কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? হার্ডওয়্যার কত প্রকারের ও এদের কাজ কী?

বর্তমান সময়ে কম্পিউটার হলো মানুষের সবধরনের কাজ সম্পাদনের মূল মাধ্যম। কম্পিউটার ছাড়া একটা কর্মচঞ্চল পৃথিবী চিন্তাই করা যায় না। প্রতিটি কাজেই কম্পিউটারের ব্যবহার এখন প্রায় আবশ্যিক। কম্পিউটারের দুটি অংশ থাকে, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার।

সফটওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ প্রোগ্রাম আর হার্ডওয়ার হচ্ছে বাহ্যিক দৃশ্যমান যন্ত্রপাতি। এই দুটো অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয় কম্পিউটার। কম্পিউটার পরিচালনায় সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার পরস্পর নির্ভরশীল। আজকের ব্লগে আমরা জানবো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে।

যুগের বিবর্তনে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারে আসছে নানান ধরনের পরিবর্তন। আকার, আকৃতি, ক্ষমতা সব ক্ষেত্রেই হার্ডওয়্যারগুলো দিনে দিনে আরও আধুনিক হয়ে উঠছে, প্রথম প্রজন্মের হার্ডওয়্যার এর সাথে এখন মানে পঞ্চম প্রজন্মের হার্ডওয়্যারগুলোর পার্থক্য অনেক। নিম্নোক্ত আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, এর বিভিন্ন অংশ ও কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি?

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার হলো বস্তুত কম্পিউটারের সেসব ভৌত অংশ যার নিজস্ব ব্যাহিক কাঠামো আছে, যা দেখাও যায় স্পর্শও করা যায় কম্পিউটার অন থাকলেও অফ থাকলেও । মূলত কম্পিউটার সকল প্রকার বাহ্যিক দৃশ্যমান যন্ত্রপাতিকেই কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের পূর্ণ শারিরীক কাঠামোই হলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, যাকে কম্পিউটারের দেহ বলে। কম্পিউটার পরিচালনায় এই কাঠামোগত হার্ডওয়্যারগুলো আবশ্যিক। 

কম্পিউটার সফটওয়্যারের মানে অভ্যন্তরীণ প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। মোটকথা কম্পিউটারের সকল প্রকার ফিজিকাল যন্ত্রপাতিই হলো হার্ডওয়্যার সেটা একটা নাট বল্টু থেকে মনিটর যাই হোক না কেন।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কত প্রকার?

সাধারণত কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলোর অবস্থান অনুযায়ী তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার (Internal Hardware)
  • এক্সটারনাল হার্ডওয়্যার (External Hardware) 

১. ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার (Internal Hardware)

কম্পিউটারের অভ্যন্তরে যে সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে, যেগুলো বাইরে থেকে দেখা যায় না সেগুলো হলো ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার। এসব যন্ত্রপাতি দেখার জন্য যন্ত্রপাতিগুলো খুলতে হয়। কম্পিউটারের কিছু অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার হচ্ছে–

  • CPU
  • POWER SUPPLY 
  • MOTHERBOARD 
  • GRAPHICS CARD
  • RAM
  • DRIVE ইত্যাদি। 

২. এক্সটারনাল হার্ডওয়্যার (External Hardware) 

কম্পিউটারের যে সকল যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে থেকে সহজে দেখা যায় ও স্পর্শ করা যায় সেগুলোকে বাহ্যিক কিংবা এক্সটারনাল হার্ডওয়্যার বলে। যেমন,

  • MONITOR 
  • MOUSE
  • SOUNDBOX
  • HEADPHONE
  • KEYBOARD 
  • PRINTER ইত্যাদি 

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কত প্রকার ও কী কী?

কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষেত্র অনুযায়ী কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে প্রধানত ৪টি শ্রেণিভাগে বিবেচনা করা হয়। 

  • ইনপুট ডিভাইস(Input Device) 
  • আউটপুট ডিভাইস (Output Device)
  • প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device)
  • স্টোরেজ ডিভাইস ( Storage Device)

১. ইনপুট ডিভাইস(Input Device) 

ইনপুট ডিভাইস
ইনপুট ডিভাইস

কম্পিউটারেরর ইনপুট ডিভাইস হলো সেসব ডিভাইস যেগুলো কম্পিউটারকে তথ্য প্রদানের কাজে ব্যবহৃত হয়। ডেটা বা ইনফরমেশন প্রদানের মাধ্যমে এগুলো কম্পিউটারের কাজে সহয়তা করে। কম্পিউটার তথ্যের নির্দেশনা পেলেই তবে প্রসেসিং এর আাধ্যমে আউটপুট প্রদান করে। কিছু উল্লেখযোগ্য ইনপুট ডিভাইস হচ্ছে, 

কী বোর্ড (KEYBOARD)

কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইসগুলোর মধ্যে সবার প্রথমে আসে কীবোর্ডের নাম। কীবোর্ডের মাধ্যমেই কম্পিউটারকে ইনপুট প্রদান করা হয়।

মাউস (MOUSE)

মাউস হলো কম্পিউটারকে নির্দেশনা প্রদানকারী একটা এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার যাকে পয়েন্টার বলেও সম্বোধন করা হয়। মাউসের সাহায্য লেফট/রাইট বাটনে ক্লিক করে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

ওয়েব ক্যাম (WEB CAM)

ওয়েব ক্যামেরা হলো ছোট একটি ভিডিও ক্যামেরা যার মাধ্যমে কম্পিউটার ছবি ভিডিও ইনপুট নিয়ে থাকে।

মাইক্রোফোন (MICROPHONE)

মাইক্রোফোন কম্পিউটারের একটি ইনপুট ডিভাইস যা সাউন্ড সিস্টেমে ডিজিটাল সাউন্ড কনভার্টার হিসেবে কাজ করে

জয়স্টিক (JOYSTICK)

কম্পিউটারে গেম খেলার ক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় ইনপুট ডিভাইস হলো জয়স্টিক। এছাড়াও বিভিন্নক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা। লাঠি বা কলমের মত দেখতে এই ডিভাই মাউসের মত পয়েন্টার হিসেবে কাজ করলেও মাউস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

স্ক্যানার (SCANNER)

স্ক্যানার এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে ছবি, টেক্সট,অথবা যেকোন লেখা হার্ডকপি থেকে ডিজিটাল ডকুমেন্ট আকারে কম্পিউটারে সেভ করে ব্যবহার করা যায়, প্রিন্ট নেয়া যায়।

২. আউটপুট ডিভাইস (Output Device)

কম্পিটারের নির্দেশিত ইনপুট প্রসেসিংয়ের করার পর আউটপুট প্রদান কিংবা আউটপুটের ফলাফল প্রদর্শনের জন্য যে ডিভাইসগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোই হচ্ছে আউটপুট ডিভাইস। কম্পিউটারের সকল কাজের ফলাফল প্রদর্শিত হয় আউটপুট ডিভাইসের দ্বারা। কিছু প্রধান আউটপুট ডিভাইস হচ্ছে

আউটপুট ডিভাইস
আউটপুট ডিভাইস

মনিটর (MONITOR)

মনিটর হচ্ছে কম্পিউটারের কাজের আউটপুট আমাদের চোখে দৃশ্যমান করার পর্দা।কম্পিউটার মনিটর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় আউটপুট ডিভাইস।

প্রজেক্টর (PROJECTOR)

প্রজেক্টের কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের একটি উল্লেখ্য আউটপুট ডিভাইস। সাধারণত ছোট স্ক্রিনের কার্যক্রম পর্দায় বড় আকারে দেখানোর জন্যই প্রজেক্টেরের ব্যবহার করা হয়।

প্রিন্টার (PRINTER)

প্রিন্টার হলো একধরনের আউটপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন, ডাটা,ইমেজ, টেক্সট কাগজের মাধ্যমে ছেপে সেগুলোর আউটপুট নিতে পারি

হেডফোন (HEADPHONE)

হেডফোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনাল সউন্ড সিস্টেমের এক্সটার্নাল আউটপুট পেয়ে থাকি।

স্পিকার (SPEAKER)

স্পিকার হচ্ছে একটি অত্যাধিক প্রয়োজনীয় আউটপুট ডিভাইস যার সাহায্যে কম্পিটারের সাউন্ড সিস্টেমের আউটপুট পেয়ে থাকে ব্যবহারকারী। এছাড়াও নানা ধরনের আউটপুট ডিভাইস রয়েছে।

৩. প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device)

প্রসেসিং ডিভাইস
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার

ইনপুট→প্রসেসিং→আউটপুট

এই হচ্ছে কম্পিউটারের কার্যপরিচালনা পদ্ধতি। নির্দেশিত ইনপুটগুলো প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আউটপুট প্রদর্শিত হয়।এই পক্রিয়াকরণের কাজটি করতে যে সকল হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে প্রসেসিং ডিভাইস বলে। কিছু বিশেষ প্রসেসিং ডিভাইস হলো,

মাদারবোর্ড (MOTHERBOACARD

মাদারবোর্ডকে কম্পিউটারের হৃদয় বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাদবাকি সব প্রসেসর এবং অন্যান্য উপাদান মাদারবোর্ডের সাথেই সংযুক্ত থাকে।

CPU (CENTRAL PROCESSING UNIT)

কেন্দ্রীয় পক্রিয়াকরণের কাজ করা হয় এখানে। ইনপুট গ্রহণের পর পক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আউটপুট প্রদান করে এই প্রসেসিং ডিভাইস।

মাইক্রোপ্রসেসর (MICROPROCESSOR)

মাইক্রোপ্রসেসরকে কম্পিউটারের “মস্তিষ্ক” বলা হয়। এটি এমন একটি সমন্বিত চিপ যা সমস্ত যৌক্তিক নির্দেশাবলী কার্যকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট প্রদর্শন করে থাকে।

ALU (ARITHMETIC LOGIC UNIT)

গাণিতিক সকল কাজ যথাযোগ্যভাবে এবং ত্রুটিমুক্তভাবে করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট।

GPU (GRAPHICS PROCESSING UNIT)

গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট এমনএকটি প্রসেসর যা ভালো মানের ভিডিও এবং ইমেজ রেন্ড করার জন্য ডিজাইন করে তৈরি করা হয়েছে।

নেটওয়ার্ক কার্ড৷ (NETWORK CARD)

এক বা একাধিক কম্পিউটারকে একই নেটওয়ার্কের আওয়াতাধীন বা সংযোগ করতে এই প্রসেসিং ডিভাইস ব্যবহার করা হRAM

৪. স্টোরেজ ডিভাইস ( Storage Device)

স্টোরেজ ডিভাইস
স্টোরেজ ডিভাইস

ইনপুট দেওয়ার পর প্রসেসিং এর মাধ্যমে আউটপুট প্রকাশিত হলে এবার আসে সে নির্দিষ্ট ফাইল বা কাজ জমা কিংবা সেভ করার প্রক্রিয়া আর এই কাজটিই করে থাকে স্টোরেজ ডিভাইস। কম্পিউটারের যে সকল হার্ডওয়্যার ডেটা, ইনফরমেশন এবং আউটপুট

স্টোর করে অর্থাৎ সাময়িকভাবে ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলোই মূলত স্টোরেজ ডিভাইস। স্টোরেজ ডিভাইস হচ্ছে —

RAM

Random Access Memory এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো RAM.এটি হলো সাময়িক বা অস্থায়ী স্টোরেজ যা কম্পিউটার বন্ধ করার সাথেই মুছে যয়।

রম (ROM)

ROM এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Read Only MemoryMemory। এটি কম্পিউটারের একটি সৃথায়ী স্টোরেজ ডিভাইস।এটি অনিচ্ছা সত্ত্বে কখনো মুছে যায় না।

হার্ডডিস্ক (HARD DISK)

কম্পিউটারের প্রচুর পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক মেমোরি হিসেবে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা হয়।

ফ্লপি ডিস্ক (FLOPPY DISK)

ফ্লপি ডিস্ক হচ্ছে একটি সহায়ক মেমোরি যেখানে বাড়তি স্টোরেজ হিসেবে তথ্য স্টোর করা হয়।

সিডি (CD)

CD এর মিনিং হলো কপ্যাক্ট ডিস্ক (Compact Disk) একসময় হার্ডডিস্ক, ফ্লপিডিস্ক আরো অন্যান্য ধরনের মেমোরি ছিল না সেই সময়ে এই ধরনের কমপ্যাক্ট ডিস্ক ব্যবহার করা হতো।বর্তমানে এই মেমোরির ব্যবহার প্রায় কম বললেই চলে।

ডিভিডি (DVD)

DVD এর পূর্ণরূপ হলো ডিজিটাল ভার্সেটাইল ডিস্ক (Digital Versatile Disk)। ডিভিডি দেখতে অনেকটা সিডি এর মতই। 

হার্ডওয়্যারগুলোর কাজ

কম্পিউটারের এই হার্ডওয়্যারগুলো দ্বারাই কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজের নির্দেশ প্রদান করা হয়।কম্পিউটারের সব কাজ সম্পাদন হয় সফটওয়্যারকে হার্ডওয়্যার দ্বারা নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে। হার্ডওয়্যার দিয়ে উল্লেখযোগ্য যে কাজগুলো করা হয়—

  • কম্পিউটারের সফটওয়্যারকে নির্দেশ দেয়া।কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার 
  • ডেটা ও তথ্য প্রকিয়াকরণের জন্য ইনপুট দেয়া।
  • গৃহীত ডেটা নিয়ে নিয়ে নির্দশনা মোতাবেক প্রসেসিং এর কাজ করা।
  • প্রসেসিং শেষে আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন করা।
  • প্রদর্শিত ফলাফল ও কাজ স্টোরেজ ডিভাইসে সংরক্ষণ করা।

উপসংহার

উপরিউক্ত আর্টিকেল থেকে আমরা জানালাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে। হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যা দ্বারা সফটওয়্যারকে নির্দেশনা প্রদান করে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয়।

হার্ডওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার একেবারেই বিকল। হ্যার্ডওয়্যারগুলোর মাধ্যমে তথ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রেরণের মাধ্যমে কম্পিউটার তার সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকে। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমার হার্ডওয়্যার কী, এর কাজ, এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলাম। আশাকরি সবার ভালো লেগেছে লেখাটি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.