নিজের স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার সেরা উপায় গুলো – (নিজের প্রেমে ফেলুন) Muhammed Juwel Ahmed |
যদি আপনিও নিজের স্বামীর থেকে অতিরিক্ত আদর ভালোবাসা পেতে চাইছেন, তাহলে নিচে দেওয়া উপায় গুলো অবশই দেখুন।
ধরো ক্লান্ত তুমি,
অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে
ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতাটাটি কম বেশি আমরা সবাই জানি।
ভালোবাসা শব্দটা ছোটো তবে এর গভীরতা অনেক বেশি। দুটি মানুষের একে অপরের প্রতি নিজেদের মনের ভাব, অনুভূতি প্রকাশিত হয় “ভালোবাসা” শব্দটি দিয়ে।
কিন্তু কোনো বইতে ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায় না।
লেখক কবিরা তাদের গদ্যে পদ্যে কত অলংকারে, কত শব্দের মায়াজালে সাজিয়ে তোলে ভালোবাসার গল্পগুলো।
খুব সহজ করে বলতে গেলে ভালোবাসা হল কোনো একজনের প্রতি মনের বিশেষ অনুভূতি বা আকর্ষণ।
আর যে মানুষের প্রতি মনের এই বিশেষ আকর্ষণ সেই ভালোবাসার মানুষ।
ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে নিজেদের মনের কথা, ব্যথা, অনুভূতি সমস্ত কিছু ভাগ করে নেওয়া যায়।
সারাদিনের যন্ত্রণা তার মুখের হাসির সাথেই মিলিয়ে যায়।
একজন স্ত্রীর কাছে তার ভালোবাসার মানুষ তার স্বামী। নিজেদের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, সুখ তারা একে অপরের সাথে ভাগ করে নেয়।
তারা একে অপরের পরিপূরক। তাই তারা একে অপরের দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে বিশেষ ভাবে বহন করে নেয় বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে অদৃশ্য ভালোবাসার বন্ধন থাকে তা যেন আলগা হয়ে যায়। উদাসীনতা জন্মায়।
ভালোবাসা মিলিয়ে আসতে থাকে।
খুব দুঃখের বিষয়, আজকের সমাজে প্রায়ই দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় একজনের প্রবেশ।
একটি সুন্দর ফুলে যদি কোনো পোকা বসে, তাহলে সে যেমন সমস্ত ফুলটিকে নষ্ট করে দেয় তেমনি অপর কারোর প্রবেশ ভালোবাসার পবিত্র সম্পর্কটিকে নষ্ট করে দেয়।
স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার উপায় গুলো – (সেরা ৬ টি উপায়)
পাঠক যদি ভাবছেন যে নিজের স্বামীদের কিভাবে ভালোবাসবেন এবং কিভাবে আপনার স্বামী আপনাকে ভালোবাসবে,
তাহলে এই লেখাটি কেবল মাত্র আপনাদের জন্য।
লেখাটিতে কেবল কিভাবে স্বামীর ভালোবাসা পাওয়া যাবে বা ভালোবাসা পাওয়ার উপায়ের কথা লেখা থাকবে তা নয়, তবে কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে তাও বলা থাকবে।
তাই লেখাটি মন দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
মনে রাখবেন, ভালোবাসা পাওয়ার আগে ভালোবাসা দিতে জানাটা দরকার। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম হয় না।
এটি সম্পূর্ণ নিজেদের অনুভূতি। সবাই যে তা ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে এমনটাও নয়।
কিন্তু কিছু জিনিস থাকে যা প্রায় সবাই করে থাকে।
স্বামীর ভালোবাসা পাবার জন্য যে পন্থা গুলি অনুসরন করতে পারেন —–
১) নিজের স্বামীর যত্ন নিতে পারেন
হয়তো আপনার স্বামী সারাদিন অফিসে কাটিয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরেন ক্লান্ত হয়ে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনার স্বামীর মনের অবস্থাকে এবং আপনার আচরণ হতে হবে সেই রকম হবে যা আপনার স্বামীর মনের ক্লান্তি দূর করবে।
মনে রাখবেন আপনি তার সহধর্মিণী। আপনার কাজ আপনার স্বামীকে সাহায্য করা, তার পাশে দাঁড়ানো।
আপনি যদি রাতে তার পছন্দের খাবার রান্না করেন, তাকে সুন্দর করে খাবার পরিবেশন করলেন, হাসি খুশী মনে তার সঙ্গে কথা বললেন, দেখবেন তিনি আপনার সঙ্গ উপভোগ করছেন।
তিনিও আপনার সঙ্গে হাসি খুশী মেজাজে কথা বলছেন।
আপনার স্বামীর অফিসে যাবার সময় আপনি ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন, তার পোশাক রেডি করে রাখলেন, তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন।
দেখবেন, এই সামান্য কাজগুলো আপনার প্রতি আপনার স্বামীর মনোভাব নরম করছে, আপনি যদি নিজের সময় গুলোর কিছুটা আপনার স্বামীর এবং আপনার পরিবারের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে কাটাতে পারেন দেখবেন আপনার প্রতি আপনার স্বামীর ভালোবাসা দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে।
২) স্বামীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন
আপনারা দুজনেই হয়তো কাজের সময় ব্যস্ত থাকতে পারেন। নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কথা হয় না।
শেষ কবে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন বলতে পারবেন না।
তাহলে বুঝতে হবে আপনার কিন্তু ভিতরে ভিতরে একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছেন।
ভালোবাসার মানুষের কাছে পৌছানো কঠিন। কিন্তু কখন আপনি ভিতরে ভিতরে তার থেকে দূরে যাবেন, সেটা কেউ জানে না।
তাই নিজেদের কাজের সময়ের মধ্যেও কিছুটা সময় আলাদা করে রাখতে হয় বিশেষ মানুষটির জন্য।
সেটি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় হতে পারে বা সপ্তাহের একটা দিন হতে পারে।
যেকোনো একটা সন্ধ্যা আপনারা নিজেদের মতো করে কাটান।
দুজনে একসঙ্গে ঘুরতে যেতে পারেন। নিজেদের মনের কথা, ভালোবাসার কথা, অতিত-ভবিষ্যতের কথা আরো কত জমে থাকা কথা মন খুলে কথা বলতে পারেন।
এভাবে একে অপরকে আবার চিনতে পারবেন, জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন।
আপনার উল্টোদিকের মানুষের মনের অবস্থা তখন বোঝা যায়, যখন আপনি তার সঙ্গে সময় কাটাবেন।
একসঙ্গে ঘুরতে যেতে পারেন, সিনেমা দেখতে যেতে পারেন, পার্কে যেতে পারেন, শপিং মলে যেতে পারেন।
আপনারা যত নিজেদের মধ্যে সময় কাটাবেন তত আপনারা একে অপরের কাছে চলে আসবেন।
আপনার স্বামী আপনাকে বুঝতে পারলে আপনাদের মধ্যে বন্ধন আরো দৃঢ় হবে এবং আপনারা একে অপরের আরো গভীর ভাবে ভালোবাসতে পারবেন।
তখন দেখবেন আপনারা স্বামীর আপনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশিত হচ্ছে।
৩) নিজেদের পুরানো স্মৃতি গুলো স্মরণ করতে পারেন
আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে সময় পেলেই দুজনের একসাথে কাটানো আনন্দের বা মজার মুহুর্ত গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
এতে আপনাদের একে অপরের সঙ্গে কাটানো সময় গুলো মনে পড়ে যাবে।
পুরানো অ্যালবাম গুলো একসাথে বসে দেখতে পারেন। একে অপরকে নিজেদের গল্প বলতে পারেন। নিজেদের স্কুল জীবনের স্মৃতি, কলেজ জীবনের স্মৃতি, অফিসের কথা,যত আলোচনা করবেন দেখবেন তত আপনারা একে অপরের কাছে চলে আসছেন, একাত্ম হয়ে যাচ্ছেন।
ভালোবাসা মানে শুধু সেই মানুষটাকে ভালোবাসা তা নয়, তার সুখ, দুঃখ, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, ভালো মন্দ সবটাকে এক সাথে ভালোবাসা।
তাই নিজেদের পুরানো স্মৃতি, দুজনের একসাথে কাটানো সময় নিয়ে আলোচনা করলে দেখবেন আপনাদের পুরানো প্রেম আবার জ্বেগে উঠছে, যা আপনাদের ভালোবাসাকে আরো দৃঢ় করবে।
৪) নমনীয় আচরণ করার চেষ্টা করতে পারেন
রাজা বিক্রমাদিত্য একটি শুকনো গাছের ডাল দেখিয়ে তার মহাকবিদের একটি কবিতা বলতে বলেন, বেশির ভাগ কবিরাই বললেন “শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠতি অগ্রে” কিন্তু কালিদাস বললেন “নীরস তরুবর পূরতি ভাগে”।
আপনি কি বলছেন বা আপনি কত সুন্দর সুন্দর শব্দ তাতে যোগ করেছেন তার থেকেও বড়ো কথা বলার সময় আপনার আচরণ কেমন হচ্ছে, এইটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার স্বামীর প্রতি আপনার আচরণ যেন নমনীয় হয়।
আপনি যদি আপনার স্বামীর সঙ্গে বিরক্ত হয়ে, রেগে গিয়ে সব সময় কথা বলতে থাকেন তাহলে দেখবেন আপনার প্রতি আপনার স্বামীর আচরণ দিন দিন বদলাচ্ছে, শুধু তাই নয় তা আপনাদের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে।
তাই আপনাকে আপনার আচরণ নমনীয় রাখতে হবে।
হয়তো আপনাদের মধ্যে কোনো কারন নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে, অশান্তি হয়েছে তাই নিয়ে কখনো ইগো দেখানো উচিত নয়।
আপনাদের মধ্যে যদি কোনো ভাবে ইগো চলে আসে তাহলে অজান্তেই আপনারা একে অপরের থেকে দূরে চলে যেতে থাকবেন।
তাই যদি অশান্তি বা অভিমান হয়েছে থাকে তাহলে তা মিটিয়ে নিন।
আপনাদের দুজনকেই বুঝতে হবে আপনারা একে অপরের পরিপূরক, একে অপরের জীবনসঙ্গী।
আপনার আচরণ যদি নমনীয় হয় তাহলে দেখবেন আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে কথা বলছে, আপনার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইছে, এইগুলি কিন্তু আপনার প্রতি আপনার স্বামীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
৫) আপনার স্বামী জন্য উপহার কিনে আনতে পারেন
উপহার পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম দেখা যায়। তাও সেই উপহার যদি কোনো প্রিয় মানুষ দেয় তার আনন্দই আলাদা।
আপনি মাঝে মধ্যে আপনার স্বামীর জন্য উপহার কিনে আনতে পারেন।
খুব দামী উপহার নয় কিন্তু আপনি যদি পছন্দ করে কিনে আনেন দেখবেন আপনার স্বামী আনন্দিত হবে।
পুজোর সময় দুজনে যদি শপিং এ যান আপনি যদি আপনার স্বামীর জন্য কোনো পোশাক পছন্দ করে দিলেন এবং কোনো বিশেষ দিনে পড়তে বললেন দেখবেন উনি খুশী হবেন।
হয়তো দেখবেন উনিও আপনার জন্য অফিস থেকে ফেরার পথে গিফট নিয়ে আসছেন।
ভালোবাসা বহিপ্যকাশের সবথেকে সহজ পথ হল অপরকে কিছু উপহার দেওয়া।
ধরা যাক যে উপহার আপনার স্বামী আপনাকে দিল তা আপনার পছন্দ হল না। আপনি তা গ্রহণ করলেন না বা গ্রহণ করলেও তা ব্যবহার করলেন না।
এই আচরণ উল্টো দিকের মানুষটাকে মর্মাহত করবে।
শুধু তাই নয় আপনার জন্য হয়তো আর কখনো কোনো উপহার আনবে না। তাই, আপনাকে যা দেবে তাই হাসি মুখে গ্রহণ করতে শিখতে হবে।
আপনার মুখের হাসি আপনার স্বামীর ভালোবাসা পাওয়াতে অনেক সাহায্য করবে, আপনাকে কিছু গিফট করলে আপনি যদি আনন্দিত হন যিনি গিফটি দিলেন তিনিও আনন্দিত হন আর আপনার পছন্দ না হলে তারও খারাপ লাগে।
তাই একে অপরকে উপহার দিন। এতে ভালোবাসা বাড়ে।
৬) নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিতে পারেন
ছুটির দিনে যখন দুজনে ঘরে থাকেন একে অপরের সঙ্গে কাজ ভাগ করে নিতে পারেন।
এতে একে অপরের কাছে আসতে পারবেন।
একসাথে নিজেদের মতো ঘর গোছাতে পারেন, একসাথে দুজনে মিলে রান্না করতে পারেন, একসাথে গাছ লাগাতে পারেন, আপনি আপনার স্বামীকে আপনার পছন্দের খাবার রান্না করতে বলতে পারেন।
এছাড়া আপনি ওনাকে কাজে উৎসাহ দিতে পারেন বা আপনার নিজের কাজে আপনি আপনার স্বামীর সাহায্য চাইতে পারেন।
দেখবেন কাজটি হবে সাথে সাথেই আপনাদের সম্পর্কটা নবীন হয়ে ওঠবে।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে থাকার থেকেও বড়ো কথা হল স্বামী- স্ত্রী সম্পর্কটিকে উপভোগ করা।
আপনারা যদি ভাবেন যে সম্পর্ক টি আপনাদের দায় বা আপনাদের ওপর জোড় করে চাপিয়ে দিয়েছে তাহলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা কমে যাবে।
আমাদের শেষ কথা,,
শেষে এইটুকুই বলব আপনার স্বামীকে আপনার ইমপ্রেস করার প্রয়োজন নেই। আপনারা যদি নিজেদের সমস্ত মনের কথা দুজনের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারেন, কাজের দায়িত্ব দুজনে নিতে পারেন এবং একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারেন তাহলে আপনাদের সম্পর্ক চির মধুর হবে।
আপনার স্বামীর ওপর আপনার শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, ভালোবাসাই আপনার ভালোবাসা প্রাপ্তির মূলে।
জীবন সঙ্গীর সঙ্গে জীবনের সফর টা দুজনকেই একসাথে হাঁটতে হবে, একসাথে ভালোবাসতে হবে।
শেষে, স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার উপায় গুলো নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনার কিরকম লাগলো সেটা নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে কিন্তু ভুলবেননা।
কোন মন্তব্য নেই