কেন পড়ব পরিবেশবিজ্ঞান | পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ক্যারিয়ার কি | Muhammed Juwel Ahmed |

ভূগোল ও পরিবেশে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার

অভিভাবকরা মনে করেণ শুধু হাতেগোনা কয়েকটি বিষয়ে পড়ালেখা করলেই ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায়। এর মধ্যে বাবা-মা’র প্রথম পছন্দ ছেলে বা মেয়েকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। কেউ চিন্তা করে সামরিক বাহিনীর অফিসার বানাবে। কেউবা আবার চিন্তা করে সন্তান বড় হলে ডাক্তার হবে। তবে একটিবারের জন্য কোনো অভিভাবক বলেন না আমার সন্তান বড় হয়ে ভূগোলবিদ হবে। কিন্তু একজন ভূগোলবিদ হলেও যে যশ-খ্যাতি সন্তানের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়তে পারে সে ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের। যেখানে এ বিষয়ে পড়ালেখা করে নাসাতেও চাকরি করার সুযোগ আছে।

এদিকে একজন ভূগোলবিদ ভূ-বিজ্ঞান থেকে শুরু করে জলবায়ু তত্ত্ব, সমুদ্র তত্ত্ব, উদ্ভিদ-ভূগোল তত্ত্ব, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান বিদ্যা, দুর্যোগ মোকাবিলা, নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। তাই দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বা জলে-স্থলে-শূন্যে যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বপ্রথম ডাক পড়বে একজন ভূগোলবিদকে। তাছাড়া শুনতে একটু অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, মানুষের সর্বপ্রথম চাঁদের বুকে পায়ের ছাপ এঁকে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল এ ভূগোলবিদদের। এছাড়াও মঙ্গলের ম্যাপিংও জিওগ্রাফারদেরই করা। পৃথিবীতে জিওগ্রাফারের চাহিদা অনেক। এক্ষেত্রে জলবায়ুতে ভূগোল, কৃষিতে ভূগোল, দুর্যোগ মোকাবিলায় ভূগোল, নগর ও গ্রাম পরিকল্পনায় ভূগোল, ডেভেলপমেন্টে ভূগোল, এমনকি মানুষ মারার যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধেও এখন একজন ভূগোলবিদদের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই ভূগোলবিদ হয়ে আপনিও গড়তে পারবেন আপনার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এসম মাকসুদ কামাল চাকরির খোঁজকে বলেন, ভূগোল এবং পরিবেশ বিজ্ঞান এটি আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। ভূগোল ও পরিবেশ দেশের প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী একটি বিষয়। এ বিষয় পড়ার মধ্যে দিয়ে দেশে ও বিদেশে চাকরির নানা সুযোগ-সুবিধা আছে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থাকায় সরাসরি দেশের উন্নয়নে সংযুক্ত হওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে ছাত্র জীবনে ভালোভাবে পড়ালেখা করে ভূগোলবিদ হতে পারলে চাকরিক্ষেত্রেও কাজ করে আনন্দ পাবে।

এ পেশায় চাকরির ক্ষেত্র

আপনি যদি ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত পড়ালেখা শেষ করে থাকেন তবে আপনি নিজেই আপনার জন্য বাংলাদেশেই খুব ভালো মানের একটা চাকরি জোগাড় করে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জেনারেল সার্ভে অব বাংলাদেশ, স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) হতে পারে সবার সর্বপ্রথম পছন্দ। এছাড়া যেসব এনজিও পরিবেশ, জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে, তারাও একজন মেধাবী জিওগ্রাফারকে অত্যন্ত সম্মানজনক বেতনের সঙ্গে চাকরি দিয়ে থাকে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), নগর উন্নয়ন অধিদফতর, পরিকল্পনা কমিশন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনসহ (পিকেএসএফ) বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিওতে কাজ করার সুযোগ আছে।

চাকরি হতে পারে নাসাতেও

ভূগোল বিষয়ে ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারলে নিজ দেশের পাশাপাশি বিদেশেও থাকবে ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির হাতছানি। অন্যদিকে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি কাজের সুযোগ মিলতে পারে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতেও।

মাস শেষে আয়

বাংলাদেশে সাধারণত ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন ভূগোলবিদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে। এক. কোথায় বলতে গেলে, সে বেতনের পরিমাণ চাকরির প্রথম অবস্থায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হবে। চাকরির মেয়াদ শেষ হতে হতে সেই অংকের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। তাছাড়া এনজিওগুলোতে বেতন শুরুই হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। চাকরিরত অবস্থায় দিন যতই গড়াবে বেতনের অংকটি দাঁড়াবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়। তবে দেশের বাইরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক ডিগ্রি অর্জনকারীদের চাকরি ক্ষেত্রে বেতন শুরুই হবে ১০ লাখ টাকা দিয়ে।

কোথায় পড়বেন

বাংলাদেশে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেয়া যায়। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেয়া যায়। তাছাড়া অল্প কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি পাঠ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর দেশের বাইরে এ বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ তো থাকছেই।

ভর্তির যোগ্যতা

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে (অনার্স) ডিগ্রি নিতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণত এইচএসসি পাস করার পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য আবেদন করতে হয়। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি যদি চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনার প্রথমেই দরকার একটি ভালো পরিকল্পনা নিজের জন্য। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখার আগেই ঠিক করে নিন ভবিষ্যতে আপনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এক্ষেত্রে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়টি রাখতে পারেন আপনার পছন্দের শীর্ষে। একজন ভূগোলবিদ হয়েও গড়তে পারেন আপনার সফল ক্যারিয়ার।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.