ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কি করা উচিত ? Muhammed Juwel Ahmed |
ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কি করা উচিত ? আজকের আমাদের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো এটি। আমাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে কাওকে না কাওকে ভালো অবশই পেয়েছি।
আর ভালোবাসার ক্ষেত্রে কষ্ট পাওয়াটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, কেননা ভালোবাসার মধ্যে দুঃখ, কষ্ট, খুশি ইত্যাদি প্রত্যেকটি ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।
অনেক সময় আমরা যাদের মন প্রাণ দিয়ে ভালো বেশে থাকি তারাই আমাদের প্রচুর কষ্ট দিয়ে থাকে, আর সেই কষ্ট অনেকটাই বেশি অনুভব হয়ে থাকে।
বন্ধুরা, জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে কম বেশি সবাই প্রেমে পড়ে।
মনের ক্যানভাসে আঁকা হয় কত রঙিন স্বপ্প। সব স্বপ্ন সত্যি হয় না।
কেউ হয়তো তার ভালোবাসার মানুষকে পায়, কেউ পায়না। তবে জীবনে ভালোবাসার মানুষের থেকে কষ্ট প্রায় সবাই পেয়েছে।
ভালোবাসা কাকে বলে ?
আমরা ভালোবাসা নিয়ে অনেক কিছুই ভাবি, কত কিছু লিখি, তবে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে,”ভালোবাসা মানে কি? বা ভালোবাসা কাকে বলে ?” তাহলে অনেকেই হয়তো উত্তর দিতে পারব না।
তাহলে দেখে নেওয়া যাক, এই ভালোবাসা আসলে কী ?
খুব সহজ করে বলতে গেলে ভালোবাসা হল এক প্রকার অনুভূতি, যা কোনো একজন বিশেষ মানুষের প্রতি আমাদের মনের স্নেহ, আবেগ, এবং অনুভূতির শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ।
আর যে মানুষটার প্রতি আমাদের এই বিশেষ অনুভূতি, সেই মনের মানুষ।
আমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, যাকে আমরা ভালোবাসি, যার জন্য চিন্তা করি, যার কথা ভাবি, সে কি কষ্ট দিতে পারে ?
মনে রাখতে হবে যারা আপন, যাদের আমরা নিজের খুব কাছের মনে করি, তাদের থেকেই বেশি আঘাত আসে, মন মানতে চায় না সে কষ্ট দিতে পারে ?
কারন সে আমাদের খুব কাছের তাই।
অচেনা মানুষের কোনো কথা বা আচরন আমাদের যতটা আঘাত করে, সেই একই আচরণ কাছের কোনো মানুষের থেকে পেলে আঘাত অনেক বেশি লাগে, কষ্ট বেশি হয়।
তবে এটাও বলা যায় না যে আপনাকে যে আঘাত করেছে সে সবসময় জেনে বুঝে আঘাত করেছে বা তার সত্যি আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছিল।
ভালোবাসার মানুষের খুব সামান্য আঘাত আমাদের অনেক বেশি কষ্ট দেয়।
বিশ্বাস হল সবকিছু। ভালোবাসাতেও বিশ্বাস না থাকলে যা পূর্ণতা পায় না।
হয়তো ভাবাই যেতে পারে, জীবনে কী ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা আছে ? ভালোবাসা ছাড়াও তো মানুষ বাঁচতে পারে, ভালোবেসে কি হবে ?
ভালোবাসার মানুষটার থেকে আঘাত পাওয়া, মনের কষ্ট, ওসব না হলেও জীবন চলে।
তাহলে বলতেই হয়, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ভালোবাসার প্রয়োজন আছে,
কারন ভালোবাসা হল কোনো এক বিশেষ মানুষ, বা বস্তুর প্রতি আপনার স্নেহ, অনুভূতি, বিশ্বাস, আবেগ।
হতে পারে সে আপনার কাছের কেউ বা আপনার কোনো প্রিয় জিনিস।
আমরা যত অনুভূতি প্রবন হব, ভালোবাসা তত তীব্র হবে, জীবনের বাঁচার চাহিদা বৃদ্ধি করবে, জীবনকে আরো রঙিন করে তুলবে।
বাঁচার স্বপ্ন সবাই দেখে তবে কজন পারে সেই স্বপ্ন কে বাস্তব করে তুলতে, ভালোবাসায় তা সম্ভব।
আপনার চিরাচরিত জীবনকে বদলে দিতে পারে ভালোবাসা।
ভালোবাসার মানুষের থেকে কীভাবে আমরা কষ্ট পেতে পারি
চলুন, এবার আমরা সরাসরি জেনেনেই যে আমাদের প্রিয়জন বা ভালোবাসার মানুষটি আমাদের কোন কোন ক্ষেত্রে কষ্ট দিতে পারে।
১) আঘাত দিয়ে কথা বলতে বা আশাহত হলে
আমরা সব সময় যা চাই তা পাইনা এবং আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে অন্য কারোর চিন্তাধারার মিল হবে তেমনটা কখনোই আশা করা ঠিক নয়।
তবে নিজেদের ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারা কিছুটা মিলে যায়।
যখন আমাদের ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে আমাদের মনোমালিন্য হয়, বা কোনো কথা নিয়ে কথা কাটাকাটি/ দ্বন্দ লাগে তখন যদি কেউ একজন অনিচ্ছাকৃত আঘাত দিয়ে কথা বলে, তখন কষ্ট লাগে।
আসলে কোনো কথা যেটা অচেনা মানুষের বলা আর খুব কাছের মানুষের বলা, দুটোর অনেক তফাৎ আছে।
২) কোনো কারনে অবহেলা করলে বা যোগাযোগ না রাখলে
ভালোবাসার মানুষ দীর্ঘ দিন অবহেলা করুক বা একদিনের জন্য অবহেলা করুক, আঘাত দুই ক্ষেত্রেই আসে, কখনো কম কখনো বেশি।
আমরা হয়তো আমাদের সারাদিনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা দিনের কোনো একটা সময় বিশেষ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিই, ফোনকল, ভিডিওকল বা ম্যাসেজের মাধ্যমে।
অনেকেরই হয়তো সারাদিনের ক্লান্তি, অবসন্নতা কেটে যায় প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে।
আবার অনেকেই দীর্ঘদিনের কথা জমিয়ে রেখে একদিনে তা শেয়ার করে।
যদি আমাদের ভালোবাসার মানুষ আমাদের অবহেলা করে, ঠিকমতো ম্যাসেজের উত্তর না দেয়, ফোনকল কেটে দেয়, ব্লক করে দেয় বা দেখা হলেও কথা না বলে তাহলে আমাদের দারুন কষ্ট হয়।
বিরহ আমাদের একে অপরের থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়।
৩) কোনো কারনে সম্পর্ক ভেঙে গেলে
হৃদয় ভাঙার যন্ত্রনা সবথেকে মারাত্মক। এই ব্যথা প্রকাশ করা যায় না। কেবল নিজের অন্তরে অনুভূত হয়।
ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে চলে গেলে, যে কষ্ট হয়, সেই রকম কষ্ট খুব কম ক্ষেত্রেই মানুষ অনুভব করে।
হয়তো কোনো কারনে আর একসাথে পথচলা হল না।
জীবনের মায়া জড়ানো মাঝ পথেই হয়তো তাকে বিদায় নিতে হল, অনেকেই এটা মেনে নিতে পারে না।
সেই মানুষটার কথা বারবার মনে পড়ে, স্মৃতিতে ফুটে ওঠে তার সাথে কাটানো সময়ের কথা।
শুধু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে চলবে না চাই সমাধান।
দেহের যেকোনো অসুখের থেকে মনের অসুখ অনেক বেশি ক্ষতিকর।
ভালোবাসার মানুষের থেকে কম বা বেশি যে পরিমান আঘাত পেয়ে থাকি না কেন, এই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে হবে। কিভাবে কাটাব এই কষ্ট ?
ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কি করা উচিত
চলুন, এবার আমরা সরাসরি জেনেনেই ভালোবাসার মানুষটি যদি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে তাহলে কি কি উপায়ের মাধ্যমে সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন।
১) নিজের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো যেতে পারে
নিঃসঙ্গতা আমাদের আরো কষ্ট বাড়িয়ে দেয়।
তাই এইরকম পরিস্থিতিতে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো প্রয়োজন। এতে মন ভালো থাকবে।
বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা, কাছাকাছি কোথাও ভ্রমন, ভালো সিনেমা দেখা বা রেস্টুরেন্টে যাওয়া এই গুলো আমাদের মনের একঘেয়েমি কাটাবে, মনকে আনন্দ দেবে।
সাথে সাথেই প্রিয় মানুষের সঙ্গে কাটানো মুহুর্ত গুলো কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মন থেকে দূরে থাকবে।
২) সৃজনশীল কাজের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখা যেতে পারে
এইসময় যেহেতু মন আঘাত প্রাপ্ত হয় তাই আমাদের মানসিক একাগ্রতা কমে যায়, কোনো কাজে মন থাকে না, কাজে ভুল হয়ে যায় ইত্যাদি।
তার জন্যই আমাদের এই সময় সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
গাছেদের যত্ন নেওয়া, নতুন গাছ লাগানো, ছবি আঁকা, গল্পের বই পড়া, গান গাওয়া, ভালো গান শোনা।
আমাদের মনের সঙ্গে গানের খুব গভীর সম্পর্ক।
এই সময়ে আমরা যদি বিরহের গান শুনি আমাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে, মনকে শান্ত রেখে আনন্দের গান শুনতে হবে।
আমাদের এমন কাজের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখতে হবে যাতে ভালোবাসার মানুষের কথা মনে না আসে।
তার কথা মনে পড়লেই কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।
৩) নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করা
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবথেকে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নিজেকে শান্ত রাখা।
আমরা অনেকেই এই জাতীয় পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে পড়ি, কাছের বন্ধুদের ফোন করে নিজেদের কষ্ট গুলো শেয়ার করি,
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা নিজেদের জীবনের যত ঘটনা অপরকে জানাবো, কখনো না কখনো তারা আমাদের এই দুর্বলতা গুলোর সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে আঘাত করবে।
আমাদের নিজেদেরকেই নিজেদের মনকে সামলাতে হবে।
আশ্বাস দিতে হবে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিজেদের বোঝাতে হবে এই জীবন নদীর মতো। কখনো, কারোর জন্য জীবন নদী থেমে থাকতে পারে না। আমাকে একাকেই চলতে হবে।
৪) একে অপরের ওপর বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করতে হবে
এই জাতীয় ঘটনা ঘটলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটি ছোটো ঘটনা বা ভুল ঘটেছে যা নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে, হয়তো দেখা যাবে আমাদের উল্টোদিকের মানুষটা আমাদের আঘাত দিয়ে নিজেও কষ্ট পেয়েছে, তাহলে এই কষ্ট ক্ষণস্থায়ী হবে।
এই আঘাত ভালোবাসার বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে।
তবে কখনোই নিজেদের মধ্যে কোনো অবিশ্বাস রাখা চলবে না। অনেকক্ষেত্রে যে আঘাত দেয় উপশম সেই করে।
৫) বিশ্বস্ত বন্ধুদের কাছে নিজের দুঃখ শেয়ার করতে পারা যেতে পারে
দুঃখের কথা ভাগ করে নিলে দুঃখ কমে না তবে তার প্রভাব অনেকটা কমে।
তাই দুঃখের কথা, সেই সব লোকেদের কাছেই বলা উচিত যারা দুঃখ বা কষ্ট নিয়ে হাসি-মজা-ঠাট্টা করবে না।
তারা দুঃখের দিনে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে, সাহস যোগাবে, মনোবল বৃদ্ধি করবে।
একটি প্রবাদ আছে, “দুঃখের দিনেই প্রকৃত বন্ধু চেনা যায়”।
তাই নিজেদের কষ্ট নিজেদের খুব বিশ্বস্ত কারোর সঙ্গে শেয়ার করা যেতে পারে।
হয়তো দেখা যাবে সেই বন্ধুটি আজীবনের সব দুঃখ কষ্ট সমান ভাগে ভাগ করে নিতে পারে অথবা তার মধ্যস্থতাতেই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কটা আবার জোড়া লেগে গেল।
অবশই পড়ুন –
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম, “ভালোবাসার মানুষ কি কি কারণে কষ্ট দিয়ে থাকে” এবং “ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কি করা উচিত“.
আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই ভালো লেগেছে।
আজকের আর্টিকেল ভালো লেগে থাকলে আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই