কেন জার্মানি আসবেন?



কেন জার্মানি আসবেন? অন্য দেশ কি দোষ করলো? প্রথমে কয়েকটা পরিসংখ্যান দেই। 

পৃথিবীর ৪র্থ অর্থনৈতিক দেশ জার্মানি। জার্মানির এক্সপোর্ট এমাউন্ট প্রতি বছরে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জার্মানির প্রধান এক্সপোর্ট প্রোডাক্ট হলো অটোমোবাইল এবং মেশিনারিজ। 

জার্মানিতে এভারেজ স্যালারি ইয়ারলি ৪২০০০ ইউরো অথবা প্রায় ৪৫-৪৬ লাখ টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ট্যাক্স দিয়ে কতো পাবেন? ট্যাক্স দেবার পরে মাসে ২০০০-২২০০ এর মতো আসে এভারেজে। এখানে কিন্তু ফুলটাইম স্কিলড জবের কথা বলা হয়েছে। স্টুডেন্ট অবস্থায় এসব আশা করবেন না। 

একবার ভাবেন ২.৫ লাখ টাকা মান্থলি ইনকামের দেশে আপনি ৬ মাসে ৩০ হাজার টাকা সেমিস্টার ফি দিয়ে পড়ালেখা করছেন। এর চেয়ে বড় কারণ কি হতে পারে? অর্থাৎ প্রতি মাসে আপনাকে কেবল ৬ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে পড়ালেখার জন্য। 

এতো ট্যাক্স কাটে সেটা নিয়ে অবশ্যই একটা দূর্নাম আছে। তবে আপনাকে ফ্রিতে পড়াবে কিভাবে যদি এতো ট্যাক্স না কাটে? কানাডা আমেরিকার মতো উন্নত দেশে মানুষ অসুস্থ হলে ভয়ে এম্বুলেন্স ডাকে না। কারণ ডাকলেই ৫০০ ডলার শেষ। জার্মানিতে ডাকেন যতো ইচ্ছা। সমস্যা নাই। খরচ নাই। রাস্তাঘাট পরিষ্কার। সব মিলে উন্নত জীবন যাপনের জন্য যে বেসিক নিডস গুলো আছে সব পাবেন কোন টেনশন ছাড়াই। সেই জন্যেই এতো ট্যাক্স। 

জার্মানিতে কারি কারি টাকা বানানো যায় না। সোস্যাল এবং নাগরিক সুবিধা পেয়ে শান্তিতে থাকতে চাইলেই কেবল আপনার জন্য জার্মানি। 

কানাডা আমেরিকার মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ জার্মানিও। উপরন্ত ২৬ টা দেশের টিকেট পেয়ে যাচ্ছেন হাতে। যেটা ইউএসএ কানাডায় গেলে পাবেন না। 

ইউএসএতে আমারও বন্ধু বান্ধব অনেক আছে। গিয়ে ১ বছরের মধ্যে গাড়ি, আইফোন হতে শুরু করে সবই আছে তাদের। সেসব দেখে খারাপ লাগে বটে। তবে যখন দেখি আমাদের চেয়ে ওদের ব্যস্ততা আরো বেশি। ওদের দৌড় ঝাপ আরো বেশি তখন ভাবি ভালো আছি। 

কানাডা স্টাডির জন্য অনেক এক্সপেন্সিভ এবং ইউএসএর মতো এতো ফান্ডও দেয় না। তাই মধ্যবিত্তের জন্য প্রথমেই ওই অপশন বাদ। কানাডায় পিআর দেয় তাড়াতাড়ি, সিটিজেন হবেন তাড়াতাড়ি, বাবা মাকে নিয়েও যেতে পারবেন। কিন্তু ভাই দেখলে হবে? খরচা আছে! তাছাড়া কানাডা ইংলিশ স্পিকিং কান্ট্রি। সব মিলে টাকা থাকলে কানাডা অনেক বেটার অপশন। কিন্তু কানাডার প্রতিকূল আবহাওয়া মানিয়ে নেয়া অনেক কষ্টের। যার দরুন সাচকেচুয়ানের মতো জায়গা গুলো এখনো ফাকা। কানাডার বিস্তর অঞ্চল এখনো ফাকা। কানাডার ফিক্সড কিছু জায়গাতেই কেবল চাকরির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু জার্মানিতে ভাষা জানলে অজপাড়াগাঁয়েও চাকরি পাবেন। এখানে অনেক ছোট শহরেও বাংলাদেশী পাবেন। দরকার না পরলে সহজে মুভ করে না। যেমন ধরেন কেমনিজ একটা মিডিয়াম সাইজের টাউন। এখানে গত দশ বছর ধরে বেশ কিছু বাংলাদেশী ভাই ভাবীরা থেকে এসেছেন, সিটিজেনশিপ পেয়েছন। তাদের বাচ্চা-কাচ্চারাও পেয়েছে। বড় সিটিতে মুভ করার কোন দরকার পরেনি। 

জার্মানিতে অটোমোবাইল, কেমিস্ট্রি, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, আইটি এবং মেডিকেলের সবচেয়ে বেশি ডিমান্ড। চেষ্টা করেন এগুলোর কোন একটিতে পারদর্শী হতে। আমাদের দেশের স্টুডেন্টরা অটোমোবাইল সেক্টরে অনেক কম। এর পিছনে কারণ হলো আমাদের দেশে ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই। তাই ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যালের স্টুডেন্টরা ভালো কোডিং শেখেন এবং এমবেডেড প্রোগ্রামিংয়ে মন দেন। আপনাদের জন্য তাহলে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওপেন হয়ে যাবে। 

বিজনেস, ইকোনোমিক্স সহ আরো অন্য সেক্টরেও এখানে ক্যারিয়ার গড়া যায়। সবার উপরে ভাষা ম্যাটার করে এখানে। তাই ভাষাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিন। হয়তো আজ থেকে ২০-৩০ বছর পর জার্মানি আর জার্মান স্পিকিং কান্ট্রি থাকবে না। ততোদিন জার্মান ভাষা লাগবেই। 

যারা মুসলিম তাদের জন্য বলি জার্মানিতে সাড়ে ৮ কোটি মানুষের অর্ধকোটি জনগোষ্ঠী মুসলিম। এবং বর্তমানে ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং রিলিজিওনও বটে। তো আগামীতেও বাড়বে আরো সেই আশা করাই যায়। ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিমের বাস এই জার্মানিতে। এবং এখানে ইসলাম ধর্ম পালনে কোন প্রকার সমস্যা নেই। একই রাস্তায় কেউ অর্ধনগ্ন হাটে কেউ হিজাব পরে হাটে। নো ওয়ান কেয়ারস!  

আমেরিকায় টাকা আছে। কিন্তু সেখানে জব সিকিউরিটি নেই। যেকোন সময়ে কোম্পানি আপনাকে বের করে দিতে পারবে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আপনাকে কাজ করে যেতে হয়। অপরদিকে জার্মান কোম্পানিগুলো আপনার সাথে লং টার্ম রিলেশন করতে চায়। ২-৪ বছরের কন্ট্র‍্যাক্ট করে নেয়। 

আমেরিকার গান ল' এর ব্যাপারে সবাই জানেন টুকটাক। স্কুল গুলোতে হামলা হওয়া নিত্যকার ঘটনা। এমন দেশে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ কি গড়তে চাইবেন? সেটা একান্তই আপনার বিবেচনা। 

কোভিডের পরে অন্য দেশ গুলো তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালেও জার্মানি এখনো অনেক স্লো আগাচ্ছে। এর পেছনের অনেকগুলো কারণের একটা বড় কারণ স্কিলড জনগোষ্ঠীর কমতি। তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ জার্মান ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে ঢেলে দেয়া। প্রতিষ্ঠিত করা৷ 

সুখ কি? জার্মানি অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা কানাডা নাকি বাংলাদেশে? সুখ যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাংলাদেশের কোন এক গ্রামে করিম চাচা হয়তো ডাল ভাত খেয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছে। আর আমেরিকায় হয়তো মতলব সাহেব কারি কারি টাকা আর ঘরভর্তি খাবার নিয়েও সুখে নেই। সুখ জীবনে আপেক্ষিক। আপনি কিসে সুখ খোঁজেন সেটা বুঝুন। জার্মানি সুখ খুঁজতে আসবেন সেটা আপনার উপরেই বর্তায়। এখানে নাগরিক সুযোগ সুবিধার গ্যারান্টি আছে কিন্তু সুখ পাবেন কিনা তার গ্যারান্টি নেই। কারণ মহাবিশ্বে সময়ের মতো সুখটাও ব্যক্তিভেদে আপেক্ষিক।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.