দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার ১০টি কার্যকর উপায় | Muhammed Juwel Ahmed |

দাম্পত্য জীবনে কিভাবে সুখী হওয়া যায়? আজকে আমরা এই বিষয়ে সেরা ১০টি টিপস আপনাদের দিতে চলেছি।

সম্পর্ক প্রেমের হোক বা বিবাহের, যদি তাতে উত্তেজনা ও রোম্যান্সের ‘স্পার্ক’ কমে যায় তবে চিন্তার বিষয় অবশই আছে। কেননা যেকোনো সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে ভালোবাসা বা অ্যাটাচমেন্ট ভরপুর হলেও, সময়ের ধুলো বিবিধ অনুভূতিকে চাপা ফেলে দেয়। যার দরুন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা, জটিলতা তৈরী হয় এবং অবশেষে প্রেম বা বিবাহ ভাঙ্গনের মুখে পরে।

তাই আপনি যদি না চান এরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে তবে আমাদের এই প্রতিবেদন পড়ুন। কেননা আজ আমরা সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করার এবং সম্পর্কে রোম্যান্স বাঁচিয়ে রাখার কয়েকটি গুরুমন্ত্র দিতে চলেছি।

দাম্পত্য জীবনে কিভাবে সুখী হওয়া যায় – ১০টি উপায় ও টিপস

দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়
How to be happy in marriage life?

নিম্নউল্লেখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করলে সঙ্গীর সাথে আপনার সম্পর্ক যেমন সুন্দর থাকবে, তেমনই আপনি একজন ব্যক্তি তথা ‘পার্টনার’ হিসাবেও আদর্শ হয়ে উঠবেন। সর্বোপরি আপনার বৈবাহিক জীবন দীর্ঘস্থায়ী হবে।

চলুন তাহলে দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখী হওয়া যায় তার কয়েকটি উপায় ও টিপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১. সঙ্গীকে সম্মান দিন:

আপনি যদি একটি ‘হেলদি ম্যারেজ’ বজায় রাখা চান, তাহলে সর্বদা জীবনসঙ্গীকে সম্মান প্রদান করুন। সাথে আপনি জীবনে যা যা সিদ্ধান্ত নেবেন বা নিচ্ছেন, সেগুলির কারণে আপনাদের সম্পর্ক ও পার্টনার যাতে কখনো প্রভাবিত না হয় সেই দিকেও সমানভাবে নজর রাখুন।

দরকার হলে অতিঅবশ্যই একে অপরের সাথে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হন। কেননা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আপনার স্ত্রী / স্বামীর যেন এটা মনে না হয়, যে আপনি তার সাথে ভালো আচরণ করছেন না বা তার মতামত আপনার কাছে গুরুত্বহীন।

যখনই আপনি নিজের সঙ্গীকে সম্মান প্রদর্শন করবেন, সেও আপনার সাথে অনুরূপ করবে। আর এমনটা হলে আপনাদের বিবাহে ভারসাম্য বজায় থাকতে বাধ্য।

২. সম্পর্কের বাস্তবতাকে প্রধান্য দিন:

সম্পর্ককে বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে বিচার করুন। অর্থাৎ আপনি যদি নিজের স্ত্রী / স্বামীর প্রতি যত্নবান হতে চান এবং তাকে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের মধ্যে রাখতে চান, তবে আপনার উচিত বারংবার তার দ্বারা অতীত করা ভুলত্রুটিগুলি তাকে মনে না করিয়ে দেওয়া।

এমনকি কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য হলেও পুরোনো ভুল টেনে এনে খোটা দেবেন না। এমনটা করা মানে সঙ্গীকে তাদের ব্যর্থতার কথা মনে করিয়ে দেওয়া। তাই পরিবর্তে, তার সাথে ইতিবাচক আচরণ করুন এবং পুরোনো ভুলকে পেছনে ফেলে নতুনভাবে এগোতে শিখুন। পাশাপাশি বর্তমানে বাঁচতে শিখুন।

অর্থাৎ একে অপরের সাথে ‘কোয়ালিটি টাইম’ উপভোগ করুন এবং ভবিষ্যতের চিন্তায় সবসময় ডুবে না থেকে বর্তমানকে অগ্রাধিকার দিন। দাম্পত্য জীবনে সবসময় সুখী থাকার জন্য এই বিষয়ে অবশই ধ্যান দিতে হবে। 

৩. সঙ্গীর সমস্যা শুনুন:

সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করার সর্বোত্তম উপায় হল পার্টনারের সমস্যার কথা বিশদে শোনা এবং তার সমাধান বের করে। যদি কখনো আপনার স্ত্রী / স্বামীকে দেখেন চিন্তাই মগ্ন আছেন বা কোনো কারণে মেজাজ খারাপ, তবে তাকে স্পেস দেওয়ার পাশাপাশি কি কারণে সে চিন্তিত তা অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন।

তবে একটা বিষয় খেয়ালে রাখবেন, সঙ্গী নিজের সমস্যার কথা যখন আপনার সাথে শেয়ার করবেন তখন আপনাকে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। তার কথার মাঝে কথা বলা, বা তার কোনো ভুল থাকলে তা বেশি করে হাইলাইট করবেন না।

সঙ্গীকে সমস্যার কথা খুলে বলতে দিন এবং তার কথা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন এবং এরূপ তথা সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে তার বিশেষ যত্ন নিন।

আর যদি সমস্যার কারণ আপনি হয়ে থাকেন, তবে একে অপরের সাথে কথা বলে ভুলবোঝাবুঝি মিটিয়ে নিন। কথোপকথন চলাকালীন ফোনটি নিজের থেকে সরিয়ে রাখতে ভুলবেন না যেন। বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার জন্য ভুলবোঝাবুঝি মিটানো অনেক জরুরি। 

৪. সঙ্গীকে অগ্রাধিকার দিন:

অগ্রাধিকার দেওয়ার অর্থ এটা নয় যে, আপনার জীবনের প্রতি ঘটনায় স্ত্রী / স্বামীর অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করা। অথবা আপনার জীবন পার্টনারকে ঘিরে আবর্ত হওয়া। নিজের জন্য অবশ্যই সময় বের করুন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সময় কাটান।

কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি এবং আপনার সঙ্গী যখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন একে অপরের জীবনে অগ্রাধিকার পাওয়ার একটা অলিখিত চুক্তিও সাক্ষর করেছিলেন। তাই জীবনের যেকোনো ছোট-বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করুন।

কোনো বিশেষ কিছু হলে তা সবথেকে আগে একে অপরের সাথে শেয়ার করুন। কোনোভাবে আপনার আপন ব্যক্তিদের দ্বারা সঙ্গীর সম্মান বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করুন। কোথাও ঘুরতে গেলে ফেরার সময় সঙ্গীর পছন্দের কিছু হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকুন।

এরূপ ছোট ছোট উদ্যোগ আপনাদের বৈবাহিক জীবনকে আরো সুন্দর করে তুলবে।

একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, বাকিরা জীবনে আসবে যাবে, কিন্তু আপনারা একসঙ্গেই থেকে যাবেন। তাই সঙ্গীর থেকে বাইরের মানুষদের বেশি ‘প্রায়োরিটি’ বা অগ্রাধিকার দেবেন না। তাই  দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার জন্য বাইরের মানুষের থেকে জীবন সঙ্গীকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে শিখুন। 

৫. কথোপকথন সচল রাখুন :

আপনি যদি চান আপনার বৈবাহিক জীবন সুখী হোক, তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতে কথপোকথন সচল রাখুন। কেননা সমস্যা জীবনে আসবেই, কিন্তু কথা না বলে নিজেদের এড়িয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান আসবে না। দরকারে সময় নিন। তবে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যের সমস্যা মিটিয়ে নিন।

হতেই পারে যে কোনো বিষয়ে আপনারা সহমত পোষণ করছেন না, কিন্তু তা বলে ঝগড়া শুরু করে দেবেন না যেন।

এমন পরিস্থিতি এলে, আপনারা দু’পক্ষই একটু আপস করুন এবং মাঝামাঝি একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই কাজটি করতে পারলে আপনার বিবাহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং ভুলবোঝাবুঝির কোনো অবকাশ থাকবে না।

৬. একে অপরের প্রতি আস্থা রাখুন:

যেকোনো সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা আবশ্যক, নইলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই বাহ্যিক কোনো সোর্স থেকে আপনি যদি পার্টনারের সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু শুনে থাকেন, তবে প্রথমেই তা বিশ্বাস করবেন না। বাড়িতে ফিরে ঠান্ডা মাথায় বসে এই বিষয়ে আলোচনা করুন।

যদি কথাটি সত্যি হয়েও থাকে, তবে বিপরীত পক্ষকে নিজের পক্ষ রাখার সুযোগ দিন। এরপর পরিস্থিতি অনুসারে পদক্ষেপ নিন। কিন্তু বাইরের কারোর জন্য নিজেদের মধ্যের বিশ্বাসকে কখনোই ক্ষুন্ন করবেন না।

কারণ সঙ্গীর মনে যদি একবার এটা ঢুকে যায় যে, আপনি তাকে অবিশ্বাস করেননা তবে সেও কোনো কিছু বলার আগে দু’বার ভেবে দেখবে। তদুপরি, কোনো বিষয়ে আপনাদের মধ্যে তর্ক হলে সেই সময় এইসব ঘটনাকে টেনে আনবেন না।

৭. সঙ্গীর কাছে আপনার ভালবাসা প্রকাশ করুন:

“আমি তোমাকে ভালবাসি” কথাটা বলা খুবই সহজ। কিন্তু তাও আমাদের মধ্যে অনেকেই এই সহজ কাজটুকু করতে লজ্জা পান। এমনটা করবেন না। প্রত্যেকদিন অন্তত একবার হলেও সঙ্গীর কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন।

এমন নয় যে, আপনি “ভালোবাসি” কথাটা না বললে আপনার স্ত্রী / স্বামী ভাববেন আপনি তাকে আর ভালোবাসেন না। সেও জানে আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং সবসময় ভালোবাসবেন। কিন্তু এটা হল একটা প্রকাশভঙ্গি। তাই এই কথাটা বললে আপনার সঙ্গী আনন্দিত অনুভব করবেন।

বিশেষত বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে বা শুতে যাওয়ার সময় “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলার অভ্যাস তৈরী করুন। এতে সম্পর্কের সজীবতা বজায় থাকবে।

৮. কারণ ছাড়াই একে অপরকে উপহার দিন:

উপহার দেওয়ার জন্য কোনো উপলক্ষ্যের অপেক্ষা করবেন না। মাঝে মধ্যে পার্টনারকে অবাক করে দিতে ‘সারপ্রাইজ গিফ্ট’ দিন। তবে উপহার মানেই – ব্যাগ, জুয়েলারি, ফুল, জামাকাপড় ইত্যাদিই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

আপনি অফিস ফেরত দুটো সিনেমার টিকিট বা সঙ্গীর পছন্দের খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসতে পারেন। অথবা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে নিয়ে যেতে পারেন। এরূপ অপ্রত্যাশিত উপহার পেলে আপনার জীবনসঙ্গী নিজেকে সৌভাগ্যশালী মনে করবেন।

৯. দরকারে সঙ্গীকে সাহায্য করুন:

সারাদিন অফিস করে আসার পর যদি দেখেন আপনার স্ত্রী অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন কিন্তু তাসত্ত্বেও তাকে ঘরের সব কাজ সামলাতে হচ্ছে, তবে নিজের থেকে এগিয়ে তাকে সাহায্য করুন। অর্থাৎ হাতে হাতে তাকে একটু রান্নায় বা বাসন মাজতে সহায়তা করুন।

কাজ ভাগ করে নিলে তা তাড়াতাড়িও হবে এবং একজনের উপর চাপ পড়বে না।

এছাড়া যদি কখন এমন হয় যে, আপনি নিজের সঙ্গীর সাথে সময় কাটাতে চাইছেন কিন্তু সে হাজারো কাজে ব্যস্ত হয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারছেন না, তবে তার উপর রাগ করবেন না। সঙ্গীর সমস্যা বুঝে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার জন্য এই ছোট ছোট বিষয়ে আপনাকে ধ্যান অবশই দিতে হবে। 

১০. বৈবাহিক জীবনে রোম্যান্স বাঁচিয়ে রাখুন:

দীর্ঘমেয়াদি ও সজীব বৈবাহিক জীবনের অন্যতম ‘টপ সিক্রেট’ হল জীবনে রোমান্টিকতাকে বজায় রাখা। সম্পর্ক অনেক দিনের হয়ে গেলে বা বয়স ৪০-এর গোড়া পেরিয়ে গেলেই মানুষের মধ্যে রোম্যান্টিক থাকার ভাবনা বিলাসিতা স্বরূপ মনে হয়।

বিশেষত বাচ্চা হওয়ার পর বিবাহিত জীবন সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন একে অপরের জন্য সময় বের করারই দুস্কর হয়ে ওঠে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য সময় বের করে নিতে হবে। একটু অবসর পেলে ঘুরতে যান, পুরোনো স্মৃতিচারণ করুন, ডেট নাইটে যান। মোট কথা প্রেমে ডুবে থাকুন এবং জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করুন।

তাহলে বন্ধুরা, আশা করছি আমাদের বলা এই দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায় গুলো আপনাদের কাজে অবশই লাগবে। যেকোনো ধরণের সম্পর্কেই নিজে নিজে খুশি থাকা যায়না। সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ছোট ছোট চেষ্টা ও ধাপ গুলো করতে থাকতেই হয়। ঠিক সেভাবেই বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার জন্যও আপনাকে ছোট বড় বিভিন্ন বিষয়ে নজর দিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.