রাগ কমানোর উপায় গুলো জেনেনিন । কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় | Muhammed Juwel Ahmed |

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা, কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং নিজের রাগ কমানোর উপায় (How to control anger ? tips in Bengali) গুলোর বিষয়ে জেনেনিব। ক্রোধ কমানোর উপায় গুলো এমনিতে অনেক রয়েছে, তবে আমি নিচে কেবল কিছু কার্যকর উপায় গুলোর বিষয়ে বলবো যেগুলোর মাধ্যমে চটপট বা সাথে সাথে আপনার রাগ কমে যাবে। 

রাগ কমানোর উপায়
How to control anger in Bengali

বর্তমান সময়ে কথায় কথায় রাগ ওঠা প্রত্যেকের জীবনের একটি অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, যখন আমরা প্রচন্ড রাগ করে থাকি তখন আমরা প্রচুর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যেগুলোর কারণে চিরজীবন আমাদের অনুশোচনা করতে হয়। 

তাই, অতিরিক্ত রাগ যখন উঠে থাকে তখন আমাদের নিজের রাগের ওপরে নিয়ন্ত্রণ রাখাটা জরুরি। আর যদি আপনি নিজের রাগের ওপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেননা, তাহলে কিছু ছোট ছোট উপায় গুলো করে রাগ কমাতে পারবেন।

আজ আমাদের জীবনধারা (lifestyle) প্রক্রিয়া এরকম জটিল হয়ে পড়েছে যে যেকোনো ব্যক্তির কথায় কথায় রাগ উঠে যায়। আপনারও হয়তো কথায় কথায় রাগ উঠে যায় এবং আপনি এই রাগ উঠার অভ্যেস এর জন্য প্রচুর সমস্যায় রয়েছেন।

এছাড়া, অধিক ক্রোধ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো জিনিস না, আর অনেকেই এই কথা জানেন এবং কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এই বিষয়ে জানার চেষ্টায় রয়েছেন। 

মনে রাখবেন, রাগ বা ক্রোধ হলো একটি অনেক স্বাভাবিক অনুভতি যেটা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে, এবং সাধারণ রাগের মাধ্যমে আমাদের মন শান্ত হয়ে থাকে।

কিন্তু সমস্যা তখন হয়ে থাকে, যখন যেকোনো ছোট ছোট কথায় আমাদের রাগ উঠে যায় এবং সেটাও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রাগ যার ফলে আপনি চেঁচামেচি করতে শুরু করেন।

তবে চিন্তা করবেননা, চলুন আজকে আমরা এমন কিছু উপায় গুলো জেনেনি, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সাথেসাথে নিজের রাগ কমিয়ে ক্রোধের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।

সাথেসাথে রাগ কমানোর উপায় গুলো গুলো – (সেরা ৯ টি উপায়)

নিচে আমি যেগুলো উপায় এর বিষয়ে বলতে চলেছি সেগুলো অনেক সাধারণ উপায় যার মাধ্যমে জেকেও নিজের অত্যাধিক রাগের ওপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারবেন।

১. উল্টো গণনা করুন

যখন আপনার রাগ উঠা চালু হয় তখন আপনার ফোকাস কেবল সেই রাগের কারণের ওপরে থেকে যায় যার ফলে ধীরে ধীরে রাগ বাড়তে থাকে। তাই, সাথে সাথে রাগ কমানোর জন্য আপনাকে নিজের ফোকাস (focus) অন্যান্য জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যার ফলে রাগ ধীরে ধীরে কমতে শুরু হবে।

এর জন্য সব থেকে কার্যকর উপায় হলো, ৫০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো গণনা করুন। এতে, আপনার মাইন্ড এর সম্পূর্ণ ফোকাস সেই গণনার ওপরে চলে আসবে এবং রাগের কারণ এবং রাগ থেকে মাইন্ড এর ফোকাস সরে যাবে।

এভাবে, আপনি নিয়মিত এই উল্টো গণনার প্রক্রিয়ার চর্চা করুন, এতে আপনার স্বভাব এবং ভাষার ওপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আপনি প্রচুর সাহায্য পাবেন।

এছাড়া, হটাৎ রাগ উঠে গেলেও আপনি সাথে সাথে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করুন, দেখবেন আপনার রাগ সাথে সাথে অনেকটা কমে আসবে।

২. হাটা চলা করুন

কিছুটা হাঁটাচলা করে আপনি তীব্র গতিতে চলে আসা নিজের রাগ সহজেই আটকাতে পারবেন। এর জন্য হাঁটাচলা করার সময় আপনাকে নিজের পায়ের পদক্ষেপ গুলোর উপরে ধ্যান কেন্দ্রিত করতে হবে। এভাবে কিছুক্ষন হাঁটাচলা করার পর আপনার মন শান্ত হতে শুরু হবে এবং ক্রোধ কিছুটা কমে আসবে।

জায়গা বা অবস্থান পাল্টালে বা পরিবর্তন করলে পরিস্থিতি এবং মনোভাব প্রভাবিত হতে পারে, আর এটা আপনার রাগের তীব্রতা কম করতে প্রচুর সাহায্য করে থাকে।

তাই, যখনি কারো রাগ উঠে থাকে তখন বেশি কথা না বলে তাকে সেই জায়গার থেকে সরে গিয়ে অল্প হাঁটাচলা করে নেওয়াটা প্রচুর কার্যকর একটি উপায়।

৩. ধ্যান করুন

আমাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই এটা অবশই জানেন যে ধ্যান এর মাধ্যমে রাগ বা তীব্র ক্রোধ অবশই কমানো সম্ভব। তবে, এই বিষয়ে জানা থাকলেও আমরা ধ্যান করার বিষয়টা নিয়ে এতটা ভাবিনা।

ধ্যান (meditation) এর নিয়মিত অভ্যাস করলে, এর মাধ্যমে আপনি আপনার সবসময় উঠা রাগ এর গোড়া থেকে সমাধান করতে পারবেন।

ধ্যান এর ফলে মস্তিষ্ক আপনার মন কে শান্ত করে থাকে এবং ধ্যান আপনার মনকে সুখ এবং আনন্দের অবস্থায় নিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।

আর এভাবেই, রাগ কমানোর জন্য ব্যক্তি নিয়মিত ধ্যান এর অভ্যাস করাটা প্রচুর লাভজনক এবং কার্যকর একটি উপায়।

এমনিতে, যদি আপনার হটাৎ চরম রাগ উঠেছে সেই সময়ও আপনি ধ্যান করে সাথে সাথে রাগ কমিয়ে নিতে পারবেন।

বিশ্বাস না হলে একবার ধ্যান করেই দেখুন, আপনার মন কতটা আনন্দিত হয়ে উঠবে কেবল ধ্যান (meditation) করার পর সেই অনুভব লাভ করতে পারবেন।

৪. গভীর শ্বাস নিন

কিছুটা ধীর এবং গভীর শ্বাস নিয়ে আপনি আপনার রাগ এর ওপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে সব থেকে ভালো উপায় হলো আপনি গণনা করতে করতে ধীর এবং গভীর শ্বাস নিতে শুরু করুন। এর মাধ্যমে ক্রোধ শান্ত করার ক্ষেত্রে আপনার প্রচুর সাহায্য হয়ে থাকবে।

৫. গান শুনুন

এটা আমার রাগ কমানোর সব থেকে প্রিয় উপায় যেটার ব্যবহার আমি করেই থাকি। মিষ্টি সঙ্গীত রাগ কমাতে প্রচুর সাহায্য করে থাকে। তাই, কিছু মিষ্টি গান গুলো শোনার ফলে আপনি আপনার ক্রোধ নিজের ওপরে আধিপত্য হতে বাধা দিতে পারবেন। মিউজিক থেরাপি আপনার মনের মধ্যে থাকা নেতিবাচক চিন্তাধারা গুলোকে বাধা দিয়ে আপনার মন শান্ত করে থাকে।

তাই, এবার থেকে যখনি আপনার রাগ উঠবে, পাশে রাখা headphone টি কানে লাগিয়ে কিছু মধুর সঙ্গীত শুনুন। দেখবেন, আপনার রাগ চট করে নাই হয়ে যাবে।

৬. নিয়মিত ভাল ঘুম নিতে হবে

বর্তমান সময়ে আমাদের লাইফস্টাইল এতটাই অশৃংখল হয়ে পড়েছে যে আমাদের রাতের ঘুমোনোর কোনো নির্ধারিত সময় নেই। যেখানে তাড়াতাড়ি খেয়ে রাত ১০ এর মধ্যে আমাদের ঘুমোনো দরকার, সেখানে আমরা রাত ১ থেকে ২ পর্যন্ত মোবাইলে তীব্র আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি।

নিয়মিত এই ধরণের অশৃংখলতার কারণে আমাদের মন মেজাজ এবং মস্তিস্ক ক্লান্ত হয়ে পরে এবং কোনো কাজে মন না লাগা, সব সময় রাগ উঠা, কথা বলতে ইচ্ছে না করা, সব সময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি এই ধরণের সমস্যা গুলো জীবনে দেখা দিয়ে থাকে।

তাই, যদি আপনার মন প্রচুর চিড়চিড়ে হয়ে গেছে এবং সব সময় রাগ উঠছে, তাহলে হতে পারে আপনিও নিয়মিত রাতের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের সমস্যায় ভুগছেন।

তাই, আপনাকে রাতে সঠিক সময়ে ঘুমোতে হবে এবং সঠিক পরিমানের ঘুম আপনার মনের চিড়চিড়ে ভাব কমিয়ে রাগ কমাতে আপনাকে সাহায্য করবে

অপর্যাপ্ত পরিমানের ঘুম আমাদের মস্তিস্ককে প্রচুর দুর্বল করে ফেলে যার কারণে আমরা আমাদের রাগের ওপরে নিয়ন্ত্রণ রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলি।

তাই, আজকের থেকেই পর্যাপ্ত পরিমানের ঘুম নেওয়ার অভ্যেস আপনাকে করতে হবে।

৭. সুন্দর এবং দারুণ গন্ধ

আপনার জেনে অল্প আচরিত লাগতে পারে তবে এই কথা আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতার থেকে বলছি। যখনি আপনি মানসিক চাপ বা রাগের কবলে থাকছেন, তখন দারুন সুগন্ধ নিয়ে দেখুন।

আপনি কোনো সুগন্ধির (perfume) সাহায্য নিতে পারবেন বা ঘরের বাইরে থাকা তাজা ফুলের সুগন্ধ নিতে পারবেন। এতটুকু করলেই, কেবল কিছু সেকেন্ডের মধ্যে আপনার রাগ এবং মানসিক চাপ প্রচুর কমে আসবে।

৮. ঠান্ডা জল খান

রাগ কমানোর উপায় হিসেবে ঠান্ডা জল খাওয়াটা একটি অনেক পুরোনো উপায় যেটা অনেকেই ব্যবহার করেছেন এবং সত্যি এতে রাগ কমে থাকে। আপনি যদি এই উপায় ব্যবহার করে দেখেননি, তাহলে একবার অবশই ব্যবহার করুন।

৯. গল্পের বই পড়ুন

যখনি রাগ উঠবে তখনি আপনি আপনার গল্পের বইটি নিয়ে সেটাকে পড়া শুরু করুন। দেখবেন, আপনার মনের সম্পূর্ণ ফোকাস রাগের বিষয়ের থেকে সরে গিয়ে গল্পের বই এর ওপরে চলে আসবে। আমি নিজেও এই মাধ্যমে নিজের রাগ এর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করি এবং সত্যি বললে এই উপায় অনেক কার্যকর।

 

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, আজকের আমাদের আর্টিকেল, “কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়” বা “কিভাবে রাগ কমানো যায়” আপনাদের কাজে অবশই আসবে বলে আমি আশা করছি। আশা করছি, এখন আপনারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাবে বুঝতেই পেরেছেন যে কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়.

আমাদের আজকের আর্টিকেল, রাগ কিভাবে কন্ট্রোল করা যায়, যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.