নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি | নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কাকে বলে | Muhammed Juwel Ahmed |

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি (What is What is selfless love in Bengali): ভালবাসা বা প্রেম হল এই দুনিয়ার সবথেকে শক্তিশালী অনুভূতি বা আবেগ। 
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বলতে কি বুঝায় ?

এটি এমন একটা আবেগ, যা আমাদের নিমেষে সুখী, আবার এক পলকেই দুঃখী করে দিতে পারে। 

ভালবাসা আমাদের হৃদয়কে যেমন প্রত্যাশায় ভরিয়ে রাখতে পারে, ঠিক তেমনই আমাদের উদ্বিগ্নও করে তুলতে পারে। 

কিন্তু, ভালোবাসা কেবলমাত্রই আবেগ নয়। 

ভালবাসা হল এক ধরণের ক্রিয়া – যেটা আপনি একমাত্র মন থেকেই অনুভব করে থাকেন।

আমাদের মনে কারোর না কারোর প্রতি ভালোবাসা জন্মেই থাকে। 

আর, যাকে আমরা ভালোবাসি, আমরা প্রত্যাশা করি তাদের থেকেও সেই সম পরিমাণ ভালোবাসা পাওয়ার। 

যে কারণে, আমাদের একে অপরকে প্রতিনিয়তই ভালবেসে যেতে হয়। 

তবে, কখনও কখনও সব মানুষের পক্ষে ভালোবাসা সহজ বা স্বাভাবিকভাবে আসে না। 

তাই, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো,

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মানে কি ও আপনার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ কিনা তা বোঝার ৭টি স্পষ্ট উপায় সম্পর্কে।

এখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, ও স্পেশাল মানুষদের সাথে আপনার ভালোবাসার সম্পর্কটা ঠিক কতটা নিঃস্বার্থ?

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি ? নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসার অর্থ কী

একটা সাধারণ ভালোবাসার গল্পে দুটো মানুষের মধ্যে প্রেম বা স্নেহের বিনিময় হল একটা স্বাভাবিক বিষয়। 

কিন্তু, নিঃস্বার্থ ভালবাসার ক্ষেত্রে, একজনকে অবশ্যই অবাধে সবকিছু দিতে হয় ও বিনিময়ে তার কোনো আশাই থাকে না। 

কারণ, এখানে অবাধে ভালোবাসা দিয়ে যাওয়াই হল প্রধান শর্ত। 

আর, এই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা তখনই সম্ভব, যখন আপনি কাউকে আপনার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসেন আর আপনার সেই ভালোবাসতে কোনো শর্তই থাকে না। 

ভালোবাসা কখনও কখনও জটিল হয়ে পড়ে। 

কিন্তু, আপনাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলোকে ধরে রাখার জন্যে ও কঠিন সময়ে বেঁচে থাকার জন্যে – দুজন মানুষেরই উচিত, একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা দিয়ে পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করা –

নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার সেরা ৭টি উপায়:

এখন আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো বাসার কিছু উপায় গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো।

১. নিঃশর্তে ভালোবাসা দেওয়া:

নিঃশর্ত ভালবাসা আসলে সীমাহীন ভালবাসার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

এই ধরণের ভালোবাসতে মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের থেকে কিছু কামনাই করে না।

যে কারণে, তারা তাদের ভালোবাসার মানুষের উপর রাগ ধরে রাখতে পারে না। 

আসলে, মানুষ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসলে বোঝে যে, এই পৃথিবীতে আমরা কখন আছি, কখন নেই তার কোনো ভরসা নেই। 

তাই, মিথ্যে রাগ-অভিমান পুষে রেখে কি লাভ? 

সে কারণেই, স্বার্থহীন ভালোবাসাতে মানুষ এক মুহূর্তও তার ভালোবাসার মানুষের উপর রুষ্ট থাকতে পারে না। 

আর, সবসময় মনে রাখবেন যে, ভালোবাসা ভালোবাসাই হয়। 

আসলে, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাওয়াটাও কোনো ব্যাপার না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সদয় হয়ে আপনার প্রিয় মানুষদের উপস্থিতির জন্যে কৃতজ্ঞ থাকছেন।

২. প্রত্যাশাহীনভাবে ভালোবাসা দিয়ে যাওয়া:

আপনি যখন কাউকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, তখন এর মানে দাঁড়ায়, যে আপনি যাকে ভালোবাসেন, সে আপনাকে নাও ভালোবাসতে পারে,

কিংবা সে আপনার প্রতি আপনার মতো কেয়ারিং মনোভাব নাও রাখতে পারে।

এক্ষেত্রে, আপনি যদি তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে থাকেন, তবে তার কোনোরকম বিরূপ ব্যবহারও, তার প্রতি আপনার ভালোবাসার অনুভূতিকে বদলাতে পারবে না। 

কারণ, ভালবাসা এমনই এক অনুভূতি, যেটা আপনার স্বার্থপরতার সাথে নয়, বরং খোলা মনেই দিয়ে থাকি। 

এটা একটা ধারণা, যা আমাদের তাৎক্ষণিক অনুভূতির উপর কখনওই নির্ভর করে না। 

এক্ষেত্রে, আপনি আপনার ভালোবাসা দেওয়ার জন্যে যেকোনো মাত্রা পেরিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকেন।

৩. না চাইতেও ভালোবাসা দেওয়া:

ভালোবাসা কখনোই সরাসরি জিজ্ঞেস করার বা চাওয়ার বিষয় নয়। 

এই ভালবাসার অনুভূতি প্রথম থেকেই, আমাদের মনের মধ্যে থেকে নিঃস্বার্থভাবে আসে। 

যে কারণে, এই ধরণের অনুভূতিতে আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষটাকে তাদের ঠিকভুল সবকিছুকে মেনে নিয়েই উদারভাবে তাকে ভালোবেসে যাই। 

ভালবাসতে গেলে অনেক সাহস ও মনের জোর লাগে।

আর, আমাদের এই অনুভূতি প্রকাশ করতে একেবারেই ভয় বা উদ্বিগ্ন বোধ করা উচিত নয়।

৪. সব সময়ে ভালোবেসে যাওয়া:

আমাদের সকলের জীবনেই এমন সময় আসে, যখন ভালোবাসা ও সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে পড়ে। 

তখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, আপনার ভালোবাসার জন্যে লড়াই করাটা কতটা জরুরি। 

যখন আমরা ভয়ের পরিবর্তে ভালোবাসাকে বেছে নিই, তখন আমরা শক্তিশালী ও সম্পূর্ণ বোধ করি। 

কারণ, সত্যিকারের ভালোবাসা আমাদের সম্পূর্ণ করে তোলে। 

এমনকি, সেই ভালবাসা যদি আমাদের নিজেদের জন্যও হয়, তাও সই। 

ভালোবাসা যদি অবাধ বা সীমা না হয়, তাহলে সেটা ভালবাসাই নয়। 

আর, এই ভালোবাসার অনুভূতিটা অনেক সময়েই কঠিন হতে পারে,

তবে সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত আপনাকে মোটেও অপেক্ষা করতে হয় না,

কারণ, আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন, তবে তাকে সেই ভালবাসার কথা জানান, এমনকি সময় ঠিক না থাকলেও জানান।

৫. সমাজের বদলে নিজের মনের কথায় চলা:

ভালোবাসা মানুষের হৃদয় ও আত্মার গভীর থেকেই আসা উচিত। 

এই ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি, যা আমাদের কখনই হেলাফেলা করা উচিত নয়। 

কারণ, কিছু সময়ের মধ্যেই ভালবাসা আমাদের সবকিছু হয়ে যায় ও যখন সময় কঠিন আসে, তখন তা আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। 

আর চাইলেও কাউকে কখনও জোর করে ভালবাসা যায় না, বরং ভালবাসা বোধ করাটা নিতান্তই মনের ব্যাপার, যেটার উপর কারোর জোরই চলে না। 

ভালোবাসা এমন একটা পছন্দ, যা আমরা আমাদের হৃদয় ও আত্মার চাহিদা অনুযায়ী বোধ করে থাকি। 

তাই, এখানে আপনি আপনার অনুভূতিগুলোকে অনুসরণ করে নিঃস্বার্থভাবে আপনার ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে যান।

৬. নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমে ভালোবাসা দেওয়া:

নিজেকে ভালবাসলে তবেই ভালোবাসা আপনার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। 

আর, নিজেকে একবার ভালোবাসতে পারলে, তবেই আপনি তা নিঃস্বার্থভাবে আপনার ভালোবাসার মানুষকে দিতে পারবেন। 

কারণ, ভালোবাসা দেওয়া যথেষ্ট সাহসের কাজ ও এটা কেবলমাত্র আমাদের মন থেকেই আসতে পারে। 

অন্যদের ভালবাসা সহজ হলেও, আমরা অনেক সময় নিজেদেরকে ভালোবাসতে ভুলে যাই। 

এই জন্যে সবার আগে আমাদের উচিত নিজেদেরকে ভালোবেসে তারপর অন্যকে ভালোবাসা।

৭. নিজে যেরকম ব্যবহার আশা করেন, ভালোবাসার মানুষের সাথেও সেরকম ব্যবহার করা:

ভালোবাসা থাকুক কিংবা না থাকুক, আপনি যাকে ভালোবাসেন, সে যদি আপনাকে ভালো নাও বা বাসে, তাও আপনার উচিত তার সাথে ভালো ব্যবহার করে চলা। 

কারণ, ভালবাসার মানে এই নয় যে, আপনাকে সবাইকে পছন্দ করতে হবে। 

তবে, এর অর্থ হল, আপনার অপছন্দের কেউ হলেও, তার সাথে এমন ব্যবহার করাও অনুচিত যা আপনি নিজেও পছন্দ করবেন না। 

এক্ষেত্রে, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যে কারোর সুযোগ নেওয়া বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণটাই অনুচিত একটা বিষয়।

আমাদের শেষ কথা,,

আমাদের আজকের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

আশা করছি, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি আপনারা সম্পূর্ণটা স্পষ্ট ভাবে বুঝতেই পেরেছেন।

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না! 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.