সবসময় রিলাক্স থাকার উপায় গুলো কি কি – (সেরা টিপস)
রিলাক্স থাকার উপায়: স্ট্রেস হল একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা – যা প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু-কিশোর প্রত্যেকের দ্বারাই কোনো না কোনোভাবে অনুভূত হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই রকমের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, কোনো ব্যক্তি কীভাবে এই মুহুর্তগুলোর সাথে মোকাবিলা করে থাকেন ?
মানসিক চাপের কারণে, কিছু মানুষ একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে, আবার কেউ-কেউ মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী থেকে অতিরিক্ত চাপ, ব্যর্থতা কিংবা হতাশার মোকাবিলা করে চলে।
একটানা স্ট্রেস ও উদ্বেগ আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে, এমনকি আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার উপরও কুপ্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, নিজের জীবনে চলার পথে নিজের উদ্বেগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, আমাদের উচিত একদম শান্ত হয়ে বা রিল্যাক্সড থেকে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার সাথে মোকাবিলা করা।
রিলাক্স থাকার উপায় গুলো কি কি ?
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো, রিলাক্স থাকার সেরা এবং কার্যকর উপায় গুলোর সম্পর্কে।
এই আর্টিকেল থেকে আপনার জানতে পারবেন, রিলাক্স থাকার সেরা কয়েকটি উপায়ের ব্যাপারে।
দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, তা কিছুক্ষণের জন্যে ধরে রেখে, আবার ছেড়ে দিন, এইভাবে প্রসেসটাকে বেশ কয়েক মিনিট করে দেখুন।
ব্রেইনের সেলে অক্সিজেন সরবরাহ সঠিকভাবে হলে, তা আপনার শরীর ও মনে একটা চনমনে ভাব এনে দেবে।
– প্রোগ্রেসিভ রিলাক্সেশন:
আপনার শরীরের কিছু মাসেল গ্রুপগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত করার মাধ্যমে শরীর থেকে স্ট্রেস রিমুভ করতে পারেন।
আপনি মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আপনার ঘাড়, মাথা, কাঁধ ও হাতের মাসেলগুলো একইভাবে প্রোগ্রেসিভ রিল্যাক্সাসেশানের মাধ্যমে রিলাক্স করতে পারেন।
– উল্টো গোণা:
যখন নিজেকে পাজল্ড মনে হয়, তখন কখনও সংখ্যাগুলো বিপরীতে গুনে দেখেছেন?
আসলে, এই উল্টো গোণার ব্যাপারটা আপনার রাগ কমানের পাশাপাশি মাথাকেও ঠান্ডা করে।
– আপনি জীবনে কি চান, সেটা কল্পনা করা:
অতিরিক্তি স্ট্রেসের সময়ে, একটু ব্রেক নিন আর কল্পনা করুন আপনার জীবনে আপনি কি চাইছেন।
ধরুন, আপনি হয়তো এখন সিঙ্গাপুর ঘুরতে যেতে চাইছেন, কিংবা দারুণ একটা পার্ল নেকলেস কিনতে চাইছেন- এই পসিটিভ কল্পনাগুলো আপনার মনে সাময়িক শান্তি এনে দেবে।
৩. আপনার শরীরকে কিছুটা প্যাম্পার করুন:
রিলাক্স থাকার জন্যে একটা ভালো স্পা বা মেসেজের থেকে বেশি ভালো, কিই বা হতে পারে?
– হাত বা পায়ের ম্যাসাজ করুন:
আপনি কি জানেন, রিলাক্স থাকার জন্যে আপনার ফেভরিট ক্রিম দিয়ে ৫ মিনিট হ্যান্ড বা ফুট ম্যাসাজ করাই যথেষ্ট?
শুধুমাত্র, আপনার হাতের বা পায়ের জয়েন্টগুলোকে কিছুক্ষণের জন্যে ম্যাসাজ করেও আপনি খুব আরাম বোধ করতে পারেন।
– আকুপ্রেসার করুন:
আকুপ্রেসার হল শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করার একটা থেরাপি।
এই থেরাপির সাহায্যে আপনি আপনার হাত ও পায়ের মাসেলগুলোকে অল্প-অল্প চাপ দিয়ে স্ট্রেস কমাতে পারবেন।
– পায়ের তলায় টেনিস বল নিয়ে রোল করুন:
খুব রাগ হচ্ছে?
ইচ্ছে হচ্ছে সব ভেঙে ফেলতে?
তাহলে, একটা টেনিস বা যেকোনো রাউন্ড বল নিয়ে পায়ের তলায় রেখে তা রোল করুন।
আপনার পায়ের তলার মাসেলের উপর বলটিকে রোল করুন, আর কোনো কোমল স্থান খুঁজে পেলে আরও চাপ প্রয়োগ করুন।
– মুখে ঠান্ডা জল দিন:
সারাদিনের বহু কাজের পর মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপ্টা লাগলে, আলাদা লেভেলের রিফ্রেশিং মনে হয় না?
তাহলে, যখনই স্ট্রেসড থাকবেন, তখনই নিজেকে রিল্যাক্স করার জন্যে সোজা বেসিনে গিয়ে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপ্টা দেবেন।
এটি আপনাকে রিফ্রেশিং ফিলিং দেওয়ার পাশপাশি, আপনার বডি টেম্পেরেচারও কিছুটা কমিয়ে আনে, যাতে আপনি ভালো বোধ করেন।
– স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন:
প্রচণ্ড রাগে যদি মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে, তাহলে তো অবশ্যই চুল আস্তে-আস্তে করে টেনে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ নিতে পারেন।
এতে, আপনার মানসিক চাপ তো কমবেই, উল্টে আপনি খুব আরামও পাবেন।
সবথেকে মজার ব্যাপার, আপনি এই ম্যাসাজটা নিজের হাতেই করে নিতে পারবেন।
– স্ট্রেস বল ব্যবহার করুন:
আমাদের থেরাপিস্টরা অনেক সময়েই বলেন যে, রাগ কমাতে স্পঞ্জি বল টিপুন কিংবা বালিশে ঘুষি মারুন।
এর ফলে, সিচুয়েশন যতই হাতের বাইরে থাকুক না কেন, আপনার রাগ ও উদ্বেগ কিন্তু একদম কন্ট্রোলেই থাকবে।
বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা গেছে যে, গান শোনার একটা বেশ রিলাক্সিং বেনিফিট রয়েছে।
আর, গান শুনতে ইচ্ছে না করলে, সোজা নিজের বাথরুমে যান আর মনের সুখে গান গাইতে গাইতে একটা শাওয়ার নিন!
– নেচে নিন:
একটানা বসে বোর হয়ে গেছেন ?
তাহলে, লাউডস্পিকার কিংবা হেডফোনে গান চালিয়ে একটু নেচে নিন ও মন থেকে এক্সট্রা বোঝাগুলোকে কিছুক্ষণের জন্যে ফেলে দিন।
৭. আপনার প্রিয় সঙ্গ খুঁজুন:
আপনার একাকিত্বের সঙ্গী যদি, আপনার পোষ্য হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই স্ট্রেসড বোধ করলে তার সাথে সময় কাটান, তাকে আদর করুন কিংবা তার সাথে ওয়াকে যান অথবা তাকে কোনো ভালো ট্রিট দিন।
আপনার কোনো বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর সাথে গল্প করুন, আড্ডা দিন কিংবা তার সাথে কোথাও ঘুরেও আসতে পারেন।
এতে, মন হালকা হয়।
আর, আপনার প্রিয় সঙ্গী যদি, আপনার লাইফ পার্টনার হয়, তাহলে অবশ্যই তার সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটান কিংবা কাডল করুন।
এমনকি, আপনার প্রিয় নেশা যদি ঘুরতে যাওয়া হয়, তাহলে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে সোলো ট্রিপ কিংবা পরিবার বা বন্ধুদের সাথেও ঘুরতে যেতে পারেন।
মূল কথা, রিলাক্সেশন করার প্রধান শর্তই হল নিজের হাজারো চিন্তাকে ভুলে গিয়ে সাময়িক আনন্দে মেতে ওঠা।
৮. ভালো ভালো ঘ্রাণ নিন:
আপনি কি জানেন, সুন্দর গন্ধ আমাদের মন ভালো করে দিতে পারে?
বিশ্বাস না হলে, নিজেরাই ভাবুন না, যখন প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পরে যে সোঁদা গন্ধটা বয়ে আনে, সেটা কোন মানুষের অপছন্দ হয়?
ঠিক তেমনই, নানান ধরণের গন্ধ আমাদের তরতাজা বোধ করতে সাহায্য করে।
সুন্দর ফুলের গন্ধ হোক, কিংবা রোস্টেড কফি বিনসের গন্ধ- সবই আমাদের মনকে খুশি করে তুলতে পারে।
আপনি রিলাক্স থাকার জন্যে অ্যারোমাথেরাপির সাহায্যও নিতে পারেন।
এখানে আপনি কোনো ডিফিউসারে আপনার প্রিয় সুগন্ধিত এসেনশিয়াল অয়েল, যেমন- গোলাপ, ল্যাভেন্ডার, জোজোবা ইত্যাদি আপনার পছন্দমতো ব্যবহার করে সেই গন্ধ শুঁকতে পারেন।
যেকোনো লেবুর গন্ধ আপনাকে উদ্বেগ ও স্ট্রেস থেকে মুক্তি দিতে পারে।
পরিশেষে:
রিলাক্স থাকার উপায় গুলো প্রতিটা মানুষের কাছেই আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
তবে, এই সাধারণ উপায়গুলোর মধ্যে থেকে, আপনি অসাধারণ থাকার উপায় বেছে নিতে পারেন।
আপনার যদি রান্না করাটা রিলাক্সেশন হয়ে থাকে, তবে অন্য কারোর কাছে ভালো-মন্দ খাওয়াও রিলাক্সেশন হতে পারে।
আপনি রিলাক্স থাকার জন্যে পার্কে যেতে ভালোবাসলে, অন্য কেউ হয়তো বারে যেতে ভালোবাসেন।
আসলে, জীবনে রিলাক্স থাকার বিষয়টার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
যার যেটা ভালোলাগে, মানুষ সাধারণত সেটা নিয়েই রিলাক্স থাকতে পছন্দ করে।
খুঁজে বের করতে পারেন।
আজকে আমাদের নিজেকে কিভাবে রিল্যাক্স করা যাবে সেই উপায়গুলো নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি আপনার রিল্যাক্স করার উপায়গুলো যদি খুঁজে দিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই