জার্মান স্টুডেন্ট ভিসার রিজেক্ট হওয়ার কয়েকটি মূল কারণ || জুয়েল আহমদ ||

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ । কেমন আছেন প্রিয় ভিজিটর আশা করি ভালো আছেন । আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আজকে আপনাদের সাথে কথা বলবো জার্মান স্টুডেন্ট ভিসার রিজেক্ট হওয়ার কয়েকটি মূল কারণ  

---------------------------------------------------------------------


অনেক শ্রম, টাকা ও সময় নষ্ট করার পর জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা রিজেক্ট হওয়া আসলেই বেশ হতাশা জনক। ব্লক অ্যাকাউন্ট, অফার লেটার, আগেভাগে ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়ার পরও বেশ কিছু কারনের ভিসা না পেয়ে হতাশ হতে হয়। ভিসা হওয়া বা না হওয়ার চূড়ান্ত সিধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা যিনি ভিসা ইন্টারভিউ নেন তার নেই! তিনি সাধারণত আপনার ইন্টারভিউর উপর ভিত্তি করে পজেটিভ বা নেগেটিভ সুপারিশ করেন মাত্র। ভিসা দেওয়ার বা রিজেক্ট করার সিধান্ত সাধারণত দেয় আপনার প্রস্তাবিত পড়াশুনা করতে যাওয়া শহরের বিদেশী বিষয়ক দপ্তর। যাই হোক আসুন জেনে নেই যে কয়েকটি কারণে জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসার রিজেক্ট হয়ঃ


জার্মান স্টুডেন্ট ভিসার রিজেক্ট হওয়ার কয়েকটি মূল কারণ

আপনার প্রোফাইল যদি আপনার প্রস্তাবিত পড়াশুনার শহর বা রাজ্যের প্রয়োজনের সাথে না যায়

দুর্বল আর্থিক সামর্থ্য

খারাপ একাডেমীক রেজাল্ট

প্রস্তুতি ছাড়া ভিসা ইন্টারভিউ

অপর্যাপ্ত ভাষা দক্ষতা

১। আপনার প্রোফাইল যদি আপনার প্রস্তাবিত পড়াশুনার শহর বা রাজ্যের প্রয়োজনের সাথে না যায়

যেহেতু প্রস্তাবিত পড়াশুনার শহরের বিদেশী বিষয়ক দপ্তর ভিসা দেওয়া বা না দেওয়ার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি ভুমকা রাখে তাই তারা দেখে আপনার প্রোফাইল ও যে বিষয়ে পড়তে আসবেন তা তাদের প্রয়োজন কতটুকু মিটাবে। জার্মানিতে বয়স্ক মানুষ বেড়ে যাওয়া তাদের বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়াশুনার অন্যতম কারণ পড়াশুনা করতে তারা মেধাবীদের সাড়া বিশ্ব থেকে নিয়ে আসবে এবং তাদের মধ্য থেকে একটা একটা অংশ তাদের ভাষা শিখে, সমাজে মিশে ও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তাদের হাই স্কিল জনশক্তির চাহিদা পূর্ণ করবে। তাই ভিসা দেওয়ার সিধান্তের ক্ষেত্রে আপনি যে এলাকায় যাচ্ছেন সে এলাকার দরকার তারা প্রাধান্য দেয়।


পরামর্শ ও ফ্যাক্টঃ


– প্রয়োজন থাকার কারনেই সাধারণত ওই শহর বা রাজ্য উক্ত বিষয়ে পড়াশুনার সরকার ফান্ড খরচ করেন!

– সব শহরে যে এটাকে প্রাধান্য দেয় তেমনটি নিশ্চিত করে বলা বেশ কঠিন কারন কিছু কিছু জায়গা তারা বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয় পড়াশুনা শেষে নিজে দেশে ফিরে গিয়ে জার্মান ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সেতুবন্ধন তোলার তোলার জন্য।


– কিছু কিছু জায়গায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের দেখা হয় বিভিন্ন ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রতিনিধি হিসাবে এবং এর মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের উপযোগী করে গড়ে তোলার অংশ হিসাবে।




– কিছু কিছু জায়গায় দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয় স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বেবস্থার আন্তর্জাতিক মানের করার অংশ হিসাবে।

– কিছু কিছু জায়গায় দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হয় সেখানকার অর্থনীতিক, ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি অংশ হিসাবে।


উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় নিজেকে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারলে এটা খুব বড় কোন সমস্যা নয়।


২। দুর্বল আর্থিক সামর্থ্য

আর্থিক ভাবে সচ্ছলতা জার্মানির ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম পূর্বশর্ত। জার্মানিতে যারা পড়তে আসে তাই তাদের এখন ব্লক অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে আসতে হয়। একটা সময় এটা এতটা কঠিন ছিলনা। আর্থিক নিরাপত্তার ব্যাপারটা দিন দিন বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে কারন জার্মান কর্তৃপক্ষ এটা সিউর হতে চায় যে আপনি জার্মানিতে এসে আর্থিক ভাবে বিপদে পড়বেন না।


পরামর্শঃ


– ব্লক অ্যাকাউন্ট এর সব কিছু ঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করা।

– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্লক অ্যাকাউন্ট এর কাজ শুরু করা হাতে সময় রেখে যেন প্রক্রিয়া সম্পন করতে হাতে যথেষ্ট সময় থাকে।

– আগে ভাগে আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।

– এই ব্যাপারে সব সময় আপডেট থাকা যেন এমব্যাসি কোন ধরনের নিয়ম পরিবর্তন করলে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।


৩। খারাপ একাডেমীক রেজাল্ট

ভিসা অফিসার আপনার পূর্ববর্তী একাডেমীক রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে সাধারণত নিরূপণ করে আপনি জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার যোগ্যতাপূর্ণ কিনা। জার্মানিতে পড়াশুনা পৃথিবীর চালেঞ্জিং পড়াশুনা সিস্টেমের অন্যতম তাই আপনার একাডেমীক সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ!


পরামর্শ ও ফ্যাক্টঃ


– অনেক সময় কোন একটি পর্যায়ে একাডেমীক রেজাল্ট খারাপ হয়ে যেতে পারে বা গ্যাপ পড়ে যেতে পারে যা উপযুক্ত কারন দেখিয়ে তুলে ধরা। একটি মোটিভেশণ লেটার এক্ষেত্রে খুব কাজ দিতে পারে যেটা আপনি আপনার অন্যান্য কাগজ পত্রের সাথে জমা দিতে পারেন।

– একাডেমীক রেজাল্ট একটু খারাপ হলে IELTS, TOFEL, GRE, GMAT, German Language স্কোর বা সার্টিফিকেটে ভালো করা যথেষ্ট হেল্পফুল হতে পারে।


– যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সে সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাও ভালো সাহায্য করতে পারে।


৪। প্রস্তুতি ছাড়া ভিসা ইন্টারভিউ

অনেক শিক্ষার্থী ভালো ভাবে প্রস্তুতি ছাড়া ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে যায় যা ভিসা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি করে। এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে ওই শিক্ষার্থীর সিরিয়াসনেস এর ব্যাপারে প্রশ্ন জাগে। জার্মানি নিয়ে সাধারণ জ্ঞান সে যে শহর, রাজ্যতে যাচ্ছে তা সম্পর্কে জানাশুনা খুবই প্রত্যাশিত থাকে। বিশেষ করে কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তার ধারনা থাকে আবশ্যক।


পরামর্শ ও ফ্যাক্টঃ


– শিক্ষার্থীর উচিত এই ধরনের প্রশ্ন ভিসা ইন্টারভিউ যিনি নেন তার মোটিভ বা উদ্দেশ্য বুঝতে পারা কেন তিনি এই ধরনের প্রশ্ন করছেন।

– এই ধরনের প্রশ্নকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যায় যা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ধরনের বিষয় বুঝতে করা হয়ে থাকেঃ


1. Questions That Test Whether You Have Done Some Research About Germany

2. Questions That Test Your Seriousness as a Student




3. Questions That Test if Your True Intention is to Study

4. Questions to Assess if You are Financially Sound to Survive in in Germany


৫। অপর্যাপ্ত ভাষা দক্ষতা

ভাষা অদক্ষতার না কম দক্ষতা জার্মানির ভিসা না হওয়ার একটি অন্যতম কারন। ভাষা দক্ষতাকে এই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বিবেচনার অন্যতম কারন হল এর মাধ্যমে ফুটে উঠে আপনি জার্মানিতে আপনার পড়াশুনা ঠিক ভাবে বুঝেতে ও সফল ভাবে শেষ করতে পারবেন কিনা।


পরামর্শ ও ফ্যাক্টঃ


– জার্মানি এমব্যাসিতে ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে বেশ ভালো ভাষা দক্ষতা অর্জন করা।


৫। স্টাডি প্রোগ্রাম সঙ্গে আপনার একাডেমীক বা প্রফেশনের অসঙ্গতিঃ


এই সমস্যা সাধারণত তৈরি হয় আপনার আগের একাডেমীক বা প্রফেশনের সঙ্গে আপনার পড়তে যাওয়া বিষয়ের মিল না থাকলে।


পরামর্শ ও ফ্যাক্টঃ


– কিভাবে কম আপনার আগ্রহের সাথে আপনার পড়তে যাওয়া বিষয়ের মিল আছে তা একাডেমীক বা প্রফেশনের সাথে রিলেট করা।

– বিশেষ করে একটি বিষয়ে পড়াশুনা করে আরেকটি বিষয় কাজ করলে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিজের আগ্রহ ও কাজের অভিজ্ঞতা কিভাবে আপনার পড়তে যাওয়া কোর্সে পড়তে আপনাকে সাহায্য করবে তা ফোকাস করা।

– অন্যতম ফ্যাক্ট হল জার্মানিতে কোন বিষয়ে একাডেমীক বা প্রফেশনের সঙ্গতি না থাকলে এডমিশন পাওয়া বেশ কঠিন তাই এই রকম পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভবনা কম!


খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। এই বিষয় গুলো একটু খেয়াল ও প্রস্তুতি নিলে ভিসা ইন্টারভিউ কঠিন হওয়ার কোন কারন নেই কোন প্রকৃত স্টুডেন্টদের জন্য! আশাকরি আপনার ভালভাবে ভিসা ইন্টারভিউ দেন। অনেক শুভ কামনা। 













কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.