সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা কেন জরুরি ?

সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা কেন জরুরি ? আমাদের জীবনে আমরা হঠাৎ পরিবর্তনকে ভয়ের চোখেই দেখে থাকি। 

সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন
Why change is important ?

পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা মানুষকে ভাবায় ও চিন্তান্বিত করে। 

কিন্তু, অন্যদিকে আমাদের জীবনে পরিবর্তন না থাকলে, আমাদের পক্ষে ভালো-খারাপ কোনো কিছুই হওয়া সম্ভব হতো না। 

আপনি চান কিংবা না চান, পরিবর্তন সর্বদাই ঘটনশীল। 

আর, এই পরিবর্তন ছোট থেকে বড় যেকোনো আকৃতির হওয়াই সম্ভব- আপনার প্রিয় কফি আউট অফ স্টক হোক কিংবা চাকরির কাজে বিদেশে বদলি হওয়ার ঘটনাই হোক না কেন, পরিবর্তনের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। 

কেবল, পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা একটা জিনিসই বুঝি, সেটা হল এই যে, এটা প্রবাহমান ও অনিবার্য। 

কিন্তু, আমরা জানি না এর প্রভাব কি হবে বা হতে চলেছে, আর এই অনিশ্চয়তাকেই আমরা সবথেকে বেশি ভয় পাই। 

পরিবর্তন মানে আমাদের ছোট, সহজ, নিরাপদ ও সুখের জীবনের বাইরে গিয়ে অজানা-অচেনা পরিস্থিতিতে প্রবেশ করা। 

যা, আমাদের জীবনে বয়ে আনতে পারে আনন্দ, অস্থিরতা ও আরও অনেক কিছু।

আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা কেন জরুরি?-এই বিষয়টি সম্পর্কে।

এখান থেকে আপনাদের মনে জীবনে পরিবর্তনের সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরী হবে। 

তবে, এই ধারণা তৈরী করার আগে, চলুন এই বিষয়ে একটা পরিচিত গল্প শুনে নিই। 

মানুষের পরিবর্তন নিয়ে একটা নীতিশিক্ষার গল্প খুবই প্রচলিত রয়েছে;

গল্পটা কিছুটা এইরকম –

একটি ব্যাঙ দুর্ঘটনাবশত একটি গরম জল ফুটতে দেওয়ার পাত্রে পড়ে যায়। 

আর, পাত্রটি বসানো রয়েছে একটা জ্বলন্ত উনুনে। 

ধীরে ধীরে সেই উনুনে জল গরম হতে থাকে, আর অভিযোজন ক্রিয়ার কারণে ব্যাঙটি তার শরীরের তাপমাত্রাও ক্রমে বাড়াতে থাকে। 

এইভাবে জলের তাপমাত্রা যত বাড়ে, ব্যাঙের শরীরও ততই গরম হতে থাকে। 

কিন্তু, এক সময় জল ফুটনাঙ্কে পৌঁছালে, ব্যাঙটি অনেক লাফাঝাঁপি করার পরেও, শেষ অবধি তাপের কারণে মারা যায়।

নীতিশিক্ষা:

ঠিক, মানুষের জীবনও অনেকটা এই ব্যাঙের মতোই, তারা ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন ঘটতে দেখলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। 

কিন্তু, আবার ব্যাঙটির মতো পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যায়, তখন মানুষ বাধ্য হয়ে পরিবর্তনকে মেনে নেয়। 

অথচ, ওই ব্যাঙটি যদি প্রথম থেকেই গরম জল থেকে ওঠার চেষ্টা চালাতো, তবে হয়তো তাকে এইভাবে মৃত্যুবরণ করতো না। 

ঠিক একইভাবে, মানুষেরও উচিত সাময়িক পরিবর্তনের সাথে-সাথে নিজেকে পরিবর্তনের জন্যে প্রস্তুত করে রাখা। 

যাতে, আগামী যেকোনো পরিস্থিতিতেই তারা নিজেদেরকে মোকাবিলার জন্যে তৈরী করতে পারে।

৫. পরিবর্তন জীবনকে পুনরায় মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে:

পরিবর্তন না থাকলে মানুষের মনে শান্তিও থাকবে না। ম

নে করুন, আপনি জীবনে এমন একটা পরিস্থিতিতে আছেন, যেখানে আপনার মনে হচ্ছে যে, আপনি জীবনে এর থেকেও ভালো কাজ করতে পারেন। 

তখনই, আপনার মনে হয় যে, আপনার জীবনে সেই কাঙ্খিত পরিবর্তন আসাটা জরুরি। 

অর্থাৎ, পরিবর্তন আমাদের জীবনের দর্শন সম্পর্কে মতামতের পরিবর্তন ঘটাতে পুনরায় সুযোগ দিয়ে থাকে।

৬. পরিবর্তন ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে:

পরিবর্তন আপনাকে আপনার পছন্দমতো ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে সাহায্য করে। 

নিজেকে পরিবর্তনের জন্যে তৈরী করে, তা কার্যকর করাই হল পরিবর্তনের সবথেকে ফলপ্রসূ প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টে ফেলাই হল জীবনের সেরা দক্ষতা। 

আপনার ব্যক্তিগত কিংবা কর্মজীবনের অসন্তোষজনক দিকগুলোকে চিহ্নিত করে নিজের বিকাশের জন্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার মাধ্যমে নিজের উন্নতি করাই পরিবর্তনকে আহ্বান করার প্রধান কারণ। 

স্থিতিশীলতা এড়াতে নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো ঘটানো আমাদের সকলের কাছেই একান্ত কাম্য একটা বিষয়। 

নিজেকে উপস্থাপন করার ধরণ বদলানো, দক্ষতা বিকাশ, কোনো কোর্স করা কিংবা আপনার রুটিন পরিবর্তন করা; যাইই হোক না কেন, নিজেকে প্রগতির পথে পরিচালিত করাই হল পরিবর্তনকে মেনে নেওয়ার প্রধান শর্ত।

৭. পরিবর্তনই হল প্রগতি:

জীবনে যখনই আপনি মনে করেন যে, আপনার বিকাশ ধীর গতিতে চলছে ও আপনি এখনও আপনার জীবনের লক্ষ্যের থেকে অনেক দূরে- তাহলে আপনি কতটা পথ পেরিয়ে এসেছেন,সেদিকে একবার তাকিয়ে দেখুন। 

গত কয়েক বছরে আপনি কোথায় ছিলেন আর এখন কোথায় এসেছেন। 

যদি, আপনার আশানুরূপ পরিবর্তন না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনি জীবন পরিবর্তনের দায়িত্ব নিজের হাতেই তুলে নিন। 

যাতে, আপনি সুখী জীবনধারা ও পরিপূর্ণতার অনুভূতির দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। 

মনে রাখবেন যে, আপনিই হলেন আপনার জীবনের প্রধান কান্ডারি, আর পরিবর্তন হল নৌকার পালের মতো। 

যদি পালের নির্দেশে আপনার জীবনের নৌকা সঠিক পথে না এগোয়, তাহলে অবশ্যই পালের দিক পরিবর্তন করতে হবে বৈকি! 

জীবনে পরিবর্তনের উপকারিতা:

পরিবর্তনের কাছে আমাদের সকল মানুষকেই আত্মসমর্পণ করা উচিত। 

কারণ, পরিবর্তনকে সহজভাবে মেনে নিলে, এতে আপনার জীবনে শান্তি আসে এবং আপনি মানসিক চাপ ও উত্তেজনা থেকে দূরে থাকেন। 

এর পাশাপাশি জীবনে পরিবর্তনের আরও কতগুলো উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল-

– পরিবর্তনকে মেনে নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত থাকলে, আপনি মানসিকভাবে যথেষ্ট ইতিবাচক ও শান্ত থাকবেন।

আর, জীবনের পরিবর্তনের সাথে-সাথে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার বিষয়েও স্থির থাকবেন।

– জীবনে পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি আপনার মন থেকে সমস্ত নেতিবাচক শক্তি দূর করতে পারেন।

– পরিবর্তন আপনাকে নমনীয় হতে শেখায়।

কারণ, বদলের কারণেই আপনি শিখতে পারেন যে, কীভাবে নতুন পরিবেশ, পরিস্থিতি ও মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে হয়।

– ইতিবাচক পরিবর্তন আপনার সার্বিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলে; কারণ এর মাধ্যমে আপনার আশেপাশে থাকা মানুষের প্রতি আপনার গভীর উপলব্ধি তৈরী হয়।

এর ফলে, আপনি আরও বেশি ভালবাসতে ও সমব্যথিত হতে শেখেন।

– পরিবর্তন আপনাকে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে ও বিকশিত করতে সাহায্য করে।

কারণ, পরিবর্তনগুলোকে মোকাবিলা করতে করতে আপনি বাহ্যিক ঘটনাগুলোর দ্বারা আর মানসিকভাবে প্রভাবিত হন না। 

পরিশেষে:

অনস্বীকার্যভাবে পরিবর্তন হল আমাদের ব্যক্তিগত বিকাশের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

আর, কোনো মানুষই পরিবর্তন ছাড়া বাঁচতে পারে না। 

আপনি নিজে পরিবর্তন পছন্দ না করলেও, বাস্তবে আমাদের সকলেই জীবনেই পরিবর্তন আসাটা অবশ্যম্ভাবী। 

আপনার জীবনে পরিবর্তন কখনোই থেমে থাকে না কিংবা সে কখনোই আপনার অনুমতির অপেক্ষায় থাকে না। 

বদল আপনার সম্মতি ছাড়াই যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে৷ 

তবে, আমাদের জীবনে এমন কিছু পরিবর্তনও রয়েছে, যেগুলোকে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। 

তাই, পরিবর্তনের গতিপথকে স্বীকার করে ও আমাদের জীবনে পরিবর্তনের পথটিকে বেছে নিয়ে এগিয়ে চলাই ভালো।

আমাদের আজকের সময়ের সাথে মানুষের জীবনে পরিবর্তনের গুরুত্ব নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.