নিজেকে কিভাবে স্মার্ট করা যায় । স্মার্ট হওয়ার উপায় | Muhammed Juwel Ahmed |

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো, নিজেকে স্মার্ট করে তোলার উপায় গুলোর বিষয়ে। স্মার্ট হওয়ার উপায় এমনিতে অনেক রয়েছে, তবে কিছু সাধারণ এবং সহজ বিষয় গুলোর ওপরে নজর দিলেই আপনি নিজেকে স্মার্ট করে তুলতে পারবেন। তাহলে চলুন, নিচে আমরা সরাসরি নিজেকে কিভাবে স্মার্ট করা যায় সেই উপায় গুলো জেনেনেই। 

স্মার্ট হওয়ার উপায়
নিজেকে স্মার্ট করে তোলার উপায়।

কে না চাই স্মার্ট হতে! সে ব্যক্তিত্বই হোক বা দেখনদারিতে। কথায় বলে, মুখই মনের আয়না। আর মুখ বা শরীর এবং আপনি নিজে ভিতর থেকে যদি স্মার্ট থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। শুধু ক্রাশ কে পটাতে নয়, ইন্টারভিউ বোর্ড ও তখন হয়ে যাবে আনন্দের জায়গা।

তো, স্মার্ট হবেন কিভাবে ? উড়ো চুল, ছেঁড়া প্যান্ট এইসব ফ্যাশনে নিজেকে স্মার্ট করা যায় কি! নাকি স্মার্ট বলতে অন্য কিছু বোঝায়। আসা যাক স্মার্ট ‘smart’ এর প্রতিশব্দ বা মোদ্দাকথায় বাংলা তরজমা করলে কি দাঁড়ায়।

Smart – এককথায় ক্লেভার অর্থাৎ চালাক, ইন্টেলিজেন্ট অর্থাৎ বুদ্ধিমান, ব্রাইট অর্থাৎ উজ্জল, ওয়েল-এডুকেটেড অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতগুলো গুণ কি একজনের পক্ষে নজরে বা নিজের ভিতর রাখা সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব।

নাসা যদি মহাকাশে লেখা যাবে এমন জিরো গ্রাভিটির পেন আবিষ্কার করতে পারে, তো আমরাই তো মানুষ। ঠিক পারব। আসলে আমরা নিজেরা কোন না কোন অংশে স্মার্ট, কিন্তু কিছু খারাপ গুণ এর বাহ্যিক কারণে ভালো গুলি চাপা পড়ে গেছে।

তাই স্মার্ট হবার বা নিজেকে স্মার্ট করে তোলার পন্থা খুঁজতে অন্যকে অনুকরণ কিংবা ইউটিউবে সার্চ এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

স্মার্টনেসের গুরুত্বও অপরিসীম। নয়তো লোকে আপনাকে পাত্তা দেবে না, গুরুত্ব দিয়ে আপনার কথা শুনবে না, আপনাকে মানতেও চাইবে না।

তাহলে স্মার্ট কি?
আসুন জেনে নেওয়া যাক।

নিজেকে স্মার্ট করে তোলার ৭ টি উপায় । স্মার্ট হওয়ার উপায়

নিজেকে কিভাবে স্মার্ট করা যায়, যদি আপনি এটা নিয়ে ভাবছেন, তাহলে চিন্তা করতে হবেনা। 

নিচে দেওয়া প্রত্যেকটি উপায় ভালো করে অনুসরণ করতে পারলে, আপনিও হয়ে দাঁড়াবেন একজন স্মার্ট ব্যক্তি।

তাহলে চলুন, স্মার্ট হওয়ার নিয়ম গুলো একে একে জেনেনেওয়া যাক। 

১. পরিচ্ছন্নতাঃ

জুতো থেকে পারফিউম, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। সবটাতেই নজর রাখতে হবে। অফিস বেরোনোর আগে দেখে নিলেন জুতোটির কালো উজ্জ্বলতা কমে গেছে। শুধু পাঁচ মিনিট টাইম বার করুন, একটু ঘসামাজা, একটু পালিশ করে নিন। আর হয়ে যান স্মার্ট।

কিংবা ধরুন বাসের ভিড়ে নাজেহাল অবস্থা। জীবনে কোনদিন হাতের তলায় মানে বগলে পারফিউম মাখেন না।

কে আপনাকে স্মার্ট ভাববে বলুন তো? খুব বেশি তো দাম নয়, মাসে এক প্লেট বিরিয়ানির টাকা বাঁচিয়ে কিনে নিন বাজারচলতি কিছু বডিস্প্রে। ব্যাস কেল্লাফতে!

এবার অনেকেই মাথার চুলের দুই সাইট ছেঁটে দিয়ে, তাতে সবুজ, পাতাবাহারি লাল-নীল কিছু রং মেখে, পঁচিশটা জায়গা ফাটা এমন জিন্স প্যান্ট পড়ে নিজেকে স্মার্ট করে তোলার কথা ভাবেন। ভালো।

তবে নিজেরাই নিজেকে স্মার্ট ভাবেন। লোকে কস্মিন কালেও সমীহ করে কি সন্দেহ। মনে রাখবেন, স্মার্ট হওয়া মানে ফিটফাট থাকা। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়।

এবার আসা যাক মহিলাদের কথায়। তারা চেষ্টা করেন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার।

কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় অপরিচ্ছন্নতা জন্য রান্না শালায় উঁকি দিয়েছে আরশোলা ও ইঁদুরের ছানারা। তা ম্যাডাম, আপনি পরিষ্কার থাকলে বাড়িশুদ্ধ লোক রোগ মুক্ত থাকবে। শুধু কাজের মাসির আশায় সব ফেলে রাখবেন না। তাহলে আপনিও সবার চোখে স্মার্ট হয়ে থাকবেন।

অমুক বাড়ির গিন্নি দেখার মতন রান্নাঘর, বাড়ি ঘরদোর সাজিয়েছে – শুনবেন।

যারা সদ্য মা হয়েছেন তাদের নজর রাখতে বলব বাচ্চাদের ন্যাপকিনের দিকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই স্মার্ট করে তোলার একটি ধাপ বই কি!

২. স্মাইলি লুকস্ঃ

‘গুড লুকিং’ শব্দটির সাথে আপনারা নিশ্চয় পরিচিত। শুনে থাকবেন। অনেকে মনে করেন ফর্সা, দেখতে সুন্দর, হ্যান্ডসাম হওয়া মানেই গুড লুকস্। আদপেই তা নয়।


মুখের মধ্যে সবসময় একটা আলতো হাসি যেন লেগে থাকে। সে ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এই হাসির জন্য আপনি উল্টো দিকের মানুষটির কাছে হয়ে উঠবেন আকর্ষণীয়।


শুধু গম্ভীর থাকলে চলবে না, আভিজাত্য ভাব থাকবে, সাথে একটু চপল হাসি অর্থাৎ মিশুকে ভাব রাখবেন আপনার মুখে।


এই হাসির অভ্যাস জানা না থাকলে কিছু ফর্মাল ফেস যোগা হয়ে থাকে। সকালে উঠে নিজেকে দশ মিনিট সময় দিয়ে প্র্যাকটিস করুন। সতেজ মুখমন্ডল এর সাথে আলতো হাসি নিজেকে স্মার্ট করে তোলার সবচেয়ে বড় স্টেপ।


অবশ্য আপনার দাঁত মাজার ও পরিষ্কারের অভ্যাস না থাকলে দাঁত চেপে হাসুন। অন্যথায় এই পয়েন্টে স্কিপ করুন। নয়তো সর্বনাশ।


অবশ্য আশা করা যায় যারা স্মার্ট হতে চান, তারা নিজের প্রতি যথেষ্টই যত্নশীল।


শুধু দাঁত নয়, নিজের শরীরেও যত্ন নেবেন। প্রতিদিনের সামান্য ব্যায়ামও আপনাকে করে তুলবে সুন্দর চেহারার। জিরো ফিগারের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাকে কেউ করিনা কাপুর কিংবা সলমন খান হতে বলেনি।

৩. চোখে চোখ রেখে কথা বলাঃ

ধরুন আপনি ডেটে গেছেন। মাথা নিচু, কিছুটা সাই অর্থাৎ লজ্জালজ্জা ভাব, কিছুটা অপরিস্থিতিতে আছেন এমন স্বভাব, যেটা আপনার চোখে মুখে ফুটে উঠছে, সেই ডেট কি আপনার জন্য বেটার হল ? তার চেয়ে এক-দুকাপ কফি, সাথে চোখে চোখ রাখুন, কথা বলুন।

উলটো দিকের মানুষটিকে একটি প্রশ্ন করে তার দিকে তাকান সোজাসুজি ভাবে।

দেখবেন সে অটোমেটিক্যালি সমস্ত কিছু বলছে। তার বলা থামামাত্র আবারো তাকান দৃঢ় ভাবে। সে আরো কিছু বলবেই। এটাই সাইকোলজি।

এক্ষেত্রে একাধারে আপনি স্বল্পভাষী, আবার অন্যদিকে স্মার্ট, চতুর বুদ্ধি ও গম্ভীরতার ও পরিচয় দিলেন। দেখুন তো! ডেট টি ডেটের মতো হয় কিনা!

৪. সোজা হয়ে বসা ও হাঁটাঃ

আমাদের অনেকের মধ্যেই এই ব্যাপারটা তো থাকেই না। কিন্তু স্মার্ট হবার চাবিকাঠি হল সোজা হয়ে বসা ও হাঁটা।

এতে যেমন শিরদাঁড়া সোজা ও মজবুত থাকে, তেমনি আপনাকে দৃঢ়, কনফিডেন্ট, মনোযোগী, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি স্মার্ট লাগবেই।

হাঁটার সময় সোজা হয়ে, গলা উঁচু করে হাঁটুন। কোথাও প্রবেশের সময় চোখ সোজা কিন্তু মাথা নিচু করে প্রবেশ করুন।

এই টুকু আচার ব্যবহার পালটে দেবে আপনার পরিচয়। ফুটিয়ে তুলবে আপনার ব্যক্তিত্ব।

৫. প্রতিবাদ ও সাহায্য করার মানসিকতা রাখাঃ

প্রতিবাদ করার ক্ষমতা অল্পবিস্তর সকলের মধ্যেই আছে। ঠিক তেমন কোথাও কোনো প্রতিবাদের সময় যদি সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়ে, ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে, নেতৃত্ব দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সেখানে উপস্থিত মানুষের দিল নরম হবে।

তারা আপনকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবেই। দেখুন তো হৃদয় দিয়ে স্মার্ট হলেন কিনা!

কোনো মেয়ে ইপটিজিং-এর পরিস্থিতিতে পড়লে কোনো কথা না বলে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করুন। দেখুন, ভিড় ঠেলে লোকজন আপনাকে সমীহ করবেই।

ট্রলিব্যাগ সামলাতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া একটি ছেলেকে দেখে আপনি এগিয়ে গেলেন, হাত বাড়িয়ে তাকে উঠতে সাহায্য করলেন। এবং সব শেষে বেস্ট অফ লাক বলে একটু স্মাইলি লুকস্ দিয়ে সেখান থেকে চলে আসুন।

শুধু ছেলেটি নয়, ওখানকার সমস্ত মানুষ এমনি নিজের কাছেও আপনার নিজেকে স্মার্ট মনে হবেই।

নিজের কাছে সৎ থেকে সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়ে দেখুন না, স্মার্ট হতে আপনাকে কে আটকায়।

৬. গুরুজনদের শ্রদ্ধা করাঃ

আপনার দাদুর বয়সী একজন বিড়ি খাচ্ছে দেখে আপনিও সিগারেটে ফুঁ দিলেন। ইউনিভার্সিটি কিংবা আপনার স্ট্যাটাসে এসব নাকি চলে। তা সে যাই হোক, এসব চলে মানে এই নয় যে সবজায়গায় তা চলে।

বৃদ্ধ দাদু-দিদা নিজের না হলেও তাদের মতো বৃদ্ধ প্রজন্ম আমাদের নবীন প্রজন্মের কাছে এতটুকু সম্মান ও হৃদ্যতা এক্সপেক্ট করেই। তাদের আশা করাটাও অমূলক নয়।

আসলে এই একবিংশ শতাব্দীতে পোঁছে অতি আধুনিক হতে হতে আমরা এমন এক জায়গায় পোঁছেছি যে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো কেউ নেই।

আর বাবা মা সেই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তা অগ্রাহ্যের আন্ডারে ফেলি। বড়দের শ্রদ্ধা, সম্মান এবং প্রণাম অবশ্যই আবশ্যক।

শুধু বিজয়া দশমীতে নয়, আর ফোনে প্রণাম সেরে ফেলাটাও নয়, সাক্ষাতে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে দেখুন তো স্মার্ট হতে পারছেন কিনা!

এই দিকগুকিতে নজর দিলে, স্মার্ট হবার লুকস্ আপনা আপনি ভিতর থেকে ফুটে উঠবে। স্মার্ট হওয়া মানে সব দিক থেকে আপনাকে সমান লাগবে। শুধু পোশাকে নয়, মন থেকেও স্মার্ট হতে হবে আপনাকে।

৭. সৎ বন্ধুঃ

সময়কে সৎ বন্ধু বানান। সময়কে মূল্য দিন। এই সময়ই আপনাকে সব কিছুতে সাহায্য করবে। সময়ানুযায়ী কাজ, টাইম মেন্টেন, ঠান্ডা মেজাজে কাজ, সময় পেলে ভালো কিছু বই পড়া, শিক্ষিত মানুষের সাথে আলাপচারীতা ও বন্ধুত্ব পালটে দেবে আপনাকে। মনে রাখবেন যে জীবনে টাইম মেন্টেন করতে পারে, সে সফল।

আর নেগেটিভ পার্সোনালিটিদের সাথে বন্ধুত্ব না করে নিজের জীবনের চারিদিকে পজেটিভ, সফল ব্যক্তিদের ধরে রাখুন। সফলতা ও স্মার্টনেস আসবেই। আপনাকে তারিফ করা, ভুল ধরিয়ে দেওয়া ও স্মার্ট দেখার জন্য যে গুলি আবশ্যক তার মধ্যে এই পয়েন্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অপ্রয়োজনীয়, অগোছালো, অস্পষ্ট কথা বলা থেকে বিরত থাকুন, সব সময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন, সময়ের মূল্য দিয়ে ঠাণ্ডা মেজাজে কাজ করুন, পড়াশোনা ও সামাজিক কালচার, অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নিজেকে যুক্ত রাখুন, দেখবেন আপনাকে স্মার্ট হতে হবেনা, আপনি নিজে থেকেই স্মার্ট হয়ে যাচ্ছেন। লোকে আপনার সাথে মিশতে চাইছে, আপনাকে সম্মান করছে।

আপনারা বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেখুন। তারা অন্যের থেকে শোনে বেশি, নিজে বলে কম। সময়ের মূল্য দেয়। পরিচ্ছন্ন। সকলকে সম্মান দিতে জানে। ঠিক জায়গায় প্রতিবাদ করতে জানে।

আসলে এগুলিই নিজেকে স্মার্ট করে তোলার উপযুক্ত পন্থা। এগুলি পালন করে নিজের মধ্যে আনলেই, নিশ্চিতভাবে আপনিও হয়ে যাবেন একজন ‘স্মার্ট’ ব্যক্তি।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, যদি নিজেকে কিভাবে স্মার্ট করা যায় এই বিষয়ে ভাবছেন, তাহলে ওপরে বলা বিষয় গুলোতে আপনাকে নজর দিয়ে সেগুলোর ওপরে কাজ অবশই করতে হবে। মনে রাখবেন, স্মার্ট হওয়ার উপায় বলতে এরকম সোজা শর্টকাট কিছুই নেই যেগুলো করে নিমিষের মধ্যে আপনি স্মার্ট হয়ে যাবেন। 

তবে হে, নিজের ব্যক্তিত্ব ওপরে নজর দিন এবং সেটার ওপরে কাজ করুন, আপনি স্মার্ট অবশই হয়ে দাঁড়াবেন।

আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাকে অবশই ভালো লেগেছে, যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.