ইমোশন কন্ট্রোল করুন ৬ উপায়ে | জুয়েল আহমদ |

সবসময় আমরা বলি ইমোশন কন্ট্রোল( Emotion Control ) বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে চলার কথা। আসলে আপনি যদি ইমোশন কন্টোল না করে চলতে না পারেন,  তবে আপনি মুহুর্তের মধ্যেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন।  কিন্তু কখনই কী আমরা ইমোশন কন্ট্রোল করার উপায় নিয়ে ভেবেছি, তা জেনে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে দেখেছি?  এ নিবন্ধ থেকে জানতে পারবেন ইমোশন বা আবেগ কি? ইমোশন কন্ট্রোল করার ছয় জাদুকরি উপায়।

আবেগ?

আবেগ হলো একধরণের অনুভূতি।  সহজাত অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। যা আপনার ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক প্রকাশ।  আপনি যদি ইমোশন সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারেন তবে মানসিক প্রশান্তি আসবে না।  যা আপনার স্বতস্ফূর্ত আচরণকে বাধাগ্রস্ত করবে।  আবেগের সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা যোগ করে অনেক ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আমরা কি সবসময় ইমোশোন কন্ট্রোল করতে পারি?

সত্যি বলতে আমরা প্রায়ই ইমোশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই,  অথবা বলা যায় ইমোশন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়।  তখন ইমোশনই আমাদের ক্ষতির কারণ হয়।  পজিটিভ ইমোশন যেমন আমাদের ব্যক্তিত্বে পজিটিভ প্রভাব ফেলে,  তেমনি নেগেটিভ ইমোশন ব্যক্তিত্বের উপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।  যেমন আমরা ভালোবাসি বলেই, ভালোবাসার মানুষের জন্য কান্না করি।  আবার ভালবেসেই ভালোবাসার মানুষের জন্য অকপটে ত্যাগ স্বীকার করি।  এটা তাই সন্দেহাতীত ভাবে বলতে পারি, আবেগ আমাদের চিন্তাভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে সিদ্ধান্তগুলোকে আবেগ পরিচালনা করে।  সেইসাথে বলা হয়, হার্ট ভালো রাখতে মানসিক সুস্থতা ও আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।  এবার কথা বলবো ছয়টি উপায়ের। যার মাধ্যমে আপনি ইমোশন কন্ট্রোল করে যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

১) তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়াকে না বলুন

কোন বিষয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখানো চরম ভুল।  কারণ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে গেলে ভুল হয়ে যায়। তাই কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ এড়িয়ে যান।  ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আপনার অনুশোচনা হতে পারে। এজন্য প্রথমে আপনার আবেগকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করুন এবং স্থিরতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন।  এসময় আপনার হার্টকে শান্ত রেখে ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা’ কাজে লাগান।

২) সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন

যখন আপনার ইমোশন কন্ট্রোল বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।  আবেগ খুব বেড়ে যাবে, তখন স্থিরতা আনতে একমনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন।  চোখ বন্ধ করুন কিছু সময়ের জন্য। এবার আপনি যে ধর্মেরই বিশ্বাসী হন না কেন, তা স্মরণে আনুন।  সৃষ্টি কর্তার সাহায্য প্রার্থনা করুন। দেখবেন ধর্মীয় অনুভূতি আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করে দিবে।  যা আপনাকে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

৩) স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন

ইমোশোন কন্ট্রোল করার স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন।  যাতে করে সহজে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।  আবেগ বা ইমোশন বাড়তে দিবেন না।  যখন কোন বিষয়ে অধিক ইমোশন কাজ করবে তখন বিশ্বস্ত কারো সাথে আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন।  সেটা সাক্ষাতে বা মুঠফোনেও হতে পারে। তার কাছে বিষয়টি বর্ননা করুন। এবার সে বিষয়ে অন্যের মতামত শুনে নিজের জ্ঞানকে প্রসারিত করে সিদ্ধান্ত নিন।
অনেকেই ইমোশন বেড়ে গেলে কিকবক্সি করেন, অনেকে হাতে পাঞ্চ বল নিয়ে পাঞ্চ করেন।  নিজের ইমোশন গুলো মনের ভেতর থেকে বের করতে অনেকেই তা খাতায় লিখে ফেলেন।  এতে আপনার হালকা অনুভূতি আসবে। নিজেকে শান্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

৪) অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন

আমাদের জীবনে ভালো বা মন্দ যাই ঘটুক না কেন, তা আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। তাই অতীত অভভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন।  অতীতের আবেগের বশে নেয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ভুল বা ঠিক হয়েছে? নিজেকেই প্রশ্ন করুন,  অতীতে ইমোশন কন্ট্রোল করার জন্য আপনি কি কি টেকনিক ব্যবহার করেছেন?  কারণ একেক জনের ইমোশন নিবৃত্ত করার পদ্ধতি একেক রকম।  যখন আপনি ইমোশনালী বেশি ডিপরেস থাকবেন, তখন নিজেকে বুঝান। খারাপ সময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।  তাই এ সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন।  কারণ পজিটিভ ইমোশন আপনার সিদ্ধান্তকে পজিটিভ করে, আর নেগেটিভ ইমোশন সিদ্ধান্তকে নেগেটিভ করে।

৫) চিন্তা পরিবর্তন করুন

আগেই বলেছি নেগেটিভ চিন্তা আপনার ইমোশনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।  তাই যেসব বিষয় চিন্তা করলে আপনি বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েন, তা সচেতনভাবে এড়িয়ে চলুন।  অনুভাবেও বলা যায়, নেগেটিভ ইমোশন আপনাকে অন্ধ করে রাখে নেগেটিভ চিন্তার প্রতি।  ফলে আপনি নেগেটিভাবেই কোন সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেন।  তাই যখন আপনার আবেগ নেতিবাচক হিসেবে কাজ করবে, তখন ভিন্ন চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন।  এতে আপনার নেতিবাচক আবেগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। ধরুণ, আপনার মাথায় কোন বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা এসেছে,  তখন ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করুন।

৬) নিজের ওপর দখল বাড়ান

নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজের উপর দখল থাকা।  নিজের উপর দখল না থাকায় আপনার আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে।  দেখবেন আপনি যখন রেগে যাচ্ছেন তখন অল্পতেই তুলকালাম শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু যখন নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন, তখন অনেক জটিল বিষয়েও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন সহজভাবে।  তাই ইমোশনাল বা আবেগতাড়িত হওয়ার আগে বিষয়টি যুক্তি, প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করতে হবে। কেননা অনেক ইমোশনাল সিদ্ধান্ত বৃহৎ ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় খেয়াল করতে হবে, তা যেন কোনভাবেই সীমা লঙ্ঘন না করে। কারণ পরিস্থিতি এক সময় শান্ত হবে কিন্তু এর মধ্যেই আপনি যেন বৃহত্তর স্বার্থের ক্ষতি করে না ফেলেন। তাই যা করতে যাচ্ছেন তা একটু ভেবে চিন্তে করুন। যে বিষয়ে যতটা প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে, ঠিক ততটাই দেখান।

এবার জানা যাক, সময়মত ইমোশন কন্ট্রোল করতে না পারলে তা আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।  তাই বলা হয়, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।  আপনি আবেগতাড়িত হলে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে।  তবে জেনে নেয়া যায়, আপনার কোন ধরণের আবেগের বহিঃপ্রকাশে আপনার কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে।  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মনে তা তুলে ধরা হলো।

রাগ

আপনার অতিরিক্ত রাগ আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।  কারণ অতিরিক্ত রাগের ফলে আপনার লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাই যতদূর সম্ভব রাগকে না বলুন।

দুঃখ

দুঃখ বুকে বেশিদিন চেপে রাখলে ফুসফুসে চাপ পড়ে।  যা আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তাই দুঃখ বেশিদিন চেপে রাখবেন না।  যত দ্রুত সম্ভব দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করুন, তা সমাধান করে নিন। এতে আপনার স্ট্রেস কমে যাবে। ফুরফুরা অনুভব করবেন।

দুঃশ্চিন্তা

দুঃশ্চিন্তা আরেক ব্যাধি। দুঃশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে পাকস্থলীর উপর প্রভাব পরে।  তাই যতটুকু পারেন আবেগ নিয়ন্ত্রণ রাখুন।  এতে আপনার দুঃশ্চিন্তার কারণ কমে যাবে।

স্ট্রেস

অতিরিক্ত স্ট্রেস ভালো না।  কারণ অতিরিক্ত স্ট্রেস সরাসরি মস্তিষ্কে ও হার্টে প্রভাব ফেলে। তাই স্টেস কমিয়ে শান্ত থাকুন। স্ট্রেস বেড়ে যায় তা এড়িয়ে চলুন।

ভয়

ভয় থেকেও স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।  তাই সুস্থ থাকতে ভয়কে জয় করতে হবে।  তাই দীর্ঘদিন ভয়ের অনুভূতিতে ভুগলে তা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে।  ভয়কে জয় পেলে বেশি পরিমান পানি পান করুন।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.