নিজের বউকে খুশি করার উপায় গুলো জানুন – কার্যকর পরামর্শ | Muhammed Juwel Ahmed |

বউকে খুশি করার উপায়: একটা সুস্থ এবং দীর্ঘস্থায়ী বিবাহের চাবিকাঠি হল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আনন্দ এবং সুখ বজায় রাখা। দাম্পত্যজীবনে যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, একসাথে সমস্যার মোকাবিলা করলে এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে থাকতে পারলে কোনো কিছুই বাধা বলে মনে হবে না।

জীবনে এমনও কিছু সময় আসতে পারে, যখন দুঃখ, গ্লানি, কান্নায় ভেঙে পড়তে ইচ্ছা করবে। কিন্তু হার মানলে চলবে না, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি করবেন না। বৈবাহিক জীবনে এরূপ ছোট-বড় সমস্যা আসাটাই স্বাভাবিক। তাই নিশ্চিত করুন যে দিনের শেষে আপনি এবং আপনার স্ত্রী যেন হাসি মুখে শুতে যান।

এক্ষেত্রে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেদের স্ত্রীকে ভালোবাসেন, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেন না বা স্ত্রীকে কিভাবে খুশি রাখবেন তা বুঝতে পারেন না। আপনি যদি সত্যিই আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসেন তবে আপনি এমন কিছু করবেন না যা তাকে আঘাত করতে পারে এবং তাকে কাঁদাতে পারে।

নিজের বউকে খুশি করার ১০টি উপায় জেনে রাখুন

কিভাবে বউকে খুশি করা যায়
কিভাবে স্ত্রীকে খুশি করা যায় ?

প্রতিদিন আপনার সঙ্গী আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য যা যা করে যাচ্ছে তার জন্য তার তারিফ করুন এবং বিভিন্নভাবে উত্সাহিত করার চেষ্টা করুন। এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি আছে যা অবলম্বনে স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া যায়। বিশদে জানতে আমাদের এই স্ত্রীকে খুশি করার উপায় গুলো নিয়ে লিখা প্রতিবেদন সম্পূর্ণ পড়ুন।

১. নিজের যত্ন নিজে করুন :

স্ত্রীকে খুশি করার জন্য আগে নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করুন। কেননা আপনি যদি নিজে আনন্দে না থাকেন, তবে স্ত্রীকেও সুখী করতে না পারবেন না। তাই একজন ইতিবাচক মানসিকতার এবং সদা-সক্রিয় প্রকৃতির ব্যক্তি উঠুন।

যেইসকল স্মৃতি বা জিনিস আপনাকে দুঃখী করে তোলে, তা এড়িয়ে যান। আপনার মধ্যে ‘পসিটিভ ভাইব’ এলে তা আপনা থেকেই আপনার স্ত্রী অনুভব করবেন এবং নিজের সমস্ত দুঃখ বা নেতিবাচকতা ত্যাগ করতে সক্ষম হবেন।

এছাড়াও, আপনার স্ত্রীর দায়িত্ব শুধুমাত্র আপনার যত্ন নেওয়া নয়, পাশাপাশি বাচ্চাদেরও তাকেই সামলাতে হয়। তাই নিজেকে এমন স্বামী করে তুলবেন না, যে সর্বদা মদ্যপান করেন, ধূমপান করেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, অথবা সকলের সাথে ঝগড়া বাধিয়ে বেরোয়।

বিপরীতে ঠান্ডা মাথার পারিবারিক মানুষ হন, স্ত্রীকে ভালোবাসুন এবং নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে আপনার স্ত্রী আপনাকে নিয়ে আর উদ্বিগ্ন হবেন না এবং মানসিক শান্তি পাবেন।

২. ব্রেকফাস্ট তৈরী করুন:

ব্রেকফাস্ট তৈরী করার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা দরকার মানছি, কিন্তু এই সামান্য একটা উদ্যোগ আপনার স্ত্রীর কাছে আপনাকে ‘বেস্ট হাজবেন্ড’ করে তুলতে পারে। তবে প্রত্যেকদিন আপনাকে ঘুম ত্যাগ করতে বলছি না, ছুটির দিনগুলি স্ত্রীর জন্য ব্রেকফাস্ট প্রস্তুত করতে পারেন। সে অবশ্যই আপনার মতো ‘কেয়ারিং’ স্বামী পেয়ে নিজেকে সুখী বোধ করবে।

আপনি যদি রান্না করতে না জানেন তবে ইন্টারনেট সার্চ করে রান্নার রেসিপি অনুসন্ধান করতে পারেন। আর যদি বিশেষ হ্যাপা না নিতে চান, তবে সহজে রান্না করা যায় এমন কিছু চয়ন করুন।

৩. সুন্দর এবং ইতিবাচক পরিবেশ দিন:

যেকোনো মানুষ সুন্দর ও ইতিবাচক পরিবেশের মধ্যে থাকলে, আপনা থেকেই তার মন ভালো হয়ে যাবে। তাই আপনি আপনার স্ত্রীকে কিরূপ পরিবেশের মধ্যে রাখছেন সেই সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য, সক্কাল সক্কাল সুন্দর-রোমান্টিক গান চালিয়ে দিতে পারেন, সাথে একটু রোমান্টিক ডান্স হলেও মন্দ হবে না। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করতে পারেন। বাড়ি বা ঘর যদি নোংরা থাকে, তবে তা নিজের থেকে পরিষ্কার করুন।

এছাড়া স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মধ্যে বেড়াতে নিয়ে যান বা ছোট ট্রিপ পরিকল্পনা করুন। সর্বোপরি, এমন কিছু করবেন না যা আপনার সঙ্গীকে আঘাত করে বা মানসিক চাপের মধ্যে রাখে।

৪. প্রশংসা করে স্ত্রীর মর্ম উপলব্ধি করান:

একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী বা মা হওয়া কিন্তু সহজ কথা নয়। হতেই পারে আপনার স্ত্রীর চাকরি করেন না, হাউজমেকার। কিন্তু তা বলে এই নয় যে সে আপনার সমান কাজ করে না, বা তার ঘাড়ে দায়িত্বের বোঝা চেপে নেই। মনে রাখবেন, বাড়িতে থাকা মানেই ২৪x৭ কাজ করা এবং একদিনও ছুটি না পাওয়া।

একজন আদর্শ গৃহিণী হওয়া কিন্তু যথেষ্ট কঠিন কাজ। কেননা তাকে একা হাতে – আপনার, আপনার সন্তানদের, পরিবারের, ঘরের, ঘর খরচের মতো একাধিক জিনিসের খেয়াল রাখতে হয়। তাই স্ত্রীকে অনুভব করান সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার জীবনে এবং তার উপর আপনি কতটা নির্ভরশীল।

আপনি যদি ১০ মিনিটও সময় বের করে স্ত্রীর প্রশংসা করেন তবে, সারাদিনের ক্লান্ত ভুলে তার মুখেও হাসি ফুটে উঠবে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় বলে রাখি, স্ত্রী মেশিন নয়, তাই সে কোনো ভুল করবে না এমনটা ভাবাই ভুল। ফলে ছোটোখাটো কোনো ভুলের জন্য স্ত্রীর প্রতি কঠোর হবেন না, তার সাথে ঝগড়া করবেন না। সে যদি আন্তরিকভাবে আপনার কাছে ক্ষমা চায় তবে তাকে ক্ষমা করুন।

৫. স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসী থাকুন, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন:

প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করতে শিখুন। ধরুন আপনি নিজের স্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাকে কোনো উপহার দেবেন বা ছুটির দিনে একান্তে সময় কাটাবেন। এই প্রতিশ্রুতিগুলি রাখার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে আপনার উপর আপনার স্ত্রীর আস্থা কখনো ভাঙবেন না।

পাশাপাশি, নিজের স্ত্রীর প্রতি বিশস্ত থাকুন। মিথ্যে কথা বলবেন না, এক্সটার্নাল অ্যাফায়ারে জড়িয়ে পড়বেন না। সঙ্গিনীকে ‘সেই আপনার জীবনে একমাত্র ভালোবাসার মানুষ’ – এইটা অনুভূত করান।

এতে সে আত্মবিশ্বাসী হবেন এবং কখনই নিরাপত্তাহীন বা অন্য কোন মহিলার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন না।

৬. স্ত্রীকে বিশ্বাস করুন:

স্ত্রীর প্রতি কোনো খারাপ উক্তি করার আগে দশবার ভাবুন। কেননা কেউই ভালোবাসার মানুষের মুখে নিজের ব্যাপারে বাজে কথা শুনতে পছন্দ করেন না। বিশেষত যদি কোনও প্রমাণ না থাকে, তবে স্ত্রী সম্পর্কে বাজে কথা বলবেন না। এমনটা করা মানে সঙ্গিনীকে আঘাত করা। যার জন্য সে ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারেন বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারেন।

আপনার স্ত্রী তখনই খুশি থাকবেন, যখন সে বুঝতে পারবে আপনি তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন। একটা কথা মনে রাখবেন, ভ্রান্ত ভাবনা, দুশ্চিন্তা এবং মিথ্যা সন্দেহ আপনার বিয়ে ভেঙে দেওয়া ব্যতীত আর কোনো লাভ দেবে না।


৭. স্ত্রীকে সম্মান দিন:

একজন ব্যক্তি এবং মহিলা হিসাবে তার স্বতন্ত্রতাকে সম্মান করুন। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাগুলিকে যথাযথ সম্মান দিন। স্ত্রীর অমতে তাকে কিছু করতে বাধ্য করবেন না। মাঝে মধ্যে স্ত্রীর পছন্দের অ্যাক্টিভিটিতে নিযুক্ত হয়ে দেখুন, দেখবেন আপনার স্ত্রীও যথাসাধ্য চেষ্টা করবে আপনার খুশির খেয়াল রাখতে।

৮. দায়িত্বশীল হন:

যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি। এমন স্বামী হবে না যে মাতাল বা অলস, অথবা সন্তানদের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীন। এমনটা হলে আপনার প্রতি আপনার স্ত্রী বিরক্ত অনুভব করবেন।

পাশাপাশি আত্মীয় বা বন্ধুরা আপনার স্ত্রীকে উপহাসের পাত্রও করে তুলতে পারে। তাই স্ত্রীকে লজ্জিত করার মতো কাজ না করে একজন দায়িত্বশীল স্বামী এবং বাচ্চাদের জন্য দায়িত্বশীল বাবা হিসাবে রোল মডেল হয়ে উঠুন।

৯. স্ত্রী পরিবারকে ভালোবাসুন ও সম্মান দিন:

আপনার স্ত্রী একদমই খুশি হবে না যদি তার বাবা-মা বা ভাইবোনদের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো না থাকে। অতএব স্ত্রীর মন জয় করার পাশাপাশি তার পরিবারের মনও জয় করার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।

কেননা, একজন মেয়ে বিয়ে করে তার জন্মস্থান ও পরিবারকে ছেড়ে আপনার সংসার সাজাতে আসে। তাই বিয়ের পর তার মধ্যে আপনা থেকেই একটা দুঃখবোধ গড়ে ওঠে। সেই জন্য স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে তার বাড়িতে নিয়ে গেলে বা তার বাবা-মায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে দেখবেন স্ত্রী হাসিখুশি আছেন।

১০. সারপ্রাইজ গিফ্ট দিন:

আপনি যদি ভাবেন নিজের পুরো মাসিক বেতন স্ত্রীর হাতে তুলে দিলে সে খুশি হবে এবং তার অন্য কিছুর দরকার নেই – তবে ভুল ভাবছেন। বাস্তবে আপনার থেকে উপলক্ষ বা উপলক্ষ ছাড়া সারপ্রাইজ গিফ্ট পেলে আপনার স্ত্রী সবথেকে বেশি আনন্দিত হবে। কেননা আপনার দেওয়া টাকা দিয়ে জিনিস কেনা এবং আপনার হাত থেকে উপহার পাওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আছে।

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, আশা করছি কিভাবে স্ত্রীকে খুশি করা যায় বা নিজের বউকে খুশি করার উপায় কি ? এই বিষয়ে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পরামর্শ গুলো পেলেন। ওপরে বলা বিষয়গুলি নিয়ে অবশই চিন্তা করবেন এবং এগুলি অনুসরণ করে আপনি একজন ভালো স্বামী হিসেবে সব সময় নিজের বউয়ের মন জয় করতে পারবেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.