মোবাইলের আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাব? Muhammed Juwel Ahmed |

 

মোবাইল ফোনে অধিক সময় ব্যয় করা কেবল সময়ের অপচয় নয়, মানসিকভাবে ক্লান্তিকরও বটে। মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রায়ই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। তাই স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি কমানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী কমিয়ে ফেলা অবশ্যই একটি ভালো সিদ্ধান্ত।

মোবাইল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার প্রতি যে কোন বয়সের মানুষ আসক্ত হতে পারে।মোবাইল আসক্তি বর্তমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ সমস্যা কেবল ছোট বাচ্চা কিংবা তরুণদের মধ্যে নয় বরং অনেক বয়স্কদের মাঝেও এ আসক্তি দেখা যায়। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন মার্কিন মোবাইল ব্যবহারকারী মধ্যে তিনজন ৬০ মিনিটের বেশি সময় তাদের মোবাইল চেক না করে থাকতে পারেন না।

এছাড়া, ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইলে প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টা সময় ইন্টারনেট ব্রাউজ এবং মেসেজ আদান প্রদান করে ব্যয় করে। আমেরিকার ৮২% মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের মধ্যে মোবাইলের আসক্তি বিদ্যমান।


বর্তমান সময়ের মোবাইল আসক্তি মানসিক অসুস্থতার একটি বিশেষ রূপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে মোবাইল আসক্তি। এছাড়া সামাজিকতা, অসুস্থতা সহ অনেক সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে মোবাইল আসক্তি। এখন প্রশ্ন হল, আপনিও কি মোবাইল আসক্ত?

নিচের কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে আপনিও মোবাইল আসক্ত কিনা তা যাচাই করতে পারবেন। যেমনঃ

  • আপনি কি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার আপনার ফোনটি চেক করেন কিংবা প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একবার?
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন মোবাইল পেছনে?
  • আপনি যখন মোবাইল ব্যবহার করেন তখন আপনার সময় ব্যয় হচ্ছে এই চিন্তা আসে না?
  • আপনি যখন কাউকে কল কিংবা মেসেজ দিচ্ছেন কিন্তু দ্রুত সাড়া না আসলে রাগ হচ্ছেন?
  • সর্বদা আপনার পকেটে হাত দিচ্ছেন, মোবাইলটা আছে কিনা দেখতে?
  • আপনার ফোন আপনার সাথে না থাকলে আপনি অস্বস্তি বোধ করেন (এটাকে Nomophobia রোগ হিসাবে ধরা হয়)?
  • ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে ফোন রেখে ঘুমাচ্ছেন?
  • মাঝেমধ্যে আপনি কি মধ্যরাতে আপনার ফোনটি চেক করেন?
  • আপনি কি অন্যদের সাথে আলাপ করার চেয়ে আপনার মোবাইলে সময় ব্যয় করাকে বেশী পছন্দ করেন?
  • আপনি অন্যান্য কাজ, এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও মোবাইল ব্যবহার করেন?

হতে পারে আপনি এই আসক্তির একজন কিংবা আপনার আশেপাশের কেউ আসক্ত? তবে নিচের ১৫ টি উপায় আপনাকে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

১. ফোন ব্যবহার করার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় সেট করুন

২. কিছু নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

৩. নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন

৪. নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ডিলিট করে রাখুন

৫. স্ক্রিন লকে দীর্ঘ এবং বিরক্তিকর পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন

৬. অ্যালার্ম ঘড়ি হিসাবে আপনার ফোন ব্যবহার করবেন না

৭. একটি হাত ঘড়ি ব্যবহার করুন

৮. বেশি অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

৯. কাজ শুরু করার আগে আপনার ফোনটি কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে রাখুন

১০. বিছানায় যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করুন

১১. দিনে মাত্র তিনবার মেসেজের উত্তর দিন

১২. অপ্রয়োজনীয় চ্যাট আর্কাইভ অথবা ডিলিট করে দিন

১৩. গ্রুপ চ্যাট গুলো মিউট করে রাখুন

১৪. আপনার ফোনের সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ডিলেট করে দিন

১৫. আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং গভীর শ্বাস নিন


১৬। নো-ফোন জোন তৈরি করুন

খাওয়ার সময়গুলোতে বা সন্ধ্যায় যখন আপনি ফোন ব্যবহার করেন না, সেই সময়গুলোতে আপনার স্ক্রিনটাইম কমে। এরকম কিছু ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেন, যেমন- পারিবারিক ঘর বা পড়ার ঘরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন নিষিদ্ধ রাখা।

১৭। প্রয়োজন মাফিক ঘুম

অধিকাংশ মানুষ অ্যালার্ম এর জন্য ফোনকেই ব্যবহার করে। কিন্তু ঘরে ফোন থাকা মানেই আপনি সহজেই সেদিকে আকৃষ্ট হবেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রল করতে বা অন্য কাজে ঢুকবেন।

তাই এর বদলে আপনি অ্যালার্ম ঘড়িই রাখতে পারেন। নিজের ফোনকে তখন অন্য ঘরে রেখে দিন। ফোন অন্য ঘর থেকে আনতে যাওয়ার অলসতা আপনাকে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে পারে।

আপনি যদি নিজের থেকে উদ্যোগ না নেন, তাহলে মোবাইলের আসক্তি দূর করা অসম্ভব। তাই নিজের মনকে শক্ত করুন এবং উপরের উপায়গুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনি মোবাইলের আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.