কাউকে আঘাত দিয়ে/অপমান করে কথা বলবেন না | Don't hurt anyone || Muhammed Juwel Ahmed


আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন, আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন ? 
আলহামদুলিল্লাহ আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আমি ইদানীং বেশ ব্যস্ত ছিলাম তাই আপনাদের সাথে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারিনি । এখন নিয়মিত একটিভ থাকব ইনশাআল্লাহ । 

আজকে আমার মূল আর্টিকেল হলো, কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না, বিষয় টা একটু বুঝিয়ে বলি, আমরা অনেক সময় অনেক কে, অনেক ভাবে, অপমান করে থাকি রাগের মাথায়, তখন আমাদের মাথা ঠিক থাকেনা, তাই রাগের মাথায় যা তা বলে থাকি, তখন আমরা ঠিক বুঝতে পারিনা, আমি কি বলছি, আসলে আমরা রাগের মাথায় কাউকে যে অপমান করি তা একদম ঠিক নয়, কারন মানুষ কে আঘাত দেওয়া একদম ঠিক নয়, এতে আপনার জীবন বিপদঘামী হতে পারে, এইজন্য আপনাকে সারাজীবন প্রস্তাতে হবে, কারন আমরা যখন কাউকে আঘাত দেই, তখন সে অনেক কষ্ট পায়, তখন সে আল্লাহর কাছে যা বলবে সাথে সাথে এইগুলো কবুল হয়, 
তাই আমরা কাউকে আঘাত দিয়ে বা অপমান করে কথা বলব না, আজ আমি আপনাকে আঘাত বা অপমান করছি, কাল আপনাকে অন্য একজন অপমান করতে হবে, তখন ঠিকই বুঝতে পারবেন, আসলে অপমান করা ঠিক কিনা, কারন আমরা যাদের কে অপমান আঘাত বা অপমান করি, তখন সে খুব তার মন ভেঙে যায়, মানে তার অনেক কষ্ট হয় আপনার এই অপমান জনক কথা গুলো । 

তীরের ক্ষত শুকিয়ে যায় তবে মুখের কথার আঘাত শুকায় না’কেউ অপমান করলে কী করা উচিত?
মানুষ কখনো একা বসবাস করতে পারে না। সমাজে বসবাস করতে হলে অবশ্যই বিভিন্ন মানুষের সাহচর্য প্রয়োজন। আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বসবাস করে। প্রতিদিন এসব মানুষের সাথে আমাদের ওঠাবসা হয়। মানুষ ভেদে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন। কারো আচরণ খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আবার কারো আচরণ খুব তিক্ত। কিছু মানুষ আছে যারা কারণে-অকারণে মানুষকে অপমান করেন। এ ধরনের মানুষ সব সময় সবাই কে অপমান করে আনন্দ উপভোগ করে। আবার সবার সামনে কাউকে অপমানিত করে ছোট করতে পছন্দ করেন।এ ধরনের মানুষ থেকে  এড়িয়ে চলবেন । 

কাউকে পছন্দ না করা ঠিক আছে তবে কাউকে অপমান করা কখনোই ঠিক নয়। মানুষকে সবচেয়ে বেশি যেটা কষ্ট দেয় তা হলো অপমানঅপমান শুধুমাত্র দুটো জিনিসই করতে পারে এক মানুষটির আত্মসম্মানকে মেরে ফেলা, দ্বিতীয়ত মানুষটিকে মেরে ফেলা। আসলে
অপমান করতে যোগ্যতা লাগে না , কিন্তু সম্মান করতে যোগ্যতা ও শিক্ষার প্রয়োজন ।



একটা গাম্য ভাষায় প্রবাদ বলি "


মানুষের জবান বা কথার আঘাত খুবই মারাত্মক। কথার দ্বারা মানুষ যে কষ্ট পায়, সে কষ্টের কথা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ভুলতে পারে না। এজন্য কোনো এক কবি বলেছিলেন নাম মনে নেই ‘তরবারির আঘাত একসময় নিরাময় হয়ে যায়, কিন্তু জবানের আঘাত কখনও নিরাময় হয় না।’ তরবারির আঘাতে মানুষের শরীর থেকে রক্ত ঝরে, কিন্তু পরক্ষণেই রক্ত ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের কথার দ্বারা কেউ যদি অন্তরে কষ্ট পায়, তাহলে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরে না বরং তার চোখ থেকে অনবরত বৃষ্টির ফোঁটার ন‍্যায় টপটপ করে পানি ঝরতে থাকে। সুতরাং কথার দ্বারা অন্য মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা প্রকৃত মুমিন হতে হলে অন্য মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। 

সুতরাং প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই নিজের জবানকে হেফাজত করতে হবে। যার জবান ও হাত থেকে সমাজের মানুষ নিরাপদ নয় সে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ঘৃণিত, যদিও তাকে মানুষ বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্মান প্রদর্শন করে। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে মানুষ অমঙ্গল কামনা করে। এ জন্য বলা হয়, এমন জীবন তৈরি কর যেন মানুষ তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে এবং তোমার উপস্থিতিতে তোমার জন্য কল্যাণের দোয়া করে। জবানের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। একটি সত্য কথাই হতে পারে কারও মুক্তির কারণ। আবার একটা মিথ্যা কথাই হতে পারে কারও জন্য ধ্বংসের কারণ। এ জন্য সর্বদা সত্য কথা আমাদের জবান থেকে বের করতে হবে। 



ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে উদাহরণ দেই, গল্পটা কিন্তু সত্য 

একদিন এক শাশুড়ী তার বৌমার সাথে বক বক করছিলেন। কারণ, তার বৌমা ঘরের কাজে অপটু ছিল, বাবার বাড়ি থাকাকালীন তেমন কোনো কাজই করেনি, আর, তিনি শিখাতে চাইলেও ভালোমতো পারছে না। তাই একটু বকা-ঝকা করছিলেন। মাকে বকতে দেখে তাদের ঘরে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটি তার দাদুর হাত ধরে বললো -

আমার আম্মুকে বকছো কেন, দাদুমণি? তোমার মেয়ে হয় না???
দাদু শান্ত গলায় বললেন -

আমার মেয়ে কিভাবে???
বাচ্চাটি বললো -

দেখো না, তোমায় যে আম্মু "মা" বলে ডাকে…!
এ কথাটি শুনার পর দাদু নির্বাক হয়ে গেলেন, ছোট্ট বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারছিলেন না। তারপর, তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন -

"ঠিক আছে দাদুভাই, তোমার আম্মুকে আর কখনো বকবো না।"
আর, এদিকে মায়ের চোখ থেকে তখন ঝর ঝর করে অশ্রু ঝরতেছে………

শিক্ষা - "কারো হৃদয়ে আঘাত দিয়ে কথা বলতে নেই, কারণ, তাতে সে অনেক কষ্ট পাবে। কথা বলতে হয় তার বিবেককে আঘাত করে, যাতে তা জাগ্রত হয়।"


পরিশেষে বলব: জীবনে কখনো কাউকে কথার আঘাত দিবেন না, প্রয়োজনে বুঝিয়ে বলবেন, কারণ সবচেয়ে মারাত্মক আঘাত হয় কথার আঘাত, যেটা মানুষ প্রতিনিয়ত মনে রাখে মুখ বুঝে। 

বিশ্বাস করেন আল্লাহ কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয় না, আপনি যে অন্যায় করবেন তার হিসাব আজ না হয় কাল বরাবর মিটিয়ে দিবে সময়ের ব্যবধানে। 


যারা অপমান করে তাদের থেকে এড়িয়ে চলা সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো তাদের সাহচর্য এড়িয়ে চলা। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের সাহচর্য এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। সে হতে পারে আপনার পরিবারের কোন সদস্য বা আপনার কাছের কেউ।অফিসের কোন কর্মচারী বা আপনার বন্ধুদের মধ্যে একজন।
অপমানকারী ব্যক্তি সব সময় নেগেটিভ মনের অধিকারী হয় তারা অন্যকে ছোট করতে বা তুচ্ছ কোন বিষয়ে অপমান করতে পছন্দ করেন। কারো অগোচরে তার সমালোচনা করেন। তারা এমনটি কেন করেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে সকলের মনে। চলুন প্রথমে জেনে নেই এ সম্পর্কে:

মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানুষ প্রধানত চারটি কারণে অপমান করেন:

১) নিরাপত্তাহীনতা: যারা কথায় কথায় মানুষকে অপমান করেন তাদের প্রথম কারণ হলো নিরাপত্তাহীনতা।তাঁরা নিজেদের সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পোষণ করেন না। অন্যের কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণের উদ্দেশ্যে সকলের সামনে কাউকে অপমান বা ছোট করতে পছন্দ করেন।

২) হিংসা: হিংসা মানুষকে পশুত্বে পরিণত করে। যারা কথায় কথায় অপমান করেন তাদের মনে অন্যকে নিয়ে প্রচুর হিংসা থাকে। মূলত এ কারণেই হিংসার বশবর্তি হয়ে মানুষকে অপমান করে। অন্যের উন্নতি বা সফলতা এমন ব্যক্তি কখনোই সহ্য করতে পারেন না। তাই তারা মানুষের সামনে আপনাকে অপমান করে নিচু করার চেষ্টা করবে।

৩) সংযতার অভাব: একজন অপমানকারী ব্যক্তি সংযতার অভাব থাকে। সে অন্যকে কিভাবে অপমান করবেন তা নিয়ে সবসময় ভাবতে থাকেন। আপনি কোন কাজে সফল হলো সে খুঁজে খুঁজে আপনার ভুল ত্রুটি গুলো বের করার চেষ্টা করবে। আপনাকে সকলের সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতিতে উল্টো তাকে অপমান করতে মন চায়। বুদ্ধিমানের কাজ হলো এ পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা। কোন প্রতিত্তোর না করা।

৪) কখনো কখনো অপমান কারী ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃত এমন কিছু মন্তব্য করেন যা আপনার মনে কষ্ট দেয়। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন। কোন ধরনের মন্তব্য বা রাগান্বিত না হওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যারা অপমান করেন তারা চাইবেন অপর ব্যক্তিটি যেন তার হাসি-ঠাট্টায় উত্তেজিত হয়ে সাড়া দেয়।এ কাজটি ভুলেও করবেন না।তাদের আনন্দের মূল কারণ আপনাকে রাগিয়ে উত্তেজিত করে তোলা। ধৈর্য সহকারে হাসি মুখে পরিস্থিতি সামলে নিবেন। অপমানকারী ব্যক্তির সামনে কখনো ভেঙে পড়বেন না বা মন খারাপ করবেন না।এতে সে ব্যক্তি বারবার আপনার দুর্বলতার সুযোগ  নিতে চেষ্টা করবে।উত্তেজিত হওয়া মানে আপনি তাকে নিজেই সুযোগ করে দিলেন বারবার অপমানিত করার।এছাড়াও আপনি এমন পরিস্থিতিতে কোনো রকম মন্তব্য, মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন করবেন না এতে সে অপমান করে মজা না পেয়ে পরবর্তীতে অপমান করতে আসবে না।কারণ কোনরকম প্রতি উত্তর না পেলে সে অপমান করে একটা সময় নিজে থেকেই চুপ হয়ে যাবে।আবার এ ধরনের মানুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় হলো তার মন্তব্য শুনে মুচকি হাসি দেওয়া। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে আপনি তার কথায় কোন পাত্তা দেননি। যদি অপমান সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে তাহলে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসুন। উল্টো কখনো তাকে অপমান করবেন না এতে ওই ব্যক্তির সাথে আপনার কোনো পার্থক্যই থাকবে ছোটখাটো কোনো ব্যাপারকে সিরিয়াসলি নেয়া যাবে না।
অপমানকারী ব্যক্তি যদি আপনার কাছের কেউ না হয় তাহলে তাদের সঙ্গ একেবারে ত্যাগ করতে হবে। আর যদি সে ব্যক্তি আপনার আত্মীয় হয় তবে তাদের সাথে সব সময় একটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। এমন ধরনের মানুষগুলো যেন বুঝতে পারেন যেহেতু তারা আপনার ক্ষতি ও অমঙ্গল চায়,তাই তাঁদের সঙ্গ থেকে দূরে থাকছেন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.