জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ট্রান্সফার/কলেজ পরিবর্তন বিস্তারিত ২০২৩





আমরা অনেক সময় মনমত কলেজে ভর্তি হতে পারিনা অথবা বাধ্য হয়ে রিলিজ স্লিপে অন্য কলেজে ভর্তি হতে হয়। দূরবর্তী হওয়ার কারনে আমাদের সেই কলেজে সঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়াও চাকুরীরত অভিভাবক (পিতামাতা স্বামী) অন্য জেলায় বদলী হলে অথবা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে আমাদের কলেজ পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।

তখন আমরা উপায় খুজি কিভাবে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়া যায়। এখানে আপনাদের সামনে তুলে ধরব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিবর্তন প্রক্রিয়া এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়ার নিয়ম। আসুন জেনে নেওয়া যাক কি কি কারণ দর্শানো ব্যতিরকে আমরা এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার (TC) বা কলেজ পরিবর্তন করতে পারি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্রের মাধ্যমে কলেজ পরিবর্তনের নিয়মানুবলিঃ

যেসব কারণে ছাড়পত্রের মাধ্যমে কলেজ পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে-

🔰চাকুরীরত অভিভাবক (পিতামাতা স্বামী) অন্য জেলায় বদলী হলে, পিতা/মাতা জীবিত না থাকলে অসমর্থ হলে আইনানুক অভিভাবকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে শুধুমাত্র সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আভিভাবকের বদলী জনিত কারনে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে। চাকুরিরত অভিভাবকের বদলীর আদেশ, যোগদানপত্র, চাকুরীর আইডি কার্ড ও অভিভাবকের সতিপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্তি করতে হবে।

🔰মেয়ে শিক্ষার্থী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে (স্নাতক পাস শ্রেণীতে ভর্তির পর) ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে, সে ক্ষেত্রে বিবাহের কাবিননামা, (খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধদের) ক্ষেত্রে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি ও বিয়ের দাওয়াতপত্র, স্বামী যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন তার প্রত্যয়নপত্র, যোগদানপত্ৰ, জাতীয় পরিচয়পত্র/অন্য কর্মে নিয়োজিত তার প্রামান্যপত্র দাখিল করতে হবে।

🔰শিক্ষার্থী তার স্থায়ী ঠিকানার নিকটবর্তী কলেজে যৌক্তিক কারণে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে যদি তার নিজের তোলার কোন কলেজে তার পঠিত বিষয় সমূহ অধিভুক্তি না থাকে তাহলে পাশ্ববর্তী জেলার নিকটবর্তী কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজের পিতামাতা এর জাতীয় পরিচয়পত্র ও অভিভাবকের মতামত পত্র জমা দিতে হবে । কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনার যোগ্য মনে করলে TC দিবেন।

🔰অভিভাবকের মৃত্যজনিত কারনে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে, যদি অভিভাবক সদ্য মৃত্যুবরন করেন সেক্ষেত্রে ডাক্তার কর্তৃক ডেথ সার্টিফিকেট এর কপি অথবা চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। আভিভাবকের মৃত্যুজনিত কারনে আভিভাবকের দায়িত্ব যার উপর অর্পিত হয়েছে তার সম্মতিপত্র তার পেশা ও কর্মস্থল সংক্রান্ত প্রামান্যপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

🔰শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী হলে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে, এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী বিষয়ে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র জমা দিতে হবে।

🔰সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমবিষয়ের অধিভুক্তি স্থগিত হলে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে, এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন শাখা কর্তৃক প্রদত অধিভুক্তি বাতিলের পত্র সংযুক্ত করতে হবে ।

🚫যেসব কারণে ছাড়পত্রের মাধ্যমে কলেজ পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে নাঃ

⛔ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১ম বর্ষ উত্তীর্ণ হতে হবে উত্তীর্ণ না হইলে সে ছাড়পত্র পাবে না।

⛔স্নাতক (সম্মান ) শ্রেণীতে ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে বিশেষ কারণ ছাড়া ছাড়পত্র প্রদান করা যাবে না।

⛔স্নাতক (সম্মান ) শ্রেণীতে ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে বিশেষ কারণ ছাড়া ছাড়পত্র প্রদান করা যাবে না।

⛔কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হলে ছাড়পত্র ইস্যু করা যাবে না।

⛔প্রতিটি বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশের ৪৫ দিন পরে আর আবেদনে করার সুযোগ থাকবে না।

⛔শিক্ষার্থী একটি কলেজে ১ম বর্ষে ভর্তির আবেদন করেছিল কিন্তু রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে সে ক্ষেত্রে পূর্বে আবেদনকৃত কলেজে বা কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেনা।

⛔একজন শিক্ষার্থী একাধিক বার ছাড়পত্র নিতে পারবে না।

▶️ছাড়পত্রের মাধ্যমে কলেজ পরিবর্তনের শর্তাবলিঃ

🔰১ম বর্ষ অবস্থায় আবেদন করা যাবে না, ২য়, ৩য় অথবা ৪র্থ বর্ষে আবেদন করা যাবে।

🔰একজন শিক্ষার্থী ফলাফল প্রকাশের দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে অনলাইনে ছাড়পত্রের জন্য প্রাথমিক আবেদন করতে পারবে।

🔰আবেদন করার নির্দিষ্ট সময় হল ১ম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকে ৪৫ এর মধ্যে, ২য় বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকে ৪৫ এর মধ্যে এবং ৩য় বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকে ৪৫ এর মধ্যে।

🔰আবেদনের সাথে প্রার্থীর মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করতে হবে।

🔰ছাড়পত্রের আবেদনের সাথে উভয় কলেজের অধ্যক্ষের সুপারিশ, রেজিঃ কার্ড, প্রবেশপত্র ও পরীক্ষার ফলাফল এবং উভয় কলেজের সর্বশেষ অধিভুক্ত বিষয়ের নবায়নের কপি জমা দিতে হবে।

🔰ছাড়পত্র প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কেবলমাত্র চলতি বছরের ছয় (০৬) মাসের বেতন (ফি ব্যতীত) পরিশোধ করতে হবে।

🔰সরকারী কলেজ হতে সরকারী ও বেসরকারী কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে।

🔰বেসরকারী কলেজ হতে বেসরকারী কলেজ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে কিন্তু বেসরকারী কলেজ হতে সরকারী কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে না।

🔰একই জেলার বিভাগীয় শহরে অবস্থিত দুটি কলেজের মধ্যে ছাড়পত্রের অনুমোদন দেয়া যাবে না তবে বিশেষ কারনবশত মেয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উক্ত শর্ত শিথিল যোগ্য।

🔰ছাড়পত্রের আবেদন করার সময় Reason এর স্থানে ছাড়পত্রের কারণ স্পষ্ট করে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিবর্তন আবেদন করার নিয়মকানুনঃ

▶️জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিবর্তনের আবেদন করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (nu.ac.bd) এর Services মেনু তে গিয়ে Student Login এ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন এর পদ্ধতি জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।

▶️রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে প্রথমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের Student Login এ গিয়ে আপনার user id ও Password এন্ট্রি দিয়ে লগইন করুন।

▶️এরপর Academic Services এ গিয়ে Services List এ ক্লিক করুন বিভিন্ন একাডেমিক সার্ভিসগুলো দেখতে পারবেন।

▶️এরপর একাডেমিক সার্ভিসের Transfer College(TC) ক্লিক করুন সিলেক্ট করার পর একটা ফরম দেখতে পারবেন।

▶️উক্ত ফরমে গিয়ে আপনার Target College Name অর্থাৎ যে কলেজে ট্রান্সফার নিতে চান সেই কলেজ সিলেক্ট করতে হবে৷

▶️ তারপর File Attachment এ গিয়ে কলেজ পরিবর্তনের বিভিন্ন নথি সংযুক্ত করুন। এখানে কলেজ পরিবর্তনের আবেদন ফর্ম, প্রবেশ পত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং ফলাফলের সত্যায়িত কপি ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। উক্ত ফাইল doc, docx, pdf, png, jpg, jpeg, gif ফরমেটে আপলোড করা যাবে এবং ফাইলের সর্বোচ্চ সাইজ ২ এমবির বেশি হওয়া যাবে না৷

▶️তারপর Reason এ গিয়ে আপনি কি কারণে কলেজ পরিবর্তন করতে চান সেটা উল্লেখ করতে হবে। যেমনঃ বিবাহের জন্য, চাকুরীরত অভিভাবক (পিতামাতা স্বামী) অন্য জেলায় বদলী।

▶️তারপর Proceed বাটনে ক্লিক করার পর সোনালী ব্যাংকের ১০০০ টাকার পে স্লিপ দেখতে পারবেন। উক্ত পে স্লিপ সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে।

▶️কাজ শেষ এরপর প্রাথমিক আবেদন যাচাই বাছাই করে এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে SMS এর মাধ্যমে তার আবেদন বিবেচনা যোগ্য কিনা তা জানিয়ে দেওয়া হবে।। অথবা student login এ গিয়ে আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।

▶️আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে প্রার্থীকে ছাড়পত্রের ফিসহ নির্ধারিত ফরমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত আবেদনের সাথে শুধুমাত্র ছাড়পত্র প্রদানকারী কলেজের অনাপত্তিপত্র জমা দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নের প্রতি লক্ষ রেখে ছাড়পত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রার্থী যে কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে কলেজের প্রার্থীত বিষয়ের শিক্ষার্থী – শিক্ষক সংখ্যানুপাত Optimum সংখ্যার অনেক বেশী হলে প্রার্থীর আবেদন বিবেচনা করা হবে না। কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হলে ছাড়পত্র ইস্যু করা যাবে না। তাছাড়া স্নাতক (সম্মান ) শ্রেণীতে ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে বিশেষ কারণ ছাড়া ছাড়পত্র প্রদান করা যাবে না। প্রামাণ্য তথ্যে কোন জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল বলে গন্য হবে।

তারপরও কারও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন কমেন্ট করতেসমস্যা হলে ইনবক্স করবেন।

ইনবক্সে অযথা হাই, হ্যালো, প্রশ্ন ছিল, একটা কথা ছিল এইসব না বলে সরাসরি সমস্যার কথা লিখবেন অন্যথায় মেসেজের রিপ্লে পাবেন না।


আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকে আমরা জানলাম কলেজ ট্রান্সফার বিষয়ে।
আশা করছি  কলেজ ট্রান্সফার বলতে কি বুঝায় বিষয়টা আপনার ভালো করে বুঝতেই পেরেছেন।
কলেজ ট্রান্সফার নিয়ে লিখা আমাদের আর্টিকেল ভালো লেগে থাকলে অবশই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.