হতাশা দূর করার সেরা ৯টি উপায় | কিভাবে হতাশা দূর করবেন | জুয়েল আহমদ |




পার্সোনাল টিপ্স / By 

হতাশা দূর করার উপায়: প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে কোনো না কোনো সমস্যা আসতেই থাকে যার ফলে তাঁকে বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতির সমুক্ষিণ হতে হয় এবং সমস্যা আসলে সাধারণভাবে সেই ব্যক্তি হতাশা হয়ে পড়ে।

হতাশা দূর করার উপায়
হতাশা দূর করার জন্য কি কি করা যেতে পারে ?

হতাশা এমন একটি অনুভব যা ব্যক্তির জীবনে এসেতো যায় কিন্তু যতক্ষন সে ব্যক্তি নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত না করে ততদিন পর্যন্ত সেই হতাশা ব্যক্তির সাথেই থেকে যায়।

মানুষের জীবনে হতাশা অনেকরকম কারণবশত চলে আসতে পারে তাই আজ প্রত্যেক ব্যক্তি হতাশা বা নিরাশা থেকে বাঁচার জন্য অনেক রকম উপায় খুঁজে থাকেন। 

তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হতাশা থেকে বাঁচার জন্য কিছু উপায় বলতে যাচ্ছি যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার জীবন থেকে হতাশা দূর করতে পারবেন।

জেনেনিন হতাশা দূর করার উপায় গুলো

তাহলে চলুন বন্ধুরা নীচে দেওয়া প্রত্যেকটি উপায়ের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

১. নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন:-

আপনার জীবনে যদি হতাশা অনুভব হয় সেই সময় নিজেকে কখনো একা থাকতে দিবেননা।

কারণ আমরা যখনি একা থাকি তখন আমাদের মাথায় সবথেকে বেশি নকরাত্মক বিচারগুলো এসে থাকে তাই হতাশায় থাকলে কখনো খালি বসতে নয়, কারণ আমরা প্রত্যেকেই জানি যে খালি মাথা শয়তানের ঘর।

তাই নিজেকে সবসময় কিছু না কিছু কাজে ব্যস্ত রাখুন।

নিজের রুচি অনুসার কাজ করুন যেমন গাছের যত্ন করা, ভালো বই পড়া, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে গল্প করা, ঘরের কাজ করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।

এতে মনের চিন্তা বা হতাশা অনেকটা কমে আসবে।

২. ব্যায়াম করুন:-

সকালে উঠে শরীর চর্চা করলে আমাদের মন এবং শরীর দুটোই সুস্থ থাকে।

তাই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতিদিন সকালে উঠে ব্যায়াম করুন, যোগা করুন, হাটতে যান, সাইক্লিং করুন।

এতে, দেখবেন আপনার মন থেকে হতাশা দূর হতে থাকবে এবং আপনার মধ্যে এক নতুন ফুর্তির ভাব এবং উর্যা চলে আসবে।

সকালে উঠে হাটতে বের হলে শুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায় যা আমাদের মনে এক শান্তির অনুভব করায় এবং নকরাত্মক বিচার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে থাকে।

এবং ব্যায়াম করলে মাংসপেশিতে উত্তেজনা আসে যার ফলে আমাদের ভেতরে এক নতুন শক্তির সঞ্চার ঘটে যা আমাদের আত্মবিশ্বাস কে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং নকরাত্মক বিচার থেকে আমাদের ধ্যান সরিয়ে রাখে।

এতে আমরা সত্যি অনেকটা চাপমুক্ত হতে শুরু করি।

৩. নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা না করা:-

নিজেকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করা উচিত নয়।

অন্যের জীবনধারা দেখে অন্যের টাকা এবং,অন্যের শখ দেখে কখনো ঈর্ষা করা উচিত নয় এবং নিজের কাছে সেই জিনিষগুলো না হওয়ার জন্য নিজের ভাগ্যকে কখনো দোষ দেওয়া ঠিক নয়।

কারণ এগুলোর ফলেই আমাদের জীবনে হতাশার সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

আপনি যেকোনো ক্ষেত্রে দেখবেন টাকা পয়সা হোক বা পড়াশুনা হোক এগুলো পাওয়ার জন্য সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।

তাই এগুলো জিনিষ যদি অন্যের কাছে আপনার থেকে বেশি থাকে তাহলে, এর অর্থ হলো সে সেগুলো পাওয়ার জন্য আপনার থেকে বেশি পরিশ্রম করেছে।

তাই কখনো সেই জিনিসগুলো পাওয়ার জন্য অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করবেন না এবং সেই জিনিসগুলো পেতে চাইলে সকরাত্মক বিচারের সাথে পরিশ্রম করতে থাকুন।

বর্তমান আপনার কাছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।

৪. নকরাত্মক ভাবনাগুলো বদলানোর চেষ্টা করুন:-

যে নকরাত্মক বিচারগুলো আপনাকে বিষণ্ণ করে তোলে সেগুলো চিনতে শিখুন।

কারণ এই বিচারগুলোই আপনাকে আগে বাড়তে বাধা দিয়ে থাকে। 

তারপর সেই নকরাত্মক বিচারগুলো একটি কাগজে লিখুন এবং প্রতিদিন চেষ্টা করুন একটা একটা করে সেখান থেকে নকরাত্মক বিচারগুলোকে সকরাত্মক বিচারে পরিণত করতে।

যেমন এটা অনেক কঠিন, এটা আমার দ্বারা কি করে হবে, বা আমি একা কি করে করতে পারবো ? ঠিক এধরনের  বিচারগুলোকে বদলাতে হবে।

এবং এর পরিবর্তে এটা ভাবতে হবে যে এগুলো অনেক সহজ, এগুলো আমি করতে পারবো বা কিছু বদলানোর জন্য একাই আগে বাড়তে হয় ইত্যাদি

এধরনের সকরাত্মক বিচার দিয়ে নিজেকে বদলানো উচিত।

৫. প্রতিদিন কিছু পড়ার অভ্যাস করুন:-

এই একটিমাত্র অভ্যাস থেকে আপনি সব সময় নিজেকে মোটিভেট করে রাখতে পারবেন। 

প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস করলে আপনার ধ্যান আপনার লক্ষ্যে কেন্দ্রিত রাখতে সাহায্য করবে।

প্রতিদিন পছন্দের বিষয় সমন্ধিত নতুন জিনিসের বিষয়ে পড়ুন, প্রেরণাদায়ক জীবনী, অনুপ্রেণামূলক ব্লগ, সাহিত্য ইত্যাদি পড়ুন।

এবং যখন আপনি হতাশায় ভুগছেন, তখন আরো বিশেষ করে বই অবশ্যই পড়ুন।

এই অভ্যাস আপনাকে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে তুলবে যার ফলে আপনার মোটিভেশন লেবেল বাড়বে।

এবং উৎসাহিত থাকলেই আপনি আপনার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবেন এবং হতাশা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারবেন।

৬. ভরপুর ঘুমান :-

আমাদের সকলের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন।

কারণ ঘুম না হলে শরীরে  ক্লান্তভাব লাগে এবং শরীরে শক্তির অভাব অনুভব হয়ে থাকে।

 যারফলে মন ভারি ভারি লেগে থাকে, কোনো কাজে মন বসেনা এবং আপনি আস্তে আস্তে হতাশার শিকার হতে শুরু করেন।

তাই সুস্থ থাকার জন্য ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ভরপুর ঘুমান।

ভরপুর ঘুমালে শরীরে এক নতুন শক্তির এবং সতেজতার অনুভব হয়ে থাকে।

মন হালকা এবং শান্ত হয়ে থাকে যা আপনার হতাশা কম করতে সাহায্য করে থাকে।

তাই মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে হলে ভরপুর ঘুমের খুবই প্রয়োজন।

৭. নেশা থেকে দূরে থাকুন:-

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় হতাশা বা মানসিক চাপে থাকলে মানুষ নেশা করতে শুরু করে এবং ভাবে যে নেশা তাদের চিন্তা দূর করে দিতে পারবে।

কিন্তু বাস্তবে এটি হয়না।

যেকোনো প্রকারের নেশা আপনার সমস্যাকে কম করতে পারেনা বা আপনার পরিস্থিতিকে বদলাতে পারেনা।

 রাত্রে নেশা করে আপনি আরামে ঘুমাতেতো পারবেন কিন্তু পরেরদিন সকালবেলা সেই সমস্যা এবং পরিস্থিতি আবার আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে।

নেশা করলে সমস্যা আরো বেড়ে যায় এবং পরিস্তিতি আরো খারাপ হতে থাকে।

এবং আপনার ভেতরে আরো একটি খারাপ অভ্যাস বেড়ে যায় যা আপনার সামাজিক প্রতিষ্ঠা, আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার পরিবারের জন্য হানিকারক হয়ে থাকে।

মনে রাখবেন, নেশা করলে আরো বেশি হতাশায় ভুগতে হয় এবং মাথায় আরো বেশি নকরাত্মক বিচার আসে।

তাই যতই হতাশা হোক না কেন জীবনে সেই হতাশা থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজা উচিত এবং নেশা থেকে দূরে থাকা উচিত।

৮. ক্ষমা করার অভ্যাস করুন:-

যদি আপনার সাথে কেও খারাপ ব্যবহার করে, প্রতারণা করে, আপনার কোনো ক্ষতি করে তাহলে সাধারণভাবেই সবের দুঃখ হবে এবং কখনো কখনো আমাদের অতিরিক্ত বেশি দুঃখ অবশই হয়ে থাকে। 

তবে, আপনি যদি সেগুলো কথা নিয়ে বেশি চিন্তা করেন তাহলে, চিন্তায় চিন্তায় আপনি নিজেই অস্থির হবেন অন্যদিকে কিন্তু সেই ব্যক্তির কোনো ফার্ক পড়বেনা।

তাঁর কর্মের ফল কোনো না কোনো ভাবে সে অবশই পেয়ে যাবে।

সে খারাপ তাই সে আপনার সাথে খারাপ করেছে কিন্তু আপনি খারাপ নন তাই আপনি তাকে মাফ করে নিজের মন থেকে সব সময়ের জন্য তাঁকে বের করে দিন।

তখন দেখবেন আপনার মনে এক আলাদাই শান্তির অনুভব দেখা যাবে এবং আপনি হতাশা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পড়বেন।

৯. নিজের ভালো কাজগুলোর কথা মনে করুন:-

চিন্তা দেওয়া কথাগুলো না ভেবে নিজের ভালো কাজগুলোর কথা ভাবুন, ভালো স্মৃতিগুলোর কথা ভাবুন।

যেমন কলেজে বন্ধুদের সাথে কাটানো সময় বা কোনো কাছের মানুষের সাথে যাওয়া ভ্রমণের মুহুর্তগুলো বা বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যাওয়া ভালো সময়গুলোর কথা ভাবুন।

বন্ধুদের থেকে পাওয়া গিফ্ট এবং পরিবারের থেকে পাওয়া গিফ্ট গুলো খুলে দেখুন এবং পুরানো কার্ড গুলো খুলে পড়ুন।

পুরানো ছবি গুলো দেখুন এবং সেই মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন। 

এগুলো করলে আপনার মন হাল্কা হবে এবং আপনি শান্তি অনুভব করবেন।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনিও হতাশা দূর করার উপায় বা কিভাবে হতাশা দূর করা যাবে তার উপায় গুলো খুঁজছেন, তাহলে ওপরে বলা বিষয়গুলো ভালো করে করে দেখুন। 

আপনার মনের হতাশা বা নিরাশা মুহূর্তেই নাই হয়ে যাবে। 

আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার অবশই করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, সেটা নিচে কমেন্টের মাধ্যমে অবশই জানিয়ে দিবেন । 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.