ম্যালওয়্যার কি ? কিভাবে কাজ করে এবং এর প্রকারভেদ | | Muhammed Juwel Ahmed

ম্যালওয়্যার আসলে কি ? কিভাবে কাজ করে এবং এর প্রকারভেদ গুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি। আধুনিক ডিজিটাল যুগে ম্যালওয়্যার একটি বেশ প্রচলিত শব্দ যেটা বেশিরভাগ সময় একটি কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কের ক্ষতির জন্য দায়ী হয়ে হয়ে থাকে। ম্যালওয়্যার হলো এমন একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম যেটাকে নেটওয়ার্ক বা সিস্টেমের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।

ভাইরাস, ট্রোজান হর্স, র‍্যানসমওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার এমনকি বিজ্ঞাপন, এই ধরণের বিভিন্ন প্রকারের ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম থাকতে পারে। আর এই ম্যালওয়্যার গুলোর কারণে আপনি ডেটা চুরি, সিস্টেম ক্র্যাশ এবং পরিচয় চুরি ইত্যাদির মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

তাই, বর্তমান সময়ে প্রত্যেক কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য ম্যালওয়্যার মানে কি ? ম্যালওয়্যার কিভাবে কাজ করে ? কিভাবে ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকবেন এবং ম্যালওয়্যার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় কি ? এই প্রত্যেক বিষয় গুলো জেনে রাখাটা অনেক জরুরি।

তাই, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ম্যালওয়্যার বলতে কি বুঝায় ? এটা কি ধরণের ভাইরাস এবং এর সাথে জড়িত প্রত্যেক জরুরি প্রশ্নের উত্তর গুলো দিতে চলেছি। এছাড়া, কিছু সাধারণ ধরনের ম্যালওয়্যার গুলির বিষয়েও আমরা চর্চা করবো।

ম্যালওয়্যার কি – What Is Malware in Bengali

ম্যালওয়্যার কি
What is malware in Bangla ?

মনে রাখবেন, Malware গুলো আবার malicious software নামেও পরিচিত।

ম্যালওয়্যার হলো এমন একটি সফটওয়্যার  বা প্রোগ্রাম যেগুলোকে মূলত computer systems, networks বা devices-এর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। Malware শব্দটি “malicious” এবং “software”, এই দুটো শব্দের মিশ্রনের দ্বারা তৈরি হয়েছে। কিছু সাধারণ ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম গুলো হলো, computer viruses, worms, Trojan horses, ransomware এবং spyware.

এই ধরণের দূষিত প্রোগ্রাম গুলোর মূল কাজ গুলো হলো, সংবেদনশীল তথ্য গুলো চুরি করা, ডিলিট করা, মূল কম্পিউটিং ফাংশন গুলো পরিবর্তন বা হাইজ্যাক করা, কম্পিউটার কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করা, কম্পিউটার বা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ প্রাপ্ত করা ইত্যাদি।

ম্যালওয়্যার এর দ্বারা আপনার কম্পিউটার সিস্টেম সংক্রমিত হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ গুলো হলো, ফিশিং ইমেল, দূষিত বা সংক্রমিত ওয়েবসাইট, সংক্রামিত সফ্টওয়্যার ডাউনলোড, সংক্রমিত হার্ডওয়্যার ইত্যাদি।

ম্যালওয়্যার এর কাজ কি ?

ম্যালওয়্যার অনেক সহজ ভাবেই আপনার ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ড গুলিকে সংক্রমিত করতে পারে। ডিভাইস, নেটওয়ার্ক বা এগুলো ব্যবহার করা ব্যক্তিদের কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যেই এই ধরণের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম গুলো তৈরি করার হয়।

ম্যালওয়্যার এর প্রকার এবং এটাকে তৈরি করার উদেশ্য কি, সেটার ওপরে নির্ভর করে ম্যালওয়্যার গুলো আলাদা আলাদা ব্যবহারকারীদের আলাদা আলাদা ভাবে ক্ষতি সাধন করে থাকে। অনেক সময় কিছু কিছু ম্যালওয়্যার গুলোর দ্বারা হওয়া ক্ষতি অনেক সামান্য ও সাধারণ হতে পারে।

আবার, অনেক সময় এর ফলে ভয়াবহ  ক্ষতি বা অনেক বেশি ক্ষতি হওয়া অনেক সময় দেখা গেছে।

তবে ম্যালওয়্যার এর প্রকার যেটাই হোক না কেন, এগুলোকে ব্যবহারকারীর ডিভাইস গুলোকে সংক্রমিত করে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে কোনো না কোনো ভাবে হ্যাকার দের লাভের উদেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

ম্যালওয়্যার কিভাবে কাজ করে ?

হ্যাকাররা, ম্যালওয়্যার ছড়ানোর বিভিন্ন ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল উপায় গুলো ব্যবহার করে থাকেন, যাতে এগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন device এবং network গুলিকে সহজেই সংক্রমিত করা যেতে পারে।

উদাহরণ স্বরূপ, একটি ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম অনেক সহজেই একটি USB drive-এর সাহায্যে যেকোনো সিস্টেমের মধ্যে মুক্ত করা যেতে পারে।

আবার, ইন্টারনেটে এরকম প্রচুর টুলস বা ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অনুমোদন বা জ্ঞান ছাড়াই তাদের সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম গুলো ডাউনলোড হয়ে যায়।

কম্পিউটার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর বা সংক্রমণের আরেকটি কারণ হতে পারে “ফিশিং আক্রমণ”। এই প্রক্রিয়াতে, ইমেইল গুলোকে কিছু আকর্ষণপূর্ণ বার্তা হিসেবে পাঠানো হয় যেখানে কিছু দূষিত লিঙ্ক বা সংক্রমিত এটাচমেন্ট যোগ করা থাকে।

আর এই লিংক এবং এটাচমেন্ট গুলোর দ্বারা ম্যালওয়্যার এক্সিকিউটেবল ফাইল প্রেরণ করা হয়। এগুলিকে ক্লিক করলেই সংক্রমিত ম্যালওয়্যার ফাইল বা প্রোগ্রাম গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আপনার সিস্টেমে ছড়িয়ে যায়।

এতে যা আমি আগেও ওপরে বলেছি, একবার আপনার কম্পিউটার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়লে সে, তথ্য চুরি, সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ প্রাপ্ত করা, সিস্টেমে হওয়া কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে সিস্টেম এবং সিস্টেম ব্যবহারকারীর ক্ষতি সাধনের জন্যে দায়ী হতে পারে।

ম্যালওয়্যার কত প্রকার ও কি কি – (Types Of Malware)

এখন নিচে আমরা ম্যালওয়্যার এর প্রকারভেদ গুলোর বিষয়ে জানবো। আলাদা আলাদা ম্যালওয়্যার এর প্রকার গুলোর বৈশিষ্টের মধ্যেও নানান পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য ক্ষতি সাধন করা হলেও, কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সিস্টেমেরে ক্ষতি করা হবে সেটা মূলত ম্যালওয়্যারের প্রকারের ওপর নির্ভর করছে।  

১. Virus:

ভাইরাস হলো অধিক প্রচলিত ও ব্যবহূত ম্যালওয়্যার এর একটি প্রকার যেটাকে মূলত কোডিং এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই ভাইরাস গুলো নিজের প্রতিলিপি তৈরি করার মাধ্যমে অনেক সহজেই একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে। এটা নিজেকে অনেক সহজেই যেকোনো প্রোগ্রাম বা ফাইল এর সাথে সংযুক্ত করে তারপর সিস্টেমে থাকা অন্যান্য ফাইল বা প্রোগ্রাম গুলোকে সংক্রমিত করে থাকে।

২. Worm:

ওয়ার্ম হলো এমন এক ধরণের ভাইরাস যেটা মূলত নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ছড়ায় বা প্রসারিত হয়। কোনো ধরণের হোস্ট প্রোগ্রাম ছাড়া এই ভাইরাস গুলো নিজে নিজে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে থাকে এবং ব্যবহারকারী ইনটারভেনশন ছাড়া নিজেকে অনুকরণ করতে সক্ষম। এই ধরণের ম্যালওয়্যার ভাইরাস গুলো, ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং নেটওয়ার্ক ট্রাফিক স্লো করার মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করে থাকে।

৩. Trojan horse:

এটা এমন এক ধরণের ম্যালওয়্যার যেটা নিজেকে একটি স্বাভাবিক, বৈধ এবং ন্যায্য সফ্টওয়্যার হিসেবে প্রকাশিত করে, যাতে সহজেই সিস্টেম অ্যাক্সেস লাভ করা যেতে পারে। যেমন ধরুন, এটা একটি গেম বা একটি ইউটিলিটি প্রোগ্রাম হতে পারে, যেখানে আসলে যুক্ত রয়েছে কিছু malicious code যা অবশই আপনার সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এভাবেই ট্রোজান গুলো, সিস্টেমে বিভিন্ন এক্সটার্নাল প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে প্রবেশ করে থাকে।

৪. Ransomware:

Ransomware, ব্যবহারকারীর সিস্টেমকে সংক্রমিত করে সেখানে থাকা ডাটা গুলোকে এনক্রিপ্ট করে দেয়। মানে, আপনার সিস্টেমে থাকা ডাটা ও ফাইল গুলো আপনি খুলতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেননা। অনেক সময়, ব্যবহারকারীর সিস্টেমে থাকা ব্যক্তিগত ফাইল বা তথ্য গুলোকে প্রকাশ করার ধমকি দেওয়া হয়। শেষে, ফাইল গুলোকে ডিক্রিপ্ট করার পরিবর্তে ব্যবহারকারীর থেকে কিছু টাকা দাবি করা হয়।

৫. Spyware:

স্পাইওয়্যার হলো এমন এক ধরণের ম্যালওয়্যার যেটাকে মূলত ব্যবহারকারীর দ্বারা সিস্টেমে করা প্রত্যেক কার্যকলাপের ওপর নজর রাখার জন্যে তৈরি করা হয়েছে। যেমন ধরুন, কীবোর্ড টাইপিং এর তথ্য, অডিও ও ভিডিও রেকর্ড, স্ক্রিনশট নেওয়া ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ইউসার বুঝতেই পারেনা যে তার ওপর কোনোভাবে নজর রাখা হচ্ছে বা তার ডিভাইস এর দ্বারা ভিডিও বা অডিও রেকর্ড করা হচ্ছে।

৬. Adware:

অ্যাডওয়্যার হলো বর্তমানে অধিক ব্যবহূত এমন একটি ম্যালওয়্যার যার মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেম গুলোতে অপ্রয়োজনীয় এবং অনাবশ্যক বিজ্ঞাপন গুলো দেখানো হয়। এর ফলে আপনার কম্পিউটার অনেক স্লো কাজ করে এবং জরুরি কাজ গুলো করার সময় অসুবিধা এবং ঝামেলা অনুভব হয়। বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য আপনার সিস্টেমে থাকা browser এবং download history গুলোকে ট্র্যাক করা হয়।

৭. Rootkit:

রুটকিট হলো এমন এক ম্যালওয়্যার এর প্রকার, যেটাকে এভাবে তৈরি করা হয় যাতে কোনো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বা সিকিউরিটি টুল এর সাহায্যে সহজে ধরা না যেতে পারে। রুটকিট, সিস্টেমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্তরের অ্যাক্সেস প্রাপ্ত করার মাধ্যমে সিস্টেমের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারদের কাছে তুলে ধরতে পারে।

৮. Botnet:

বটনেট, এটা হলো সংক্রমিত কম্পিউটার গুলির একটি নেটওয়ার্ক যেটাকে হ্যাকার বা আক্রমণকারী দ্বারা দূরবর্তীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই ধরণের নেটওয়ার্ক গুলো ব্যবহার করে, DDoS attacks, স্প্যাম প্রেরণ করা, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং, ডাটা চুরি ইত্যাদির মতো কাজ গুলো করা হয়।

৯. Keyloggers:

কীলগার ম্যালওয়্যার গুলোকে সিস্টেম মনিটরস বলেও বলা হয়। ইউসার তার কম্পিউটারে কি কি করছেন প্রায় প্রত্যেক কার্যক্রম গুলো এই ম্যালওয়্যার দ্বারা ট্র্যাক করা হয়। যেমন, ইমেইল করা, কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন, কীবোর্ড এর সাহায্যে করা টাইপিং, কোন প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন ইত্যাদি।

আমাদের শেষ কথা:

তাহলে বন্ধুরা, ম্যালওয়্যার কি (What Is Malware in Bengali) ? ম্যালওয়্যার কত প্রকার এবং কি কি ? কিভাবে কাজ করে ম্যালওয়্যার ? এই প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর এখন আপনারা হয়তো পেয়ে গিয়েছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার অবশই করবেন। এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.