কাজের সময় ঘুম তাড়ানোর ৯টি দারুন উপায় জেনে রাখুন | জুয়েল আহমদ |

ঘুম তাড়ানোর উপায়: পড়াশোনা করার সময়, অফিসে বা কাজে বসে ঠিক লাঞ্চ ব্রেকের পর এমন একটা চরম ঘুম আসে, যেন মনে হয় আমরা কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি ! 

আর, কাজের সময় ঘুমিয়ে পড়াটা যেমন দৃষ্টিকটু একটা ব্যাপার, আবার তেমনই লজ্জারও ব্যাপার বটে। 

তাই, অফিসে বসে ঢুলুনি থামানোর সেরা কয়েকটি উপায় নিয়ে আমরা চলে এসেছি, আমাদের আজকের এই আর্টিকেল নিয়ে !

এখানে, আমরা আলোচনা করবো, কাজের সময় ঘুম ভাগানোর সেরা কয়েকটি উপায় নিয়ে

যা, কাজের জায়গায় আপনাকে বিব্রত হওয়ার হাত থেকে ১০০% নিশ্চিতভাবে রক্ষা করবে।

কাজের সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়

ঘুম তাড়ানোর উপায়
Kajer shomoy ghum taranor upay

চলুন, নিচে একে একে প্রত্যেকটি উপায় গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনেনেই।

১. কফিই কাফি:

ক্যাফিনেটেড কফির থেকে ভালো ঘুম কাটানোর উপায় আর কি থাকতে পারে! 

ঘুম আসছে?, হাই উঠছে? 

তাহলে, আর কোনো চাপ নেই, এক কাপ ব্ল্যাক কফি, বা গাঢ় আমেরিকানো বা এসপ্রেসোই হতে পারে, আপনার অসময়ের ঘুমের বিরুদ্ধে কড়া জবাব! 

দিনে-দুপুরে-রাতে, কাজের সময় ঘুমকে দূরে ভাগাতে যখন ইচ্ছে কফি খান!   

আসলে, কফিতে ক্যাফেইন নামক একটি পরিচিত উদ্দীপক রয়েছে। 

এটি আপনার স্নায়ুকে অত্যধিক উদ্দীপ্ত বা এনার্জাইজ করতে সাহায্য করে। 

তবে, কফি আপনার অপছন্দ হলে, অবশ্যই ব্ল্যাক টি, কড়া চা বা গ্রীন টিও খেতে পারেন। 

চায়েও অল্প পরিমাণে মৃদু উত্তেজক থাকে। 

সেক্ষেত্রে, নিজেকে কাজের মাঝখানে জাগিয়ে রাখতে ও একনাগাড়ে কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে অবশ্যই চা খেতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, চা-কফি শুধুমাত্র আপনার শিফটের শুরুতেই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

কারণ, দেরিতে চা-কফি খেলে আপনার আসল ঘুমের সময়ে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

২. দুই পা হেঁটে নিন:

বিজ্ঞান বলে, একটানা বসে থেকে কাজ করতে মাথা ও স্নায়ু দুইই অলস হয়ে পড়ে। 

তাই, কাজের মাঝে মাঝে ঘুম কাটাতে গেলে অফিস ডেস্ক থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। 

এছাড়াও, চট করে ক্লান্তি দূর করতে চাইলে, একটু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিতে পারেন। 

এতে, আপনার শরীরের কোষের মধ্যে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাবে আর ক্লান্তিভাব সাময়িকভাবে কিছুটা কমে যেতে পারে। 

আর আপনি এক্সারসাইজ করতে না চাইলে, আপনার অফিসের মধ্যেই একটু হেঁটে নিন। 

দেখবেন যে শরীর সচল থাকলে, আপনার ঘুমও কিন্তু চলে যাবে। 

৩. বৃদ-ইন-বৃদ-আউট!

কাজের সময় একটানা বসে থাকলে আমাদের ফুসফুসে সঠিকভাবে অক্সিজেন প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে। 

তাই, দৈনিকভাবে প্রাণায়াম বা মেডিটেশন করার অভ্যাস করুন। 

এতে, আপনার শরীরের প্রতিটা কোষে ঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হবে, আর আপনার ক্লান্তিভাবও অনেকটাই কেটে যাবে। 

কাজের মাঝে ধীরে ধীরে বৃদ-ইন-বৃদ-আউট করলে দেখবেন, মাথাটা বেশ হাল্কা আর ফ্রেশ লাগবে!

ব্রীদিং এক্সারসাইজ কিন্তু প্রতিদিকার স্ট্রেস কমাতেও যথেষ্ট সাহায্য করে।

৪. বাইরে বেরোন!

একটানা একই সেটআপে কাজ করতে করতে চোখ লেগে আসাটাই স্বাভাবিক! 

তাই, আপনার কাজের জায়গার বাইরে বেরিয়ে একটু ফ্রেশ এয়ারের মধ্যে এলে মাথা ও শরীর দুটোই আরাম পায়। 

তাই, মাঝে মাঝে কাজের থেকে একটু ব্রেক নেওয়াই যায়। 

এতে, আপনার প্রোডাক্টিভিটি যেমন বেড়ে যায়, ঠিক তেমনই আপনার শরীর-মন দুটোই তরতাজা থাকে। 

আর, মন ভালো থাকলে ঘুম একেবারেই আসবে না!

৫. হাইড্রেটেড থাকুন!

ক্যাফেইন আপনার মধ্যে অতি দ্রুত অস্থায়ী শক্তি তৈরী করতে পারে। 

তবে, আপনার সম্পূর্ণ দিনে গোটা কাজের সময় ধরে নিয়মমাফিক জল পান করা একান্তই আবশ্যিক। 

কারণ, সঠিকভাবে জলপানের মাধ্যমে আপনাকে যথাসম্ভব হাইড্রেটেড থাকতে হবে। 

তাতে, আপনার স্বাস্থ্য বজায় থাকার পাশাপাশি, আপনার শরীর ও মনও চাঙ্গা থাকবে।

আর, জলের অভাবে ডিহাইড্রেশন হলে, সেক্ষেত্রে কাজে মন দেওয়াও আপনার পক্ষে অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খান!

একটানা কফি ও চা খেতে থাকলে, আপনার এনার্জি ফিরে আসবে- সেটা ঠিক কথা; তবে, বেশি পরিমাণে গরম পানীয় খেতে থাকলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। 

তাই, কাজের ফাঁকে অল্প বিস্তর স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার খাওয়ারও ব্যবস্থা করুন। 

আপনি কাজ চলাকালীন শুকনো ফল, বাদাম, দই, টাটকা ফল, গ্র্যানোলা, বা কিছু সবজি খেতে পারেন। 

এই ধরণের খাবারগুলো হজম করতে কম আমাদের শরীর কম শক্তি ব্যবহার করে। 

এতে, আপনার রক্তে শর্করার ভারসাম্য ঠিক থাকে, আর আপনার শরীরে সঠিকভাবে এনার্জি প্রবাহিত হয়। 

এর ফলে, কাজের সময়ে আপনি সজাগভাবে ও বিনা ঘুমিয়ে কাজ করে যেতে পারবেন। 

৭. কাজের জায়গা আলোকিত রাখুন:

যথেষ্ট পরিমাণ আলো আমাদের মাথা ও শরীরকে সজাগ রাখতে সাহায্য করে। 

সকালের শিফ্ট থাকলে জালনার কাছে, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো আসে, সেখানে বসে কাজ করার চেষ্টা করুন। 

আর, রাতের শিফটে অবশ্যই বেশি আলোকিত জায়গাতে কাজে বসুন। 

সঠিক পরিমাণ আলো কিন্তু আপনার মনকে জাগ্রত ও সতর্ক থাকতেও সাহায্য করতে পারে। 

৮. কথা বলুন বা গান শুনুন:

ঘুম চলে এলে আপনার সহকর্মী, বন্ধু বা যে কারোর সাথে কথা বলা শুরু করুন। 

যেকোনো মজার কথোপকথনই আপনাকে জাগিয়ে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

কথা বলতে ইচ্ছে না করলে, ফুল ভলিউমে রক বা পপ গান শুনুন। 

এতে, চট করে আপনার ঘুমও কেটে যাবে। 

উচ্চস্বরের গান অনেক সময়েই আপনার হারিয়ে যাওয়া এনার্জি ফিরিয়ে আনতে পারে। 

তবে, অফিসের শান্ত পরিবেশে ঘুম তাড়াতে গেলে অবশ্যই গানটা হেডফোনেই শুনবেন! 

নাহলে, অফিসের অন্য কর্মচারীদের বিরক্ত লাগতে পারে।

৯. কোনো শক্তিশালী গন্ধ শুঁকুন!

আপনার অফিসের ডেস্কে অবশ্যই কোনো সুগন্ধি মোমবাতি বা এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজার রাখুন। 

জুঁই, লেবু, বা পিপারমিন্টের মতো শক্তিশালী ও সুন্দর গন্ধগুলো আপনাকে দ্রুত এনার্জাইজ করতে সাহায্য করতে পারে। 

তাই, আপনার ঘুম কাটাতে আপনি আপনার কব্জি ও কপালের দুই পাশে এই সুগন্ধিগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

এক্সট্রা টিপ্!

কি? এতো কিছু করেও ঘুম কাটছে না! 

তাহলে, ছোট একটা ন্যাপ নিয়েই নিন। 

কিংবা, কাজের মধ্যে থেকে বা লাঞ্চ ব্রেকে ১০-১৫ মিনিট সময় বার করে, একটা ন্যাপের শিডিউলে করে নিন। 

এতে, আপনার ঘুমও হবে, আবার কাজের সময় ফুল এনার্জিও থাকবে। 

ঘন-ঘন শিফ্ট পাল্টানোর কথা একেবারেই ভুলে যান, এতে আপনার স্লিপিং সাইকেলের বারোটা বাজা ছাড়া আর কিছুই হয় না! 

একবার, আপনার নরমাল ঘুমের সময় এদিক-ওদিক হলে, আপনার শরীর সেটার সাথে চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। 

এই কারণেই, ঘুমোনোর সময়ে ঘুম না এসে কাজের সময়ে আপনার ঘুম আসতে থাকে। 

এছাড়াও, খুব জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী একটানা কাজের ফলে আমাদের মনে বিরক্তি তৈরি হয়। 

আর, বিরক্তি থেকে আসে ক্লান্তি, আর ক্লান্তি থেকে আসে ঘুম। 

তাই, চেষ্টা করবেন, যখন আপনার কাজের সময় ঘুম পাবে, তখন সোজা কাজগুলো আগে সেরে নিতে, যেমন- ইমেইলের উত্তর দেওয়া, নিজের অফিস ডেস্ক গুছিয়ে নেওয়া, কফি বানানো, ডক্যুমেন্ট ফাইল করা ইত্যাদি। 

আমাদের শেষ কথা,,

এই ধরণের সহজ কাজগুলো করতে থাকলে আপনার এনার্জি লেভেল আবার আগের জায়গাতে ফিরে আসতে বাধ্য!

আর, সবসময়ই আপনার ঘুমের সময়ে গভীরভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন, তাহলে দেখবেন যে, কাজের সময় ঘুমকে আরামসে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। 

আমাদের আজকের ‘কাজের সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়’ গুলো নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল। 

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.