সহজে কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় । বন্ধু বানানোর উপায় | Muhammed Juwel Ahmed |

কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় ? বন্ধু বানানোর সহজ উপায় গুলো কি কি ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই পছন্দ হবে।

“বন্ধুরা এলোমেলো মুঠো ভোরে নিয়ে এলো
আনকোরা সূর্যের লাল”

সত্যি যাদের জীবনে প্রকৃত বন্ধু আছে, তাদের জন্য প্রতিটা দিনই ভোরবেলার মতো সুন্দর, স্নিগ্ধ কিন্তু প্রাণোচ্ছল। যেখানে আড্ডা, হাসি, গান, অ্যাডভেঞ্চার কোনটারই অভাব হয় না। আর তাই হয়তো প্রায় প্রত্যেকের কাছেই তাদের স্কুল বা কলেজ-ইউনিভার্সিটির জীবন সবথেকে সেরা হয়। কারণ এই সময়টা আমাদের বন্ধুগোষ্ঠীর সুমধুর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

কিন্তু জীবনে এমন সময়ও আসে যখন অফিস ও সংসারের চাপে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা তো দূরের কথা, নতুন বন্ধু বানানোর সময়ও বের করে উঠতে পারিনা। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বন্ধু বানানোর ইচ্ছাও লোপ পায়। যদিও এমন ভাবনা একদমই ঠিক নয়।

কেননা বন্ধু হল আমাদের প্রত্যেকের জীবনে দ্বিতীয় পরিবার স্বরূপ, যাদের ছাড়া জীবন স্বাদহীন। তাই পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখাও যেমন জরুরি, তেমনি নিজের পরিচিতির গন্ডি বাড়াতে নতুন বন্ধু বানানোও আবশ্যক।

সহজে কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় । বন্ধু বানানোর উপায়

How to make new friends ?

আপনি যদি বন্ধু বানাতে পারদর্শী না হন বা অন্তর্মুখী হন, তবে আমরা আপনাকে এমন ১১টি কৌশল সম্পর্কে জানাবো যা অনুসরণ করে আপনি খুব সহজে বন্ধু তৈরী করতে পারবেন। শুধু তাই নয় কৌশলগুলি প্রয়োগ করতে পারলে বন্ধুত্বের আয়ুও দীর্ঘ হবে।

ক্লাবের সদস্য হন :

মানুষের মধ্যে ঘিরে থাকলে বন্ধু বানানোর কাজ আরো সহজ হয়ে যায়।

যেমন ধরুন, আপনি একটি লোকাল ক্লাবের সদস্য হতে পারেন। এমনটা হলে আপনি বিভিন্ন ধরণের মানুষের সান্নিধ্যে আসতে সক্ষম হবেন।

আর ক্লাবের কোনো অনুষ্ঠান বা নিয়মিত আড্ডা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘন ঘন মিলিত হলে পরিচিত বাড়বে এবং নতুন বন্ধু বানাতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি – ধর্মীয় গ্রুপ বা পাঠাগার, জিম, বাইকিং, লাফটার গ্রুপের সদস্য হওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

কোনো অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে ভর্তি হন :

শখ বলে বস্তুটা কিন্তু বয়সের উপর নির্ভর করে না।

আপনার বয়স ২০ হোক বা ৮০, শখ পূরণের জন্য যেকোনো অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে ভর্তি হতেই পারেন।

এমনটা করলে আপনার ইচ্ছা পূরণ হবে, আবার প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি ঘটবে।

এক্ষেত্রে অনেকেই অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়।

মূলত যারা কথা বলার সুযোগ বা টপিক খুঁজে না পাওয়ায় বন্ধু বানাতে পারেন না তাদের অন্তর্মুখী বলে।

আপনিও যদি এরকম হন, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আপনি যেই ক্লাসে ভর্তি হবেন সেখানে আপনার অনুরূপ আগ্রহ রাখে এমন অনেককে খুঁজে পাবেন,

আর যাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আপনার টপিকের অভাব হবে না।

এক্ষেত্রে আপনি – দাবা, নাচ, গান, কার্ড গেম বা স্পোর্টস সংক্রান্ত কোনো অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন।

পাড়ার মানুষদের সাথে কথা বলুন :

কথায় আছে প্রতিবেশী হল সবথেকে আপন আত্মীয়। তাই পাড়ার মানুষদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।

এতে আপনার প্রতি অন্যদের মনোভাবনা ভালো থাকবে, পাশাপাশি নতুন বন্ধুত্বও গড়ে উঠতে পারে।

এছাড়া পাড়ার বন্ধুগোষ্ঠী সমস্যায় একেঅপরের সাহায্যেও আসে।

সোশ্যাল সার্কেলের অংশ হন :

শুধু বন্ধু বানালেই হবে না, সেই বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

তাই পাড়ার মানুষদের সাথে ক্ষনিকের আড্ডা দিয়ে বেরিয়ে গেলে চলবে না।

তারা যদি কোনো অনুষ্ঠানে বা পারিবারিক কাজে আপনাকে আমন্ত্রণ জানায় তবে সেখানে যান।

সেই অনুষ্ঠানে নিজের থেকে অন্যদের সাথে কথাবার্তা চালান এবং পরিচিতদের খবরাখবর নিন।

এমনটা করলে আপনার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভালো ভাবনা তৈরী হবে এবং তারা আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছুক বোধ করবেন।

স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করুন :

স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেন,

এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সবাইকে একসাথে নিয়ে চলার প্রবণতা থাকে এবং গোষ্ঠীর মধ্যে থাকা প্রত্যেকেই একেঅপরের সাথে সংযোগ বজায় রাখার মনোভাব রাখে। তাই এরূপ একটি গোষ্ঠীর সদস্য হলে আপনি সুন্দর একটি বন্ধুর গ্ৰুপ খুঁজে পাবেন।

সাথে মানুষকে সাহায্য করার দরুন মানসিক শান্তি অনুভব করবেন।

সর্বোপরি, স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন, যা পরবর্তীতে বন্ধুত্বে পরিণত হতে পারে।

অনলাইনে বন্ধু তৈরি করুন :

বর্তমানে ঔষুধ আনানোর থেকে শপিং করা সব কিছুই অনলাইন মাধ্যমে হয়।

এমনকি অনলাইনে বন্ধুও পাওয়া যায় এখন।

এর জন্য আপনাকে – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে একটি প্রোফাইল খুলতে হবে।

এর পর আপনাকে নিজের পছন্দের খেলা, পড়াশোনার বিষয়, সিনেমা, হবি ইত্যাদি লিখতে হবে এই সকল সাইটে।

এমনটা করলেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি আপনাকে আপনার আগ্রহের ভিত্তিতে কিছু বন্ধু সাজেস্ট করবে।

তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে বা ফলো করতে পারেন।

এমন ভাবে আপনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি অন্তর্মুখী ব্যক্তি হন, তবেও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অনলাইনে বন্ধু বানাতে পারবেন।

তবে আগেই বলে দিই, অনলাইনে বন্ধু বানালে তাকে নিজের সম্পর্কে সব কথা বলবেন না।

কারণ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ভুয়ো প্রোফাইলে ভরে গিয়েছে। তাই সাবধানতা বজায় রাখুন।

অনুষ্ঠানে যান :

ফ্রেন্ড সার্কেল ছোট হোক বা বড়, বছরে এক-আধটা সমাবেশ বা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত আপনি পেয়েই যাবেন।

এক্ষেত্রে কোনো পরিচিতি ব্যক্তি আমন্ত্রণ করলে তা সমাদরে গ্রহণ করুন।

বিপরীতে নিজের কোনো অনুষ্ঠানেও তাদের আমন্ত্রণ জানান।

অথবা কোনো বন্ধুকে তাদের প্রিয় রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য নিয়ে গিয়ে তাকে ‘সারপ্রাইজ’ করতে পারেন।

এমনটা করলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে।

পাশাপাশি এই সকল অনুষ্ঠানে পুরোনো বন্ধুদের সাথে পুনরায় দেখা হয়ে যেতে পারে,

অথবা তাদের পরিচিত কোনো ব্যক্তি আপনার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। এই ভাবেই তো ফ্রেন্ড সার্কেল বৃদ্ধি পায়।

কথোপকথন শুরু করুন :

বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ নিজে নিন।

অর্থাৎ কোথাও গিয়ে চুপচাপ এক কোণে বসে না থেকে, সোশ্যালাইজ করার চেষ্টা করুন।

আরো সোজা ভাবে বললে, আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির সাথে কথোপকথন শুরু করার প্রয়াস করুন।

এক্ষেত্রে তার নাম, পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন এবং নিজের সম্পর্কেও বলুন।

যদি দেখেন বিপরীতের মানুষটিও আপনার সাথে পরিচিতি বাড়াতে আগ্রহী, তবে ফোন নম্বর শেয়ার করতে পারেন।

অভিবাদন করুন ও হাসুন :

অফিস বা পাড়ায় যাতায়াতের সময়ে কারোর সাথে দেখা হয়ে গেলে কুশল নিবেদন করুন।

আর যদি সময়ের অভাব থাকে, তবে অভিবাদন জানিয়ে হালকা হাসুন।

এমনটা করলে অন্য ব্যক্তির উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পাশাপাশি, পরবর্তী সময়ে তারা নিজের থেকে আপনার সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য ও আগ্রহী বোধ করবেন।

আর এমনটা হলেই ভাববেন, নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রথম সোপান পেরোতে পেরেছেন আপনি।

প্রয়োজনে সাহায্য করুন :

সবসময় শুধু কথাবার্তার মাধ্যমেই বন্ধু হওয়া যায়না।

অনেক সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে।

যেমন ধরুন, জানতে পারলেন আপনার পরিচিত কেউ সমস্যায় পড়েছেন, যার সাথে দেখা সাক্ষাৎ থাকলেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি, তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন।

অথবা সে যদি নিজের থেকে আপনার কাছে সমস্যার কথা শেয়ার করতে আসে, তবে তাকে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে দিন এবং নিজে ধৈর্য সহকারে শুনুন।

কেননা এরূপ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আপনারা সমস্যার সমাধান বের করতে পারবেন এবং এই প্রক্রিয়া চলাকালীন নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগার কথাও জানতে পারবেন।

যা একে অপরকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনার সাহায্য করার প্রবণতা আপনাদের ঘনিষ্ঠতা এবং সংযোগ উভয়ই বাড়াবে।

যোগাযোগ বজায় রাখুন :

স্কুল বা কলেজে বন্ধুদের সাথে নিয়মিত দেখা হওয়ার দরুন রোজানা ফোন বা মেসেজ আমরা কেউই করতাম না।

কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না।

তাই কোনো সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে নতুন কোনো ব্যক্তির সাথে দেখা হলে বা পুরোনো বন্ধুদের সাথে বহু বছর পর সাক্ষাৎ হলে,

অবশ্যই তাদের ফোন নম্বর নিন।

তবে সেই নম্বর শুধু মোবাইলে সেভ করে রাখলেই কিন্তু বন্ধুত্ব বজায় থাকবে না।

মাঝে মধ্যে অবসরে তাদের মেসেজ বা ফোন করে কিছুক্ষন কথা বলার সময়টুকু বের করতে হবে।

কেননা যেকোনো সম্পর্কই সামান্য হলেও সময়ের দাবি করে।

তাই ব্যস্ত সময়সূচীর মধ্যেও অন্তত ১-২ ঘন্টা সময় বের করে বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলুন, দেখা করুন বা আড্ডা দিন।

এমনটা করার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গাঢ় হবে এবং আপনার বন্ধুরাও নিজেদের আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেবে খুশি হবেন।

উপসংহার,,

তাহলে বন্ধুরা, নতুন করে বন্ধু বানানোর উপায় কি বা কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় এই বিষয়ে অনেক কিছুই হয়তো শিখতে ও বুঝতে পেরেছেন। 

আশা করছি, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অবশই পছন্দ হয়েছে।

আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন । 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.