কম্পিউটারের ইতিহাস কি ? (history of computer in Bangla) Muhammed Juwel Ahmed |


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো “কম্পিউটারের ইতিহাস এর বিষয়ে” (computer history in Bangla).

আজ একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা নানান ধরণের কাজ করে নিতে পারি। যেমন, game খেলা, internet ব্যবহার করা, গান শুনা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি নানান ধরণের কাজ করতে পারি।

কিন্তু যদি পুরোনো সময়ের প্রাচীন কম্পিউটার গুলোর কথা বলা হয়, তাহলে সেগুলো কেবল কিছু সাধারণ কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হতো।

Gaming বা entertainment এর জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার করাটা সেই সময় কোনোভাবেই সম্ভব ছিলোনা।

কেবল সাধারণ যোগ বিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো আগেকার সময়ের কম্পিউটার গুলো।

তবে বর্তমানে, space research lab হোক বা আপনার কর্মস্থান (office), সবখানেই নানান কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই কম্পিউটার

কম্পিউটার ছাড়া কোনো কাজ এখনের সময়ে করা সম্ভব না।

আর তাই, এমন একটি জনপ্রিয় ডিভাইস এর ইতিহাস এর বিষয়ে জেনে রাখাটা আপনার জন্য জরুরি।

প্রথম কম্পিউটার কখন শুরু করা হয়েছিল এবং সময়ে সময়ে এর মধ্যে নিয়ে আশা গুরুত্বপূর্ণ সুধার গুলো কি কি, এই প্রত্যেক বিষয়ে আমরা আজকে জানবো।

আমি আশা করছি,

কম্পিউটার এর ইতিহাস নিয়ে লিখা আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের ভালো লাগবে।

কম্পিউটারের ইতিহাস (history of computer in Bengali)

প্রায় ২০০০ বছর আগেরই কম্পিউটারের আবিষ্কার হয়েছিল।

তবে, সেই প্রথম সময়ে কম্পিউটারের আরম্ভ করা হয়েছিল “এবাকাস (abacus)” এর রূপে।

কিন্তু, abacus কেবল সাধারণ পাটিগণিত (arithmetic) কাজ গুলো করতে পারতো।

Abacus একটি গণনা বা ক্যালকুলেশন করার সাধন ছিল।

এই সাধন একটি সাধারণ কাঠের মধ্যে কিছু তার লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

আর তাই, abacus কোনো ভাবেই একটি ডিজিটাল কম্পিউটার (digital computer) ছিলোনা।


চলুন নিচে প্রত্যেক ধরণের প্রাচীন কম্পিউটার গুলোর বিষয়ে এক এক করে জেনেনেই।

Abacus – ৩০০০ বছর আগে 

আমি আগেই বলেছি যে, এই ক্ষেত্রে সব থেকে পুরোনো calculating device হলো “abacus”.

Abacus কে counting frame বলেও বলা হয়।

কারণ, এটা একটি frame এর মতো দেখতে যেটাকে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়।

বর্তমানেও এই device কিছু কিছু জায়গায় অন্ধ ব্যক্তিদের গণনা শেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

প্রায় 1300 BC তে, চীন দেশে এবাকাস আবিষ্কার করা হয়।

সেই সময়ের অনেক জনপ্রিয় ও প্রচলিত calculating device ছিল এই abacus.

Antikythera mechanism – ২০০০ বছর আগে 

Antikythera এমন এক ধরণের calculating device ছিল যেটাকে প্রাচীন কালে চন্দ্র গ্রহণ এবং সূর্য গ্রহণ গণনা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো।

এই এনটিকাইথেরিয়া প্রায় ২০০০ বছর পুরোনো ডিভাইস।

প্যাস্কেলাইন (Pascaline) – 1642

এবাকাস (abacus) এর পর নির্মাণ করা হলো “Pascaline” এর যেটাকে গণিতের বিশেষজ্ঞ “Blaise Pascale” দ্বারা ১৬৪২ সালে তৈরি করা হয়েছিল।

Abacus এর তুলনায় প্যাস্কেলাইন অধুক দ্রুত ভাবে গণনা করতে পারতো। 

এবং, Pascaline হলো প্রথম mechanical calculator.

এই machine টিকে adding machine বলেও বলা হতো।

ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine) – 1822

এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন বানানো হয়েছিল “Charles Babbage” দ্বারা যিনি ছিলেন একজন mechanical engineer.

Charles Babbage দ্বারা এমন এক যন্ত্র তৈরি করা হলো, যেটা একেবারে সঠিক ও স্পষ্ট ভাবে গণনা করতে সক্ষম হলো।

ডিফারেন্স ইঞ্জিন এর আবিষ্কার ১৮২২ সালে করা হয়েছিল।

এই উন্নত যন্ত্রটিতে প্রোগ্রাম গুলোকে স্টোর করার জন্য punch card ব্যবহার করা হতো।

কম্পিউটারটি ভাপের দ্বারা চলতো।

ডিফারেন্স ইঞ্জিন এর আঁধারের ওপরেই বর্তমানের আধুনিক কম্পিউটার ডিভাইস গুলোকে তৈরি করা হচ্ছে।

আর তাই, “Charles Babbage” কে কম্পিউটারের জনক (father of computer) বলা হয়। 

Zuse-Z3 – 1941

Z3 ছিল একটি “German electromechanical computer” যেটাকে ডিজাইন করা হয়েছিল Konrad Zuse এর দ্বারা। 

এই কম্পিউটারটি ছিল বিশ্বের সর্বপ্রথম অটোমেটিক ডিজিটাল কম্পিউটার যেটাকে প্রোগ্রাম করা সম্ভব ছিল।

Z3 কম্পিউটার ব্যবহার করা হতো “aerodynamic calculations” গুলো করার জন্য।

ENIAC – 1946

ENIAC কম্পিউটার এর সম্পূর্ণরূপ হলো “Electronic Numerical Integrator and Computer”.

এটা ছিল সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার যেটাকে সাধারণ কাম কাজের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে অনেক জটিল numerical problem গুলোর সমাধান এই কম্পিউটারের দ্বারা করতে পারা যেতো।

ENIAC কম্পিউটার Decimal Arithmetic system এর ওপরে কাজ করতো এবং ভবিষ্যতে এই কম্পিউটার আধুনিক কম্পিউটার হিসেবে বিকশিত হলো।

Manchester Baby – 1948

Manchester Baby বা Small-Scale Experimental Machine ছিল সর্বপ্রথম electronic stored-program কম্পিউটার যেটাকে “University of Manchester” এ বানানো হয়েছিল।

1948 সালের 21 June তারিখে এই কম্পিউটারে প্রথম প্রোগ্রাম চালানো হয়েছিল।

এই কম্পিউটারের ডাক নাম রাখা হয়েছিল “baby”.

কম্পিউটারটি তৈরি করা হয়েছিল Frederic C. Williams, Tom Kilburn এবং Geoff Tootill এর দ্বারা।

কম্পিউটারের বিকাশের সম্পূর্ন ইতিহাস

এখন আমরা জেনেনিব সময়ে সময়ে কিভাবে কম্পিউটারের বিকাশ হতে থাকলো এবং কম্পিউটারের ইতিহাসে কি কি নতুন পরিবর্তন আসলো।

  • ১৬২৩: এই সময় জার্মান গণিতজ্ঞ উইলহেম শিকার্ড দ্বারা প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর এর বিকাশ করা হলো।
  • ১৬৪২: Blaise Pascale দ্বারা যোগ ও বিয়োগ করার mechanical calculator এর আবিষ্কার করলেন।
  • ১৮৩৩-৭১: ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক Charles Babbage দ্বারা analytical engine এর নির্মাণ করা হলো।
  • ১৯৪১: জার্মান ইঞ্জিনিয়ার “Konrad Zuse” এর দ্বারা Z3 ডিজিটাল কম্পিউটার এর আবিষ্কার করলেন। এই কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
  • ১৯৪৩: ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক দের দ্বারা “colossus” নামের ইলেকট্রনিক কম্পিউটার নির্মাণ করা হলো।
  • ১৯৪৪: আইবিএম এবং হার্ডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দ্বারা প্রথম large scale, automatic digital computer “Mark-1” এর নির্মাণ করলেন। এই কম্পিউটার “Tommy Flowers” নামের ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল।
  • ১৯৪৬: এই সময় ENIAC নামের ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার আবিষ্কার করা হলো।
  • ১৯৫১: এই সময় UNIVAC নামের electronic digital computer আবিষ্কার করা হলো যেটাকে business applications গুলোর ক্ষেত্রে তৈরি করা হয়েছিল। এই কম্পিউটারটিকে প্রথম commercial computer বলেও বলা হয়।
  • ১৯৬৯-৭১: এখন UNIX অপারেটিং সিস্টেম এর বিকাশ করা হলো।
  • ১৯৭১: ইন্টেল (Intel) এর দ্বারা প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (microprocessor) “4004” এর বিকাশ করা হলো।
  • ১৯৭৫: ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রথম “personal computer” “MITS Altair 8800” বাজারে নিয়ে আসা হলো।
  • ১৯৭৬: পার্সোনাল কম্পিউটারের জন্য “electric pencil” এর নির্মাণ করা হলো।
  • ১৯৭৭: এই সময় অনেক জনপ্রিয় কোম্পানি “Apple” এর দ্বারা “Apple-II” বাজারে নিয়ে আসা হলো।
  • ১৯৮১: এই সময় IDM দ্বারা personal computer বাজারে নিয়ে আসা হলো যেখানে Microsoft এর DOS (Disk Operating System) এর ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • ১৯৮৪: বর্তমানের অনেক জনপ্রিয় কম্পিউটার “Apple” দ্বারা প্রথম “Macintosh” বাজারে নিয়ে আসা হলো। এটা প্রথম কম্পিউটার ছিল যেখানে GUI এবং mouse এর সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
  • ১৯৯০: মাইক্রোসফট এর দ্বারা প্রথম graphical user interface version “Windows 3.0” বাজারে নিয়ে আসা হলো।
  • ১৯৯১: পার্সোনাল কম্পিউটার গুলোর জন্য “Open source operating system” “Linux” এর আবিষ্কার করা হলো।
  • ১৯৯৬: হাথে ধরে ব্যবহার করতে পারা কম্পিউটার “PalmPilot” বাজারে আনা হলো।
  • ২০০১: Apple এর দ্বারা Macintosh এর জন্য “Mac OS X” বাজারে আনা হলো।
  • ২০০৫: Apple তার Macintosh computer গুলোতে intel এর microprocessor এর ব্যবহার করার ঘোষণা করলো।

এবং এভাবেই, সময়ে সময়ে নতুন প্রযুক্তির ফলে কম্পিউটারের বিকাশ হতেই থাকলো।

বর্তমান সময়ে, প্রচুর আধুনিক এবং সাংঘাতিক কার্যক্ষমতা থাকা পার্সোনাল কম্পিউটার কম্পিউটার গুলো রয়েছে।

Microprocessor এর ব্যবহার হওয়ার ফলে একটি কম্পিউটার অসংখক কাজ প্রচুর দ্রুত ভাবে করে নিতে পারে।

তাছাড়া, বর্তমানে একাধিক কোর (multicore) থাকা (CPU processor) গুলোর ব্যবহার করার ফলে একটি আধুনিক কম্পিউটার এর ক্ষমতা হাজার গুন বেড়ে গেছে।

 

আমাদের শেষ কথা,

তাহলে বন্ধুরা, কম্পিউটার এর ইতিহাস (computer history in Bengali) নিয়ে লিখা আজকের এই আর্টিকেলটি হয়তো আপনাদের ভালোই লেগেছে।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা প্রচুর প্রশ্নের উত্তর অবশই পেয়ে গেছেন হয়তো।

যেমন, প্রথম আধুনিক কম্পিউটার কোনটা ছিল ? কম্পিউটারের জনক কে ? প্রথম কম্পিউটার কোনটা ছিল ইত্যাদি।

আমার সব সময় এটাই চেষ্টা থাকে, যাতে আমি আপনাদের সম্পূর্ণ সঠিক এবং কাজের তথ্য প্রদান করতে পারি।

তাই, কম্পিউটারের ইতিহাস (computer history) নিয়ে লিখা আজকের এই আর্টিকেল নিয়ে কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

তাছাড়া, আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার অবশই করবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.