সিভি লেখার নিয়ম সিভি লেখার নিয়ম | জুয়েল আহমদ |


সিভি লেখার নিয়ম? আসলে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি কথাটির সাথে আমরা পরিচিত হই ছাত্রজীবনেই। কেননা ছাত্র জীবনেই আমাদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দিতে বা কোন পার্ট টাইমে চাকরিতে যোগদান করতে সিভি চাওয়া হয়। সেখান থেকেই আসলে সিভি লেখার হাতেখড়ি হয়।

কিন্তু অধিকাংশই আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তারপর সিভি তৈরি করেন। অনেকে আবার খুব অল্প সময় হাতে নিয়ে সিভি তৈরি করেন। তাড়াহুড়া করে সিভি লিখতে গিয়ে অনেকেই আবার মারাত্মক ভুল করে ফেলেন। ফলে নিজের প্রথম আবেদন করা চাকরিও হাতছাড়া হয়ে যায়, সামান্য এই ভুলের কারণে।

সময়ে তোলা! জেনো আপনাকে সহজে চেনা যায়। অনেকেই সিভিতে পুরাতন ছবি ব্যবহার করেন। ছবি উঠানোর সময় ছবির ব্যাকরাউন্ড বা পটভূমি অবশ্যই এক রঙয়ের হতে হবে।

ছবিতে চুল কিংবা দাড়ি পরিপাটি থাকতে হবে। ছবি হতে হবে ফরমাল। ছবির ব্যাকরাউন্ড বা পটভূমি বেশি  উজ্জ্বল না হওয়া শ্রেয় । অনেকেই মুঠোফোনে যত্রতত্র ছবি তুলে কোন রকমভাবে সিভিতে যুক্ত করেন। যা মারাত্মক ভুল।

পেশাগত বিবরণ

এ পর্যায়ে সিভিতে সংক্ষিপ্তভাবে নিজের পেশাগত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। এখানে আপনার পূর্ববর্তী স্থানে আপনার অবস্থান এবং কাজ সম্পর্কে তুলে ধরুণ। মনে রাখতে হবে এ অংশ অবশ্যই বড় হওয়া যাবে না। ভাষা হতে হবে প্রাঞ্জল।

বাংলা বা ইংরেজি যে মাধ্যমেই লিখবেন বানান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি যে পদে চাকরি করবেন, তার সাথে সঙ্গতি রেখে এ অংশ লিখতে হবে। অবশ্যই আজগুবি, অপ্রাসঙ্গিক কিংবা কাল্পনিক কোন বিষয় সিভিতে লেখা যাবে না।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখতে গিয়ে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। কোনটা আগে লিখবেন। সদ্য পাস করা পরীক্ষার সম্পর্কে নাকি একদম মাধ্যমিক থেকে অর্জিত ফলাফল সম্পর্কে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ হচ্ছে সদ্য পাস করা বিষয় প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি সম্প্রতি স্নাতক পাস করেন তবে সেই সম্পর্কে আগে লিখুন। যেমন আপনি কোন বিষয়ে, কোন অনুষদে পড়েছেন, কত সালে পরীক্ষা দিয়েছেন, গ্রেড পয়েন্ট বা ফলাফল কী ছিল, এসবও উল্লেখ করতে পারেন।

এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পর্কে লিখতে হবে। আর আপনি যদি কোন বিষয়ে অধ্যয়নরত থাকেন, সে বিষয়ে উল্লেখ করে ‘পরীক্ষার্থী’ বা ‘অধ্যয়নরত’ লিখতে হবে।

অ্যাকাডেমিক প্রকাশনা বা প্রকল্প

আপনার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোন প্রকাশনা বা রিপোর্ট থাকলে তা উল্লেখ করুন। আর আপনি যদি প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থী হন তবে কোন প্রজেক্টে অংশ নিলে তা উল্লেখ করবেন। আর বিবিএ বা বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে আপনার ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলে তার রিপোর্টের নাম লিখুন।

পেশাজীবীর নাম সিভিতে যুক্ত করতে হবে।

অঙ্গীকারনামা

সিভিতে সর্বশেষে লিখতে হয় অঙ্গীকারনামা। সিভিতে আপনি যা যুক্ত করেছেন আপনার সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল তা লিখতে হবে অঙ্গীকারনামায়। আর  লেখার নিচে আপনার স্পষ্ট স্বাক্ষর থাকতে হবে। মনে রাখবেন, চাকরিদাতা আপনার তথ্য যাচাই করার আইনগত অধিকার রাখেন, তাই এমন কোন তথ্য দিবেন যা আপনার সাক্ষাৎকারের সময় ভুল প্রমাণিত হয়।

সিভি লেখার কৌশল

  • সিভিতে কোন রঙিন কাগজ বা রঙিন কালি ব্যবহার করবেন না। কোন বিষয়ে হাইলাইট করতে চাইলে লেখাটি বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন করতে পারেন।
  • সিভি আকর্ষণীয় হওয়া জরুরী। তাই বলে অবান্তর চটকদার বিষয় এড়িয়ে চলুন।
  • সিভি লিখবেন এ ফোর সাইজের পাতায়। পাতাটি সাদা হওয়াই শ্রেয়।
  • অন্যের সিভি হুবহু কপি করতে যাবেন না, এতে আপনার অজান্তেই ভুলত্রুটি রয়ে যাবে। যা চাকরিদাতাদের চোখে প্রথমেই পড়বে।
  • নমুনা সিভি দেখে নিজের প্রথম সিভি নিজেই লিখুন। পরে তাতে সময়ে সময়ে তথ্য যোগ করুন।
  • সিভি অহেতুক বড় করার চেষ্টা করবেন না। বড় সিভি মানেই ভালো সিভি নয়। চাকরিদাতারা গড়ে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় পাবেন সিভি দেখার। তাই সিভি হবে সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ।
  • সিভিতে বানান ভুল আপনার মারাত্মক শত্রু। এটা আপনার সম্পর্কে চাকরিদাতাকে নেতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
  • অভিজ্ঞদের দিয়ে সিভি চেক করিয়ে নিন। অনেক সময় নিজের ভুলে নিজের কাছে ধরা পরে না। তাই আপনার শিক্ষক বা অভিজ্ঞ সিনিয়রদের সাহায্য নিন।
  • সিভি তৈরি করতে হবে চাকরির ধরণের সাথে। অর্থাৎ আপনি যে পদ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সিভি জমা বা মেইল করবেন, সেই পদের দিকে খেয়াল রেখে সিভি তৈরি করুন। প্রয়োজনে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে ভালো করে জানুন।
  • সিভিতে কাভার লেটার যুক্ত করুন।
  • ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিবেন না।
  • অপরিচিত বা কম পরিচিত মানুষকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করবেন না।
  • আপনার সম্পর্কে ভালো জানেন এমন কোন ব্যক্তিকে রেফারেন্স দিন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.