কিভাবে খারাপ বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করা যাবে – ৭টি উপায় | Muhammed Juwel Ahmed |

একজন ভালো বন্ধু অবশই আপনার জীবনে আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসতে পারে। তবে অনেক সময় আমাদের জীবনে, বন্ধু হিসেবে এমন অনেক লোকেরা চলে আসেন যারা আমাদের ওপর যথেষ্ট খারাপ প্রভাব ফেলে থাকেন। এক্ষেত্রে, আপনি যদি নিজের জীবন থেকে খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার উপায় গুলো খুঁজছেন, তাহলে সবচে আগেই আপনাকে নিজের খারাপ বন্ধু গুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।

এক্ষেত্রে, আপনাকে অনেক ভালো করে বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে আপনার কোন বন্ধুরা আপনাকে চাপ দেয়, অসম্মানজনক কথা বলে, এবং আপনাকে কেবল ব্যবহার বা ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে।

অনেক সময় অনেক বন্ধুরা আপনার পাশে থেকে নিজেকে অনেক ভালো বন্ধু হিসেবে ভান করার চেষ্টা করে। কিন্তু, আপনি সরে পড়লেই আপনার বদনাম শুরু করে দেয়। এই ধরণের বন্ধু আপনার জীবনে থাকার থেকে না থাকাটাই আমার হিসেবে ভালো।  

তাহলে কিভাবে এই ধরণের খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন ? চিন্তা করবেননা, নিচে বলে দেওয়া উপায় গুলো পড়ুন।

কিভাবে খারাপ বন্ধু ত্যাগ করবেন ? সেরা ৭টি উপায়

খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার উপায়
How to stay away from bad friends ?

আমাদের প্রত্যেকেরই, নিজের কাজ কর্ম শেষ করার পর বন্ধু বান্ধবের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে মন করে। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা সকলেই মানুষের মধ্যে এবং একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত সময় কাটাতে পছন্দ করে থাকি।

তবে অনেক সময় আমরা আমাদের আসে পাশে থাকা এরকম অনেক বন্ধুদের দ্বারা ঘিরে থাকি যারা আমাদের জন্য কোনোদিন ভালো চেয়ে থাকেননা। আর এই ধরণের বন্ধুরের আমরা বলতে পারি “খারাপ বন্ধু”।

অনেক সময় এই ধরণের বন্ধুদের কারণে আমরা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়তে হয়। আবার অনেক সময় এই ধরণের বন্ধুরা আমাদেরকে সারিরিক ভাবে কষ্ট দিতে পারে বললেও আমি ভুল হবোনা।

যদি আপনার জীবনেও এরকম বন্ধুরা রয়েছে যাদের থেকে আপনি অনেক দূরে চলে যেতে চাইছেন, তাহলে নিচে দেওয়া এই, খারাপ বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করার উপায় গুলো ভালো করে জেনেনিন।

১. খারাপ বন্ধুদের অনুসন্ধান:

দেখুন, আপনার প্রত্যেক বন্ধুরাই যে খারাপ এবং আপনার খারাপটা চাইবেন এমনটা হবে বলে আমার মনে হয়না। তবে, আপনার শুরুতেই কিছু সতর্ক সংকেত গুলোকে বুঝতে হবে এবং আপনার কোন কোন বন্ধুরা আপনার সাথে এমনটা করছেন সেটা বুঝতে হবে।

যেমন ধরুন, আপনাকে অসম্মান করা হচ্ছে, আপনার পেছনে আপনার বিষয়ে খারাপ বলা হচ্ছে, আপনাকে নিয়ে গসিপ করা হচ্ছে, আপনার বদনাম ছড়ানো ইত্যাদি। যদি আপনি এই ধরণের আচরণ গুলো দেখছেন ও অনুভব করছেন তাহলে সেই ব্যক্তির সাথে কোনো ধরণের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব না রাখাটাই ভালো।

২. সীমানা নির্ধারণ করুন:

খারাপ বা অসৎ বন্ধুদের থেকে দূরে থাকার জন্য সবচে আগেই আপনাকে একটি সীমানা তৈরি করতে হবে এবং নিজেকে সেই সীমানার মধ্যে রাখতে হবে। মানে, আপনি কি পছন্দ করছেননা, কি ধরণের কথা বা ধামালী আপনি পছন্দ করেননা, সেটা আগেই বলে রাখতে হবে।

এবার, আপনি যদি মনে করছেন আপনার বন্ধু আপনার তৈরি করা সীমার সন্মান করছেন, তাহলে আপনি এই বিষয়ে তার সাথে খোলাখুলি ভাবে কথা বলুন। আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয় গুলো সবসময় পরিষ্কার করে জানিয়ে রাখাটা জরুরি।

৩. ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব:

দেখুন বন্ধু যেমনই হোক, সব সময় বন্ধুদের থেকে দূরে থাকাটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এছাড়া, পড়াশোনা, কাজ কর্ম ইত্যাদির স্ট্রেস, এগুলির কারণে একা থাকার থেকে খারাপ বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটাই আমরা অধিক পছন্দ করে থাকি।

এক্ষেত্রে, আপনাকে এমন ইতিবাচক ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করা দরকার যাদের চিন্তাধারা আপনার মতো বা আপনার থেকেও অধিক ভালো। এভাবে আপনি অনেক সহজ ভাবে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গ ছাড়তে পারবেন এবং নিজেকে একা মনে হবেনা।

মনে রাখবেন, ভালো এবং পজিটিভ ব্যক্তিরা সব সময় আপনাকে উত্সাহিত করবে এবং আপনার প্রচেষ্টায় আপনাকে সমর্থন দিবে। এই ধরণের বন্ধুরা ভালো এবং সৎ চিন্তাধারার সাথে আপনাকে সর্বদা ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৪. প্যাশন ফলো করুন:

নিজের ভালো লাগা কাজ এবং প্যাশন অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন। এর সাথেই আপনি আপনার মতো নানান নতুন নতুন ব্যক্তিদের সাথে নিয়মিত দেখা ও সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবেন।

আপনি যেই কাজ গুলো করতে পছন্দ করেন সেগুলো করার মাধ্যমে নতুন নতুন লোকেদের সাথে সংযুক্ত হতে পারবেন এবং নিজের মতোই নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করার সুযোগ পাবেন। নিজের প্যাশন এবং ইন্টারেস্ট ফলো করা ব্যক্তিরা সব সময় আপনার জীবনে ইতিবাচক ও ভালো প্রভাব ফেলবেন।

৫. যোগাযোগ কমানোর চেষ্টা:

আপনি যেসব বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে চাইছেন তাদের সাথে যত বেশি যোগাযোগ রাখবেন ততটাই কষ্ট হবে তাদের থেকে দূরে সরতে।

এটা আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার থেকে আপনাকে বললাম। কারণ, যখন আপনি একা থাকবে তখব যদি আপনার খারাপ কামনা করা কোনো বন্ধু আপনাকে ফোন বা মেসেজ করে ডাকবে তখব আমি কিছু না ভেবেই ছুটে পড়বেন।

তাই, আপনি যেই বন্ধুর থেকে দূরে থাকতে চাইছেন তার সাথে যতটা সম্ভব কম যোগাযোগ রাখুন। যদি আপনি যেকোনো ভাবেই তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে চান, তাহলে তাকে নিজের মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং হোয়াটস্যাপে ব্লক করুন।

এতে, সে আর আপনার মন আকর্ষণ করতে পারবেনা।

৬. এই বিষয়ে কথা বলুন:

আপনি যাকে সবথেকে বেশি বিশ্বাস করে থেকেন তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলুন। সে আপনার ভাই, বোন, বাবা, মা, পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বা অন্য কোনো ভালো বন্ধু, জেকেও হতে পারে। কারণ, যখন আপনি বিষয়টি নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন তখন আপনার মন প্রচুর বিভ্রান্তির মধ্যে থাকবে।

এতে, আপনি ভালো করছে না খারাপ সেটা নিয়েও আপনার মনে অনেক প্রশ্ন চলে আসবে। তাই, যখন এই বিষয়ে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন তখন সে মানসিক সমর্থন এবং উচিৎ পরামর্শ দিয়ে আপনার সাহায্য করবে।

৭. কি লাভ হবে সেটা বুঝুন:

অনেক সময় খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ বা পরিবেশ আমাদেরও তাদের মতোই করে তুলতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় নেশা না করা ব্যক্তি খারাপ সঙ্গদোষের নেশা করতে শুরু করে। আবার অনেক সময় একজন ভালো ভদ্র ব্যক্তির মধ্যে খারাপ আচরণ বা খারাপ ব্যবহার দেখা যায়। এরকমও হতে পারে, আপনার প্রতি থাকা আপনার বন্ধুদের আচরণ আপনাকে প্রচুর মানসিক চাপ দিয়ে থাকে।

তাই, আপনাকে বুঝতে হবে এবং নিজেকে বুঝাতে হবে যে এই খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ছাড়লে আপনার কি লাভ হবে। আপনার জীবন যাতে ভালো পথে এগিয়ে যেতে পারে এর জন্যে কি আপনার এই সিদ্ধান্ত সঠিক।

একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন। এর পর আপনি নিজেই নিজের প্রত্যেক খারাপ বন্ধুদের থেকে সহজেই দূরে সরতে পারবেন।


শেষ কথা,

তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনিও নিজের খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার উপায় খুঁজছেন এবং ভাবছেন কিভাবে তাদের থেকে দূরে থাকা যাবে, তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার সাহায্য অবশই করবে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো সেটা নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন। এছাড়া আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে ভুলবেননা। 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.