অভ্যাস পরিবর্তন করার উপায় কি । খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করুন | Muhammed Juwel Ahmed |





অভ্যাস পরিবর্তন করার উপায়: যেকোনো অভ্যাস পরিবর্তন করা বা ত্যাগ করাটা আপনার জন্যে হতে পারে একেবারে সোজা আবার হতেপারে অনেক কঠিন কাজ। কেননা, খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির।

আপনি যদি নিজেকে বুঝিয়ে নিজের মন প্রাণ থেকে যেকোনো অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে এই কাজ হয়ে দাঁড়াবে অনেক সোজা।

যেকোনো ব্যক্তির জীবনে তার ছোট-বড় প্রত্যেকটি অভ্যেস গুলোর মিশ্রনের দ্বারা তৈরি হয় তার ছবি ও চরিত্র। তাই, একজন ভালো ও সেরা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার মধ্যে থাকতে হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভালো অভ্যেস গুলোর।

আপনার ভবিষ্যৎ, বর্তমান মনের অবস্থা, মনের শান্তি, সামগ্রিক সমৃদ্ধি, কাজ কর্মে ও ক্যারিয়ারে সফলতা পাওয়া সবটাই নির্ভর করে থাকে আপনার প্রত্যেক দিনের কিছু ছোট ও বড় অভ্যাস গুলোর ওপর।

আপনি যদি নিজের খারাপ অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করতে চাইছেন, খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে নিজেকে একজন ভালো ব্যক্তিতে পরিণত করতে চান, তাহলে নিচে দেওয়া এই উপায় গুলো করতে হবে।

কিভাবে একটি অভ্যাস স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করা যাবে ?

অভ্যাস পরিবর্তন করার উপায়
How to change habit ?

যেকোনো অভ্যাস স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আপনাকে এর মূল প্রক্রিয়া গুলোর ওপরে কাজ করতে হবে। তাই, আপনি যদি নিচে বলে দেওয়া এই সঠিক প্রক্রিয়া ও ধাপ গুলো অনুসরণ করে থাকেন তাহলে নিজের মধ্যে থাকা খারাপ অভ্যেস গুলো ত্যাগ করে কিছু ভালো অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য পাবেন।

১. কোন অভ্যেসটি পরিবর্তন করবেন ?

যেকোনো অভ্যাস পরিবর্তন করার আগেই আপনাকে সেই অভ্যাসটিকে ভালো করে বুঝতে হবে। অভ্যাসটির কারণে আপনি কি কি অসুবিধে পাচ্ছেন এবং কেন আপনি সেই অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইছেন, সেটা আগে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

আপনার মধ্যে হয়তো একাধিক খারাপ অভ্যেস রয়েছে, তবে শুরুতে একটি বা দুটি খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে এবং এর জন্যে আপনাকে কোন কোন প্রক্রিয়া ও ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে সেই বিষয়ে আগেই নিশ্চিত হতে হবে।

২. পরিবর্তনের মানসিকতা তৈরি করুন

এটা শুনতে যতটা সাধারণ লাগছে ততটাই কার্যকর উপায় যদি আপনি নিজের মধ্যে কিছু ভালো পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাইছেন। আমাদের মন হলো একজন অল্প বয়স্ক বাচ্চার মতো। আপনি যদি তাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন তাহলে সে আপনার হিসেবেই প্রত্যেকটি কাজ করবে।

আবার, আপনি যদি তাকে ভালো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেননা, তাহলে সে এদিক ওদিক ছুতে বেড়াবে। তাই, আপনাকে একান্তে বসে নিজের মনকে বুঝাতে হবে যে, কোন কোন অভ্যাস গুলো আপনার ও আপনার ভবিষ্যতের জন্যে খারাপ এবং কেন এই অভ্যাস গুলো ত্যাগ করা জরুরি।

প্রত্যেকদিন নিয়মিত নিজের মনকে নিজের খারাপ অভ্যেস গুলোর থেকে হওয়া বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকা ঝুঁকি (risk) গুলোর বিষয়ে বলুন ও মনে করাতে হবে।

দেখবেন, এতে আপনার মন নিজের থেকেই আপনার সেই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার ক্ষেত্রে আপনার সাহায্য করবে ও আপনি এই প্রক্রিয়াতে ৭০% এগিয়ে যেতে পারবেন।

৩. কখন সমস্যা হচ্ছে সেটা বুঝুন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খারাপ অভ্যাস গুলো মূলত মানসিক চাপ (stress), উদাসীনতা বা একঘেয়েমি জীবন কাটানোর জন্যে অধিক বৃদ্ধি হওয়া দেখা যায়। তাই, আপনাকে নিজের খারাপ অভ্যেস এর মূল কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। যখন আপনি যেকোনো অভ্যাস এর কারণ খুঁজে পাবেন তখন সেটাকে পরিবর্তন করা বা সেটাকে একটি ভালো অভ্যাসে রূপান্তরিত করাটা অনেক সহজ হয়ে দাঁড়ায়।

উদাহরণস্বরূপ,

ধরুন যখন আপনি অধিক মানসিক চাপে থেকে থাকেন তখন জাঙ্ক ফুড (junk food) খাওয়ার আপনার বাজে অভ্যেস রয়েছে। এক্ষেত্রে,আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে এই জাঙ্ক ফুড আপনি অধিক মানসিক চাপে থাকার কারণে খাচ্ছেন এবং কখন খাওয়ার ইচ্ছেটি তৈরি হচ্ছে।

এতে, আপনি নিজের খারাপ অভ্যাসটি একটি ভালো ইতিবাচক অভ্যাসের সাথে বদলে দিতে পারবেন। যেমন, যোগ অভ্যেস করা, মেডিটেশন, বাইরে গিয়ে খানিকটা হেটে আসা ইত্যাদি।

৪. ছোট ছোট পরিবর্তন থেকে শুরু করুন

অবশই, একটি পুরোনো অভ্যাস পরিবর্তন করে নতুন অভ্যাস তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় সময় এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার। এটা কোনো ভাবেই একটি অনেক সহজ ব্যাপার না, তবে অসম্ভব ও না। আপনি যদি ভাবছেন যে রাতারাতি একটি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা বা ভাঙা সম্ভব, তবে এটা ভুল হবে। আপনাকে অনেক স্পষ্ট ভাবে নিজেকে বুঝাতে হবে যে এই কাজে সময় অবশই লাগবে।

তাই, ধৈর্য এবং ফোকাস এর সঙ্গে ছোট ছোট ধাপ গুলো অনুসরণ করে পরিষ্কার পদক্ষেপ গুলো নিতে হবে।

ধরুন, সারাদিন মোবাইলে ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করার খারাপ অভ্যাস আপনার মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে, একদিনের মধ্যে রাতারাতি আপনি এই মোবাইল দেখার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারবেননা। তবে, নিয়মিত মোবাইল দেখার সময় কমিয়ে আসতে থাকলে, ধীরে ধীরে এই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা যাবে।

৫. নিজের পরিবেশ পরিবর্তন করুন

অনেক সময় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ লোকেদের মধ্যে একটি খারাপ পরিবেশের কারণে একাধিক খারাপ স্বভাব বা অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে, এমন একটি পরিবেশের মধ্যে থেকে নিজের অভ্যাস স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব একটি বিষয়।

কারণ আমাদের অভ্যাস গুলো কোনো না কোনো ভাবে আমাদের পরিবেশের সাথে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে। আর যতদিন না আপনি নিজের পরিবেশ পাল্টাচ্ছেন, আপনার অভ্যাস গুলো পাল্টাতেও আপনার অনেক বেশি কষ্ট হবে। একটি উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দিচ্ছি,

ধরুন, আপনার ঘরের বা দপ্তরের পাশে একটি ছোট্ট পানের দোকান রয়েছে যেখানে গিয়ে আপনি নিয়মিত নিজের বন্ধুদের সাথে ধূমপান করে থাকেন।

এখন আপনি ধূমপান স্থায়ীভাবে ছাড়তে চাইছেন, এক্ষেত্রে আপনি যদি সেই দোকানে যাওয়া বন্ধ না করতে পারেন বা ধূমপান করা সেই বন্ধুদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে না পারেন, তাহলে ৯০% সুযোগ থাকছে আপনি ধূমপান কখনোই ছাড়তে পারবেননা।

এর মূল কারণ হচ্ছে, আপনার ধূমপান করার খারাপ অভ্যাসটি সেই আপনার বন্ধু ও ছোট পান দোকানের পরিবেশের সাথে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে। আর ধূমপানের অভ্যাসটি পাল্টানোর জন্যে আপনাকে সেই পরিবেশ থেকে দূরে থাকতেই হবে। এনাহলে আজ নাহয় কাল আপনি আবার সেই পরিবেশে ধূমপান শুরু করবেন।

উপসংহার,

তাহলে বন্ধুরা, আশা করছি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্যে আপনাকে কি কি করতে হবে সেটা আপনারা ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন, এছাড়া কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটাও নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.