যেকোনো সম্পর্ক ভালো রাখার সেরা 10 টি উপায় | Muhammed Juwel Ahmed |
জীবন মানেই একরাশ অনুভূতির সম্ভার। আর মানুষের জীবন এই ধরণের অসংখ্য অনুভূতি নিয়ে তৈরী।
মানুষের একে অপরের উপর এই অনুভূতি থেকেই তাদের মধ্যে তৈরী হয় নিবিড় সম্পর্ক।
ভালোবাসার মোড়কে মোড়ানো এই সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে হয় অতি যতনে।
মানুষের মন প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তনশীল। আর ভালোবাসা যেহেতু হল খুব সূক্ষ অনুভূতির সমষ্টি, তাই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে গেলে প্রয়োজন প্রবল যত্নের।
ঠিক যেমন, একটি গাছকে পরিপুষ্টভাবে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ সার, মাটি, জল আর আলোর, ঠিক তেমনই সম্পর্ক ভালো রাখতে গেলে প্রয়োজন ভালোবাসার পাশাপাশি, সেই ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখার উপায়।
আমাদের মানবজীবনে আমরা নানা রকম সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে থাকি।
মা বাবার হাত ধরে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে শুরু হয় এই সম্পর্কের সূচনা। এরপর একে একে আসে ভাই, বোন, কাকা, কাকী, দাদু, দিদা ও নানা মানুষের সাথে সম্পর্ক।
এই প্রতিটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি ভালোবাসার হলেও তাদের রূপ ও বৈশিষ্ট্য একে অন্যের থেকে একেবারেই অন্যরকম। প্রতিটা সম্পর্কই আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
রক্তের সম্পর্ক আমরা নিজেরা তৈরী করতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু বন্ধুত্ব বা প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক সুম্পূর্ণটাই আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে।
আর এই প্রতিটি সম্পর্ক হল সূক্ষ সূক্ষ মাকড়সার জালের মতো, যা এক আঘাতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কিংবা বলা যেতে পারে, কোনো সম্পর্ক থেকেই পুরোপুরি বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়, কারণ সম্পর্ক যেন আমাদের আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে, ঠিক এই মাকড়সার জালের মতোই।
যেকোনো সম্পর্ক ভালো রাখার উপায় – (সেরা ১০ টি)
এক অদৃশ্য মায়ার বাঁধনই হল এই সম্পর্ক। যা অটুট রাখতে পারলেই মানবজীবনের অর্ধেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যায়।
তাই, এই লেখার উদ্দেশ্যই হল ভালো সম্পর্ক ধরে রাখতে গেলে আমাদের কি কি করার প্রয়োজন রয়েছে, সে সম্বন্ধে আপনাদের অবগত করা।
আর, আজকের এই লেখা থেকে আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে যেকোনো সম্পর্ক ভালো রাখা যাবে সেটা নিয়ে কিছু টিপস এবং উপায়।
প্রথমেই কোনো সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি হল –
১. বিশ্বাস:
যেকোনো সম্পর্কের দৃঢ়তার পিছনে বিশ্বাস অত্যন্ত শক্ত একটি ভিত্তি।
সমাজ কেন, বরং এই পুরো দুনিয়াটাই চলছে বিশ্বাসের উপর।
কথায় আছে, ‘আয়না ও বিশ্বাস, একবার ভাঙলে আর জোড়া লাগে না”.
তাই, একটি গাঢ় সম্পর্ক তৈরিতে বিশ্বাস একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্বাস, আর কিছুই নয়, একে অন্যের প্রতি টিকে থাকা ভরসা।
দিনের শেষে মানুষ এমন একজনের কাঁধ খোঁজে, যা তার কাছে অতি বিশ্বাসের।
কারণ মানুষ জানে, একটা বিশ্বস্ত কাঁধ থাকলে জীবন ও মৃত্যু দুইই খুব আরামের মনে হয়।
২. সততা:
সত্যি কথা বলতে, আমরা পৃথিবীতে এমন সব মানুষের সঙ্গে কামনা করি, যারা কোনোভাবেই আমাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে না।
আর এই বিশ্বাস তৈরী হওয়াটাও সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে, কোনো মানুষের সততার উপর।
লোকে বলে, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”, তাই কেউই চায় না তাদের জীবনে স্বর্গের সুখের পরিবর্তে সর্বনাশ নেমে আসুক।
তাই, প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবেই সততা একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় উপাদান।
৩. সহানুভূতি:
যখন আমরা কোনো সম্পর্কে জড়াই তখন আমাদের সকলের প্রথম চাহিদা থাকে মানসিক নির্ভরশীলতা।
গৌতম বুদ্ধ বলে গেছেন, ‘সম্মান ছাড়া প্রেম হারিয়ে যায়, যত্ন ছাড়া প্রেম বিরক্তিকর, সততা ছাড়া প্রেম অসুখী, আর বিশ্বাস ছাড়া প্রেম অস্থায়ী”।
তাই, যত্নের পাশাপাশি আমাদের উচিত আমাদের সম্পর্কের মধ্যে সহানুভূতির মনোভাবকে জাগিয়ে রাখা।
আমরা যদি আমাদের আপনজনের কাছেই খোলামেলা মনে মিশতে না পারি, কিংবা তাদের থেকে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহারই যদি না পাই, তবে সেই সম্পর্কের গুরুত্বটাই বা কোথায় থাকে ?
সেই কারণেই আমাদের উচিত একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
৪. অনুভূতির প্রকাশ:
আমরা সেইসব মানুষের সাথেই আত্মিক যোগাযোগ খুঁজে পাই, যাদের কাছে খুব সহজেই আমরা অনভূতি প্রকাশ করতে পারি।
আবার, এমনও অনেক সময় আসে, যখন আমরা চাই, আমাদের কাছের মানুষ আমাদের মনের কথা বুঝুক।
কিন্তু, মানুষ যে অন্তর্যামী নয়, তাই মুখ ফুটে কথা না বললে, তারা অনেকসময়ই বুঝতে পারে না।
তাই, আমাদের উচিত সম্পর্কের জটিলতা এড়াতে নিজের অনুভূতিগুলো সরাসরিভাবে আমাদের কাছের মানুষের কাছে ব্যক্ত করা।
তাই, আমাদের ভালোলাগা, খারাপ-লাগা আমরা যদি সহজে বলে ফেলতে পারি, তবে অনেক ক্ষেত্রেই বিবাদকে আটকানো সম্ভব হয়, এতে অনেক সম্পর্কই ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
৫. গুরুত্ব প্রদান:
পারস্পরিক মর্যাদা যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক একটা শর্ত।
যেকোনো মানুষই চায়, তার চাওয়া-পাওয়া বা দাবিদাবা শোনার বা পূর্ণ করার কেউ একজন অন্তত থাকুক।
যার কাছে একজন ব্যক্তি হিসেবে তার কদর সবার আগে।
সম্পর্কে থেকে যদি আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হই কিংবা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা না দিই, তাহলে কি করে আমরা সেই সমপরিমাণ মর্যাদা আশা করতে পারি তাদের থেকে।
একজন মানুষকে পরিপূর্ণভাবে ভালোবাসতে গেলে তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া সবার আগে প্রয়োজন।
৬. সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করা:
কোনো সম্পর্কের মাধুর্য্য ধরে রাখতে গেলে সম্পর্কের মধ্যে অন্তরঙ্গতার প্রয়োজন রয়েছে।
আর, এই অন্তরঙ্গতা তৈরির ক্ষেত্রে দরকার একে অন্যের সাথে মিলেমিশে সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী থাকার।
বর্তমান যুগে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা রকমের প্রতিকূলতা।
এই প্রতিকূলতার মধ্যে অন্যতম কারণটি হল প্রযুক্তি।
এই সময় মানুষ ডিজিটাল জগতে এতটাই বুঁদ হয়ে রয়েছে, যে আশেপাশে থাকা সমস্ত মানুষের প্রতি তারা আবেগহীন হয়ে পড়ছে।
মানুষ ভুলে যাচ্ছে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার কথা।
তাই, সম্পর্কগুলোও আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে পড়ছে আর হারিয়ে ফেলছে গুরুত্ব।
এইরকম সময় তাই আমাদের উচিত নিজেদের কাছের মানুষদের নিয়ে সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত কাটানো, যাতে ভবিষ্যতে এই মুহূর্তগুলোর উপর নির্ভর করেই আপনার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।
৭. অহেতুক প্রশংসা:
প্রশংসা শুনতে কম-বেশি সব মানুষই পছন্দ করে। প্রতিটা মানুষই জীবনের কোনো না কোনোক্ষেত্রে অন্যের কাছ থেকে প্রশংসার দাবি রাখে।
আসলে, কিছুই নয়, ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া একটু প্রশংসাই মানুষের অনেকখানি মনোবল বাড়িয়ে দেয়।
নিজের ভালোবাসার মানুষকে অহেতুক প্রশংসা করলেও একটা অন্যরকম আনন্দ অনুভূত হয়।
এই সামান্য প্রশংসাতেই তাদের মুখে যে হাসি ফুটে ওঠে, তা দেখলে মনে এক অন্য ধরণের শান্তি পাওয়া যায়।
৮. স্বাধীনতা:
সম্পর্ক কোনোদিন জোর করে, ধরে-বেঁধে হয় না। তাই সম্পর্কে বজায় রাখতে গেলে কখনোই কারোর অমতে সেটা করা সম্ভব নয়।
এই কারণেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান এক অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ।
প্রতিটি মানুষ তার নিজের ইচ্ছা পোষণ করতেই পারে, সেটা তার ব্যক্তিগত অধিকার।
তাই আপনার ও তার সম্পর্কের মধ্যে স্বাধীনতা থাকলে, তা আপনাদের দুজনের পক্ষেই মঙ্গলজনক।
তার কারণ, ভালোবাসতে গেলে কিংবা সম্পর্ক সঠিকভাবে রাখতে গেলে, মানুষের নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে চেনা বা বোঝা সবার আগে দরকার।
তা নাহলে, বিনা কারণেই অনেক সময়ই সম্পর্কে নানান জটিলতা দেখা দেয়।
কথায় আছে, ভালবাসায় কেউ স্বাধীনতা হারায় না বরং সেই স্বাধীনতা অন্যের সাথে ভাগ করে নেয়।
৯. যত্ন নেওয়া:
সম্পর্ক ভালো রাখতে গেলে, আপনার প্রিয় মানুষের প্রতি যত্নবান হওয়াটা একান্ত প্রয়োজনীয়।
যত্ন না পেলে সব জিনিসই তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে।
ঠিক তেমনই সম্পর্কের মধ্যে যত্ন না থাকলে, ভালোবাসা তার গুরুত্ব হারায়।
আপনার প্রিয় মানুষ অবশ্যই আপনার থেকে যত্নের আশা করে।
যত্ন করতে গেলে বেশি কিছু করার যে প্রয়োজন পড়ে, তাও নয়, শুধু একটু খেয়াল রাখা, টুকিটাকি কাজে সাহায্য পেলেই মানুষ খুশি হয়।
তাই যত্ন করার মানেই হল সবসময় পাশে থাকার ও সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি।
১০. ত্যাগই ধর্ম:
কোনো সম্পর্কের মধুরতা বজায় রাখতে গেলে অনেকসময়ই আমাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।
ত্যাগের মাধ্যমে যদি কোনো মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়, তার থেকে বেশি সুখকর জিনিস হয়তো এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
কোনো বৃহত্তর স্বার্থে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে যদি ত্যাগের মাধ্যমে সুখলাভ করা যায়, তবে সম্পর্ককে মজবুত করতে ত্যাগের প্রয়োজন একান্তই জরুরি।
গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, “ভালোবাসার কোনোদিন নিখুঁত হওয়ার প্রয়োজন নেই, ভালোবাসা শুধু সত্য হলেই অনেক”।
অর্থাৎ, কোনো সম্পর্কের মধ্যে যদি সত্যতা নিহিত থাকে, তবে সেখানে ভালোবাসার পূর্ণতা নিয়ে কখনোই কেউ মাথা খারাপ করে না।
সম্পর্ককে চাঙ্গা রাখতে আপনার প্রিয় মানুষগুলোকে আপনার অমূল্য সময় দিন। কারণ মানুষের জীবন অনেকটা পদ্মপাতায় জলের মতো, এই আছে আর এই নেই।
তাই, সময়ের চেয়ে মূল্যবান কোনো উপহার মানুষের কাছে কোনো কিছুই হতে পারে না।
যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সময় দেওয়াটা একটা জরুরি অঙ্গ।
এছাড়াও, একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বললেই অনেক সম্পর্ক এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।
তাই, দৈনিক যোগাযোগ রাখা সম্ভবপর না হলে, সাপ্তাহিক যোগাযোগ করাটা একান্তই প্রয়োজনীয়।
আমাদের আজকালকার সম্পৰ্কগুলো ঠুনকো হয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে মন খুলে মেশার বা কথা বলার অভাব।
অথচ, আমরা যদি নিজেদের মনের ভাব অন্যকে খুলে বলতে পারি কিংবা অপরের কথা আমরা মন দিয়ে শুনি, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো সম্পর্কই কিন্তু জটিল হয়ে উঠতে পারে না।
তাই সম্পর্ক ভালো রাখার সবথেকে ভালো উপায় হল দুশ্চিন্তা না করে মন খুলে একে অন্যের সাথে কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করা।
আমাদের শেষ কথা,,
আজকে আমাদের এই সম্পর্ক ভালো রাখার উপায় গুলো নিয়ে লিখা লেখাটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পড়ে যদি আপনার ভালোলাগে তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এছাড়া, লেখাটি সত্যি ভালো লেগে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অবশই শেয়ার করবেন।
কোন মন্তব্য নেই