কীভাবে সুন্দর করে কথা বলব?

কীভাবে সুন্দর করে কথা বলব?

লেখকঃ জুয়েল আহমেদ। 


ভাবতে পারেন, কথা বলা—এ আর এমন কী! কিন্তু জেনে রাখুন, শুধু সুন্দর করে কথা বলার গুণ আপনার ক্যারিয়ারকে নিয়ে যেতে পারে অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষকের সঙ্গে, ব্যবসায়িক বা কোনো উদ্ভাবনী ভাবনা উপস্থাপনের সময়, এমনকি করপোরেট দুনিয়ায় বুদ্ধিদীপ্ত কথা আপনার লক্ষ্য অর্জন অনেক সহজ করে দিতে পারে।

আমরা আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি শিক্ষা জীবনে এমন অনেক শিক্ষকদের দেখেছি যাঁদের পড়া আমরা কিছুই বুঝতাম না । নিঃসন্দেহে তারা অনেক জ্ঞানী কিন্তু ঘাটতি ছিল উপস্থাপনের।

সুন্দর করে কথা বলা হচ্ছে একটি আর্ট। স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত সুন্দর কথা। অনেকেই  দেখা যায় অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও উপস্থাপনের ঘাটতি থাকায় কেউ তাতে আগ্রহ দেখায় না। নিজেকে প্রকাশ করতে কে না চায়? সবাই চায় নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে। বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে অন্যতম একটি উপাদান। আর এজন্যই প্রয়োজন স্মার্টভাবে কথা বলার উপায় জানা। 

অনেকেই আছেন খুব ভালো মনের মানুষ, দেখতেও সুন্দর কিন্তু তিনি ভাল কথা বললেও যিনি শুনছেন তার ভাল লাগে না। শুধুমাত্র গুছিয়ে কথা বলার উপায় না জানার কারণে। এ কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। নিজের চেষ্টা এবং সামান্য কিছু গাইডলাইনই যথেষ্ট। উপস্থাপন আরও চমকপ্রদ করতে আমরা আজকে দেখব সুন্দর করে কথা বলার কয়েকটি গাইডলাইন।

১। নিজেকে বিশ্লেষণ কর:

প্রথমেই নিজেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। তুমি কী বিষয়ে কথা বলছ, কীভাবে কথাটি শুরু করছ, কার সঙ্গে কথা বলছ এবং তার সাথে দেখতে হবে তোমার কণ্ঠস্বরটি কেমন। সেটি কি খুব বেশি কর্কশ , খুব মিষ্টি নাকি স্বাভাবিক। যেই বিষয় নিয়ে তুমি কথা বলছ সেই বিষয়ে তোমার দক্ষতা কেমন এটি জানা ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিশ্লেষণের ফলাফল কাগজে লিখে রাখাই ভাল। সুন্দর করে কথা বলা পুরোটাই চর্চার ওপর নির্ভরশীল।

২। আগে শোনার ওপর গুরুত্ব দাও:

কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোন কে কী বলছে। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা কর। কেউ যদি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে।

৩। সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগ কর:

কখনোই এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যেটিতে মানুষ খুব বিব্রতবোধ করে কিংবা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একদমই খাপ খায় না। অন্যের কথার মাঝে কথা বলাটা অনেকেই পছন্দ করে না। তবে কথা যদি বলতেই হয় সেটি ভদ্রভাবে বললে সবাই তাতে সাড়া দেবে। যেমনঃ “Excuse me”  বলে বক্তার কথার সাথে যা যোগ করতে চাচ্ছিলে কিংবা সেই বিষয়ে কোন ব্যক্তিগত মতামতও দেয়া যেতে পারে।

৪। বিরতি দিয়ে কথা বলুন :
 কথা বলার সময় একটু বিরতি দিয়ে কথা বললে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বেশি তাড়াতাড়ি কথা বলা খুব বাজে একটি অভ্যাস। এতে শ্রোতাদেরও বুঝতে কষ্ট হয়। বিরতি দিয়ে কথা বললে মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্বও দেয়া যায়। অন্যদিকে ধীরগতিতে কথা বললে শ্রোতারা বিরক্তবোধ করে এবং শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, মধ্যবর্তী একটি মাপ বেছে কথা বললে শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায়। কথা বলার সময় গুরুত্ব অনুযায়ী কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করা যেতে পারে।

৫।চলিত ভাষায় কথা বলুন :

 যে ভাষা সবাই বুঝে সে ভাষাতেই কথা বলা উচিৎ। উচ্চারণ শুদ্ধ করলে কথা শুনতেও অনেক ভালো লাগে। সঠিক বাংলা উচ্চারণ করে তাক লাগিয়ে দেয়া যায়। খুব বেশি দরকার পড়লে উচ্চারণের ওপর কিছু কোর্সও করা যেতে পারে।

কোনো সূত্র অনুসরণ করা যেতে পারে : উচ্চারণ সুন্দর করতে কিংবা জ্ঞান আহরণে বিভিন্ন সূত্র বা উৎসব অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন: খবর, সিনেমা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

৬. অন্যকে অনুসরণ করুন, শিখুন

সুন্দর করে কথা বলার শিল্প রপ্ত করতে টেড–এর বিভিন্ন ভিডিওসহ হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ কিংবা ব্লুমবার্গ বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাইভ ভিডিও লেকচার দিয়ে থাকেন, সেগুলো দেখুন। ভিডিও থেকে তাঁদের মতো করে কথা বলা, বাক্য ব্যবহার আর শব্দ প্রয়োগ আয়ত্ত করুন। আপনি পেশাজীবনে যাঁর মতো হতে চান, তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন।

৭. চর্চাই সব

হুট করে সুন্দর কথা বলার শিল্প আয়ত্তে আসে না। নিজেকে বদলাতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় দিন। এই বিনিয়োগ কিন্তু আজীবন কাজে আসবে। শেখার সময় ভুল হবেই, তা-ও শিখতে থাকুন। বাড়ির বড়দের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছ থেকে আপনার যত ভুল, তা জেনে নিন। মানুষের কটাক্ষে মন খারাপ না করে ভুল সংশোধনে মনোযোগ দিন। স্পষ্ট করে কথা বলুন।


৮. বুঝে কথা বলুন, শ্রোতাকেও বুঝুন

কথা বলার সময় মুখ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করুন। কথা শুরুর আগে কী বলবেন, তা গুছিয়ে নিন, প্রয়োজনে টুকরো কাগজে লিখে নিন। আপনি যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি কথা বুঝতে পারছেন কি না, সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনি কী বলছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার শ্রোতা কী শুনছেন বা কী বুঝছেন। আপনার কথায় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। শ্রোতার মুখ ও শরীরের অভিব্যক্তি দেখে শ্রোতাকে বুঝতে চেষ্টা করুন।


৯ . বক্তৃতার ক্ষেত্রে কৌশলী হোন

অনেক মানুষের সামনে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় আপনাকে খুবই কৌশলী হতে হবে। শ্রোতাদের চোখে তাকান। তাঁদের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে আপনার স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন করতে হতে পারে, সে জন্য তৈরি থাকুন। খুব দ্রুত কথা বলছেন কি না, সেটা বুঝতে হলে আগে নিজেই নিজের কথা মুঠোফোনে রেকর্ড করুন। বারবার অনুশীলন করুন।

কথা বলার সময় অবশ্যই বক্তব্য গুছিয়ে নেবেন। অন্তত একটা ছক তৈরি করে নিন। প্রথম মিনিটে কী বলবেন, দ্বিতীয় মিনিটে কী আলোচনা করবেন আর বক্তব্য শেষ করবেন কীভাবে—সাজিয়ে নিন।

১০.অন্যকে অনুসরণ করুন, শিখুন

সুন্দর করে কথা বলার শিল্প রপ্ত করতে টেড–এর বিভিন্ন ভিডিওসহ হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ কিংবা ব্লুমবার্গ বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাইভ ভিডিও লেকচার দিয়ে থাকেন, সেগুলো দেখুন। ভিডিও থেকে তাঁদের মতো করে কথা বলা, বাক্য ব্যবহার আর শব্দ প্রয়োগ আয়ত্ত করুন। আপনি পেশাজীবনে যাঁর মতো হতে চান, তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন।


বিভিন্ন রকম বই পড়ুন : জ্ঞান অর্জনে বইয়ের বিকল্প নেই। উচ্চারণ শুদ্ধ করতে বইয়ের কঠিন শব্দগুলো জোরে জোরে পড়ে অনুশীলন করা যেতে পারে।


           
           Muhammed Juwel Ahmed 

     Simplicity is the essence of her happiness. Loves to read books and watch movies. Enjoy being a English Department  student during the day and a writer by night. She is currently studying at the Department of English , University Of Beanibazer Government College . 







কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.