একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো কি কি | Muhammed Juwel Ahmed |
একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি কি হওয়া দরকার, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো।
শিক্ষা প্রক্রিয়ায় প্রতিটি শিক্ষকের ভূমিকা কিন্তু প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।
তাই শিক্ষকের অনুপুস্থিতে শিক্ষা প্রক্রিয়া কখনই সফলভাবে চলা সম্ভব নয়।
শিক্ষকের কার্য শুধু শ্রেণিতে শিক্ষা প্রদান করাতেই সীমিত থাকেনা বরং ছাত্রদের উচিত নির্দেশনা প্রদান করা, ছাত্রদের-ছাত্রীদের অনুভূতি গুলো বোঝা, বিদ্যালয়ে সামাজিক পরিবেশের নির্মাণ করা ইত্যাদি বিভিন্ন মহত্বপূর্ণ কাজগুলো শিক্ষকদের হয়ে থাকে।
তাই শিক্ষকদের কর্ম এবং ব্যবহারের প্রভাব তাঁদের ছাত্রদের উপর অবশই পরে থাকে।
সেই দৃষ্টিতে দেখতে গেলে শিক্ষকরাই দেশের নির্মাতা হয়ে থাকে, কারণ আজকের ছাত্ররাই পরবর্তিকালে দেশের ভবিষৎ।
শিক্ষকেরা নিজেদের কার্য্যকে সফল ভাবে পূরণ করার ক্ষেত্রে আবশ্যক কিছু দায়িত্ব এবং কর্তব্যের।
তাহলে চলুন বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জেনে নেই একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য কি কি দায়িত্ব এবং কর্তব্য থাকা উচিত।
একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
একজন আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে প্রধানত এই কয়টি কর্তব্য এবং দায়িত্ব থাকা উচিত।
১. সময়ের পালন করা
একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য সবথেকে জরুরি হলো সময়ের সঠিক পালন করা।
কারণ প্রত্যেকটি সফল ব্যক্তিরা জীবনে সফল হতে পেরেছেন শুধুমাত্র সময়ের সঠিক পালন এবং ব্যবহার করার ফলে।
যে ব্যাক্তি সময়ের মূল্য বুঝে থাকে সময়ও তাঁর মূল্য বোঝে, তাই ছাত্রদের সময়ের মূল্য বোঝানো খুব জরুরি।
তাই একজন শিক্ষকের প্রথম দায়িত্ব হলো বিদ্যালয়ে সময়ের সঠিক পালন করা এবং ধ্যান রাখা যাতে ছাত্ররাও সঠিক সময় অনুসরণ করে চলে এবং সময়ের অপব্যবহার না করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করে।
২. নম্র ভাষার প্রয়োগ করা
একজন আদর্শ শিক্ষকের ব্যবহার এবং ভাষা সবসময় নম্র হওয়া উচিত।
তবে তা শ্রেণি কক্ষই হোক বা শ্রেণীর বাইরেই হোক, সবখানেই তার ভাষার ব্যবহার সমান থাকা উচিত।
নম্র ভাষার প্রয়োগ করে কঠিন থেকে কঠিন কাজও আরামে করানো সম্ভব।
আর, একজন শিক্ষককেই ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের আদর্শ মেনে চলে তাই শিক্ষকের ব্যবহার এবং ভাষা নম্র হলেই ছাত্ররা তা অনুসরণ করে শিখতে পারবে।
৩. বিষয়ের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা
একজন শিক্ষকের সব দায়িত্ব এবং সব কর্তব্যের মধ্যে মুখ্য দায়িত্ব হলো, ছাত্রদের শিক্ষা প্রদান করা।
তাই প্রত্যেক শিক্ষকের কর্তব্য হলো, তিনি যে বিষয় নিয়ে পড়াবেন সেই বিষয়ের তার পূর্ণ জ্ঞান থাকা জরুরি এবং বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার আগে সেই বিষয়ে ভালো করে অধ্যায়ন করে নেওয়া উচিত যাতে ছাত্রদের শ্রেণী কক্ষের সময়ের ভেতরে পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝানো সম্ভব হয়ে থাকে।
এছাড়াও, বিষয়টি নিয়ে আরো বেশি অধ্যায়ন করা, নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করা, শিক্ষা দেওয়ার নতুন নতুন প্রক্রিয়া খুঁজে বার করা ইত্যাদি এই ধরণের বিভিন্ন দায়িত্ব একজন আদর্শ শিক্ষকের থাকা দরকার।
৪. সহযোগিতার ভাবনা থাকা
কোনো বড়ো একটি সংগঠন চালানোর জন্য অনেক লোকের সহযোগিতা থাকা যেমন জরুরি ঠিক সেভাবেই একটি বিদ্যালয় চলানোর জন্য প্রতিটি শিক্ষকের মধ্যে সহযোগিতার অনুভূতি থাকাও অত্যন্ত জরুরি।
কেবল একজ শিক্ষকের ওপরে কখনই একটি বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সামলানো সম্ভব নয়।
তাই সকল শিক্ষকের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার ভাবনা থাকা খুব দরকার।
এতে, শিক্ষকদের দেখেই ছাত্র ছাত্রীরা সহযোগিতার অনুভূতি ভাবতে শিখতে পারবে।
৫. নিয়ন্ত্রণ করা
যেকোনো শিক্ষকের সবথেকে মহত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো নম্র ভাষায় এবং নম্র ব্যবহারের সাথে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করা বা নিয়ন্ত্রণ করতে জানা।
নিয়ন্ত্রণ শব্দটি শুনতে অনেক সহজ লাগলেও তা বাস্তবে করা অনেক কঠিন কাজ যা সকলের দ্বারা সম্ভব হয়না।
কারণ আমাদের যখন রাগ ওঠে তখন আমরা জোরে চিৎকার করে অন্যদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি কিন্তু একজন শিক্ষকের ক্ষেত্রে চিৎকার চেঁচামেচি করাটা ঠিক না।
একজন আদর্শ শিক্ষকের সব দায়িত্বের মধ্যে এই দায়িত্ব থাকা খুব জরুরি।
কারণ তাঁর মধ্যে যদি নম্রভাবে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতায় না থাকে তাহলে সে বাকি দায়িত্ব পুরা করতে সক্ষম নাও হতে পারে।
তাই একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে পারলেই তাঁকে একজন আদর্শ শিক্ষক বলা যাবে।
৬. নিরিক্ষন করা
একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য শুধু শিক্ষাদান করাতেই সীমিত থাকেনা, তাঁর সাথে সাথে বিদ্যালয় এবং ছাত্র ছাত্রীদের নিরীক্ষণের দায়িত্ব থাকাও উচিত।
তাই ছাত্র ছাত্রীদের নিরীক্ষণ করার কর্তব্যের মধ্যে কিছু কর্তব্য যেমন – প্রতিদিন ছাত্র ছাত্রীরা যাতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে এবং সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর নিরীক্ষণ করা, শ্রেণির দৈনিক কাজ কর্ম যেমন লিখিত এবং পড়ার কাজের নিরীক্ষণ করা, বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের অনুশাসন ঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা নিরীক্ষণ করা, ছাত্রদের জন্য খেলা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ কর্মে নিরীক্ষণের কর্তব্য এবং দায়িত্ব থাকাটা দরকার।
৭. সকল ছাত্রদের সমান ব্যবহার করা
একজন আদর্শ শিক্ষকের মূল দায়িত্ব হলো, সকল ছাত্র ছাত্রীদের সাথে সমান ভাবে ব্যবহার করা এবং সকল ছাত্রদের-ছাত্রীদের সমান ভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কার্য্য করা।
কারণ কিছু ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনায় খুব মেধাবী হয়ে থকে আবার কিছু ছাত্র ছাত্রীড়া পড়াশুনায় দুর্বল হয়ে থাকে এবং এর অনেকরকম কারণও হতে পারে।
তাই একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে মেধাবী ছাত্রদের সাথে সাথে দুর্বল ছাত্রদের ওপর সমানভাবে ধ্যান দেওয়া উচিত।
আজ যদি দুর্বল ছাত্রদের উপর ধ্যান না দেওয়া হয় তাহলে হতে পারে তাঁরা ভবিষতে নিজের জীবনে সংঘর্ষ করতে থাকবে।
তাই প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল এবং ভালো ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকের ওপরেই সমান ভাবে ধ্যান ও গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করানোটা একজন আদর্শ শিক্ষকের উদ্দেশ্য, কর্তব্য বা গুনাবলী হওয়া জরুরি।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য ও দায়িত্ব গুলো নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ হলো। আশা করছি, আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই ভালো লেগেছে।
আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের সত্যি ভালো লেগে থাকলে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার অবশই করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই