নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় | Muhammed Juwel Ahmed


ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস। এটি আমাদের শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনে খুবই দরকারি। শিক্ষা জীবনে বিভিন্ন পেপার ওয়ার্ক বা প্রেজেন্টেশন স্লাইডস বানানোর জন্য ল্যাপটপ ইউজ করা হয় এমন কি, অফিশিয়াল কাজে ও ল্যাপটপ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই একটি ভাল ব্র্যান্ড যাচাই করে নিতে হবে, তা না হলে খারাপ ডিভাইস আপনাকে বিভিন্ন ভাবে ঝামেলায় ফেলবে। যার প্রভাব আপনার শিক্ষা জীবনে নতুবা কর্ম জীবনে পড়বে। এতে আপনার পারফর্মেন্সও প্রভাবিত হবে।

তবে একটি ভালো ল্যাপটপ কেনাই শেষ কথা নয়, একটি ল্যাপটপ কেনার পর আপনার দায়িত্ব আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে, নতুন ল্যাপটপ কেনার পর কিভাবে তার পরিচর্যা করতে হয় সেই বিষয়গুলো আপনাকে ভাল মত জেনে নিতে হবে। আজকের এই লিখাটি মুলত আপনাকে নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কি কি সে বিষয়ে জানাবে।

নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার উপায়

আপনি যখন কোন শো রুম থেকে ল্যাপটপ কিনবেন, প্রথমেই ল্যাপটপের প্যাকেটে যে নির্দেশাবলীর কাগজ তা পড়ে দেখতে হবে। কীভাবে ল্যাপটপের যত্ন নিতে হয়। সেখানে চার্জ দেওয়ার ব্যাপারে ও নির্দেশনা দেওয়া থাকে। সেটি ভালো মত পড়তে হবে। নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কি এর অনেক কিছু এই কাগজে পেয়ে যাবেন।

নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়
নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়
  • নতুন ল্যাপটপ কেনার পর, চার্জ দেওয়ার আগে, চেক করে নিবেন, ল্যাপটপে কতটুকু চার্জ আছে। সেই চার্জ টুকু শেষ করে তারপর ব্যাটারি চার্জ দিতে হবে, এই বিষয় টিকে বলা হয় ব্যাটারি ড্রেইন আউট করে নেওয়া। ব্যাটারি ড্রেইন আউট করে তারপর চার্জ দিতে হবে।
  • ল্যাপটপ চার্জের একটি ফিলোসফি আছে, সেটি অনুসরণ করতে হবে। এই ফিলোসফিটি হল, ব্যাটারি চার্জ করা। চার্জ হয়ে গেলে সাথে সাথে আনপ্লাগ করা। তারপর ল্যাপটপ চালু করে কাজ করা।
  • কখনও ব্যাটারি ওভারচার্জড করা যাবেনা, মানে ব্যাটারি ১০০% চার্জ হয়ে গেলে সাথে সাথে আনপ্লাগ করে ফেলতে হবে। ল্যাপটপ ওভারহিট হয়ে গেলে, তা ইউজ করা খুব ই রিস্কি, তাছাড়া এই ব্যাপারটি যদি ঠিক মত লক্ষ করা না হয়। ল্যাপটপ আস্তে আস্তে তার কার্যক্ষমতা হারায়।
  • চার্জরত অবস্থায় কখন ল্যাপটপে কাজ করা যাবেনা, সে যত জরুরী কাজ ই হোক না কেন, প্লাগ ইন থাকা অবস্থায় যদি অনবরত ল্যাপটপ অন রেখে কাজ করা হয়, তাহলে ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এক জন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায়ই ল্যাপটপ প্লাগ ইন রেখে কাজ করত, এতে মাত্র ৮ মাস পরই ল্যাপটপ স্লো হয়ে যায়, একদিন সেটা ওভার হিট হয়ে অফ হয়ে যায়, তারপর তাকে সার্ভিসিং করাতে নিতে হয়, এতে তার ৭ দিনের কাজের ক্ষতি হয়েছিল। সুতরাং এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
  • তবে, আজকাল কিছু ল্যাপটপে আপনি চার্জরত অবস্থায় কাজ করতে পারেন। যেমন, আপনি দিনে ৮ ঘণ্টা ল্যাপটপে কাজ করেন, এর মধ্যে ৫ ঘণ্টা আপনি চার্জে রেখে কাজ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই ল্যাপটপ গরম হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ল্যাপটপ অত্যধিক গরম হয়ে গেলে কুলার ইউজ করতে হবে।
  • কখনো নরম কিছু যেমন, বিছানা বা সোফার ফোমের উপর ল্যাপটপ চালানো বা চার্জ দেওয়া যাবেনা। টেবিল না হয় শক্ত কিছুর উপর ল্যাপটপ রাখতে হবে, যদি শক্ত কিছু না থাকে তাহলে অন্তত কোন বই বা খাতার উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করতে হবে।
  • অতিরিক্ত গরম জায়গায় ল্যাপটপ ইউজ করা যাবেনা, যেমনঃ অনেক রোদের মধ্যে বা ওয়ার্ক শপে ল্যাপটপ ইউজ করা যাবেনা।
  • যখন ল্যাপটপে কাজ থাকবেনা তা একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।
  • Window control panel – এ গিয়ে power saver mode on রাখলে, ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জ খাওয়া থেকে রক্ষা পায়।

নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়

এই গুলো গেলো, নতুন ল্যাপটপের ব্যাটারি সুরক্ষা নিয়ে কিছু কথা। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক, নতুন ল্যাপটপ কেনার পর আপনি কি কি করবেন?

নতুন ল্যাপটপ কেনা মানে হল, আপনি নিজেকে আপগ্রেড করেছেন। ছোট কিছু কাজ আর একটু খানি সময় আপনার এই আপগ্রেডিং কে আরও বেশি সুরক্ষিত করতে পারে। ল্যাপটপ কেনারনতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কিছু কাজ করতে হয়, যেমনঃ

১. ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা

নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় হল ল্যাপটপ ওপেন করার পরই আপনি আপনার wifi এর password দিয়ে ল্যাপটপে নেট সংযোগ করিয়ে নিবেন। এতে করে আপনার ল্যাপটপের ড্রাইভার ও অনান্য সফটওয়্যারে আপডেট হয়ে যাবে।

২. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করা

ল্যাপটপ কেনার পর সেটিংসে গিয়ে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে নিতে হবে। এতে করে আপনি লেটেস্ট ফিচার গুলোর এক্সেস পাবেন এবং উপরন্তু আপনার সিস্টেম কে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।

৩. ব্লটওয়্যার অপসারণ করা

ব্লটওয়্যার মানে হল অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যা সিস্টেম আপগ্রেডের সময় দেখা যায়। এইগুলো অযথা আপনার ডিস্কের স্পেস দখল করে। এইগুলো দেখালে রিমুভ তথা আন্সটল অপশনে প্রেস করতে হবে। 

৪. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার

Windows-10 আপনাকে ডিফেন্ডার সফটওয়্যার এমনিতেই অফার করে, তবে আপনি এক্সট্রা প্রটেকশনের জন্য ব্রাউজার থেকে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিতে পারেন।

Mac or linux মেশিন এক্সট্রা ভাবে এন্টিভাইরাস বা ডিফেন্ডার অফার করেনা। সেক্ষেত্রে আপনাকে আলাদাভাবে ক্রোম থেকে এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিতে হবে।

৫. এন্টি থেফট টুলস কনফিগার করা

নতুন ল্যাপটপ কিনলে একটা ভয় আস্তে আস্তে কাজ করে যে এই বুঝি ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায়। এই টেনশন হয় তো সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব না। তবে কিছুটা নিশ্চিন্ত আপনাকে করতে পারে।

নতুন ল্যাপটপ কেনা
নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়

আপনার নতুন ল্যাপটপের সেটিংসের update and security অপশনে find my device বলে একটি অপশন আছে, সেটি অন করুন, এটিকেই এন্টি থেফট টুল বলে। এতে করে যদি কখনো আপনার ল্যাপটপ চুরি যায় তাহলে আপনি সেটির লোকেশন ট্রেস করতে পারবেন। তবে সবচেয়ে ভাল সাজেশন এই যে আপনি আপনার ল্যাপটপ টিকে খুব সাবধানে রাখবেন।

৬. পাওয়ার সেভার অন করা

এটাকে নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কাজ বলা যাবে না। তবে, এটি একটু আগেই বলা হয়েছে যে power saver mode অন রাখলে ব্যাটারি অযথা চার্জ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। এছাড়া brightness ও কমিয়ে রাখা যায়।

৭. Automated Backup কনফিগার করা

আপনার ল্যাপটপ যতদিন যাবে তা পুরনো হবে এবং তাতে জমাকৃত ফাইলের সংখ্যা ও বাড়বে। এই বিষয়টি বিবেচনা করে ল্যাপটপ কেনার পরেই automated backup অপশন টি কনফিগার করে রাখতে হবে। যাতে কোন কারণে দুর্ঘটনা বশত ল্যাপটপ সার্ভিসিং করানো লাগলে ও পরবর্তীতে আপনি আপনার দরকারি ফাইল্গুলি পুন্রুদ্ধার করতে পারেন।

একটি সত্যি ঘটনা ই বলি, আমি যখন অনার্সের ২য় বর্ষে ছিলাম তখন আমার ল্যাপটপ সার্ভিসিং করতে দিয়েছিলাম প্রায় ১ মাস ছিল সেখানে, automated back up configuration এর জন্য আমি আমার ফাইলগুলো ফিরে পেয়েছিলাম নাহলে বিগত ১ মাসের ফাইল আবার সংগ্রহ করা আমার জন্য ঝামেলার হয়ে যেত।

৮. Cloud storage syncing করা

ফাইল এক্সেস করার আরেকটি উপায় হতে পারে cloud storage set up or syncing করা, তাহলে আপনি যেকোনো ডিভাইস থেকে যেকোনো সময় যেকোনো ফাইল এক্সেস করতে পারবেন।

৯. সিস্টেম কাস্টমাইজ করা

এখন সময় হল আপনি কিভাবে আপনার নতুন প্রিয় ল্যাপটপ টিকে সাজাবেন। এইজন্য আপনার ল্যাপটপের সিস্টেম টিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাস্টমাইজ করতে পারেন, আপনি আপনার ডেস্কটপে পছন্দ মত ছবি সেট করতে পারেন, থিম, টাস্কবার লেআউট, ব্যাক সেভার, এই গুলো মন মত সেট করতে পারেন।

১০. পছন্দ মত অ্যাপ ইনস্টল করা

এই সব কাজগুলো করার পর আপনি এখন চাইলে আপনার প্রয়োজনীয় বা পছন্দ মত অ্যাপ নামাতে পারেন। অনেকেই আছে বাংলা টাইপিং এর জন্য অ্যাপ নামান, অনেকে পোষ্টার বানানোর অ্যাপ নামান, অনেকেই ভিডিও এডিট করার অ্যাপ ও নামান। এই রকম বিভিন্ন দরকারি অ্যাপ আপনি নামাতে পারেন। 

তবে সাথে সাথে ল্যাপটপের ভিতরের বিষয়ে ও সতর্ক হতে হবে, যাতে আপনি আপনার প্রিয় ল্যাপটপ দিয়ে শান্তিমত কাজ করতে পারেন, এবং হয়ে উঠতে পারেন আপনার জীবনে সফল এবং উৎফুল্ল।

এইজন্য আপনাকে ল্যাপটপের সঠিক যত্ন করতে হবে, storage এর উপর প্রেশার কমাতে হবে, অপ্রয়োজনীয় ফাইল রিমুভ করতে হবে। চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ ইউজ করা যাবেনা। সব চেয়ে ভাল হয় ল্যাপটপের চার্জ পরোপুরি শেষ হওয়ার আগে ৫% বাকি থাকতেই চার্জ দেওয়া, তাহলে কাজের ছন্দ ঠিক থাকে।

এছাড়া আপনার ল্যাপটপ টিকে ধুলাবালি থেকে সাবধানে রাখতে হবে, একদম ই ধুলাবালি ঢুকতে দেওয়া যাবেনা, আপনি একটি নির্দিষ্ট কাপোড় রাখতে পারেন শুধু মাত্র আপনার ল্যাপটপ টিকে পরিষ্কার করার জন্য।

আরেক টা বিষয় হল ল্যাপটপ কেনার আগে ল্যাপটপের ডাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে রাখবেন, তা না হলে আপনি ঠকতে পারেন, আর অবশ্যই ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখবেন। আশা করি এতে করে আপনি আপনার পছন্দসই ল্যাপটপ কিনে জিতবেন।

শেষ কথা

আশা করি উপরিক্ত তথ্য গুলোর মাধ্যমে পাঠকেরা উপকৃত হবেন এবং বুঝতে পারবেন নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কি। ল্যাপটপ আসলে খুবই দরকারি একিসাথে খুব শখের জিনিস ও বলা যায়।

অনেকেই আছেন তাদের ল্যাপটপের বেকে খুব সুন্দর স্টিকার লাগান বা কভার লাগান। অনেকে খুব সুন্দর সুন্দর ওয়ালপেপার সেট করেন যা এক কথায় মন ভরিয়ে দেয়। এই সমস্ত জিনিস অনেক সময় মানুষের রুচিশীলতার পরিচয় ও বহন করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.