বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ? সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলুন || Muhammed Juwel Ahmed ||

বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ? সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ও বজায় রাখার কৌশল গুলো আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করতে চলেছি।

বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

গান থেকে কবিতা কিংবা সিনেমার প্রেক্ষাপট হোক বা বাস্তবের রূঢ় জীবন কোনোটাই ‘বন্ধু বিনে’ সম্ভব নয়।

আর এই উপলব্ধির কারণেই হয়তো লেখক রাধারমণ দত্ত বন্ধুত্বের সরলতম সংজ্ঞা দিয়ে গান বেঁধেছিলেন – ‘বন্ধু বিনে নাইযে গতি, কিবা দিবা কিবা রাতি’।

আমাদের নিয়মের ঘেরাটোপে বন্দি জীবনকে অনিয়মের সীমানায় নিয়ে আসা, বাঁধনভাঙা উচ্ছাসে আশেপাশের মানুষদের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যাওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজ করতে বন্ধুরাই আমাদের উৎসাহী করে।

আর এই সকল কাজ করতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে একমাত্র বন্ধুরাই আমাদের নিজের প্রকৃত সত্ত্বা খুঁজে পেতে এবং ঝিনুকের খোলা থেকে বেরিয়ে নিজেকে উন্মুক্ত করতে শেখায়।

আর তাই সেইসকল মানুষকেই বন্ধুর পরিচিতি দেওয়া যায় যারা চূড়ান্ত পাগলামি করার মাঝেও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে সর্বদা আপনার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে পারবে।

কিন্তু বন্ধুত্ব করলেই যে তা সারাজীবনের জন্য টিকে যাবে এমন ভাবনা একদমই ঠিক নয়।

যেকোনো সম্পর্ককেই দীর্ঘদিন যাবৎ জিইয়ে রাখার জন্য যত্ন সহকারে আগলে রাখতে জানাতে হয়।

তবেই শুধুমাত্র বন্ধুর সাথে আত্মীয়তা সময়ের সাথে শক্তিশালী ও গভীর হওয়া সম্ভব।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বন্ধুত্ব করতে জানলেও, অনেকেই সেই বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে জানেন না।

তাই আজ আমরা সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গড়ে তোলার ও বজায় রাখার কৌশল এবং সত্যিকারের একজন বন্ধুর সাথে সম্পর্কে কিরূপ হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ?

আমাদের জীবনের সাথে জড়িত প্রায় বেশিরভাগ সম্পর্ককে আমরা নিজেরা বেছে নিই না, বরং জন্মসূত্রে পেয়ে থাকি, কিন্তু বন্ধু নামক ব্যক্তিটিকে চয়ন করার অধিকার কিন্তু সম্পূর্ণরূপেই আমাদের নিজেস্ব।

আর তাই ‘বন্ধুত্ব’ -এর সম্পর্ক বয়স, স্ট্যাটাস, পারিবারিক অবস্থান, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বা জাতি-গোত্র মেনে হয় না।

এই সম্পর্ক থাকে সব বাঁধনের ঊর্ধ্বে।

তবে হ্যাঁ বন্ধুত্ব গড়ে তোলা ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ শর্ত আমাদের বাধ্যতামূলক ভাবে মেনে চলতে হয়। আর এই এক ও অদ্বিতীয় শর্তটি হল – পরস্পরকে সমান ভালোবাসা ও সম্মান প্রদান।

বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত – এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতেই পারে।

তবে কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলির সাথে আমরা প্রত্যেকেই হয়তো সহমত প্রকাশ করবো।

যেমন ধরুন, স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য –

স্নেহ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সততা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমবেদনা, একে অপরের পাশে থাকা, আস্থা, সাবলীল অনুভূতির প্রকাশ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকার দরকার।

বৈশিষ্ট্যগুলিকে আরেকটু বিশদে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:

১. সখ্যতার সম্পর্কে, বন্ধু বা প্রাণসখার সাথে খোলাখুলি কথা বলা আবশ্যক।

কথা ও অনুভূতি যত সাবলীল ভাবে বেরিয়ে আসবে, ততই সম্পর্কের স্বাভাবিকত্ব বজায় থাকবে।

২. দীর্ঘ দিন কথাবার্তা না হওয়া মানেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে, এমন ভাবনাই ভুল।

অনেক সময় দেখা যায়, কৈশোরে গড়ে ওঠা মিত্রতা তৎকালীন সময়ে এতটাই গভীরতা পেয়েছিল যে ২০-২৫ বছর পর দেখা হাওয়া সত্ত্বেও স্বভাবিকভাবে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়াতে সমস্যা দেখা দেয়নি।

তাই বন্ধুত্ব কত দিনের তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কতটা গভীর তা বিচার্য।

এর জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া কিছুটা হলেও দায়ী।

৩. বন্ধুর সাথে সৎ থাকলে তবেই সম্পর্ক সুন্দর হবে।

৪. সুখের দিনে তো সকলকেই পাওয়া যায়। কিন্তু দরকারে প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ারই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বন্ধুর সাপোর্ট সিস্টেম হতে শিখতে হবে, সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে জানতে হবে।

৫. বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা জরুরি। আস্থা বা বিশ্বাস ভিন্ন সখ্যতা অসম্পূর্ণ।

এরূপ একাধিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে বন্ধুত্বের সম্পর্কে কিরূপ হওয়া উচিত এই প্রশ্নের উত্তরস্বরূপ।

সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কে গড়ে তোলার ও বজায় রাখার কৌশল :

নীচে উল্লেখিত ১০ টি সহজ ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হবেন।

১. নিরলস সমর্থন, বিশ্বাস এবং সততা :

সমাজে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষেরই একটা ভরসার ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ প্রয়োজন হয়।

আর পরিবার ব্যতীত একজন বন্ধুই আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান সাপোর্ট স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে।

তাই আপনি যখন কাউকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড বা ভালো বন্ধু বলে পরিচিতি দেবেন, তখন এটা মনে রাখবেন যে আপনি তার জীবনের সাপোর্ট নেটওয়ার্কের একটি অংশ হতে চলেছেন।

তাই বন্ধু সমস্যায় পরলে বা তার প্রয়োজনের সময় আপনি যদি তার পাশে না থাকেন তাহলে, নিজের দরকারের সময়েও সেই বন্ধুর উপস্থিতি আশা না করাই ভালো।

কেননা, বন্ধুত্বের সম্পর্ক পারস্পরিকতা (মিউচুয়ালিটি) এবং সমর্থনের উপর ভিত্তিক করে নির্মিত হয়।

তাই আপনার বন্ধুর ভালো ও মন্দে সর্বদা তার পাশে থাকুন, যাতে সেও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বা ভালোবাসার খাতিরে আপনার জন্য নিজের সময় বের করতে পারে।

সমর্থনের পাশাপাশি বিশ্বাসও থাকা দরকার সম্পর্কে।

তাই আপনি যদি নিজের বন্ধুকে চোখ বুজে বিশ্বাস করতে না পারেন তবে ভাববেন সেই ব্যক্তিটি কিন্তু আপনার প্রকৃত বন্ধু নয়।

এছাড়া আপনি যদি নিজের বন্ধুর থেকে কোনো বিষয় বা নিজের অনুভূতি লোকান বা মিথ্যের সাহায্য নেন, তবেও সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

তাই একে অপরের সাথে সৎ, সহজ ও সাবলীল থাকুন।

২. ভালো শ্রোতা হন :

অনেকের মধ্যেই মনোযোগ সহকারে বিপরীত পক্ষের কথা শোনার ধৈর্য বা আগ্রহ থাকে না।

যার দরুন সম্পর্কের তৈরী হয় দূরত্ব। তাই বন্ধুত্বে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি।

এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে, বন্ধুর সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়ে কেবল নিজের কথাকেই প্রাধান্য দেবেন না, সাথে বন্ধুকেও তার কথা খোলাখুলিভাবে বলতে দিন।

কেননা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আপনি ও আপনার বন্ধু যেই ভালো লাগা, মন্দ লাগার কথা শেয়ার করবেন, তা একে অপরকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

আর যদি কখন আপনার বন্ধুর ‘গুড টক’ -এর দরকার হয়, বা আপনি নিজের মনের কথা যদি তাকে বলতে চান, তবে এইসকল অনুভূতিগুলিকে উপেক্ষা করবেন না।

৩. সমালোচনা দূরে রাখুন :

সত্যিকারের বন্ধুরা একে অপরের পছন্দকে কখনো বিচার করে না।

তাই যদি দেখেন আপনার বন্ধুরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আপনার মতে তার জন্য “সেরা” নয় তবে, তার উপর অযথা নিজের মতামত চাপিয়ে দেবেন না।

প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন স্বভাবের হয়, তাই তাদের জীবন সম্পর্কে ভাবনা ও মতও ভিন্ন হতে পারে।

তাই বিপরীত পক্ষের সিদ্ধান্তকে সম্মান দিতে শিখুন, নতুবা সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বা একটি ‘বাউন্ডারি’ তৈরি করতে পারেন। যাতে আপনাদের মতানৈক্য সম্পর্কে ফাটল না ধরায়।

এছাড়া একটা বিষয় সর্বদা মাথায় রাখবেন যে, বন্ধু যতই কাছের হোক না কেন তাদের সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনার অনুমোদন-যোগ্য নয়।

তাই বন্ধুদের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য তাকে বারংবার টোন কাটা বা লজ্জা দেওয়া উচিত নয়,

এতে সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরতে পারে।

৪. বন্ধুর পিছনে কথা বলবেন না :

আগেই বলেছিলাম যে, বন্ধুর সব সিদ্ধান্ত বা আচরণ আপনার পছন্দ আসতেই হবে এরকম কোনো নিয়ম নেই।

তাই – আপনার বন্ধু কী পরছে, কার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে, কীভাবে তাদের সংসার চালাচ্ছে, কোন ক্যারিয়ার নিজের জন্য বেছে নিচ্ছেন এইসকল বিষয়ে আপনার কোনো বিরূপ মত থাকলে সোজাসুজি জানান বা চুপ থাকুন।

কিন্তু ভুলেও পেছনে কথা বলবেন না।

কারণ পেছনে কথা বলা বা গসিপ করার অভ্যাস এমন একটি বিপজ্জনক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা যেকোনো সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে।

তাই আপনার বন্ধুদের সম্পর্কে গসিপ শুরু করার আগে অন্তত দু’বার ভাবুন।

একই সাথে, অন্য কেউ যদি আপনার সামনে আপনারই বন্ধুর সম্পর্কে গসিপ করে, তবে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিন আপনি এই বিষয়টি পছন্দ করছেন না এবং সমালোচনা সেখানেই বন্ধ করিয়ে দিন।

৫. বন্ধু এবং তাদের ইচ্ছাকে সম্মান করুন :

অনেকেই বন্ধুদের চোখ বুজে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে দোনামোনায় থাকে বা বলা যায় বিশ্বাস ভাঙ্গার ভয় পায়।

তাই বন্ধুত্বের প্রাথমিক স্তরে তাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘স্পেস’ দিন।

এতে সময়ের সাথে সম্পর্ককে আরও গভীর হবে।

আর একবার সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে শুরু করে দিলে, বন্ধু নিজের থেকেই আপনার সাথে তার মনের কথা বা গোপনীয় তথ্য শেয়ার করবে, যা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

এক্ষেত্রে যদি আপনার বন্ধু কখনো আপনাকে কোনো গোপন কথা বলে তবে ভাববেন, আপনি তার বিশ্বাস অর্জনে সফল হয়েছেন এবং আপনি তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে এই গোপন কথা জানাবেন না এই ভরসা তার আছে।

তাই অন্যদের সাথে বন্ধুর গোপন তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাসে কখন আঘাত হানবেন না।

কারণ একে অপরের সিদ্ধান্তকে সম্মান না দিলে সম্পর্কের আয়ু দিনকেদিন কমতে থাকবে।

৬. অযথা উপদেশ দেওয়া বন্ধ করুন :

যেকোনো সম্পর্ক এমনকি বন্ধুত্বেও একটা ‘বাউন্ডারি’ বা সীমানা থাকা উচিত।

বন্ধুরা যদি আপনার কাছে নিজের থেকে পরামর্শ চাইতে আসে তবে নির্দ্বিধায় তাকে সাহায্য করুন।

যেমন ধরুন, কোনো বিষয়ে তার জ্ঞান কম থাকায় আপনার গাইডেন্ট সে চাইতেই পারে।

বা তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো একটি সম্পর্কের সাথে মতানৈক্য দেখা দেওয়ার, সেই বিষয়ে পরামর্শ চাওয়াও বন্ধুত্বের সীমানাতেই পরে।

এমত পরিস্থিতিতে বন্ধুর পাশে থেকে তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে সঠিক পথনির্দেশ করুন এবং মনোবল দিন।

কিন্তু তা বলে এই নয় যে, বন্ধুর জীবনে ঘটা প্রত্যেকটি ঘটনা আপনি বিশ্লেষণ করবেন বা তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও অযথা প্রতি পদক্ষেপে তাকে পরামর্শ দেবেন।

এমনটা হলে সেই ব্যক্তি যেমন বিরক্ত হবেন, একই সাথে আপনার পরামর্শ না মানার চাপে পরতে পারেন।

তাই পরামর্শ না চাওয়া হলে নিজের থেকে এগিয়ে পরামর্শ দেবেন না। বরং আপনার বন্ধু যাতে নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার জন্য তাকে উৎসাহী করুন।

৭. বিভিন্ন মজাদার অ্যাক্টিভিটিতে একত্রে যোগ দিন :

অন্য যেকোন সম্পর্কের মতোই বন্ধুত্বের মধ্যেও ফাটল ধরতে পারে। রামধেনুর পর কখনো বৃষ্টির বিষন্নতা, আবার কখনো রোদের ঝলমলানি নিয়েই কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্কে গড়ে ওঠে।

তাই দেখা হলেই বা ফোনে কথা বলাকালীন বিভিন্ন সমালোচনায় জড়িয়ে পরার পরিবর্তে বা অভিমান করে থাকার বিষয়কে পাশে সরিয়ে রেখে মাঝে মধ্যে ‘কোয়ালিটি টাইম’ যাপন করার চেষ্টা করুন।

উদাহরণস্বরূপ – কোথাও ঘুরতে যান একসাথে, এমন কোনো মজাদার অ্যাক্টিভিটিতে যোগ দিন তা আপনারা দুজনেই উপভোগ করবেন।

এমনটা করার মাধ্যমে সম্পর্কে সজীবতা বজায় থাকবে এবং পাশাপাশি একে অপরের সাথে খোলামেলা ভাবে মেশার দরুন স্বাভাবিকত্ব আসবে।

সর্বোপরি কিছু সুখকর স্মৃতি একত্রে তৈরি করতে পারবেন আপনারা।

৮. কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং প্রশংসা মন খুলে করুন :

আপনার জীবনে বন্ধুর অবদান ও তার সাথে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব যে যথেষ্ট মূল্যবান, তা জানান দিতে লজ্জা না পেয়ে মন খুলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

এর জন্য আপনাকে যে মুখে বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এমন একদমই নয়। বরং ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেও এই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন।

যেমন ধরুন – উপলক্ষ ছাড়াও বন্ধুকে হাতে লেখা চিঠি বা সক্কাল সক্কাল একটি সুন্দর মেসেজ পাঠান। অথবা আপনার বন্ধুকে তাদের প্রিয় রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য নিয়ে গিয়ে তাকে ‘সারপ্রাইজ’ করতে পারেন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছাড়াও, বন্ধুর ভালো গুণ বা তার দ্বারা করা ভালো কাজের প্রশংসা মন খুলে করে তার প্রতি নিজের সম্মান ও ভালোবাসা অকপটে অভিব্যক্ত করুন।

৯. বন্ধুদের জন্য সময় বের করুন :

স্কুল বা কলেজে যেভাবে বন্ধুদের সাথে ঘুরে আড্ডা দিয়ে আমরা জীবন যাপন করতাম, তা সময়ের সাথে ব্যস্ততার চাপে পরিবর্তিত হতে থাকে।

এমনকি জীবনে এমন পর্যায়ও আসে, যখন অফিস ও সংসারের চাপের মধ্যে আমরা বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলির স্মৃতিচারণ করলেও তাদের মেসেজ বা ফোন করে কিছুক্ষন কথা বলার সময়টুকু বের করতে পারি না।

কিন্তু যেকোনো সম্পর্কই সামান্য হলেও সময়ের দাবি করে।

তাই ব্যস্ত সময়সূচীর মধ্যেও অন্তত ১-২ ঘন্টা সময় বের করে বন্ধুদের সাথে দেখা করুন, আড্ডা দিন।

আর যদি বন্ধু কাজের সূত্রে ভিন দেশী বা রাজ্যে থাকে, তবে তাদের ফোন বা মেসেজ করে মাঝেসাঝে কথা বলুন।

এমনটা করার মাধ্যমে আপনার বন্ধু অনুভব করতে পারবেন যে তারা প্রকৃতপক্ষেই আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

১০. ক্ষমা করতে এবং চাইতে শিখুন :

‘প্রত্যাশা’ নামক বিষয়টি সম্পর্ককে আরো শক্ত করতে যেমন পারে, তেমনি পারে ভাঙতে।

এক্ষেত্রে আপনি যখন নিজের থেকেও অন্যের কাছে বেশি প্রত্যাশা রাখবেন, তখনই সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পরে।

তাই যতটা প্রত্যাশা না করলেই নয়, ততটুকুই করুন।

এছাড়া বন্ধুত্বের সম্পর্কে আপনার দ্বারা যদি অজান্তে কোনো ভুল হয়ে থাকে তবে সামনে থেকে এগিয়ে বন্ধুর থেকে ক্ষমা চান।

কেননা দীর্ঘ দিনের মান-অভিমান-রাগ ‘সরি’ -এই একটা শব্দ বলার দরুন গলে জল হয়ে যেতে পারে।

তাই কখনো কখনো সম্পর্ক ভালো রাখতে ভুল স্বীকার করা ও ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত।

আর বিপরীতে যদি আপনার বন্ধু কোনো ভুল করে থাকেন তবে, তাকেও ক্ষমা করার মানসিকতা রাখুন।

কেননা ক্ষমা করার ও ক্ষমা চাওয়ার ভাবনা থেকেই কিন্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণতা আসে।

তাহলে বন্ধুরা, বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পেয়েছেন বলে আমি আশা করছি।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.