নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়, কৌশল এবং টিপস বাংলাতে | Muhammed Juwel Ahmed

আপনারা যদি নিজেকে পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন, তাহলে এই আর্টিকেল আপনার সাহায্য করবে। কেননা, এখানে আমরা নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় (Self improvement tips in Bengali) গুলোর বিষয়ে জানতে পারবো যেগুলো সত্যি কার্যকর।

নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়
Self improvement tips in Bengali.

আমরা তখন নিজের মধ্যে পরিবর্তন করার কথা ভেবে থাকি যখন আমাদের মনে হয় আমাদের জীবনে কিছু ঠিক নয় বা আমরা নানারকম সমস্যায় ঘিরে থাকি। তবে, এরকম শুধু আপনার সাথেই হয় না প্রত্যেকটি ব্যক্তির সাথে হয়ে থাকে।

বন্ধুরা পরিবর্তন হলো জীবনের এক নিয়ম যেমন প্রকৃতি বিভিন্ন ঋতুতে সময়ের সাথে সাথে নিজের রূপ পরিবর্তন করে ঠিক তেমন ভাবেই আমাদের নিজের জীবনেও পরিবর্তন এনে সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যাওয়া দরকার। 

আপনি যদি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনাকে নিজের জীবনে নতুন নিয়ম বানাতে হবে এবং নতুন নতুন অভ্যাসের পালন করতে হবে।

তাই নিজের জীবন পরিবর্তন করার সব থেকে সহজ উপায় হলো, প্রথমে আপনার নিজেকে পরিবর্তন হতে হবে।

কেননা, আমরা সবসময় বাইরের দিকটি পরিবর্তন করার কথা চিন্তা করে থাকি।

কিন্তু নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ভেতর কে পরিবর্তন করা দরকার।

নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় এবং টিপস

আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো নিজের মধ্যে কি কি পরিবর্তন করা দরকার এবং কিভাবে সেগুলোকে নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবেন।


তাহলে চলুন বন্ধুরা নিচে দেওয়া প্রত্যেকটি উপায় বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।

১. প্রতি দিনের লক্ষ্য নির্ধারিত করুন

অলসতাই আমাদের সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই এই অলসতা কাটানোর জন্য আপনাকে পুরো দিন কিছু না কিছু productive work অবশই করতে হবে। 

এক্ষেত্রে, আপনি পুরো দিনে কি কি কাজ করবেন তার একটি তালিকা বানাতে হবে।

এর দ্বারা আপনি নিজেকে অনুশাসনে রাখতে পারবেন এবং কোন কাজ কখন করতে হবে সেই ধারণা আপনার মাথায় থাকবে। 

তাই, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সঠিক সময় নির্ধারিত করুন কোন কোন সময়ে কি কি কাজ করতে হবে।

এধরণের প্রতিদিনের অভ্যাসই আপনাকে সময়ের সাথে চলতে শিখিয়ে দিবে।

২. সিদ্ধান্ত নিন নিজের মধ্যে কি কি পরিবর্তন করা দরকার

যদি আপনার মনে হয় আপনি অনেক সময় ধরে নিজেকে বদলাতে পারেননি বা আপনার কোনো জায়গায় উন্নতি হয়নি তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার জীবন এক জায়গাতেই স্থির হয়ে রয়েছে।

তাই আপনাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে আপনি নিজেকে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করতে পারেন।

তাই সবথেকে প্রথমে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি নিজের মধ্যে কি কি পরিবর্তন করতে চান।

যেমন সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা বা রাতে দেরি করে ঘুমানো, অলসতা, যেকোনো কথা ধ্যান দিয়ে না শুনা, কাজে মনোযোগ না দেওয়া, কিছু নতুন না শেখা, বই না পড়া, বেশি কথা বলার অভ্যাস এবং সময়ের মাহত্ব না বোঝা।

তাই যদি আপনি এধরণের অভ্যাস গুলো বদলাতে চান তাহলে আপনাকে একটি নোটপ্যাড (notepad) এ নিজের খারাপ অভ্যাস গুলো এক এক করে লিখতে হবে যেগুলোর জন্য আপনি নিজের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারছেননা। 

প্রত্যেকটি বিষয়ে লেখার পর এগুলোর উপর মনোযোগ দিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টা করুন। 

মনে রাখবেন, অসুখের কারণ জানা থাকলে সেই অসুখের সঠিক ওষুধ খেয়ে ঠিক হওয়া সম্ভব।

ঠিক এভাবেই, জীবন যদি সঠিক পথে বা সঠিক ভাবে চলছেনা, তাহলে সেটার কারণ জানা থাকলে অনেক সহজেই সেটার ওপরে কাজ করে নিজের জীবন পরিবর্তন করতে পারবেন।

৩. শরীরকে সুস্থ রাখুন

যদি আপনার মনে হয় আপনি বেশি সময় রাগে বা দুখী হয়ে থাকেন তাহলে হতে পারে আপনার শরীর সুস্থ নয়।

আমার বলার তাৎপর্য হলো আপনার আহার সঠিক হচ্ছেনা।

কারণ আমরা যেরকম খাবার খাই তার প্রভাব আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কে পরে থাকে। 

তাই আপনি বুঝতেই পারছেন যে শরীরকে সুস্থ রাখা কতটা জরুরি।

শরীরকে স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খান যেমন ফল, সবুজ সাক সব্জি, ফলের জুস এবং যথেষ্ট পরিমাণে জল খেতে হবে।

আপনি যদি ফাস্ট ফুড ইত্যাদি বাইরের খাবার অনেক খেয়ে থাকেন তাহলে এগুলো কমানোর চেষ্টা করুন।

সাথে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোনোর অভ্যেস আপনাকে নিজের মধ্যে নিয়ে আসতেই হবে।

রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল দেখার অভ্যাস অনেক খারাপ যার ফলে দিনের ভাগে আপনার প্রচুর অলস লেগে থাকে এবং কিছু কাজ করতে মন হয়না।

তাই, নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হলে আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতেই হবে।

৪. নিজেকে পরিবর্তন করুন

আপনি যেকোনো ব্যক্তিকে দেখে বলতে পারবেন সে নিজের জীবন নিয়ে গম্ভীর আছে কি নেই।

এখন আপনি ভাবছেন এটি কি করে সম্ভব ?

যখন আমরা অন্য ব্যক্তির সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে থাকি তখন সবথেকে আগে আমরা তার বাইরের সৌন্দর্য দেখেই আধা আইডিয়া করে ফেলি ব্যক্তিটি কিরকম।

যদি ব্যক্তিটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, চেহেরায় চমক থাকে এবং সম্পূর্ণ মনোভাব নিয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তিটি নিজের জীবন নিয়ে অনেক গম্ভীর।

তাই এধরণের ব্যক্তিদের আমরা বলতে পারি সময়ের সাথে চলা ব্যক্তি।

তাই বন্ধুরা নিজের বাইরের সৌন্দর্য্যের প্রতিও ধ্যান দেওয়া জরুরি।

৫. নিজের উন্নতির প্রতি ধ্যান দিন

জীবনে আগে বাড়তে হলে নিজের উন্নতির কথা ভাবুন।


যখন আপনি নিজের self improvement নিয়ে চিন্তা করে থাকেন তখন আপনার আগের তুলনায় আরো বেশি উন্নতি হয়ে থাকি।


নিজের কমি বা কমজরি গুলোর উপর সবসময় ধ্যান দিতে হয় এবং চেষ্টা করতে হয় যাতে এগুলো তারাতারি দূর করা যায়।


যখন আপনি নিজের কমিগুলো দূর করা শুরু করবেন তখন আপনার জীবন পরিবর্তন হতে শুরু করবে এবং আপনি নিজের মধ্যে অনেক নতুন নতুন পরিবর্তন দেখতে পারবেন। 


এর সাথে ভালো অভ্যাসগুলোও নিজের জীবনে যুক্ত করতে থাকুন।

৬. নিজের দৃষ্টিকোণ বদলান সব বদলে যাবে

আপনার সাথে কোনো ঘটনা ঘটলে আপনি সেই পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার দৃষ্টিকোন ঠিক করবে।

যদি আপনার দৃষ্টিকোন সঠিক থাকে তাহলে আপনি সেই স্থিতিতে সঠিকভাবে সবটা দেখবেন ও বুঝবেন এবং আপনার দৃষ্টিকোন যদি সঠিক না হয় তাহলে আপনি সেই পরিস্থির নকরাত্মক প্রভাবটি দেখতে পাবেন।

তাই আপনার চেষ্টা করতে হবে যাতে আপনার দৃষ্টিকোন সঠিক থাকে।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি কোনো চাকরি করছেন এবং সেখানে আপনার চাকরি হঠাৎ করে কোনো কারণে চলে যায় তাহলে সেই পরিস্থিতিতে সঠিক দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখার চেষ্টা করুন, কেননা হয়তো আপনার জন্য কোনো ভালো চাকরি অপেক্ষায় করছে।

মনে রাখবেন, যেই ব্যক্তি নিজের মনের জোরের সাথে খারাপ সময় পার করে নিতে পারে সেই ব্যক্তি জীবনে সব সময় সফল হওয়ার পথে থেকে থাকে।

তাই, যেকোনো পরিস্থিতিতেই পসিটিভ চিন্তাধারার সাথে ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত নিন।

৭. নিজের চিন্তাধারা বদলান দুনিয়া বদলে যাবে

আপনার জীবন বর্তমান যে পরিস্থিতিতে আছে সেটা আপনার চিন্তা ধারার কারণেই হয়েছে।

আপনার চিন্তাধারাই আপনাকে যেকোনো বিষয়ের বা পরিস্থিতির ঠিক বা ভূল ভাবনা মনে তৈরি করে থাকে।

তাই চিন্তাধারায় যদি বদল এসে যায় তাহলে অনেক কিছু নিজে নিজে বদলে যায়।

আপনার সাথে পুরোদিন যা কিছু হয়ে থাকে সেই পরিস্থিতিতে আপনার কাছে দুটো বিকল্প থাকে।

সবকিছুর একটি পজিটিভ দিক এবং একটি নেগেটিভ দিক থাকে।

তাই আপনি সবসময় পজিটিভ দিকে ধ্যান দেওয়ার চেষ্টা করুন।

৮. সবসময় নিজের উপর নির্ভর থাকুন

সবসময় খুশি থাকার একটি ভালো উপায় হল সবসময় নিজের উপর নির্ভর থাকা।

কখনও অন্য কারো উপর নির্ভর হয়ে বসে থাকতে হয়না।

যদি অন্যের উপর ভরসা করে বসে থাকেন তাহলে দুঃখই পাবেন।

অন্যের উপর নির্ভর থাকার অভ্যাসটি তাড়াতাড়ি বদলে ফেলুন।

কেও আপনার জন্য কিছু উপকার করলে তাকে কৃতজ্ঞতা জানান কিন্তু কখনও কারো উপর নির্ভর থাকার চিন্তা করবেন না।

৯. নিজের প্রয়াসে পরিবর্তন করুন

অনেক সময় দেখা যায় আপনি কোনো কাজ করলেন কিন্তু কাজটায় অনেকবার ব্যর্থ হয়ে যান কিন্তু এর ফলে আপনি একদম হতাশ হবেন না। আপনি নিজের চেষ্টায় ধ্যান দিন।

হতেপারে আপনি যে পদ্ধতিটি নিজের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করছেন সেই পদ্ধতিটি ভূল।

তাই এরকম পরিস্থিতে আপনাকে নিজের কাজ করার পদ্ধতিটি বদলে দেওয়া উচিত এবং ততক্ষন পর্যন্ত বদলে যান যতক্ষন পর্যন্ত আপনার কাজ সফল না হয়। 

১০. ভালো বলার অভ্যাস করুন

আপনার মস্তিষ্কে খারাপ বিচার আসলেও সেটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই।

আপনি শুধু একটি কাজ করুন, প্রত্যেকদিন সকালে উঠেই একটি ভালো বিচার ভাবুন বা একটি ভালো বাক্য বলার জন্য নিজেকে তৈরি রাখুন, যেমন আজকে আমি খুব খুশি, আজকে আমার মনকামনা পূর্ণ হবে বা আমি একজন পজিটিভ বিচার ভাবা ব্যক্তি। এভাবে, আপনি যেকোনো ভালো বিচার ভাবতে পারেন।

প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনি যদি নিজেকে কোনো ভালো প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তাহলে এই অভ্যাস আপনার জীবন পরিবর্তন হওয়ার জন্য আপনাকে প্রচুর সাহায্য করে থাকে। 

নকরাত্মক চিন্তাধারা থেকে বাঁচার জন্য জরুরি হলো নিজেকে প্রতিমুহূর্তে অনুপ্রাণিত করতে থাকা।

নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য সফল ব্যক্তি এবং মহাপুরুষের জীবনী পড়ুন বা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের আর্টিকেল পড়ুন।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনারা নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় খুঁজছেন তাহলে আমরা ওপরে বলা উপায় গুলো ব্যবহার করে দেখুন। আশা করছি, আমাদের বলা উপায় গুলো ব্যবহার করে আপনারা নিজের পরিস্থিতি, জীবন এবং স্বয়ং নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারবেন। 

আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.