ফ্রিলান্সার ডট কমের কিছু নিয়ম কানুন , যারা ফ্রিলান্সিং করতে আগ্রহী তাদের জন্য ।





আশা করি সবাই ভালো আছেন । আপনারা অনেকেই হয়ত Freelancer.com সম্পর্কে জানেন । এটি বিশ্বের একটি অন্যতম বড় ফ্রিলান্সিং ওয়েবসাইট । আমার এই টিউনের উদ্দেশ্য হল এই ওয়েবসাইটের কিছু নিয়ম কানুন সবাইকে জানানো । কারন রেজিস্ট্রেশান করার সময় বলতে গেলে আমরা কেউ ই ওয়েবসাইটের রুলস পড়ে দেখি না । কিন্তু যেহেতু এই ওয়েবসাইটটির নিয়মকানুন অনেক কড়া তাই সবার এইটা জানা উচিত  ( যারা ফ্রিলান্সিং করতে আগ্রহী তাদের জন্য )।


১) সবার প্রথম কথা , আকাউন্ট খোলার সময় আপনার সঠিক তথ্য দিন । কারন যেকোনো সময় Freelancer.com আপনার আকাউন্ট সাসপেন্ড / লিমিটেড করে দিয়ে আপনার কাছে আপনার পরিচয় প্রমান করতে বলবে । আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / যে ঠিকানা দিয়েছেন তার যেকোনো ইউটিলিটি বিল এর স্কান করা কপি / ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে ।  আপনি যদি ভুয়া তথ্য দিয়ে আকাউন্ট খোলেন তখন ধরা খেয়ে যাবেন , মাঝখান দিয়ে আয় করা ডলার গুলো হারাতে হতে পারে ।

২) কখনই একাধিক আকাউন্ট খুলবেন না । এক কম্পিউটার এবং মডেম থেকে একের বেশি আকাউন্ট খোলা যাবে না । কখনও সাইবার কাফে অথবা অন্য কারো কম্পিউটার এ আপনার ফ্রিলান্সার আকাউন্ট থেকে লগিন করবেন না । Freelancer.com এর সিস্টেম খুবই শক্তিশালী , আপনি কবে কোন আইপি দিয়ে কোন ব্রাউসার দিয়ে লগিন করেছেন ওদের কাছে সব হিসাব থাকে । ১ বছর পড়ে হলেও ধরে ফেলবে । ( আমি নিজে ভুক্তভোগী ) , তাই আবার বলছি কখনও এক কম্পিউটার অথবা মডেম দিয়ে একাধিক আকাউন্ট খুলবেন না । আপনার কম্পিউটার দিয়ে বন্ধুর আকাউন্ট খুলে দিবেন ? তাও দেয়া যাবে না । ২ জনের আকাউন্ট ই সাসপেন্ড হয়ে যাবে । প্রক্সি দিয়াও চেষ্টা কইরেন না । আপনার ভালোর জন্যেই বলছি ।

৩) কখনও বিড করার সময় আপনার ইমেইল এড্রেস / স্কাইপে এড্রেস ক্লায়েন্টকে পাঠাবেন না । ফ্রিলান্সার ধরতে পারলে খবর আছে। তবে আপনার ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে প্রোজেক্ট অ্যাওয়ার্ড করে দেয় , সেক্ষেত্রে  ইমেইল এড্রেস / স্কাইপে আইডি পাঠাতে কোন সমস্যা নাই । তবে তার আগে কখনই না। অনেক ক্লায়েন্ট স্কাইপে আইডি চাইবে , তাদের বলবেন আগে প্রোজেক্ট অ্যাওয়ার্ড করে দিতে । কারন এইটা ফ্রিলান্সার ডট কমের নিয়মবিরুদ্ধ ।


৪) যেকোনো সমস্যায় ফ্রিলান্সার সাপোর্ট এর সহযোগিতা নিন । এইজন্য  support@freelancer.com এ ইমেইল করতে পারেন । অথবা  http://www.freelancer.com/users/helpdesk.php  যেয়ে লাইভ চ্যাট করতে পারেন ।

৫) ক্লায়েন্টদের কখনও হুমকি ধামকি দিবেন না , অশ্লীল কোন ভাষা ব্যবহার করবেন না । ক্লায়েন্ট যত খাইছরা হোক না কেন , আপনি সবসময় ভদ্র ব্যবহার করবেন ।

৬) Freelancer.com এ মাসের শুরুতে আপনাকে ১০ তা বিড করার সুযোগ দিবে এবং প্রতি ২ দিন পর পর ১ টা করে বিড বাড়বে । তার মানে আপনি ১০ + ১৫ = ২৫ টা বিড করার সুযোগ পাবেন । বুঝে শুনে বিড করুন । সফলতা আসবে । অনেক বেশি বিড করলে অনেক বেশি কাজ পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয় । আপনার বিডটি হতে হবে মানসম্পন্ন ।

৭) কপি পেস্ট করে বিড করবেন না । প্রোজেক্ট এর বিস্তারিত পরুন । তারপর এর সাথে সামাঞ্জস্য রেখে বিড এর মেসেজ লিখুন । ক্লায়েন্ট যদি কোন প্রশ্ন করে থাকে তাহলে তার উত্তর দিন । ধরেন প্রোজেক্ট বলছে  ওয়ার্ডপ্রেস দিয়া ওয়েবসাইট বানাইতে , আপনি বিড এ ১০ টা জুমলা দিয়া বানানো ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিলেন । লাভ কি হবে ? ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রোজেক্ট এ ওয়ার্ডপ্রেস এর ওয়েবসাইটের লিঙ্ক ই দিবেন । তাই বলে আবার অন্যের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক নিজের বইলা চালাইতে যাইয়েন না । ধরা খাইলে মানসম্মান শেষ ।

৮) ফ্রিলান্সার ডট কমের বেশ কয়েকটি মেম্বারশিপ প্লান আছে । আপনার ইনকাম যদি ভালো হয় তবে মেম্বারশিপ প্লান নিলে আপনার লাভ হবে । ফ্রি মেম্বারশিপ এ অনেক সুবিধাই পাওয়া যায় না , তার উপর পুরা ১০% প্রোজেক্ট ফি কেটে নেয় । আপনার ইনকাম যদি মাসে ৫০০$ এর বেশি হয় তাহলে স্ট্যান্ডার্ড মেম্বারশিপ আপনার জন্য লাভজনক হবে  কারন তখন ১০% এর বদলে ৫% করে প্রোজেক্ট ফি কাটবে । আপনার আয় যদি ১০০০ ডলার এর বেশি হয় তাহলে প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ আপনার জন্য লাভজনক হবে কারন তখন ১০% এর বদলে ৩% করে প্রোজেক্ট ফি কাটবে ।

৯) কোন প্রোজেক্ট আপনাকে যদি ক্লায়েন্ট অ্যাওয়ার্ড করে তবে সাথে সাথেই প্রোজেক্ট একসেপ্ট করবেন না । আগে দেখুন ক্লায়েন্ট মাইলস্টোন দিয়েছে কি দেয় নাই । মাইলস্টোন পেয়মেনমেন্ট মানে হল প্রোজেক্ট ফি এর একটা অংশ যা আপনার ক্লায়েন্ট আপনার জন্য Freelancer.com এর কাছে জমা করবে । এই টাকাটা Freelancer.com আটকে রাখবে । আপনি এইটা তুলতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি কাজ কমপ্লিট করছেন এবং আপনার ক্লায়েন্ট মাইলস্টোন পেমেন্ট টা রিলিজ করে দিচ্ছে । আবার আপনার ক্লায়েন্ট ও এই টাকা ফেরত নিতে পারবে না । যদি কোন সমস্যা হয় তখন আপনি ডিসপুট দিতে পারবেন । মনে রাখবেন ফ্রিলান্সার ডট কম আপনাকে তখনই কাজের বিনিময়ে টাকার নিশ্চয়তা দিবে যখন আপনার প্রোজেক্ট এর মাইলস্টোন পেমেন্ট থাকবে । যদি আপনি মাইলস্টোন পেমেন্ট ছাড়াই কাজ শুরু করেন তাহলে @সাগর ভাই এর মত ধরা খাবেন । কারন মাইলস্টোন ছাড়া যদি আপনি কাজ করে ফেলেন এবং আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে টাকা না দিয়েই প্রোজেক্ট বাতিল করে দেয় তাহলে Freelancer.com কোন ভাবেই আপনাকে সহয়তা করবে না । কারন Freelancer.com  প্রোজেক্ট জেতার সাথে সাথে আপনাকে ইমেইল করে বলে দেয় ,


We strongly suggest that you do not start work until a Milestone Payment is in place from client. In the unlikely event that an issue occurs involving your project we have a dedicated Dispute Resolution System in place to protect you.

তার মানে ফ্রিলান্সার ডট কম তখনই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে যখন আপনি মাইলস্টোন পেমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করবেন । অনেক নতুন ক্লায়েন্ট এই বিষয়টা জানে না , তাকে এই পেজ টা দেখতে বলুন  http://www.freelancer.com/faq/topic.php?id=2 , তাকে বুঝিয়ে বলুন টাকাটা সে সরাসরি আপনাকে দিচ্ছে না, টাকাটা সে আপনার জন্য ফ্রিলান্সার ডট কমের কাছে জমা রাখছে । আপনি এই টাকা তখনি পাবেন যখন আপনি কাজ শেষ করতে পারবেন এবং আপনার ক্লায়েন্ট মাইলস্টোন পেমেন্ট টা রিলিজ করে দিবে ।

১০) কখনও সরাসরি কারও আকাউন্ট এ ব্যালেন্স ত্রান্সফার করবেন না । আপনার ক্লায়েন্টকেও বলবেন প্রোজেক্ট এর মাধ্যমে পেমেন্ট দিতে । আপনি যদি এমন কারো আকাউন্টে সরাসরি ব্যালেন্স ত্রান্সফার করেন যার সাথে আপনি কোন প্রোজেক্ট করেন নি , তাহলে কিন্তু আপনার এবং তার দুইজনেরই আকাউন্ট সাসপেন্ড করে দিবে এবং আপনাদের জিজ্ঞাসা করবে আপনাদের মধ্যে সম্পর্ক কি এবং কেন আপনি তাকে ব্যালেন্স ত্রান্সফার করলেন । freelancer.com একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান । মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী এরা অনেক নিয়ম মেনে চলে । তাই সবসময় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কাজ করুন । দুই নাম্বারি করলেই ধরা খাবেন । আপনার চাইতে অনেক বুদ্ধিমান জন্যেই ওরা এত বড় একটা ওয়েবসাইট বানাইতে পারছে ।

লিখতে গেলে আরও অনেক বড় হয়ে যাবে । কিন্তু সময়ের খুব অভাব । কিছুক্ষণ ঘুমানোও তো দরকার । তাই এখানেই শেষ করবো ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.