেন যে, ই-কমার্স বাণিজ্যগুলো চালানো অনেকটাই সোজা

এখানে ব্যবসায়ীদের দোকানটি অনলাইনেই উপলব্ধ থাকে। 

আর, এই ইকমার্স ব্যবসা এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে ব্যবসাগুলোকে একটা ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের ব্যবসাগুলোকে তৈরী করতে হয়। 

তাই, একটা অফলাইন বা ফিজিক্যাল দোকানে পণ্য প্রদর্শন করার বদলে এই ধরণের ব্যবসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইটের সাহায্যে পণ্য বা পরিষেবার বিস্তারিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে, তা বিক্রি করতে হয়৷

যে কারণে, ব্যবসায়ীদের সেরকমভাবে কোনো অফলাইন স্টোর বা প্রকৃত দোকান প্রতিষ্ঠার জন্যে বেশি চিন্তাভাবনা করতে হয় না।

এর ফলে, অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা অনলাইন মাধ্যমেই সেট আপ করতে পছন্দ করে।

আর, ইকমার্স ব্যবসা সেট আপ করা খুব সহজ, আর সেট আপ করতে খুব বেশি বিনিয়োগেরও প্রয়োজন হয় না বলেই, এখানে ব্যবসা করা সহজ।

ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ?

 
Features of e-commerce in Bengali

ই-কমার্স ব্যবসার বেশ কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

১. সর্বব্যাপীতা (Ubiquity):

একটা ফিজিক্যাল বা অফলাইন স্টোর বেশিরভাগ সময়েই তার এলাকার আশেপাশে কিংবা খুব বেশি হলে জাতীয় স্তরে তার পণ্য বিক্রি করতে পারে। 

অন্যদিকে, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই সেই ব্যবসার সম্ভাব্য ক্রেতা থাকা সম্ভব।

আর, অনলাইন মাধ্যমে উপস্থিত থাকার ফলে, এই ধরণের ব্যবসার প্রসার বিশ্বব্যাপী।

যেহেতু, ই-কমার্সের কোনো দেশ-কাল-সীমানার গন্ডি নেই তাই, এই ব্যবসাতে বিশ্বের যেকোনো কোণ থেকে গ্রাহকেরা জিনিস কিনতে সক্ষম।

গ্রাহকদের দৃষ্টিকোণ থেকে ই-কমার্সের সর্বব্যাপীতা অর্থ লেনদেনের খরচ কমায়। 


আর, বাজারে পৌঁছনো, পণ্য কেনা ও অর্থ লেনদেন করার জন্য যে পরিমাণ সময় ও মূলধন ক্রেতাদের ব্যয় করতে হয়, তার থেকে অনেক কম অর্থ ও সময়ের মধ্যেই তারা অনলাইন শপিং থেকে পণ্য সংগ্রহ করে নিতে পারে।

২. ইউনিভার্সাল স্ট্যান্ডার্ড (Universal standard):

যেকোনো ই-কমার্স ব্যবসার সবথেকে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হল তার ওয়েবসাইটের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। 

আর, এই ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলো স্বভাবতই সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য একটা ব্যবস্থা; যা একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতির ভিত্তিতে কাজ করে। 

আর, বিশ্বব্যাপী মান বজায় রাখা হল এই ধরণের ওয়েবসাইটের একান্তই গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈশিষ্ট্য।

যাতে, এদের ব্যবহারকারীরা দক্ষভাবে তাদের ওয়েবসাইটগুলোকে ব্যবহার করতে পারে।

৩. তথ্যের ঘনত্ব (Information density):

উন্নত ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের খরচ অনেকটাই কম।

যে কারণে, ব্যবসায়ীদের কাছে যে কোনো গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য সহজেই ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্যে তাদের নির্ধারিত বিভাগে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। 

এছাড়াও, তথ্যের যথার্থতা ও সময়োপযোগীতাও অনেকটা উন্নত হয়েছে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে।

আর, এই তথ্যের ঘনত্বকে ব্যবহার করে, যেকোনো ব্যবসায়ী খুব সহজেই একই পণ্য বিভিন্ন ধরণের গোষ্ঠীর কাছে বিভিন্ন রকমের মূল্যে বিক্রি করতে পারছে।

৪. ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবার অধিকার (Personalization):

ইকমার্স ব্যবসার অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল এই যে, শারীরিক ব্যবসা যেখানে ক্রেতাদের ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবার সুযোগই দেয় না-সেখানে, ই-কমার্স ব্যবসা তার প্রতিটি ক্রেতাকে ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম।

গ্রাহকের অতীতে কেনা পণ্যের ইতিহাস, প্রযুক্তি ও ব্রাউজিং-এর সাহায্যে এই ব্যবসাগুলো নিজের থেকেই ক্রেতাদের ব্যক্তিগতকৃত পণ্যের সুপারিশ করতে পারে।


এমনকি, প্রতিটা ক্রেতাদের জন্যে একই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অফার ও সুপারিশ দেওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। 

তাই, এই ধরণের ব্যবসার মাধ্যমে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পরিষেবা বা পণ্য পরিবর্তন করা খুবই সহজ হয়েছে।

৫. উভয়পক্ষের কথোপকথনের সুবিধা (Interactivity):

ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি হল এই ব্যবসার সেরা বৈশিষ্ট্য।

ইন্টারঅ্যাকটিভিটির অর্থ হল ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ব্যবসার ক্রেতাদের মধ্যে উভয়পক্ষের দ্বারা সংঘটিত যোগাযোগ।

যেকোনো অনলাইন ক্রেতা সেইসব ওয়েবসাইটগুলো থেকেই কেনাকাটা করতে চায়, যেখানে তারা কেনার আগে, পরে ও কেনার সময়ও ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে৷ 

আর, এই অনলাইন ব্যবসাগুলো তাদের অনলাইন ক্রেতাদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে ও তাদের ক্ষতি কমাতে সবসময় তৎপর থাকে।

৬. চেকআউট করা সহজ (Easy checkout):

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ, বিশ্বের যেকোনো সময় ও স্থান থেকে এগুলোকে অ্যাক্সেস করা সহজ করে তুলেছে।

বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ মানুষ তাদের খালি সময়ের কম-বেশি ৮০% ভাগ সময়, শুধুমাত্র কিছু না কিছু প্রোডাক্ট খোঁজার জন্য নানান ওয়েবসাইট গুলো ব্রাউজ করতে ব্যয় করে থাকে। 

এই ধরণের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য ক্রেতাতে রূপান্তরিত করতে ইকমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।

আর, এই ধরণের ওয়েবসাইটের চেক আউট পোর্টাল ব্যবহার করাও যথেষ্ট সহজ হয়ে থাকে।

চেক আউট পদ্ধতি সহজ না হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা প্রোডাক্ট কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 

তাই, ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্যে, এই ওয়েবসাইট গুলো একাধিক অর্থপ্রদানের বিকল্প রেখে থাকে।

যেমন – ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পেপ্যাল, ক্যাশ অন ডেলিভারির ও আরও অন্যান্য ব্যবস্থা।

যাতে, গ্রাহকের কাছে চেকআউটের ব্যাপারটি সবদিক থেকে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।

৭. ব্লগ ও নিবন্ধের বিভাগ (Unified blogs & article sections):

আজকাল অনলাইন গ্রাহকেরা যথেষ্ট সচেতন হয়ে উঠেছে। 

আর, এখন তারা শুধুমাত্র বুদ্ধিমানভাবে জিনিসপত্র কিনে থাকে। 

আর, ঠিক এই কারণেই, গ্রাহকদের অনলাইন ব্যবসার দিকে আকর্ষিত করার জন্যে, ইকমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো নানান ধরণের ব্লগ ও নিবন্ধ বিভাগগুলোকে একত্রিত করে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।

যাতে, যত মানুষ আর্টিকেল ও ব্লগ পড়বে ততই তাদের ই-ব্যবসার ইমেজ উন্নত হবে।

এই ধরণের ব্লগ ও আর্টিকেলগুলোতে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের বিষয়ে লেখা দিতে পারেন বা সেই পণ্য-সম্পর্কিত নানান ধরণের তথ্যও সম্ভাব্য ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে পারেন। 

যাতে, তাদের ইকমার্স ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা দর্শকের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

৮. রিপোর্টিং টুল (Reporting tool):

রিপোর্টিং টুল- ই-কমার্স ব্যবসার অপরিহার্য বৈশিষ্যের মধ্যে না পড়লেও, ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করতে এটিকে ব্যবহার করতে পারেন। 

এটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবিলম্বে জানতে সাহায্য করে।

যাতে, এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করে নিতে পারে।

এই টুল আপনার ব্যবহারকারীদের ই-কমার্স ব্যবসার উপর বিশ্বাস বাড়াতে যথেষ্ট সাহায্য করে।

যাতে, গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো ভুল হলেও তারা এ-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে তাদের সাহায্য পাওয়ার আশা রাখতে পারে। 

আজকালকার সময়ের প্রয়োজনে, ক্রমবর্ধন চাহিদার কারণে ও এতো সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ছোট থেকে বড় প্রায় সমস্ত ব্যবসাই তাদের বিক্রি বাড়াতে ও অন্যান্য অনলাইন ব্যবসার সাথে প্রতিযোগিতা করতেই ই-কমার্সের সাথে যুক্ত হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছে।

তাহলে বন্ধুরা, আমাদের আজকের ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য গুলো নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল। 

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.