অর্থনীতি নিয়ে কেন পড়বেন || অর্থনীতি পড়ে কি হওয়া যায় || মোহাম্মদ জুয়েল আহমদ


কেন পড়ব অর্থনীতি?

কী পড়ানো হয়?

বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘অর্থনীতি’ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। অর্থনীতিতে পড়ার নানা দিক সম্পর্কে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, গবেষক ও পেশাজীবীরা।


আমাদের জীবনে অর্থনীতির ব্যবহার আছে প্রায় সব ক্ষেত্রে। বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। অর্থনীতি–বিষয়ক জ্ঞান প্রয়োগ করে যেকোনো সিদ্ধান্ত আরও ভালোভাবে নেওয়া যায়। পড়ালেখাটা শুধুই সংখ্যা, লেখচিত্র, হিসাব–নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের জীবনযাপনকে আরও উন্নত করা যায়, সেটাই আমরা শেখাতে চেষ্টা করি। অর্থনীতি হলো ভিত্তি; আর বিপণন, ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সংস্থানের মতো বিষয়গুলো হলো এর শাখা-প্রশাখা। অর্থনীতি ঠিকঠাক বুঝতে পারলে এসব বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায়।


কোনো একটি দেশের অর্থনীতি কীভাবে কাজ করে ও করা উচিত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে পরিচালনা করা যায়, কীভাবে কম খরচে বেশি মুনাফা লাভ করা যায়—এ সম্পর্কে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা ধারণা পান। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সীমিত উৎস দিয়ে নিজেদের ঘরোয়া বাজেট, খরচ ও আয়কে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তাও জানা যায় অর্থনীতি পড়ে।


ভবিষ্যৎ কী?


বিশ্বে মৌলিক বিষয়গুলোর যেমন চাহিদা রয়েছে, অর্থনীতির চাহিদাটাও ঠিক সে রকমই। বর্তমানে বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে এগোচ্ছে। একটা সময় আসবে যখন খুব কমসংখ্যক ক্ষেত্রেই মানবিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হবে। রোবট কোনো একটি বিষয় তার মধ্যে ধারণ করে নিলে, পরবর্তীকালে তা কাজে লাগিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সে সময় অনেক কিছুরই প্রয়োজন না থাকলেও একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে অর্থনীতির চাহিদা থেকেই যাবে।


ধরুন, বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশে যদি কমপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও থাকে, তবে সেখানে অর্থনীতি বিভাগটি অবশ্যই থাকবে। অতএব অর্থনীতিতে পড়লে কাজের সুযোগ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতিতে পড়ে পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার সময় বিশেষায়িত দিকে যাওয়াই ভালো। কারণ এখন প্রায় সব বিষয়ই বিশেষায়িত হয়ে যাচ্ছে। তাই সেসব বিশেষায়ণ সম্পর্কে জানা না থাকলে পরবর্তীকালে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আমি যেমন স্নাতকে অর্থনীতি নিয়ে পড়লেও স্নাতকোত্তরে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ‘ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি’ নিয়ে পড়েছি। যেটা অর্থনীতির বিশেষ ও স্বতন্ত্র একটি ক্ষেত্র। এ রকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেমন—অ্যাপ্লাইড ইকোনমিকস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস, লেবার ইকোনমিকস ইত্যাদি।


ক্যারিয়ার কোথায়?


অর্থনীতি পড়ে কেউ যদি শিক্ষকতা করতে চান, তাহলে পিএইচডি করে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করা যায়। সেটা একক গবেষণা হতে পারে, বা কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আছে, যেমন: পিআরআই, সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এ ছাড়া বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাঁরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন, যেমন: এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক), ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানেও একজন অর্থনীতিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যেকোনো ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা কাজের ক্ষেত্র খুঁজে পাবে।


কারা পড়বে?


অর্থনীতিতে পড়ার আগে প্রস্তুতির জন্য সব বিষয়েই যে ভালো দখল থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। আমি যখন পড়েছি, তখন সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে গণিত ও ইংরেজির জ্ঞান। যেহেতু অর্থনীতির ভালো বইগুলো প্রায় সবই ইংরেজিতে লেখা, তাই ইংরেজিতে দখল থাকলে বিষয়গুলো সহজে রপ্ত করা যায়। আর যেহেতু অর্থনীতিতে পরিসংখ্যান ও অঙ্কের অনেক ব্যবহার রয়েছে তাই অঙ্কের ভিতটাও শক্ত থাকা দরকার। খুব যে ভালো হতে হবে তা-ও নয়। কিন্তু অঙ্ককে ভয় পেলে অর্থনীতি বিষয়টা বেছে না নেওয়াই ভালো।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন

অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবসাসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়, যেমন মার্কেটিং বা ফাইন্যান্সেও উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ বেড়ে যায়। আবার অন্য বিষয়ে পড়েও আপনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করতে পারেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে শুরুতে কিছু মৌলিক কোর্স করতে হবে। অর্থনীতিসংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডির সুযোগও বাড়ছে। নাহিয়ান বিন খালেদ মনে করেন, ‘অর্থনীতিতে স্নাতক করে পরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন অধ্যয়নের মতো বিষয়েও পড়তে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পাঠ্যক্রম আর পাঠদানের গভীরতার পার্থক্য থাকতে পারে, তাই এ ব্যাপারে আগে থেকে খোঁজ নেওয়া ভালো। উন্নয়ন অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, পরিবেশ অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করছেন।’


কাদের এ বিষয়ে পড়া উচিত নয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান জানান, অর্থনীতি বিষয়ে সবার পড়ার আগ্রহ না-ও তৈরি হতে পারে। যাঁরা ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চান কিংবা শিক্ষকতার মতো পেশায় আসতে চান, অর্থনীতি মূলত তাঁদের জন্য। এ ছাড়া যাঁরা আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় কিংবা ব্যবসা-বাজার-সরকার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণে আগ্রহী, তাঁরা অর্থনীতি পড়তে পারেন। হিসাব–নিকাশের প্রতি যাঁদের ভীতি আছে, তাঁদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

এই বিষয় সম্পর্কে কোন ধারণাটা ভুল

অর্থনীতি পড়তে গণিত বা পরিসংখ্যান প্রয়োজন হয় না বলে অনেকেই মনে করেন। এখনকার আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অর্থনীতির অনেক তত্ত্ব গণিত ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হয়। তাই গণিত ও পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহারিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা কী

বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে নির্দিষ্ট জিপিএ থাকলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হতে পারেন। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে যেকোনো বিভাগে পড়েই অর্থনীতিতে আবেদন করা যায়। আবার অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতক করেও অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করা যায়।

ভবিষ্যৎ কেমন

নাহিয়ান বিন খালেদ জানান, সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে অর্থনীতি কয়েক শতাব্দীজুড়ে অন্যতম প্রভাবশালী বিষয় হয়ে আছে। এ কারণেই ১৯৬৮ সাল থেকে অর্থনীতিতেও নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়েছে। গতিশীল শাস্ত্র হিসেবে এই যুগেও অর্থনীতি প্রাসঙ্গিক। এর কারণ হলো মানুষের সব কর্মকাণ্ডেরই একটা অর্থনৈতিক দিক থাকে। রাষ্ট্রের অর্থনীতি যেমন জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, ব্যয় সংকোচন থেকে শুরু করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অর্থনীতি জড়িয়ে থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে অর্থনীতির বিশ্লেষণ আর গবেষণায় বড় তথ্যভান্ডারের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানের শিক্ষার্থীদের তাই তাত্ত্বিক ও গাণিতিক জ্ঞানের সঙ্গে এসব তথ্য সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা আর বিশ্লেষণের জন্যও বাড়তি দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

কী কী পড়ানো হয়

নানা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয় অর্থনীতিতে পড়ানো হয়। আধুনিক অর্থনীতির পাঠ্যক্রমে যেমন ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির নানা তত্ত্ব বা গণিত-পরিসংখ্যান-ইকোনমেট্রিকস পড়ানো হয়, তেমনি ক্রীড়াতত্ত্ব (গেম থিওরি), আচরণগত অর্থনীতি (বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকস) ও পরীক্ষামূলক অর্থনীতির (এক্সপেরিমেন্টাল ইকোনমিকস) ধারণাও দেওয়া হয়।




                  Muhammed Juwel Ahmed 


আমার নাম মোহাম্মদ জুয়েল আহমেদ । আমি এই ওয়েবসাইট এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশায় আমি একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনার এবং ব্লগিং আমার প্যাশন। আমি এই সাইট এ ব্লগিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ইংরেজি নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করি এং আর্ন মানি অনলাইন বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। এই সাইট এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাতে কোয়ালিটি কনটেন্ট প্রকাশ করা যা সাইট এর ভিসিটার দের কাজে লাগে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.